হিংস্রতা ও সন্ত্রাসের কোন ধর্ম নেই

কুইবেকে বন্দুক হামলায় নিহতদের কফিনের সামনে দাড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন (ডান থেকে) প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, কুইবেকের প্রিমিয়ার ফিলিপ কুইয়ার্ড, কুইবেক সিটি মেয়র রিজিস লেবুমি ও মন্ট্রয়ল সিটির মেয়র ডেসিন কুডিয়ার। ছবি : কানাডিয়ান প্রেস

গত ২৯ জানুয়ারী ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব কুইবেকে মাগরিব নামাজ আদায়কালে আলেকজান্ডার বিসোনেট নামের এক যুবক মুসল্লিদের উপর অতর্কিতে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হামলা চালান। বন্দুক হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৬ জন মুসল্লি। হামলার ঘটনায় আহত হন আরো ১৯ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আহত ৮ জন। এদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।

আমরা দেখেছি ৯/১১ এর পর কানাডায় মুসলমানদের উপর এরকম নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলা আর হয়নি। একসাথে ঝরে গেল এতগুলো নিরাপরাধ প্রাণ!

কানাডায় মুসলমানদের উপর হামলার ঘটনা ইতিপূর্বেও ঘটেছে বেশ কিছু। এর মধ্যে আছে মসজিদ ভাঙ্গচূড়, আগুন লাগিয়ে দেয়া, আপত্তিকর দেয়ালচিত্র অঙ্কণ, মসজিদের দেয়ালের গায়ে বর্ণবাদী শ্লোগান লিখে রাখা, মসজিদ প্রাঙ্গণে শুকরের কাটা মাথা নিক্ষেপ, হিজাব/নিকাব পরিহিতা মুসলমান মহিলাদের উপর হামলা, বর্ণবাদী মন্তব্য করা ইত্যাদি। তবে এই সমস্ত হামলায় কোন প্রাণহানি ঘটেনি। মারাত্মক জখম বা আঘাতপ্রাপ্ত হননি কেউ।

কিন্তু কুইবেক সিটিতে যা ঘটে গেল তার জন্য কি কেউ প্রস্তুত ছিলেন? হয়তো ছিলেন বা এরকম একটি আশংকা হয়তো কারো কারো মনে ছিল। কিন্তু এতটা ভয়াবহ আক্রমণের ঘটনা ঘটে যাবে তা হয়তো কেউই ভাবেননি।

ঘটনার পর নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির এমপি চার্লি এঙ্গাস বলেন, “কুইবেকের এই হত্যাযজ্ঞ কানাডায় যে অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তারই একটি সতর্কবাণী।”

ঘটনার পরপরই কানাডার শোকার্ত প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পার্লামেন্টে দাড়িয়ে তিনি বলেন, “কুইবেক সিটির ইসলামিক সেন্টারে পরিচালিত হামলায় যে ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে তা সন্ত্রাসী ঘটনা। এই সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটানো হয়েছে কানাডার বিরুদ্ধে, কানাডিয়ানদের বিরুদ্ধে।” তিনি কানাডায় বসবাসরত ১০ লাখ  মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। কানাডার ৩৬ মিলিয়ন হৃদয় আপনাদের সঙ্গে সহমর্মী।” প্রধানমন্ত্রী কানাডিয়ানদেরকে ভীত না হওয়ার আহ্বানও জানান।

কিন্তু এরকম একটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর কানাডিয়ান বিশেষ করে মুসলিম কানাডিয়ানরা কি ভীত না হয়ে থাকতে পারবেন? বিশিষ্ট ইমাম ও ইসলামিক সুপ্রীম কাউন্সিল অব কানাডার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট সৈয়দ সোহরাওয়ার্দী বলেন, “আমি কানাডায় অবস্থিত মুসলিমদের মঙ্গল নিয়ে খুবই আতংকিত এবং বেশ উদ্বিগ্ন। আমি এখানকার মসজিদগুলোর নিরাপত্তা নিয়েও বেশ উদ্বিগ্ন। আমি উদ্বিগ্ন আমাদের নারী-পুরুষ ও শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে।”

আমরা জানি এটি একটি কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলা। জেনে হোক বা না জেনে হোক এই হামলায় অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন রক্ষণশীলগোষ্ঠির কতিপয় নব্য জাতীয়তাবাদী ব্যক্তি যারা ইমিগ্রেন্ট বিরোধী এবং বিশেষ করে মুসলিম ইমিগ্রেন্ট বিরোধী। আমরা এও জানি ইতিপূর্বে মুসলিম নাম ধারী কয়েকজন সন্ত্রাসীও কানাডার মাটিতে হামলা চালিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঐ হামলায় মন্ট্রিয়ল ও অটোয়াতে দুইজন সেনা সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে।

কিন্তু এ সবই মূল সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন মানসিক বিকারগ্রস্ত কিছু লোকের কাপুরুষোচিত কাজ।

টরন্টোর একটি মসজিদের ইমাম জনাব শিহাব বলেন, “এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদেরকে অনুধাবন করতে হবে আমরা কানাডিয়ানরা সবাই বিদ্বেষ ও হিংস্রতার বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। একজন ব্যক্তিবিশেষের অপরাধের জন্য গোটা কমিউনিটিকে দোষারোপ করা শোভন নয়। হিংস্রতার কোন ধর্ম নেই, সন্ত্রাসেরও কোন ধর্ম নেই। ”

আমরাও গভীরভাবে বিশ্বাস করি হিংস্রতা ও সন্ত্রাসের কোন ধর্ম নেই। এনডিপি নেতা টম মুলকেয়ারের সঙ্গেও আমরা একমত যিনি বলেছেন, “এই ধরণের কানাডায় আমরা বিশ্বাসী নই, আমরা এ ধরণের সমাজে বাস করতে চাই না। কানাডা একটি বৈচিত্রের দেশ। আমরা এই দেশে বিদ্বেষ ও হিংস্রতাকে বরদাস্ত করি না করবোও না।”

ভীতনাহয়েআমাদেরকেএখনথেকেনব্যজাতীয়তাবাদীসন্ত্রাসীএবংমুসলিমনামধারীসন্ত্রাসীদেরবিষয়েওসদাসতর্কথাকতেহবে।এটিপ্রতিটিনাগরিকেরইমৌলিকদায়িত্ব।কানাডাকোনএককগোষ্ঠিবাসম্প্রদায়েরদেশনয়।সকলেরইদেশএটি।একেনিরাপদরাখারব্যাপারেআমাদেরসকলেরসমানদায়িত্বরয়েছে।

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭