গত ১০ বছরে নতুন বাড়ির দাম দ্বিগুণ হয়েছে
টরন্টো ও আশপাশ এলাকায় অনেকের জন্যই বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন মিলিয়ে যাচ্ছে
ব্রায়ান টাকি, ফেব্রুয়ারী ৭, ২০১৫ : জিটিএতে নতুন বাড়ির দাম যতই বেড়ে যাচ্ছে ততই লোকেরা জিজ্ঞাসা করছে: আমরা কি ভ্যাংকুভারের মতই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছি?
অনেক অর্থনীতিবিদ রয়েছেন যারা মনে করেন আমরা সে পথেই যাচ্ছি। ব্যাংক অব কানাডার সর্বশেষ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, বাড়ির বাজার দর স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৩০ শতাংশ বেশি এবং জিটিএর মত বাড়ির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করার এখনই সময়।
আমিও মনে করি যে, যে শিল্প কানাডীয়দের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয় এবং এই অঞ্চলে বছরে এক লাখ ৮০ হাজার কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে তাদের পক্ষ থেকেই ব্যাখ্যা আসাটা গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান একটি অঞ্চলে বসবাস করি যেখানে প্রতি বছর এক লাখ করে মানুষ এবং ৫০ হাজার করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। গত এক দশকে আমরা বাড়ি তৈরিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। আগে যেখানে মাটির সঙ্গে সম্পর্কিত বাড়ি যেমন একক-বিচ্ছিন্ন বাড়ি, সেমিপাকা বাড়ি এবং টাউন হোম ধরণের বাড়ি তৈরি হতো এখন সেখানে কন্ডোমিনিয়ামের মত গগনচুম্বি বাড়ি তৈরি হচ্ছে।
আমার বক্তব্যের প্রমাণ হিসাবে বলা যায়, ১০ বছর আগে জিটিএতে বিক্রি হওয়া বাড়ির ৭৫ শতাংশই ছিলো অনতিউচ্চ ভবন, কিন্তু আজকের দিনে বাজারে প্রাধান্য বিস্তার করেছে হাইরাইজ বিল্ডিং। চলতি বছর এই অঞ্চলে প্রায় ৩৫ হাজার নতুন বাড়ি বিক্রি হয়েছে এবং বর্তমানে ২১৭টি হাইরাইজ বিল্ডিং নির্মাণাধীন রয়েছে যা গত কয়েক বছরের বিক্রির ফল। আমরা হাইরাইজ ভবনবিশিষ্ট রাজধানী শহর যেমন নিউইয়র্ক, লস-অ্যাঞ্জেলেস এবং শিকাগোকে ছাড়িয়ে যাচ্ছি।
এটি হলো প্রাদেশিক প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনায় (চষধপবং ঃড় এৎড়)ি নির্ধারিত জোরালো লক্ষ্যের প্রত্যক্ষ ফলাফল যাতে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হিসাব অনুযায়ী নগর কেন্দ্রে এবং ট্রানজিট করিডোরগুলোতে বাড়তি জনসংখ্যার সংকুলানের লক্ষ্য স্থির করা হয়।
নির্মাণ শিল্প প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনার সব লক্ষ্যকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এর সহযোগী দলিল গ্রিনবেল্ট প্লানে (এৎববহনবষঃ চষধহ) নির্ধারিত উন্নয়নের সীমার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছে।
প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনার আওতাধীন পৌর সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত উন্নয়নযোগ্য ভূমির পরিমাণ সীমিত হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এর দামও বেড়ে গেছে।
কেবল জমির দামই নয়, সেইসঙ্গে নির্মাণ ব্যয়ের সাথে সাথে সরকারের বিভিন্ন চার্জ ও ফির দাম বাড়ানোর কারণে এই অঞ্চলে বাড়ির দাম বেড়েছে।
গত ১০ বছরে একটি নতুন বাড়ির দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে হাইরাইজ ও লোরাইজ বাড়ির দামের মধ্যকার ব্যবধানও রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
ন্যাশনাল রিয়েল এস্টেট স্টেটিস্টিকস কনসালট্যান্ট রিয়েলনেট কানাডা ইন্ক-এর সম্প্রতি প্রকাশিত তত্যে দেখা যাচ্ছে যে, নতুন একটি লোরাইজ বাড়ির গড় দাম যেখানে ৬৯৪,৬২৯ ডলার সেখানে কন্ডোমিনিয়ামের একটি নতুন স্যুইটের গড় দাম ৪৫৫,৫৩৫ ডলার।
দুই ধরণের বাড়ির দামের মধ্যে পার্থক্যটা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং অনেকের জন্যই নতুন বাড়ি কেনার
স্বপ্ন সুদূরে মিলিয়ে যাচ্ছে বিশেষ করে যারা প্রথম বাড়ি কিনতে চান তাদের। সেইসঙ্গে নতুন আসা কানাডীয়রা এরই মধ্যে বাড়ির জন্য ডাউনপেমেন্টের অর্থ যোগাড়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন।
এটি সবার জন্যই একটি সমস্যাÑ রিয়েল এস্টেট শিল্প, সরকার এবং ভোক্তা সবার জন্যই।
রিয়েলনেট প্রেসিডেন্ট জর্জ ক্যারাস বলেছেন যে, জিটিএতে ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা দেখার জন্য আপনি কানাডার পশ্চিম উপকূলের দিকে তাকাতে পারেন।
জিটিএ বর্তমানে যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে বৃহত্তর ভ্যাংকুভার ২০০৪ সালে সেই সমস্যার মোকাবিলা করেছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাংকুভারে লোরাইজ ও হাইরাইজ ভবনের দামের পার্থক্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে ২০০৪ সালের ২৪০,০০০ ডলার থেকে বর্তমানে ৮০০,০০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বাড়ির এই উচ্চ মূল্যের কারণ চাহিদা সরবরাহকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, কারণ জিভিএ হলো পানি ও পর্বতশ্রেণিবেষ্টিত।
জিটিএও একইভাবে দক্ষিণে লেক অন্টারিও, পূর্ব, উত্তর ও পশ্চিমদিকে গ্রিনবেল্ট দিয়ে বেষ্টিত।
কানাডার গৃহায়ন বিষয়ক প্রবীন অর্থনীতিবিদ উইল ডানিং বলেন, বর্তমান প্রবণতা অবশ্যই সমস্যাসঙ্কুল। তিনি বলেন, জিটিএতে বাড়ির চাহিদা ও সরবরাহের ব্যাপারে কোনকিছু করা না হলে এখানেও ভ্যাংকুভারের মত লোরাইজ ভবনের দাম একইভাবে বাড়তে থাকবে। বর্তমানে ভ্যাংকুভারে একটি লোরাইজ ভবনের গড় দাম ১২ লাখ ডলার।
এটি একটি বিরাট অংক কিন্তু এখানে জিটিএতে এমনটা শোনা যায়নি তা নয়। আর এজন্যই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, নির্মাণ শিল্প, সরকার এবং ভোক্তা আমরা সবাই এই বিষয়টির সমাধানের জন্য একসঙ্গে কাজ করবো। এটি নিশ্চিত করা জরুরী যে, জিটিএ একটি প্রাণবন্তু এলাকা হয়েই থেকে যাবে যা বিশ্বের ঈর্ষার বস্তু।
-সৌজন্যে : টরন্টো স্টার
(ব্রায়ান টাকি হলেন বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও সিইও এবং ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনাবিদ। তিনি মিউনিসিপ্যাল, আঞ্চলিক ও প্রদেশিক সরকারের হয়ে কাজ করেছেন।)