ডলি বেগমের প্রতি আমাদের আন্তরিক অভিবাদন
কানাডায় আমাদের প্রথম প্রজন্মের অধরা স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলেছেন আমাদেরই দ্বিতীয় প্রজন্মের মেয়ে ডলি বেগম। তিনি গত ৭ জুন অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনে এমপিপি পদে জয়ী হয়েছেন। এই পদে এই প্রথম কোন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান জয় লাভ করলেন এবং সৃষ্টি করলেন বাংলাদেশীদের জন্য অনন্য এক ইতিহাস। আমরা তাকে জানাই আমাদের আন্তরিক অভিবাদন ও সাধুবাদ।
আমরা জানি ইতিপূর্বে ব্রিটেনে এরকম ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন রুশনারা আলী। তিনি ২০১০ সালে পূর্ব লন্ডনের ‘বেথনাল গ্রিন এ্যান্ড বো’ আসনে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসাবে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের মেয়াদেও তিনি একই পদে পুননির্বাচিত হন। ঐ বার তার সাথে নির্বাচিত হন আরো দুই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও রূপা হক। টিউলিপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি। এরা তিনজনই লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত হন।
এই তিনজনই বৃটেনে দ্বিতীয় প্রজন্মের ইমিগ্রেন্ট। কিন্তু সেই দেশটিতে বাঙ্গালীদের অবস্থান আজ প্রায় দেড় শত বছর ধরে। উইকিপিডিয়ার এক তথ্যে দেখা যায় ১৮৭৩ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সাথে সিলেট অঞ্চলের বাঙ্গালীরা রাঁধুনি হিসাবে বৃটেনে আসতে শুরু করেন। সেই হিসাবে বলা যায়, বৃটেনের পার্লামেন্টে একটি আসন দখল করার জন্য বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ইমিগ্রেন্টদেরকে চার/পাঁচ প্রজন্ম ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। বৃটেনের তুলনায় কানাডায় আমাদের ডলি বেগম অনেক অল্প সময়ে সেই ইতিহাস সৃষ্টি করলেন।
উল্ল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে অন্টারিওসহ কানাডার অন্য কোন প্রভিন্সে কোন বাংলাদেশী কানাডিয়ান এরকম মর্যাদায় ভুষিত হননি। এমপিপি বা এমপি কোন পদেই কোন বাংলাদেশী পাশ করতে পারেননি। নির্বাচনে বাংলাদেশী কানাডিয়ানদের অংশগ্রহণও ছিল বলতে গেলে প্রায় শূন্যের কোঠায়।
অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) থেকে মনোনয়ন পেয়ে ডলি বেগম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন স্কারবরো সাউথওয়েস্ট রাইডিং থেকে। তিনি ১৯ হাজার ৭ শত ৫১ ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টির গ্রে এলিস পেয়েছেন ১৩ হাজার ৫ শত ৯২ ভোট।
ডলি বেগম নির্বাচিত হওয়ার পর টরন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটিতে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। একই সাথে কানাডার অন্যান্য প্রভিন্সের বাঙ্গালীদের মধ্যেও।
ডলি বেগমের বিজয়ী হওয়ার বিষয়টি একটু আলাদা বিবেচনার দাবী রাখে। কারণ, যে রকম পারিবারিক সংকট ও দুর্বিপাকের মধ্য দিয়ে তাকে বড় হতে হয়েছে, সেটা একেবারেই বিরল ঘটনা। আমরা জেনেছি, কানাডায় আসার কিছুদিন পরই তার বাবা এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর হাসপাতাল আর রিহ্যাবে কাটিয়েছেন। ডলির মা ও বাবার বক্তব্য থেকে জানা যায়, একটা চরম সংকটের মধ্য দিয়ে অবর্ণনীয় এক দুঃসময় অতিক্রম করতে হয়েছে তাদেরকে। কষ্ট ভোগ করেছে তারা নানাভাবে। অর্থাভাবে ছেলে-মেয়েদেরকে প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়াতে পারেনি তারা। কিন্তু তারপরও তারা ভাল রেজাল্ট করছিল।
এরকম একটা অবস্থা থেকে উঠে এসে ডলি বেগম কানাডায় যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তা যে কোন বিবেচনায় অত্যুতকৃষ্ট উদাহরণ। আমাদের আশা, তার এই অত্যুতকৃষ্ট উদাহরণ দেখে কমিউনিটির অন্যেরাও এগিয়ে আসবেন কানাডার মূলধারার রাজনীতিতে নিজেদের একটি সুদৃঢ় অবস্থান সৃষ্টি করার জন্য।
জুলাই ৬, ২০১৮