কানাডায় নাগরিকত্ব লাভের হার হ্রাস পাচ্ছে নাটকীয়ভাবে
মে ১০, ২০১৫
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : কানাডায় যারা ইমিগ্রেন্ট হয়ে এসেছেন তাদের মধ্যে নাগরিকত্ব লাভের হার নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। শতকরা ৭৯ ভাগ থেকে নেমে তা দাড়িয়েছে শতকরা ২৬ ভাগে। ২০০০ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে যারা কানাডায় এসেছেন তাদের ক্ষেত্রে এই ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। খবর – টরস্টার নিউজ সার্ভিসের।
ইমিগ্রেশন বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক এন্ড্রু গ্রিফিথ সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়ে বলেন, এটি সাম্প্রতিককালে আসা ইমিগ্রেন্টদের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। তার মতে, কানাডার জনজীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ব্যাপারে এবং কানাডার সঙ্গে একাত্মতা বোধের ব্যাপারে ইমিগ্রেন্টদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাড়াবে এই পরিস্থিতি। নাগরিকত্ব লাভের জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন দল প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ কর্তৃক ‘সিটিজেনশীপ টেস্ট’ ব্যবস্থায় কঠিন নিয়ম প্রবর্তন করায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
নতুন সিটিজেনশীপ টেস্ট কঠিন করায় অনেকের পক্ষেই তা পাশ করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং এর ফলে অনেক ইমিগ্রেন্টই নাগরিকত্বহীন অবস্থায় বিরাজ করবে। কানাডার রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকেও তাদেরকে দূরে থাকতে হবে।
সরকারের ইমিগ্রেশন বিষয়ক সাম্প্রতিক তথ্য যাচাই করে এন্ড্রু গ্রিফিথ দেখতে পান গত ২০০০ সাল থেকেই ইমিগ্রেন্টরা নাগরিকত্ব লাভের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। সম্প্রতিক বছরগুলোতে এই পিছিয়ে পড়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক ভাবে।
হিসেবে দেখা যায়, ২০০৮ সালে যারা কানাডায় এসেছেন তাদের মধ্যে শতকরা ২৬ ভাগ ইমিগ্রেন্ট নাগরিকত্ব লাভ করেছেন নতুন পদ্ধতির সিটিজেনশীপ টেস্টে উত্তীর্ন হয়ে। তার এক বছর আগে (২০০৭) যারা এসেছেন তাদের মধ্যে নাগরিকত্ব লাভের হার শতকরা ৪৪ ভাগ এবং ২০০০ সালের যারা এসেছেন তাদের মধ্যে এই হার ছিল শতকরা ৭৯ ভাগ।
এদিকে সিটিজেনশীপ এন্ড ইমিগ্রেশন বিভাগের মুখপাত্র জোয়াইন নিডো বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইমিগ্রেন্ট গ্রহনের ব্যাপারে কানাডা প্রথম সারির কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি। তার মতে এন্ড্রু গ্রিফিথ তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা করছেন। তিনি ঐসব ইমিগ্রেন্টদেরকে গননায় আনছেন না যারা এখনো নাগরিকত্ব লাভের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করেননি।
উল্লেখ্য যে, যে সকল ইমিগ্রেন্ট নাগরিকত্ব লাভ করেন তারা কানাডার চার্টার অব রাইটস এন্ড ফ্রিডম দ্বারা সুরক্ষিত। কানাডার বিভিন্ন নির্বাচনে তারা ভোট দেওয়ার অধিকারী এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারেন। তারা কানাডার পাসপোর্ট বহন করতে পারেন। কিন্তু ইমিগ্রেন্টদের সেই সুযোগ নেই। আর তাদের একটি বাড়তি ভয় থাকে। সেই ভয়টা হলো, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যে কোন সময় তাদের স্ট্যাটাস বাতিল করে দিতে পারে এবং কানাডা থেকে বহিস্কারও করতে পারে।
২০১৩ সালে ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে অবসরগ্রহন করা এন্ড্রু গ্রিফিথ অবশ্য বলেন যে, আমি বুঝি সরকারেরও যুক্তি আছে নতুন আইন করার পিছনে। তবে আমি নতুন ইমিগ্রেন্টদেরকে বর্জন করার চেয়ে অন্তর্ভুক্তি করার পক্ষে। আমাদেরকে একটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে যে, যারা নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদন করবেন তারা যাতে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নেন। পাশাপাশি আমাদেরকে এটিও দেখতে হবে যাতে আমরা অসাবধানতাবশত অতিরিক্ত বাধা সৃষ্টি না করি।
২০১০ সাল থেকে কানাডার নাগরিকত্ব লাভের জন্য পরীক্ষায় যে নতুন আইন করা হয়েছে তাতে আবেদনকারীকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে শতকরা ৭৫ভাগ নম্বর পেতে হবে। আগে এটি ছিল শতরা ৬০ভাগ। পরীক্ষায় কানাডার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে আবেদনকারীদের জ্ঞান যাচাই করা হয়। পরীক্ষায় নতুন নিয়ম চালু করার পর দেখা গেছে ক্যারিবিয়ান অঞ্চল থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে পাসের হার কমে গেছে শতকরা প্রায় ২০ ভাগ। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ এবং পূর্ব আফ্রিকার দেশ থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে পাসের হার কমে দাড়িয়েছে শতকরা ১৫ভাগেরও বেশী।
সিটিজেনশীপ এন্ড ইমিগ্রেশন বিভাগের মুখপাত্র জোয়াইন নিডো বলেন, নাগরিকত্ব লাভের পরীক্ষা সকল আবেদনকারীর জন্যই সমান এবং পাশের গড় হার শতকরা ৮৫। তার অর্থ হলো, নাগরিকত্ব লাভের পরীক্ষা খুব সহজ নয় আবার খুব কঠিনও নয়। এই পরীক্ষা পাশের মাধ্যমে নতুন নাগরিকেরা কানাডার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করে।
এন্ড্রু গ্রিফিথ বলেন, শুধু পরীক্ষা কঠিন করা হয়েছে তাই নয়, নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদনকারীদের ফি-ও দুই দফা বাড়ানো হয়েছে যা স্বল্প আয়ের ইমিগ্রেন্টদের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারীতে সিটিজেনশীপ প্রসেসিং ফি জনপ্রতি (প্রাপ্তবয়স্ক) ১০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৩০০ ডলার করা হয়। ডিসেম্বরে তা আরেকদফা বাড়িয়ে ৫৩০ ডলার করা হয়। পরীক্ষা পাসের পর আবার আরো ১০০ ডলার দিতে হচ্ছে ‘রাইট অব সিটিজেনশীপ’ ফি এর নামে।
কানাডায় ইমিগ্রেন্ট হিসেবে অবস্থানের মেয়াদও বৃদ্ধি করা হয়েছে নাগরিকত্ব লাভ করার জন্য। আগে নিয়ম ছিল ৪ বছরের মধ্যে ৩ বছর থাকতে হবে। এখন নাগরিকত্ব লাভ করতে হলে ৬ বছরের মধ্যে অন্তত ৪ বছর থাকতে হবে কনাডায়। যাদের বয়স ৫৫ বা তারো বেশী, নাগরিকত্ব লাভের জন্য তাদেরকে পরীক্ষায় অংশ নিতে হতো না। কিন্তু সেই আইনটিও পরিবর্তন করা হয়েছে যা জুন থেকে কার্যকর করা হবে। নতুন নিয়মে যাদের বয়স ৬৫ বা তারো বেশী, তাদেরকে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না।