দ্বৈত নাগরিকরা এখন কানাডায় দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক

বিতর্কিত বিল সি-২৪ আইনে পরিনত

জঙ্গীবাদ,সন্ত্রাস, বিশ্বাসঘাতকতা বা অন্য কোন গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হলে বহিস্কার করা হতে পারে কানাডা থেকে

জুলাই ১১, ২০১৫

প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ সরকার প্রবর্তিত নতুন বিল সি -২৪ এখন আইনে পরিনত। সরকার এই আইনের ক্ষমতাবলে যারা দ্বৈত নাগরিক তাদের কেউ যদি সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অভিযুক্ত হন বা কানাডার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে অথবা অন্যকোন গুরুতর অপরাধ করে অভিযুক্ত হন তবে কানাডা থেকে তাকে বহিস্কার করতে পারবে। খবর সিটিভি নিউজের।

এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চলতে থাকে। দ্বৈত নাগরিকদেরকে সতর্ক করে দেওয়া হয় এই বলে যে, তারা এখন থেকে কানাডার দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক এবং তাদের নাগরিকত্ব সরকার ইচ্ছেমত বাতিল করে দিতে পারে। এমনকি যাদের জন্ম কানাডায় কিন্তু পিতা-মাতা অন্যদেশের তাদের নাগরিকত্বও বাতিল করে দিতে পারে সরকার।

কিন্তু নতুন এই আইন সম্পর্কে দ্বৈত নাগরিকদের কি কি জানা জরুরী?

১.   এ কথা কি সত্যি যে সরকার ইচ্ছে করলেই দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিল করে দিতে পারে?

না, বিষয়টি ঠিক এরকম নয়। নাগরিকত্ব বাতিল করার যে নতুন আইনটি করা হয়েছে তার কার্যকারিতা শুরু হয়েছে গত ২৯ মে থেকে। ঐ আইনে বলা হয়েছে দ্বৈত নাগরিকদের কানাডিয়ান নাগরিকত্ব বাতিল করা যাবে যখন:

কেউ নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদনপত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে।

কেউ এমন কোন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য হয়ে থাকে বা কোন সংগঠিত সশস্ত্র গ্রুপের সদস্য হয়ে থাকে যেটি কানাডার সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িত।

কেউ যদি বিশ্বাসঘাতকতার জন্য সাজা প্রাপ্ত হয়ে থাকে, গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে অপরাধী হয়ে থাকে এবং জাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়ে থাকে।

কেউ যদি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে থাকে অথবা সমজাতীয় অপরাধে বিদেশে অভিযুক্ত হয়ে থাকে এবং সেই সাজার পরিমান যদি ৫ বছর বা তারো বেশী হয়ে থকে। তবে সেই দ্বৈত নাগরিকের যদি দ্বিতীয় কোন দেশে যাওয়ার উপায় না থাকে তবে তার নাগরিকত্ব বাতিল করা যাবে না। কারণ, কানাডা জাতিসংঘের “কনভেনশন অন দি রিডাকশন অব স্টেটলেসনেস (১৯৬১)” সনদে স্বাক্ষরকারীদের একটি দেশ। ঐ সনদ অনুযায়ী কাউকে রাষ্ট্রহীন করা যাবে না।

২.   নতুন এই আইন নিয়ে কি এরপরও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে?

হ্যা, উদ্বগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। কানাডার ইমিগ্রেশন এন্ড রিফুজি অইনজীবীগণ এবং এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কানাডা তাই মনে করে। তারা সকলেই এই বিল সি-২৪ এর বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

নতুন এই আইনের সবচেয়ে বিতর্কিত দিক হলো- সিংহভাগ দ্বৈত নাগরিকের কানাডিয় নাগরিত্ব বাতিলের ক্ষমতা ফেডারেল কোর্ট এর বিচারকদের হাতে না দিয়ে দেওয়া হয়েছে ইমিগ্রেশন মন্ত্রী বা তার প্রতিনিধিদের হাতে।

বর্তমান ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দল মনে করছে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খরচ কমানো যাবে এবং অধিক দক্ষতার সঙ্গে কার্য সমাধান করা যাবে। তবে সমালোচকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্বৈত নাগরিকদেরকে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে এবং অন্যদিকে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে যখন নাগরিকত্ব বাতিলের প্রশ্ন আসবে।

সিভিল রাইটস গ্রুপস এবং এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মনে করে নতুন এই আইন দ্বৈত নাগরিকদের জন্য বৈষম্যমূলক। এর মাধ্যমে দ্বৈত নাগরিকদেরকে একঅর্থে ‘লেস কানাডিয়ান’কাতারে ফেলা হয়েছে এবং কানাডায় জন্ম নেয়া নাগরিকদের চেয়ে কম অধিকারসম্পন্ন করে তোলা হয়েছে। বৃটিশ কলম্বিয়ার সিভিল লিবার্টিজ এসোসিয়েশন এর ভাষ্য মতে দ্বৈত নাগরিকরা এখন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে গেল।

টরন্টো ভিত্তিক সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী রোকো গালাতি সিটিভি নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জানান, বিল সি-২৪ এর বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। আগামী শরৎকালের শেষের দিকে অথবা শীতের শুরুতে বিষয়টি নিয়ে তিনি আদালতে হাজির হবেন।

৩.   বিল সি-২৪ এ আর কি কি আছে?

বিল সি-২৪ এর আরেক নাম হলো- ‘কানাডিয়ান নাগরিকত্ব আইন শক্তিশালীকরণ’। বিলটি গত জুন মাসে রাজ সম্মতি লাভ করে। রানীর পক্ষে বিলটিতে সই করেন কানাডার গভর্ণর জেনারেল ডেভিড জনস্টন। নতুন এই আইনে সিটিজেনশীপ আবেদন পত্রে এবং আবেদন পত্র প্রসেসিং প্রক্রিয়ায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে আছে পার্মান্টে রেসিডেন্টদেরকে নাগরিত্ব পেতে হলে এখন আরো বেশী সময় ধরে কানাডায় শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে হবে। আগে নিয়ম ছিল ৪ বছরের মধ্যে ৩ বছর কানাডায় থাকলেই হবে, এখন সে নিয়ম পাল্টে করা হয়েছে ৬ বছরের মধ্যে ৪ বছর কানাডায় থাকতে হবে।