অন্টারিওতে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য

কানাডিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভ-এর নতুন এক রিপোর্টে জানা গেছে, অন্টারিওর মোট জনগণের মধ্যে সবচেয়ে ধনী অর্ধেক লোক প্রদেশটির আয়ের ৮১ শতাংশ নিয়ে যান। অবশিষ্ট অর্ধেক মানুষ আয় করেন মোট আয়ের মাত্র ১৯ শতাংশ। টরন্টো স্টারে প্রকাশিত ঐ রিপোর্টে আরো বলা হয়, ২০০০-২০০২ সালে আয়ের বৈষম্য ছিলো ৭৮-২২ শতাংশ। তা থেকে বেড়ে বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে।

সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভ এর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ শেইলা বলেন, “আয়ের দিক থেকে শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থানরত অর্ধেক পরিবার তাদের কাজের জন্য ক্রমশই বেশি হারে অর্থ পাচ্ছেন।”

তিনি বলেন, “আয়-কাঠামোর সবচেয়ে নিচে অবস্থারত অর্ধেক মানুষের জন্য চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের মজুরি দিন দিন কমছে এবং শ্রমবাজার তাদের জন্য কোনওরকম আনুকূল্য দেখাচ্ছে না।”

শেইলা বলেন, “শ্রমবাজার কিছু কিছু কর্মজীবীর জন্য সুবিধা সৃষ্টি করে দিচ্ছে অন্যদের ক্ষতির কারণ ঘটিয়ে। এখন শ্রমবাজার এবং কর্মীদের ‘ন্যায্য হিস্যা’ বুঝিয়ে দেয়া দরকার।”

আমরা ইতিপূর্বে বিভিন্ন গবেষণা ও জরীপ রিপোর্টে দেখেছি, অরক্ষিত ও অস্থায়ী কর্মসংস্থান অন্টারিওতে কর্মজীবী মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। কঠিন চাপ, অসুখী মনোভাব এবং অস্বাস্থ্যকর পারিবারিক জীবন হলো এই অরক্ষিত ও অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় পরিণতি। অন্টারিও ফেডারেশন অব লেবার এর সর্বশেষ জরীপে এই তথ্য প্রকাশিত হয়। জরীপে অংশ নেন ৪ হাজারেরও বেশী কর্মজীবী। জরীপে অংশ নেয়া শ্রমজীবীদের মতে অরক্ষিত ও অস্থায়ী কর্মসংস্থান উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার প্রধান কারণ হিসাবে পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি টরন্টো স্টারের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়।

অন্যদিকে কানাডিয়ান প্রেস এ প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদন থেকে আমরা এটিও জেনেছি যে, অন্টারিওতে অনেক কর্মস্থলে অনেক কর্মী তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। Employment standards act and the labour relations act এর পর্যালোচনার পর গত বছর জুলাই মাসে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল এই অভিমত প্রকাশ করেছিলেন।

উল্ল্লেখ্য যে, অন্টারিওতে অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক তাদের কর্মীদেরকে উপযুক্ত বেতন দিচ্ছেন না, দিচ্ছেন না ভেকেশন পে এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধাও। ফলে এই সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীগণ বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের পাওনা অধিকার থেকে। বিভিন্ন কর্মস্থলে শ্রম মন্ত্রণালয় পরিচালিত তদন্তে দেখা গেছে অন্টারিও’র শ্রম আইনের লংঘন হচ্ছে শতকরা ৭৫ থেকে ৭৭ ভাগ ক্ষেত্রেই। এভাবেই অন্টারিও’র দীর্ঘ দিনের পুরানো গুণে ধরা Employment standards act এর ফাঁকফোকর গলিয়ে একশ্রেণীর অসাধু মালিকেরা শ্রমজীবী মানুষকে ঠকিয়ে যাচ্ছেন অনেক বছর ধরেই। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে অন্টারিওতে যেখানে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়। ফলে ঐ শ্রমিকরা যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন বা প্রতিবাদ করবেন তারও কোন উপায় নেই।

আর এভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে আন্টারিওতে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য। আমরা মনে করি, এ অবস্থার আশু সমাধান প্রয়োজন।

আশার কথা এই যে, অন্টারিওর Employment standards act and the labour relations act এর পর্যালোচনার পর দুই সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল যে বিষয়গুলো সংস্কারের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন তা বিবেচনা করে অন্টারিও সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী বছরের মধ্যেই এই গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশসমূহ অধিকাংশ বাস্তবায়িত করা হবে।

উল্ল্লেখ্য যে, অন্টারিও প্রভিন্স ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ ১১.৪০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২০১৯ সালের মধ্যে ১৫ ডলার প্রস্তাব করেছে। আমরা আশা করবো সরকারের এই সিদ্ধান্ত অন্টারিওতে শ্রমজীবী মানুষের উদ্বেগ ও উতকণ্ঠা অবসানে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সেপ্টেম্বর ২, 2017