অন্টারিওর নির্বাচন: তিন নেতাই দৃশ্যত এক স্বপ্নের ভুবনে উপস্থিত হয়েছেন


॥মার্টিন রেগ কন॥

একটি সাজানো নির্বাচনের কল্পনা করুন যেখানে তিন নেতার সবাই একটি স্বপ্নের ভুবনে ভাসছেন, আমাদের ভোটাররা ঘুমের মধ্যে হাঁটছেন এবং তিন নেতা প্রচারণার ধারায় ভোটারদের সঙ্গে মধুর স্বরে কথা বলছেন।
১২ই জুনের নির্বাচনকে এখন পর্যন্ত আলোচনার বাইরে রাখার জন্য বয়স্ক অন্টারিওবাসীদের দোষারোপ করবেন না। ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকা অন্টারিওর নির্বাচনী প্লাটফরমের একটি স্বপ্নবিলাসী ধরণ রয়েছে যা হ্যারি পটারের জাদুবিদ্যা ও মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে শিশুদের মনোরঞ্জনের পর থেকে আর দেখা যায়নি।
টিম হুডাক ওই দিনটিতে তার প্রগ্রেসিভ কনসারভেটিভ দলের বিজয়ের জন্য মন্ত্রোচ্চারণের মত করে তার দলীয় বুলি আওড়ে চলেছেন, বিশেষ করে তার ১০লাখ চাকরির পরিকল্পনার কথা বলছেন। ক্যাথলি ওয়েইন সংখ্যা নিয়ে মাইন্ড গেম খেলছেন। তার লিবারেল দলের নির্বাচন-পূর্ব বাজেটে ঘাটতি দূর করার প্রতিশ্র“তি দেয়া হলেও তা আরও সামনে এগিয়ে দিচ্ছেন।
আর এনডিপির আন্দ্রে হরওয়াথ একধরণের রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় কাজ করে চলেছেন। টোরি দলের কায়দায় ট্যাক্স কমানোর কথা বলে তিনি প্রগতিশীল থেকে গণমুখি হওয়ার চেষ্টা করছেন।  এইসব পাগলামির মধ্যে কোনও জাদু নেই।  রাজনীতির ভৌতিক শিল্পের চর্চাকারীদের পরস্পরের মধ্যে অগভীর প্রচারণা কৌশল সম্পর্কে গভীর বোঝাপড়া রয়েছে।
তাদেও কপটতার মুখোশ খুলে দেয়া বা মর্ম উদ্ঘাটনের জন্য যা কিছু করার আছে সেটি হলো তাদেরকে জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে চেপে ধরা:
–    সবচেয়ে ফাঁকা স্লোগান এসেছে টোরি দলের বৃহত্তম প্রতিশ্র“তি থেকে: ১০ লাখ চাকরির সৃষ্টির পরিকল্পনা।
এটি শুনতে অনেকটা ‘১০ লাখ ভোটের পরিকল্পনা’র মত শোনায়। অথবা এটি মনে হয় যেন কোনও লটারি খেলা। যেভাবেই দেখা হোক না কেন এটি প্রকৃত অবস্থার প্রতি অট্টহাসির মাধ্যমে উপহাস করার মত বিষয়। কেন তারা ৫লাখ ৮৮ হাজার চাকরি সৃষ্টির কথা বললো না। তাহলে তো সেটা অনেকটাই বাক-চাতুর্যে মনোহর এবং অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো। গত জানুয়ারিতে হুডাক যখন প্রথম তার কৌশল সম্পর্কিত ঘোষণা দেন তখন কানাডায় বেকারত্বেও হার মোটামুটি ওই রকমই ছিলো। (তিনি অব্যাহতভাবে দাবি করতে থাকলেন যে দেশে বেকারের সংখ্যা ১০ লাখ। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা বলেছে, বেকারের সংখ্যা তখন থেকে কমে ৫লাখ ৫৬ হাজারে দাঁড়িয়েছে।)
তিনি চাকরি সৃষ্টি করবেন করপোরেট ট্যাক্স বিপুলভাবে কমিয়ে দেয়ার মাধ্যমে যা হবে উত্তর আমেরিকায় সর্বনিু হার (কানাডায় ইতিমধ্যেই করপোরেট ট্যাক্স নর্বনিুে রয়েছে)। তার পরিকল্পনা হলো বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়া হবে, কিন্তু হুডাকের পরিকল্পনার অন্য অংশে যেখানে এক লাখ সরকারি চাকরি বিলুপ্ত করার কথা রয়েছে সে ক্ষেত্রে ভোক্তাদের আস্থা  দ্রুত কমে গেলে কী হবে?
হুডাক যখন এক লাখ সরকারি চাকরির পদ বিলুপ্ত করার কথা বলেন তখন মানুষ সেটি বিশ্বাস করে। কিন্তু তিনি যখন তার অর্থনৈতিক শক ট্রিটমেন্টেটর মাধ্যমে ১০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্র“তি দেন তখন তাকে বিশ্বাস করে না। এটি হলো একটি পিসি প্যারাডক্স।
–    সবচেয়ে বড় জুয়া খেলাটা খেলেছে লিবারেলরা তাদের বসন্তকালীন বাজেটে। তিন বছরের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট দেয়ার ওয়েইনির প্রতিশ্র“তির ক্ষেত্রে আর্থিক খাতে বিশ্বাসের উত্তরণের প্রয়োজন ছিলো। কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে কমতে থাকলেও ২০১৩-১৪ বছরের তুলনায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ১১.৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১২.৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর পরও লিবারেলরা চাপাচাপি করছে এই বলে যে, এটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মধ্যে এই ঘাটতি আর থাকবে না। যদিও তারা তাদের আর্থিক পরিকল্পনা থেকে সরে গিয়ে এখন ঘোড়া লালনপালন শিল্প, শিক্ষক, শিশুর যতœ এবং গার্হস্থ্য সেবাদানকারীদের চাহিদা পূরণ করতে যাচ্ছে।
এমনকি সবচেয়ে ভাল যা হতে পারে তেমন পরিস্থিতিতেও প্রকৃত ঋণের পরিমাণ জিডিপির শতাংশের হিসাবে আগামী বছর সর্বোচ্চ ৪০.৮ ভাগ হারে বাড়তে থাকতে পারে। এটি বিরাট ঘাটতি এবং ঋণের পরিমাণও বিপুল, যে কারণে অন্টারিও বিশ্বের বৃহত্তম উপ-জাতীয় (ংঁন-হধঃরড়হধষ) ঋণগ্রহীতা হয়ে আছে। আর একজন জাদুকরও জানে যে লাল কালিকে শাদা কওে দেয়া যায় না।
–    সবচেয়ে নির্লজ্জ ভোট কেনার প্রয়াস দেখা গেছে এনডিপির আন্দ্রে হরওয়াথের দিক থেকে, যিনি ভোটারদেরকে হাইড্রো বিলের ওপর ১০০ ডলার করে ঘুষ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন (ঘুষ? দুঃখিতÑ তিনি কারদাতাদের রেয়াত দেয়ার কথা বলেছেন)। এই নেত্রী তার ২০১১ সালের প্রচারণার সময় থেকেই হাইড্রো বিলের ওপর এইচএসটি (ঐঝঞ) প্রত্যাহার করে নেয়ার (কিন্তু শুধু প্রাদেশিক হিস্যার ৮ শতাংশ, কেন্দ্রীয় সরকারের ৫শতাংশ নয়) নিন্দিত প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন বারবার। এমনকি হুডাকও পুরনো এই এইচএসটি ইস্যু নিয়ে আর খেলছেন না।
হরওয়াথ ব্যবসায় সংক্রান্ত ট্যাক্সও কমিয়ে দিতে চাচ্ছেন তবে সেটা ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে, বড়গুলোর ক্ষেত্রে নয়। এটি আসলে যতটা না অর্থনৈতিক কর্মসূচি তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক পদক্ষেপ, এটি হলো প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার ফলাফলের বিরুদ্ধে চলমান বাচনিক আক্রমণ। প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যে, এধরণের উপঢৌকন কেবল সেইসব কোম্পানির জন্যই উপকারী হতে পারে যেগুলো ক্ষুদ্রই থাকে (পরে এসব কোম্পানির ওপরও উচ্চ হারে ট্যাক্স আরোপ করা হয়) এবং এদেরকে বিশ্ব পর্যায়ের কোম্পানিতে পরিণত হওয়া থেকে নিরুৎসাহিত  করে।
এনডিপি সংযমের ক্ষেত্রেও রয়েছে সবচেয়ে অসংযত। স্বতঃলব্ধ জ্ঞানের বিপরীতে গিয়ে হরওয়াথ চলতি সপ্তাহে ঘোষণা করেছেন যে তিনি অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে তা সঞ্চয় করবেনÑ আমলাতন্ত্রের প্রভাব খর্ব করতে একটি সঞ্চয় ও জবাবদিহিতা বিষয়ক নতুন মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করবেন। এই দায়িত্ব সাধারণত পালন করেন অর্থমন্ত্রী, যাকে তার মন্ত্রিসভার অবাধে অর্থ ব্যয়কারী সদস্যদের ব্যাপার গোয়েন্দাগিরিও করতে হয়। এনডিপি ওই প্রক্রিয়াটি পুনঃকল্পনা করতে চাচ্ছে।
তিনজন নেতার প্রত্যেকেই বিভিন্নভাবে স্বপ্ন-কল্পনাময় প্রচারণা চালানোর দায়ে দোষী। এর অর্থ এই নয় যে তারা সবাই সমানভাবে অবিশ্বাসযোগ্য।
একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হলো : লিবারেলরা নির্বাচন ঘোষণার আগেই একটি সমন্বিত বাজেট পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে, অন্যদিকে টোরিরা প্রচারণার শুরুর দিকেই একটি সম্পূর্ণ মূল্য-নির্ধারণী প্লাটফরম প্রকাশ করেছে Ñ কিন্তু নিউ ডেমোক্র্যাটদেরকে মনে হয়েছে তাদের ধ্যানধারণা প্রকাশ করতে বা সেগুলোকে নিছক পরিসংখ্যান দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে একেবারেই অনীহ।
এটি হলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণের একটি পুরনো কৌশল।  সৌজন্যে : টরন্টো স্টার

জুলাই ২৭, ২০১৪