পার্লামেন্টে ‘এন্টি ইসলামোফোবিয়া’ মোশন পাশ
পরিস্থিতি উন্নয়নে নিজেদের ভাবমূর্তির উন্নয়ন সাধন করতে হবে নিজেদেরকেই
কানাডার পার্লামেন্টে উত্থাপিত ‘এন্টি ইসলামোফোবিয়া’ মোশন বা প্রস্তাবটি অবশেষে পাশ হয়েছে গত ২৬ অক্টোবর। তার আগে গত ৬ অক্টোবর এই মোশনটি পার্লামেন্টে নাকচ হয়ে গিয়েছিল বিরোধী দল কনজার্ভেটিভ পার্টির সদস্যদের না ভোটের কারণে।
উল্লেখ্য যে, গত অক্টোবর মাসের ৬ তারিখে যখন পার্লামেন্টে এনডিপি কর্তৃক উত্থাপিত এন্টি-ইসলামোফোবিয়া মোশনটি কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের বিরোধীতার কারণে নাকচ হয়ে গিয়েছিল তখন এনডিপি প্রধান থমাস মুলকেয়ার দুঃখ করে বলেছিলেন, “আমি ভাবতে পারিনা ঘৃণা প্রকাশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবে কি করে কনজার্ভেটিভরা বিরোধীতা করেন।” তিনি আরো বলেন, “আমরা এখানে সমবেত হয়েছি সমাজে সব ধরণের ঘৃণাকে নিন্দা জানানোর জন্য। এটা জেন্ডার আইডিয়েন্টির বিষয়ে হোক, ব্যক্তির এথনিক পরিচয়, সংস্কৃতি বা ধর্মীয় পরিচয়ের বিষয়ে হোক, কোন ব্যাপারেই ঘৃণা প্রকাশ করা যাবে না।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডায় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যে ভীতি ও বিদ্বেষ তৈরী হয়েছে বা তৈরী করা হয়েছে তার কারণেই আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটছে, হিজাব পরিহিতা মুসলিম মহিলাদের উপর হামলা হচ্ছে, বর্ণবাদী মন্তব্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে অনলাইনে।
কানাডায় ইসলামোফোবিয়াকে তুঙ্গে উঠিয়েছে মূলত কনজার্ভেটিভ পার্টি। বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা ভোট পাওয়ার জন্য সন্ত্রাস / জঙ্গীবাদ, বোরখা-নেকাব, অনার কিলিং ইত্যাদিকে ইস্যু করে সামনে এগুবার চেষ্টা করছে। ফল যা হবার তাই হয়েছে। অর্থাৎ কানাডায় ইসলামোফোবিয়া এবং মুসলমান বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে এ কথাও সত্যি যে, কানাডায় ইসলামোফোবিয়া তৈরীতে খোদ মুসলমানদেরই একটি অংশ নানাভাবে ইন্দন যুগিয়েছেন। আর তাতে ঘি ঢেলেছেন ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের রাজনীতিবিদরা।
কানাডায় আমরা আরো দেখেছি পরিবারের তথাকথিত সম্মান রক্ষার নাম করে বেশ কিছু অনার কিলিং এর ঘটনা ঘটেছে। এক পিতা মেয়েকে গলা টিপে হত্যা করেছেন হিজাব না পরার কারণে, অন্য আরেকজন নিজের তিন মেয়েকে গাড়িসহ পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেছেন স্কুলে সহপাঠীদের সঙ্গে মেলামেশা করার জন্য। এরকম আরো কিছু ঘটনা ঘটেছে কানাডায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে। অন্যদিকে তৈরী হচ্ছে হোমগ্রোন টেররিস্ট। ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল অব কানাডার প্রেসিডেন্ট সৈয়দ সোহরাওয়ার্দী ইতিপূর্বে কানাডার সিবিসি নিউজকে বলেন, “এক দশক আগের চেয়ে এখন স্থানীয় তরুণদের মৌলবাদী হয়ে উঠার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। ”
এরকম পরিস্থিতিতে যদি ইসলামোফোবিয়া তৈরী হয়ে তবে একতরফা ভাবে কানাডিয়ানদেরকে দোষ দেয়া উচিৎ হবে না।
আমরা মনে করি ইসলামোফোবিয়া দূরীকরণের বিষয়ে মুসলমানদেরও দায়িত্ব রয়েছে। একটি উদারনৈতিক সমাজব্যবস্থায় বসে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের গুটি কতক লোক চরম মৌলবাদী আচরণ করলে যে কেউ ভীত হতেই পারেন। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে গুটি কতক লোকের অপরিনামদর্শী আচরণ যাতে গোটা সম্প্রদায়কে বিপদের মুখে ঠেলে না দেয়।
আজকে পার্লামেন্টে এন্টি ইসলামোফোবিয়া মোশন পাশ হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে, এখন আর কেউ ইসলাম ধর্ম বা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকদের বিরুদ্ধে আর কোন আপত্তিকর কথা, অভোশন আচরণ বা গালাগালি করতে পারবেন না। মনে রাখতে হবে, এটি এখনো বিল হিসাবে পার্লামেন্টে উত্থাপিত হয়নি। ফলে তা আইনে পরিনত হয়নি এখনো। আইনে পরিনত হওয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদের বিষয়। আগামীতে এটি আইনে পরিনত হতে পারে অথবা নাও হতে পারে। তাই কানাডায় নিজেদের ভাবমূর্তি ও অবস্থান নিরাপদ রাখতে হলে প্রথম দায়িত্বটুকু পালন করতে হবে নিজেদেরকেই নিজেদের ভাবমূর্তির উন্নয়ন সাধন করে। Posted onDecember 10, 2016