অভিবাসনের নতুন বিধি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে পিছিয়ে রাখার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে
মার্চ ১৯, ২০১৫:
সিমোনা চিওসি
অভিবাসন সম্পর্কিত আইনে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তাতে সম্প্রতি কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জনকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কানাডায় স্থায়ী অধিবাসী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন বিধি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে স্থায়ীভাবে কানাডায় থেকে যাবার জন্য আবেদন করার সময় কানাডীয় কর্ম অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে যে ছাড় দেয়া হতো সেটি আর দেয়া হচ্ছে না।
এর ফলে কানাডার জন্য সাফল্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে খুঁজে নেয়ার কাজটা কঠিন হয়ে পড়বে। গত বছর কানাডার মাধ্যমিকউত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ৩ লাখ। ¯œাতক হবার পর এদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সবচেয়ে উন্মুক্ত ব্যবস্থা থাকার কারণে এত বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী কানাডায় পড়তে আসে।
কানাডিয়ান ব্যুরো অব ইন্টারন্যাশনাল এজুকেশন-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেনিফার হামফ্রিজ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এদেশে আসা শিক্ষার্থীদের স্পষ্ট ও যথাযথ চিত্র তুলে ধরতে চায়। যেসব অভিবাসী কানাডীয় সমাজের সঙ্গে মিশে গেছেন এবং খাপ খাইয়ে নিয়েছেন তারা হলেন কানাডার শ্রমশক্তির জন্য যথাযথভাবে তৈরি।”
নতুন বিধান অনুযায়ী, কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি অথবা ডিপ্লোমাধারী শিক্ষার্থীদেরকে অন্যান্য দক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে একটি পুলে আবেদন করতে হবে যেখান থেকে নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিভাগ স্থায়ী অধিবাসী হওয়ার জন্য প্রার্থীদেরকে আমন্ত্রণ জানাবে। এর আগে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে অন্যান্য দক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হতো না।
সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, এক্সপ্রেস এন্ট্রি নামের ওই পুলের কারণে আবেদন করার সময় কম লাগবে এবং এটি নিয়োগদাতাদের সঙ্গে সম্ভাব্য অভিবাসী কর্মচারীদের যোগাযোগের ভালো সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এ পর্যন্ত এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে আবেদনকারীদের মধ্যে মাত্র দুটি দলকে মন্ত্রণালয় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ জানানো হয় একটি নম্বর প্রাপ্তির ভিত্তিতে: একটি শ্রমবাজারে প্রভাব সম্পর্কিত সমীক্ষার ইতিবাচক হওয়া যে ওই কাজটি করার জন্য কোনও কানাডীয় শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এই সমীক্ষা থেকে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী পাবেন ৬০০ নম্বর। আরও ৬০০ নম্বর আসবে তার শিক্ষা ও বয়সের মত বিভিন্ন হিসাব থেকে। প্রথম আমন্ত্রণ জানানো দুটি দলের প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর ছিলো ৮০০-র বেশি। উল্লেখিত শ্রমবাজারের প্রভাব সম্পর্কিত সমীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থীদের পক্ষে এত নম্বর পাওয়া সম্ভব হবে না।
টরন্টোর গ্রিন অ্যান্ড স্পিগেল এলএলপির অংশীদার এবং অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী ইভান গ্রিন বলেন, “এই এক্সপ্রেস এন্ট্রি পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ সামান্য কর্মঅভিজ্ঞতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রমাণ করবে যে তাদের কাঙ্খিত কাজটি করার জন্য কোনও কানাডীয়কে পাওয়া যাচ্ছে না?”
শিক্ষার্থীরা অন্যান্য উপায় ব্যবহার করে এখনও পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করতে পারে যেমন প্রাদেশিক মনোনয়ন কর্মসূচি (চঘচ)। এই কর্মসূচি অনুযায়ী কানাডায় মাধ্যমিকউত্তর সার্টিফিকেট এবং পেশাদারি কর্মঅভিজ্ঞতাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, অন্টারিওর আড়াই হাজার পিএনপি স্পটের বেশিরভাগই পূরণ হয়েছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দিয়ে।
কিন্তু কেন্দ্রীয় কর্মসূচির ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী কানাডায় রয়ে গেছে যেগুলো আগেভাগে আলোচনা করা ছাড়া প্রাদেশিক কর্মসূচিতে স্থানান্তর করা সম্ভব নয়।
কানাডীয় কর্মঅভিজ্ঞতাসম্পন্ন শ্রেণির আওতায় যোগ্য ব্যক্তিদের আবেদনের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের বিষয়টি গত বছরের শীতে ঘোষণা করা হয়, কিন্তু তার সঠিক বিস্তারিত গত ডিসেম্বরে প্রকাশ করেন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস আলেকজান্ডার।
টরন্টোর একজন আইনজীবী যার মক্কেলদের মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাও রয়েছে সেই রবিন সেলিগম্যান বলেন, “এটি একটি মৌলিক পরিবর্তন যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিপর্যয়কর হয়ে দেখা দিয়েছে। এসব শিক্ষার্থী ¯œাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য বর্তমান সরকারের প্রবর্তিত নীতির ওপর আস্থা রেখেছিলো।
সাম্প্রতিক সময়ে ডিগ্রি অর্জনকারীরা ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারির শেষ সীমা ধরার জন্য গত শরৎ থেকে আবেদন পেশ করতে শুরু করে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে নাগরিকত্ব ও অভিবাসন মন্ত্রণালয় তার ওয়েবসাইটে জানায়, আগের নিয়মে আরও হাজার হাজার আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
অবশ্য গত সপ্তাহে শরতে আবেদন করা অনেকে তাদের আবেদনপত্র ফেরত পেয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে যে, কানাডীয় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শ্রেণির ৮ হাজার শুন্যস্থান গত বছর ২০ অক্টোবর পূরণ হয়ে গেছে। টরন্টো স্কারবরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯œাতক সারমাদ চৌধুরী নভেম্বরে আবেদন করেন কিন্তু তিনি তার আবেদনপত্র ফেরত পেয়েছেন এবং নতুন নিয়ম অনুযায়ী আবারও আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মি. চৌধুরী অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেছেন এবং সহকারী ব্যবস্থাপক হিসাবে সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ ঘণ্টা কাজ করেন। কিন্তু তিনি নতুন নিয়মে তার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “তারা যদি শুরুতেই আমাদের নতুন নিয়মে আবেদন করতে বলতো তাহলে সেটা হতো একরকম। কিন্তু এখন তারা কেবল বলছে, আহা রে!”
বাংলাদেশ থেকে আসা চৌধুরী জানায়, তার মা এসব ঘটনায় ভেঙ্গে পড়েছেন। চৌধুরীর লেখাপড়ার পেছনে ব্যয় হয়েছে এক লাখ বিশ হাজার ডলার। তার মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেছেন, “তোমার কানাডায় যাওয়ার ওপরই ছিলো আমাদের সব আশা-ভরসা। এজন্য আমরা আমাদের সঞ্চয়ের প্রতিটি অর্থ ব্যয় করেছি।” সূত্র অনুযায়ী, এক্সপ্রেস এন্ট্রি চালু হওয়ার পর একমাসে সেটি কেমন কার্যকর হয়েছে সে সম্পর্কিত সমালোচনার প্রেক্ষিতে এতে আরও পরিবর্তন আনা হতে পারে অথবা অপেক্ষাকৃত কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীদেরও ভবিষ্যতে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। এদিকে মি. চৌধুরী আশা করছেন যে তিনি সঠিক দেশই বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার অনেক বন্ধু অস্ট্রেলিয়ায়, যুক্তরাজ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রে গেছে। কিন্তু আমি এমন দেশ বেছে নিতে চেয়েছি যেখানে গ্রাজুয়েশনের পর আবাসনের জন্য যোগ্য হতে পারবো।” -দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল