টরন্টোতে আবাসনের ব্যয় ২০১৫ সালে আবারও দেশের গড় ব্যয়কে ছাড়িয়ে যাবে
কানাডার অত্যন্ত চড়া রিয়েল এস্টেট মার্কেট উচ্চমাত্রার গৃহায়ন ঋণের সঙ্গে মিলে দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুতর ঝুঁকির সৃষ্টি করতে যাচ্ছে
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : টরন্টোতে বাড়ির দাম ২০১৫ সালে আরও ৪ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে সারাদেশে বাড়ির গড় দাম সম্ভাব্য ২.৫ শতাংশ বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে যাবে। জাতীয় রিয়েল এস্টেট ব্রোকারেজ রিম্যাক্স-এর (জবগধী) গৃহায়ন বাজার সম্পর্কিত বার্ষিক রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে।
রিম্যাক্স-এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট গুরিন্দর সাঁধু বলেন, তেলের বাজারের মন্দা নয় বরং ক্রমবর্ধমান সুদের হারই আগামী বছর কানাডার বাজারে সবচেয়ে বড় অজানা বিষয় হিসাবে দেখা দেবে। ইতিহাসের সর্বনি¤œ সুদের হার আগামী শরৎকাল অথবা এমনকি পরের গ্রীষ্মকাল থেকেই বাড়তে শুরু করবে। তবে কিছু অর্থনীতিবিদ পূর্বাভাস দিচ্ছেন যে, তেলের দর পড়ে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট ধসের কারণে অটোয়া সরকার সুদের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ বিলম্বিত করতে পারে।
এক সাক্ষাৎকারে সাঁধু বলেন, যাই হোক না কেন, সুদের হার বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অন্তত কিছু সময়ের জন্য ধীর ও যথেষ্ট অবিচলিত থাকতে পারে। এর ফলে বাড়ির উদ্বিগ্ন ক্রেতারা নি¤œ সুদের হারে তাদের মর্টগেজ অনুমোদন করানোর জন্য ২০১৫ সালে বিপুল সংখ্যায় বাড়ি কেনার দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। এতে করে কানাডার অনেকটা জুড়ে ভারসাম্যপূর্ণ বাজার সৃষ্টিতে সহায়ক হতে পারে। কারণ অনেক স্থানে বাড়ি কেনার জন্য নাম অন্তর্ভুক্তকারীদের সংখ্যা প্রকৃত চাহিদাকে ছাড়িয়ে গেছে। তাই বাড়ির দর অনেকটা সীমিত রয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, টরন্টোতে আরেকটি ব্যাপার ঘটেছে। কন্ডোর মত না হয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত একক বাড়িগুলোর সংখ্যা ইতিহাসের সর্বনি¤েœ রয়ে গেছে এবং ২০১৫ সালে এই অবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। ইতিমধ্যে ক্রেতার সংখ্যা আরও বাড়বে এবং গড় দামের চেয়ে বাজার দর বেশি হবে।
জিটিএ-তে (এঞঅ) ২০১৩ সালের তুলনায় এবছর বাড়ির দাম ৮ শতাংশেরও বেশি।২০১৫ সালের শেষ নাগাদ প্রতিটি বাড়ির গড় দাম হতে পারে ৫৮৯,১০০ ডলার যা চলতি বছর ছিলো ৫৬৬,৪০০ ডলার।
জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির কারণেও ২০১৫ সালে টরন্টোর বাজার চড়া হতে পারে।
রিপোর্টে বলা হয়, ‘‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মিউনিসিপ্যালিটির নির্বাচন শহরগুলোতে এশধরণের স্থিতিশীলতার অনুভূতি সৃষ্টি করেছে যা সচরাচর স্থানীয় রিয়েল এস্টেটের জন্য ভাল বলেই প্রমাণিত হয়েছে।’’ এতে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালে টরন্টোতে অনুষ্ঠিতব্য প্যান-অ্যাম গেমস যা টরন্টোকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে, সেই গেমের কারণেও বাড়িঘর কেনাবেচার বাজার চাঙ্গা হতে পারে এবং এর ফলে বাড়ির দাম আরও বাড়বে।
সাঁধু বলেন, ওই গেমের কারণে প্রথমবারের মত কন্ডো বা ৯০৫ অঞ্চলে বাড়ির ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়তে পারে Ñ যা বাড়ির দাম বাড়ার কারণ হতে পারে।
৩৮ পৃষ্ঠার এই রিপোর্ট প্রণয়ন করা হয়েছে কানাডার প্রায় ৩২টি হাউজিং মার্কেট পরীক্ষা করে, বাড়ি বিক্রির হার এবং ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু করে সেন্ট জন’স পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের রিয়েলটরদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে। চলতি সপ্তাহে তেলের বাজারে মন্দাভাব দেখা দেয়ার কারণে শেয়ারবাজারে তার প্রভাব সৃষ্টির আগেই ওই রিপোর্ট লেখা হয়েছে। গৃহায়ন বিষয়ক পর্যবেক্ষকরা এখন বিশেষ করে নজর রাখছেন ক্যালগেরির দিকে। কারণ ২০১৪ সাল জুড়ে বাড়ি বিক্রির হারের আধিক্য এবং বেশি মূল্য পাওয়ার দিক থেকে টরন্টো এবং ভ্যাংকুভারের সঙ্গে ক্যালগেরি ছিলো বাড়ি কেনাবেচার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্পট।
রিম্যাক্স পূর্বাভাস দিয়েছে যে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ক্যালগেরির বাড়ির দাম গড়ে ৪৮৩,০০০ ডলারে উন্নীত হবে যা ২০১৩ সালের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। এর কারণ বহুলাংশে হলো ‘‘জ্বালানি খাতে কর্মসংস্থানের ভাল ব্যবস্থা থাকায় এই শহরে ব্যাপকভাবে অভিবাসন শুরু হওয়া।’’
সাঁধু মনে করেন, তেলের বাজারের মন্দা পরিস্থিতির প্রভাব ক্যালগেরির গৃহায়ন খাতের ওপর পড়তে বেশ সময় লাগবে এবং তা ২০১৫ সালে অনুভূত না-ও হতে পারে। আর বাড়ির দাম এই সময়ের মধ্যে ৫০০,০০০ ডলারে পৌঁছে যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরেই তেলের দর ব্যাপকভাবে কমতে থাকে কিন্তু আবাসন খাতের ওপর এমনকি ক্যালগেরির আবাসন খাতেরও ওপরও তার কোন প্রভাব আমরা দেখতে পাইনি।’’
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কেলোওনা এবং এন.বির মঙ্কটন শহরে বাড়ির দাম ২০১৫ সালে লাভজনক হতে পারে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এই দুই শহরে জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি, বাড়ির চাহিদা কম থাকা এবং উন্নততর অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে যথাক্রমে ৭ শতাংশ ও ৬ শতাংশ হারে বাড়িঘর বাড়বে।
রিপোর্টে বলা হয়, বৃহত্তর ভ্যাংকুভার ও ভিক্টোরিয়ায় বাড়ির দাম ৪ শতাংশ হারে লাভজনক হয়ে ২০১৫ সালের শেষে গড়ে যথাক্রমে ৮৬৩,০০০ ও ৫১৩,৬০০ ডলারে উঠতে পারে।
হ্যামিলটন-বার্লিংটনে বাড়ির দাম ২.৭ শতাংশ হারে লাভজনক হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ২০১৩ থেকে চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত ৬ শতাংশ লাভজনক ছিলো।
কানাডার আবাসন বাজারে সুদের হার এখনও কমÑ যদি সামান্য বাড়েও তাহলেও এটি ইতিহাসের সবচেয়ে কমই থাকবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অভিবাসনও অবিচলিত রয়েছে।
সাঁধু বলেন, অভিবাসীদের ¯্রােত এদেশের জনগণের জন্য সহায়ক হবে। কারণ অনেক অভিবাসীই এখানে আসার পর খুব কম সময়ের মধ্যে বাড়িঘর কিনছেন। আগামী বছরের মধ্যে অভিবাসীর সংখ্যা আরও ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার পর্যন্ত বাড়বে।
রিম্যাক্সের পূর্বাভাসে বলা হয়, ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ কানাডায় বাড়ির গড় দাম ৪১৬,৩০০ ডলারে পৌঁছতে পারে যা ২০১৪ সালে ছিলো মোটামুটি ৪০৬,০০০ হাজার ডলার।
জানুয়ারী ১, ২০১৫
– টরস্টার নিউজ সার্ভিস