এক্সপ্রেস এন্ট্রি নতুন অর্থনৈতিক অভিবাসী মনোনয়নের মডেল
মে ১০, ২০১৫:
কানাডার অভিবাসন কর্মসূচিতে গত ১ লা জানুয়ারি ২০১৫ থেকে নাটকীয় ও মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমাদের অভিবাসন কর্মসূচি আবেদনকারীদের দিয়ে পরিচালিত হওয়ার ধরণ থেকে রাতারাতি পাল্টে গিয়ে সরকারি মনোনয়ন দিয়ে পরিচালিত হওয়ার ধরণে চলে গেছে।
২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কানাডায় অভিবাসী হিসাবে আসার জন্য আবেদনকারীরা জানতেন যে, নির্দিষ্ট শ্রেণির স্থায়ী অধিবাসী হওয়ার জন্য নির্ধারিত মানদ- পূরণ করলে তাদের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।
২০১৫ সালে সেগুলোর সবই পরিবর্তন করা হয়েছে এবং এক্সপ্রেস এন্ট্রি পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এখন একজন আবেদনকারী কেবল তখনই স্থায়ী অধিবাসী হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন যখন তিনি একটি প্রাথমিক জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়ে ‘ধাবেদন করার আমন্ত্রণপত্র’ (ওহারঃধঃরড়হ ঞড় অঢ়ঢ়ষু ওঞঅ)পাবেন। এই আমন্ত্রণপত্র ছাড়া আপনি নতুন পদ্ধতিতে স্থায়ী অধিবাসী হওয়ার আবেদন করতে পারবেন না।
এক্সপ্রেস এন্ট্রি হলো নতুন অর্থনৈতিক অভিবাসী মনোনয়নের মডেল যার আওতায় কানাডায় অভিবাসনের জন্য নির্দিষ্ট কতগুলি শ্রেণিতে আবেদন করা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে : কেন্দ্রীয় সরকারের দক্ষ কর্মচারি কর্মসূচি (ঋঝড), কেন্দ্রীয় সরকারের দক্ষ ট্রেডস কর্মসূচি (ঋঝঞচ), কানাডীয় অভিজ্ঞ শ্রেণি (ঈঊঈ) এবং প্রাদেশিক মনোনয়ন কর্মসূচি (চঘচ)।
নতুন নিয়ম
এক্সপ্রেস এন্ট্রির পরিকল্পনা করা হয়েছে উল্লেখিত বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে এক বা একাধিক কর্মসূচিতে আবেদনের যোগ্য বিবেচিত হওয়া প্রার্থীদেরকে তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার চাহিদা রয়েছে এমন নিয়োগদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে। একজন আবেদনকারীর প্রথম কাজ হবে ওইসব কর্মসূচির কোনওটির মানদ- পূরণ করেন কি না সেটি যাচাই করা। দ্বিতীয় কাজ হলো আপনি যে ওইসব কর্মসূচির মানদ- পূরণ করতে পারছেন সেসম্পর্কিত প্রমাণাদি সংগ্রহ করা। আপনি প্রথম ধাপটি পূরণ করছেন এটি নিশ্চিত করার জন্যই আপনাকে প্রথমে দ্বিতীয় ধাপের কাজ অর্থাৎ প্রমাণাদি সংগ্রহের কাজটি করে ফেলতে হবে।
এর অর্থ কী? এক্ষেত্রে বলা যায়, আপনি এক্সপ্রেস এন্ট্রির জন্য নির্ধারিত কর্মসূচির মান পূরণ করছেন এটি নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে ভাষা সম্পর্কিত পরীক্ষার ফলাফলের স্কোর, আপনার শিক্ষাগত সনদের মূল্যায়ন এবং আপনার কর্মদক্ষতার প্রমাণ হিসাবে আপনার আগের চাকরিদাতার প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতে হবে। আপনি যদি নিশ্চিত হন যে কোয়ালিফাই করতে পারবেন তাহলে আপনাকে সিআইসিতে আপনার জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে পারেন। জীবনবৃত্তান্তের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সিআইসির সমন্বিত র্যাংকিং সিস্টেমে (সিআরএস) আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ধাপে (রেটিং) ফেলা হবে। আপনার শিক্ষা, কাজের অভিজ্ঞতা, ভাষাগত দক্ষতা, কানাডায় শিক্ষা ও কাজের অভিজ্ঞতা, কানাডায় আপনার স্বামী বা স্ত্রীর কর্ম বা শিক্ষার ইতিহাস বা ভাষাগত দক্ষতা অথবা অন্য কোনও ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আছে কি না ইত্যাদির ভিত্তিতে সিআরসিতে আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণ নম্বর পেতে হবে।
এই প্রক্রিয়ায় আপনার প্রোফাইল পেশ করাটাই জটিল কাজ। এটি নিছক প্রাথমিক আবেদনের প্রক্রিয়া নয় যেখানে আপনি কিছু কাটাছেড়া করতে পারেন এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে পারেন। আপরার প্রোফাইলই হচ্ছে মূল ভিত্তি যার ওপর নির্ভর করে সিআইসি আপনাকে আইটিএ দেবে কি দেবে না সেই সিদ্ধান্ত নেবে।
আপনি যদি কোন ভুল তথ্য দেন তাহলে আপনি হয়তো দেখবেন যে, আপনি যথাযথভাবে প্রতিনিধিত্ব করছেন না অথবা আপনাকে কেবল যে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার আবেদন নাকচ করা হবে এমন নয় বরং পাঁচ বছরের জন্য আপনার আবেদন করার ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হতে পারে।
দ্রুত ফলাফল দেয়ার জন্য কঠোর বিধান
আইটিএ পাবার পর ৬০ দিনের মধ্যে আপনাকে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য একটি ইলেক্ট্রোনিক আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। আপনাকে সব তথ্য ইলেক্ট্রোনিক মাধ্যমে দিতে হবে এবং তা দিতে হবে অবশ্যই ৬০ দিনের মধ্যে। এসব শর্ত পূরণ করা না হলে আপনাকে সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। মাত্র ৬০ দিন সময় থাকার কারণে আপনাকে আপনার আবেদনের সপক্ষে সব প্রমাণপত্র আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখতে হবে। নতুন এই অভিবাসন নীতির আওতায় আবেদন করতে আপনাকে আকৃষ্ট করতে আপনার নাকের ডগায় যে মূলো ঝুলানো হয়েছে সেটি হলো, আবেদন করার ছয় মাসের মধ্যে সেটি প্রক্রিয়াকরণ করা হবে। সুতরাং আইটিএ পাওয়া এবং স্থায়ী
বাসিন্দা হবার জন্য প্রয়োজনীয় সব দলিলপত্রসহ অনলাইনে আবেদন করার পর থেকে ছয় মাসের মধ্যে তা প্রক্রিয়াকরণ চূড়ান্ত করা হবে।
আপনি যদি সিআইসির সব চাহিদা পূরণ করতে এবং নির্ধারিত ৬০ দিনের মধ্যে সব তথ্য সরবরাহ করতে পারেন তাহলে এটি একটি দারুণ ব্যাপার। সিআইসি যেসব আবেদন পাবে তার ভিত্তিতে তারা এক্সপ্রেস এন্ট্রির আওতায় আবেদনকারীদের মধ্য
থেকে প্রথমে বাছাইয়ের কাজ শুরু করবে। প্রথম বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে। তখন সিআরএস পয়েন্ট ৮৮৬ পাওয়া ৭৭৯জন প্রার্থীকে আইটিএ দিয়েছে সিআইসি। দ্বিতীয় বাছাই হয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে এবং তাতে ৮১৮ পয়েন্ট পাওয়া ৭৭৯জন প্রার্থীকে আইটিএ দেয়া হয়। ভবিষ্যতেও যেসব আবেদনকারী সর্বোচ্চ সিআরএস স্কোর করবেন তাদের মধ্য থেকেই বাছাই করা হবে।
নতুন এক্সপ্রেস এন্ট্রি অভিবাসন নীতি সহজ নয়:
নতুন এক্সপ্রেস এন্ট্রি অবিবাসন নীতি সহজ নয়। নির্দিষ্ট কর্মসূচির সব চাহিদা পূরণ করার জন্য সব রকমের প্রমাণপত্র আপনার কাছে থাকতে হবে। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, প্রোফাইলে আপনি যেসব তথ্য দিয়েছেন সেগুলি সবই সম্পূর্ণ সঠিক এবং আইটিএ পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আবেদনপত্র পূরণ করার জন্য সহায়ক সব দলিলপত্র আপনার কাছে থাকতে হবে।
এটি হলো অর্থনৈতিক অভিবাসী সংগ্রহের জন্য সিআইসির নতুন বিশ্বব্যবস্থাÑ এই এক্সপ্রেস এন্ট্রির অর্থ সহজে এন্ট্রি পাওয়া নয়।
ক্যাথারিন সাস, অভিবাসন বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী।
-এশিয়ান প্যাসিফিক পোস্ট