ট্রুডোর লিবারেল দল ২০১৪ সালে এগিয়ে ছিলো, কিন্তু ২০১৫ সালে কী ঘটবে?
ফেব্রুয়ারী ৭, ২০১৫ :
এরিক গ্রেনিয়ের
২০১৪ সালজুড়ে সব নির্বাচনে জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল দল এগিয়ে ছিলো। এর পরেই ছিলো স্টিফেন হারপারের রক্ষণশীল দল এবং টম মুলকেয়ারের নিউ ডেমোক্রেট দল। ২০১৫ সাল শেষে এদের অবস্থান কী দাঁড়াবে?
২০১৪ সাল শেস হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এখন সবার নজর রয়েছে ২০১৫ সালের কেন্দ্রীয় নির্বাচনের তফসিলের দিকে।
চরম পরিণতিমূলক নতুন বছর শুরু হলো নির্বাচনে লিবারেল দলের এগিয়ে থাকার মধ্য দিয়ে। খুব কাছাকাছি থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রক্ষণশীল দল এবং তার পর নিউ ডেমোক্রেটিকরা তৃতীয় অবস্থানে। এখানে ২০১৪ সালের নির্বাচনের ওপর ফিরে দেখার মাধ্যমে দলগুলোর বর্তমান অবস্থানে পৌঁছানোর বিষয়টি তুলে ধরা হলো।
২০১৪ বছরটি জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল দলের জন্য খুব ভালো ছিলো কারণ তারা নির্বাচনে সব সময় অগ্রগামী থেকেছে। তবে এমন সময় এসেছে যখন মনে হয়েছে যে রক্ষণশীল দল হয়তো প্রথম স্থান থেকে লিবারেল দলকে হটিয়ে দেবে। নিশ্চিতভাবেই এই অবস্থা দেখা গেছে যখন হাউস অব কমন্সের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ শুরু হয় তখন। লিবারেল দল বছরটি শুরু করেছিলো খুবই স্বচ্ছন্দভাবে আটের মধ্যে ছয় পয়েন্ট নিয়ে। কিন্তু জুন মাসের মধ্যে দুই দলের মধ্যে সীমারেখা সঙ্কুচিত হয়ে মাত্র দুই পয়েন্টে দাঁড়ায়। ট্রুডোর দলের মধুচন্দ্রিমার কাল শেষ হয়ে আসার ঝুঁকি দেখা দেয়।
তবে গ্রীষ্মকালজুড়ে লিবারেলদের নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা ফুলেফেঁপে ওঠে যখন দলটির প্রতি জনসমর্থনের পরিমাণ ৩৮ থেকে ৩৯ শতাংশে বেড়ে যায়। রক্ষণশীলরা ৩০ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে পানির ওপর মাথা উঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয় এবং শরৎকালে পার্লামেন্ট পুনরায় শুরু হওয়ার সময়ের মধ্যে দুই দলের ব্যবধান আবারও কমে আসে।
বছর শেষে ওই অবস্থান স্থিতিশীল থাকলেও লিবারেলরা নির্বাচনে এখনও এগিয়ে রয়েছে, তবে বছর শেষে রক্ষণশীল দলের বিপরীতে তাদের সুবিধাজনক অবস্থান ছিলো খুবই পরিমিত আর তাহলো ৩২ শতাংশের বিপরীতে ৩৫ শতাংশ।
নিউ ডেমোক্রেটদের ক্ষেত্রে বছরজুড়েই নি¤œমুখি প্রবণতা অব্যাহত থাকে। তবে তারা বছর শুরু করেছিলো শক্তিশালী তৃতীয় অবস্থান দিয়ে যােেত তাদের জনসমর্থন ছিলো ২৪ থেকে ২৫ শতাংশ। কিন্তু গ্রীষ্মকালে লিবারেল দলের প্রতি সমর্থন বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এনডিপির সমর্থন সর্বনি¤œ ২০ শতাংশে নেমে আসে। ঐতিহাসিক বিচারে দলটি নির্বাচনে ভাল করতে থাকলেও তা ২০১১ সালের ৩১ শতাংশ জনসমর্থনের ধারেকাছেও নেই।
এনডিপির জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যার জায়গা ছিলো অন্টারিও যেখানে তারা জুলাই মাস থেকে গড়ে ২০ শতাংশ বা তার চেয়েও কম সমর্থন পেয়েছে।
এটি ট্রুডোর জন্য হতে পারে ভাল খবর। এই প্রদেশে লিবারেলরা বছরজুড়েই এগিয়ে থেকেছে, গ্রীষ্মকালে তারা সামান্য বেশি সমর্থন লাভ করেছে যেমনটা তারা সারাদেশেই পেয়েছে। তবে ২০১৪ সালের বেশিরভাগ সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিলো খুবই হাড্ডাহাড্ডি যখন বছরের প্রথমার্ধে উভয়ের মধ্যে মাত্র দুই থেকে তিন পয়েন্টের ব্যবধান ছিলো। গ্রীষ্মের নির্বাচনে দুই দলের মধ্যে যে বড় ব্যবধান অর্জিত হয় শরৎকালের শুরুতে তা আবার কমে আসে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ওই প্রদেশে ২০১৫ সালেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্র হবে কুইবেক যেখানে লিবারেল দল ও এনডিপি উভয়েই অগ্রগামিতা অর্জনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালের বেরিভাগ সময় লিবারেলরা এগিয়ে ছিলো। কিন্তু নিউ ডেমোক্রেটরা নির্বাচনে জয় পরাজয় নির্ধারণকারী ফরাসীভাষীদের মধ্যে এমন ব্যবধানে এগিয়ে থাকে যা তাদের জন্য নির্বাচনী আসন প্রাপ্তির দিক থেকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভালোভাবে সহায়ক হবে।
ব্লক কুইবেকোয়া দলটি ২০১১ সালের ভোটের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে সক্ষম হবে এবং ভোট ভাগাভাগির কারণে সম্ভবত আরও কিছু বেশি আসন পাবে বলে আশা নিয়ে বছরটি শুরু করে। কিন্তু জুন মাসে মারিও বিউলিউ দলের দায়িত্ব গ্রহণ করলে ব্লকের সমর্থন দ্রুত ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। বিউলিউর দায়িত্ব গ্রহণের আগেও দলটি কোন মাসেই গড়ে ২০ শতাংশের বেশি জনসমর্থন পায়নি। আর ২০১৪ সালে রক্ষণশীল দলের মোটামুটি উত্থান শুরুর পর ব্লকের অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।
পশ্চিমাঞ্চলে দলগুলোর অবস্থান
রক্ষণশীল দল আলবার্টাতেও নির্বাচনে ভালো করেছে। তারা ২০১৪ সালের বেশিরভাগ সময়জুড়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জনসমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এখানে লিবারেল দলের সমর্থন ছিলো মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে। স্মরণ করা যেতে পারে যে ২০১১ সালের নির্বাচনে দলটি এই প্রদেশে মাত্র নয় শতাংশ ভোট পেয়েছিলো। সুতরাং প্রায় তিনগুণ সমর্থন অর্জনের মাধ্যমে তাদের আসন সংখ্যা যথেষ্ট বাড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
২০১৪ সালের নির্বাচনে লিবারেল দল অপ্রত্যাশিত ভালো ফলাফল করেছে এমন আরও অঞ্চল হলো সাসকাটচাওয়ান ও ম্যানিটোবা। এই অঞ্চলে রক্ষণশীল দল বছরের প্রথমার্ধে এবং ডিসেম্বরে ৪০ শতাংশের বেশি জনসমর্থন নিয়ে স্বচ্ছন্দে এগিয়ে থাকলেও লিবারেল দল ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়। নিউ ডেমোক্রেট দল সাকাটচেওয়ানে বড় সাফল্যের আশা করলেও গত কয়েক মাস ধরে সেখানে তাদের অবস্থা নি¤œমুখি। এনডিপির জন্য ভালো জনসমর্থন রয়েছে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় যেখানে সত্যিকারের ত্রি-মুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। এখানে সারা বছর ধরে একেক সময় একেক দল এগিয়ে থেকেছে। লিবারেল দল যে কোনও স্থানে ২৭ থেকে ৩৭ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে দোলাচলের মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে নিউ ডেমোক্রেটদের জনসমর্থনের পরিমাণ হচ্ছে ২৩ থেকে ৩০ শতাংশ। এদিকে এই প্রদেশে ৩০ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে রক্ষণশীল দলের অবস্থা বেশ সুসংহত। আঞ্চলিক পর্যায়ে ভোট কিভাবে ভাগ হয় তার ওপর নির্ভর করে ২০১৫ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় খুবই আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা হতে পারে।
এই প্রদেশে আরেকটি দলের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে সেটি হলো গ্রিন পার্টি। ২০১৪ সালের বেশিরভাগ জুড়ে দলটি মোটামুটিভাবে ১০ শতাংশ জসমর্থন লাভ করে। এটি ছিলো ২০১১ সালের চেয়ে কিছুটা ভালো অবস্থান এবং এর ফলে দলের নেত্রী এলিজাবেথ মে’র পুনঃনির্বাচিত হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে আটলান্টিক কানাডায় রক্ষণশীল ও এনডিপির এমপিদের পুনঃনির্বাচিত হওয়া কঠিন হতে পারে কারণ ২০১৪ সালে লিবারেল দল এখানে প্রাধান্য বজায় রেখেছে। প্রায় সারা বছরজুড়েই দলটি গড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পেয়েছে। রক্ষণশীল দল ও এনডিপি দ্বিতীয় অবস্থান দখলের জন্য লড়াই করেছে।
২০১৫ সালের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী প্রচারণা নিঃসন্দেহে দেশকে আবারও নাড়া দেবে। তবে কোনও দলই খালিহাতে প্রচারণা শুরু করবে না। দলগুলো কোত্থেকে শুরু করবে সেটি দেখিয়ে দিচ্ছে ২০১৪ সালের নির্বাচন। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো তারা শেষ করবে কোথায় যেয়ে? – সৌজন্যে : সিবিসি নিউজ