কানাডায় তৃতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা তাদের শিকড় খুঁজবে

প্রবাসী কন্ঠ, অক্টোবর ৫, ২০১৪ : কথা ছিল প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনে সালমা বাণীর একটি সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। কারণ, তার রচিত ‘ইমিগ্রেশন’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রবাসে ও দেশে এটি দারুনভাবে প্রশংসিত হয়। কিন্তু তিনি থাকেন টরন্টো থেকে অনেক দূরে অরোরা নামের একটি শহরে। ছোট ছিমছাম ও সুন্দর ভাবে সাজানো শহর অরোরা। জানতে চাইলাম অত দূরে কেন? টরন্টো কি আপনার পছন্দের শহর নয়? বিনীতভাবে বাণী জানালেন, ব্যবসার কারণে এখানে আসা।

পূর্বনির্ধারিত দিনে হাজির হলাম তার বাড়িতে। টরন্টো থেকে ঐদিন আরো যারা তার বাড়িতে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন তারা হলেন, বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, প্রবাসী কন্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক খুরশিদ আলম, লেখক গবেষক ও অধ্যাপক সুব্রত কুমার দাস ও তার স্ত্রী, কবি দেলোয়ার এলাহী, বাংলা মেইলের সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টু ও শামীম।

লেখক ও সাংবাদিকরা একত্রিত হলে যা হয়, তাই হলো সালমা বাণীর বাড়িতে। জমে যায় সাহিত্য ও সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে তুমুল আড্ডা। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চলে হালকা নাস্তা আর চা-কফির পর্ব। রাতে ডিনারেরও আয়োজন রয়েছে। এরই এক ফাঁকে নেয়া হলো সালমা বাণীর সাক্ষাৎকার (আগস্ট, ২০১৪ সংখ্যা ম্যাগাজিনে দেখুন সাক্ষাৎকারটি)।

অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীরকে কাছে পেয়ে আড্ডা যেন আরো প্রাণ পায় এবং জমেও উঠে বেশ। কিন্তু এই প্রাণবন্ত আলোচনাটির একটি দলিলিক প্রমাণ থাকলে কেমন হয়? যেমনি ভাবনা তেমনি কাজ। প্রস্তাব রাখলেন প্রবাসী কন্ঠের সম্পাদক খুরশিদ আলম। সবাই রাজী হয়ে গেলেন। আধা ঘন্টার একটি অনুষ্ঠানিক আড্ডা হবে। বিষয় : প্রবাসে সাহিত্য চর্চা ও আমাদের তৃতীয় প্রজন্ম হারিয়ে যাওয়ার আশংকা।

প্রশ্ন রাখলেন প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের সম্পাদক খুরশিদ আলম। তিনি জানতে চাইলেন, প্রবাসে সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আমাদের কি কি সমস্যা রয়েছে এবং সম্ভাবনাইবা কি কি রয়েছে?

প্রথমেই বক্তব্য দিলেন সুব্রত কুমার দাস। তিনি বলেন, আমি কানাডায় নতুন এসেছি। কিন্তু এর মধ্যেই আমি যা দেখেছি তাতে আমার মনে হয়েছে, প্রবাসে অনেকেই সাহিত্য চর্চা করেন। এখন যেহেতু প্রবাস জীবন সাধারণভাবে একটু কঠিন জীবন হয়, সুতরাং সাহিত্য চর্চা যে খুব ভালভাবে হয় অর্থাৎ বাধাহীনভাবে এগুতে পারে তা নয়। তারপরও আমি যা দেখি , যারা সাহিত্য চর্চার সঙ্গে যুক্ত আছেন আমি তাদের প্রশংসা করি। আর কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে, প্রবাসে যারা সাহিত্য চর্চা করছেন সেখান থেকে আমার প্রত্যাশা কি তাহলে আমি বলবো যে, সে সাহিত্য যদি নতুন দেশকে নিয়ে, নতুন সমাজকে নিয়ে, নতুন মানুষকে নিয়ে হয় তবে সে সাহিত্য বোধ হয় নুতন একটা মাত্রা পেতে পারে। আর এ প্রসঙ্গে আমি অবশ্যই সালমা বাণীর ‘ইমিগ্রেশন’ উপন্যাসটির কথা বলতে চাই কারণ, সালমা বাণী এই উপন্যাসটি যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রচিত হতো তবে এই মুহুর্তে আমি এটি পড়ে সেই আনন্দ হয়তো পেতাম না বা সেটি পড়তে আমার সেই আগ্রহ থাকতো না। কারণ আমি এই মুহুর্তে কানাডার টরন্টোতে আছি, তাই আমি চাইবো এই গ্রন্থ যাতে আমাকে টরন্টো বিষয়ক জ্ঞান, টরন্টোর বাঙ্গালী সমাজ, টরন্টোর সামগ্রিক সমাজ বা কানাডার সামগ্রিক সমাজের জ্ঞান দেয় বা এই অবলোকন তৈরী করে তা হলে সেটি ভাল হয়। এটি শুধু সালমা বাণীর ক্ষেত্রেই নয়, বাকি সকলের ক্ষেত্রেই প্রত্যাশা করি।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বলেন, আমার মনে হয়, লেখক তিনি দেশের ভিতরে থাকুক বা কানাডাতে থাকুক বা উত্তর মেরু বা দক্ষিন মেরুতেই থাকুক তাতে কিছু আসে যায় না। লেখক বলেই তো তিনি লেখছেন। সমারসেট মমের লেখা কেন আমরা পড়ি। তার সবইতো ইংল্যান্ডের বাইরের ব্যাপার নিয়ে লেখা। এ জন্য লেখক কোন দেশে বাস করছেন সেটা আমার কাছে বড় বিষয় বলে মনে হয়না। লেখাটি যদি সত্যিকারের লেখা হয় তাহলে ভালই লাগে। আমাদের রবীন্দ্রনাথের কথাই যদি বলেন, তাঁর বেশকিছু লেখাইতো দেশের বাইরে বসে লেখা।

খুরশিদ আলম: একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, সেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত থেকে শুরু করে পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল বা ইমদাদুল হক মিলন যারা একসময় প্রবাসে বাস করতেন তারা সকলেই নিজভূমে ফিরে গিয়েই প্রতিষ্ঠা লাভ বা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তো আজকের এই গ্লোভাল ভিলেজ বা ইন্টারনেট যুগে এ বিষয়টিকে আমরা কি ভাবে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষন করতে পারি?

অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর : এটাকে আসলে আমি কোন বড় ব্যাপার বলে মনে করি না। ভাল উপন্যাস, ভাল গল্প বা কবিতা যে কেউ বিদেশে বসেও লিখতে পারেন। মূল কথা লেখার ক্ষমতা থাকতে হবে। লেখার যদি ক্ষমতা না থাকে তবে দেশে বসেই কি কেউ ভাল লিখতে পারবেন?

খুরশিদ আলম : কিন্তু দেখা গেছে, দেশের বাইরে যে সকল লেখক আছেন তাদের মধ্যে সেরকম জনপ্রিয়তা বা প্রতিষ্ঠা কেউ পাননি।

অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর : জনপ্রিয়তার দিকে আমি যাচ্ছি না, সেটি ভিন্ন ব্যাপার। তবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে – যেমন ধরুন টরন্টোতে বসে যারা লিখছেন, তাদের বই যদি টরন্টো থেকে প্রকাশিত হতো তবে এখানকার পাঠকরা এগুলো আরো বেশী করে পড়তেন। কিন্তু প্রবাসীদের লেখা উপন্যাস বা গল্পের বইটি ছাপা হচ্ছে দেশে। দেশের কটা বই এখানে আসে বলেন? এখানে একটা দুটার বেশী বইয়ের দোকানওতো নেই বাঙ্গালীদের।

খুরশিদ আলম : কিন্তু দেখা গেছে টরন্টোতে গোটা তিনেক বইয়ের দোকান আছে। ঐ বইয়ের দোকানে যারা বই কিনতে যান তাদের অধিকাংশই ধর্মীয় বই কিনতে যান। সাহিত্য বিষয়ক বইয়ের ক্রেতা খুবই কম।

অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর : এটা আস্তে আস্তে হবে। আমরা সবসময় মিরাকল কিছু চাইলেই তো হবে না।

খুরশিদ আলম : সাহিত্য বিষয়ক বইয়ের ক্রেতা খুবই কম হওয়ার পিছনে সম্ভবত এর দাম একটি কারণ হতে পারে। কারণ প্রবাসে বিশেষত এই টরন্টোতে অধিকাংশ প্রবাসীর আয় সীমিত। যেটুকু আয় হয় সেটিও খুব হার্ড আর্ন মানি। সে কারণে তা ব্যয় করতেও অনেক হিসেব নিকেশ করতে হয়।

অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর : সেগুলো সবই সত্যি। আর প্রবাসীদের মধ্যে কিছু সংখ্যক আছেন যারা উচ্চতর ডিগ্রি নিতে আসেন। তারা কি প্রবাসে বসে সাহিত্যের বই পড়েন সেভাবে? পড়েন না। সেই সুযোগ হয়ে উঠেনা। এই জন্য অপবাদটা শুধু লেখদের বা পাঠকদের দিয়ে লাভ নেই।

খুরশিদ আলম : আমরা যারা প্রবাসে আছি, আমাদের একটা আশংকা এই যে, প্রবাসে আমাদের তৃতীয় প্রজন্ম আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি থেকে একেবারেই হারিয়ে যাবে। কোন সম্পর্ক রাখবে না তারা। অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আপনার কাছে আমার প্রশ্ন- আপনার কি তাই মনে হয়?

অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর : আমি তা একেবারেই মনে করি না। তার কারণ হচ্ছে, পৃথিবীটা তো বদলে যাচ্ছে। ভাষা বদলে যাচ্ছে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে মানুষজনের আসা যাওয়া বেড়ে যাচ্ছে। আজকে আমি টরন্টো আছি, কালকে আমি ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছি। এই যে অবস্থা, এই অবস্থার জন্যই আমাদের মনে ভয়, আমাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের মধ্যে আমাদের ভাষা আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি থাকবে না। কিন্তু এটা ঠিক নয়। তখন তারা আবার বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে ফিরে আসবে।

সুব্রত কুমার দাস : এই প্রসঙ্গে আমার একটা বক্তব্য আছে। এই যে বললেন আমাদের তৃতীয় প্রজন্ম হারিয়ে বা বিচ্যুত হয়ে যাবে। এটা আসলে আজকে থেকে ১৫ বছরের আগের যে ফসল সেটা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। ঐ সময়টাতে তো যোগাযোগ ব্যবস্থাটা এত বেশী উন্নত ছিল না। ছিল না ইন্টারনেট। এখন যারা কানাডায় আসেন তাদের ছেলে মেয়েরা কিন্তু ইন্টারনেটে সবসময় বাংলা পড়ছে। যারা ১৫/২০ বছর আগে এসেছিল তাদের সময় যোগাযোগ ব্যবস্থাটা এখনকার মত ছিল না বলে হয়তো এই বিচ্যুতিটা হয়েছে যেটা এখন আমাদের চোখে লাগছে । হয়তো এখন থেকে ১০ বছর পরে আমরা এর উল্টোটাই দেখতে পাবো যেটা বোরহান উদ্দিন স্যার বললেন।

অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর : ঠিক তাই, তৃতীয় প্রজন্ম অন্যরকম হয়ে যাবে। এমনো হতে পারে তারা অতিমাত্রায় বাংলাভাষার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যেতে পারে। কারণ তখন তারা তাদের রুট বা শিকড় খুঁজবে। এটাই স্বাভাবিক।

খুরশিদ আলম : কিন্তু ধরুন ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর কথা। সেখানে ব্রিটিশরা ভারত থেকে শ্রমিক নিয়ে এসেছিল কৃষি কাজসহ অন্যান্য কাজ করানোর জন্য। সেটা আরো চার পাঁচ প্রজন্ম আগের কথা। কিন্তু আজ দেখা যাচ্ছে সেখানে সেই ভারতীয়দের প্রায় সবাই তাদের ভাষা ভুলে গেছেন। সংস্কৃতিরও প্রায় একই অবস্থা। তারা এখন যে ভাষায় কথা বলেন তা ঠিক ইংরেজীও না। বলা যায় ব্রোকেন ইংলিশ। সোজা বাংলায় অশুদ্ধ ইংরেজী।

অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর : এটা আসলে পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। আমি আমার একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমি তখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ ফিজিতে ছিলাম কিছুদিন কাজের সূত্রে। আশির দশকের কথা এটি। সেখানে আমার সঙ্গে পরিচয় হয় এক বাঙ্গালী মহিলার যার স্বামী ফিজির মূলধারার এক পুরুষ। ভদ্রমহিলার আদি বাড়ি বাংলাদেশের রংপুরে। দুই পুরুষ আগে তাদের ফিজিতে আসা। আখ চাষের জন্য সেকালে ভারতবর্ষ থেকে বেশ কিছু শ্রমিক নিয়ে আসা হয়েছিল। ঐ ভদ্রমহিলার পূর্বপুরুষদের ফিজিতে আসা সেই ভাবেই। তিনি বাংলা একেবারেই জানেন না। তার জন্ম ফিজিতেই। আমার সাথে পরিচয়ের পর তিনি আমাকে অনুরোধ করলেন তার একটা উপকার করতে পারবো কিনা। আমি সানন্দে রাজী হলাম। উপকারটি আর কিছুই নয়, একটি বাংলা চিঠি পড়ে তাকে বুঝাতে হবে ওতে কি লেখা আছে।

আমি পড়ে শুনালাম। চিঠিটি ভদ্রমহিলার বাবার কাছে লেখা। লিখেছেন তার দাদা। ওতে লেখা ছিল, তুমি দেশ ছেড়ে চলে যাবার পর তোমার মা’র অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। এদিকে আমাদের আর্থিক অবস্থাও খুব খারাপ। যদি পার তবে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিও।

চিঠিটা যখন তারা পায় তখন তা পড়ে শুনাবার কোন লোক ছিল না। ফলে বহু বছর ধরেই ঐ চিঠিটি পড়ে ছিল তাদের কাছে। ভদ্রমহিলা আমাকে জানালেন, এই চিঠিটা আমার দাদার আমল থেকেই আমার কাছে পড়ে আছে। কিন্তু আমি কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না যে আমাকে এটি পড়ে শুনাতে পারে।

এখন এমন ঘটনাতো ঘটে। ঘটতেই পারে।

সালমা বাণী : (আলোচনার এই পর্যায়ে যোগ দেন বাড়ির হোস্ট সালমা বাণী। তাকে জানানো হলো আমরা আলাপ করছিলাম, প্রবাসে আমাদের তৃতীয় প্রজন্ম হারিয়ে যাবে কি না।) তিনি বলেন, কিছুটা হারিয়ে যাবে বলেই আমি মনে করি। ভাষার সাথে সম্পর্ক কিছুটা কমবে। বিশেষ করে যে সমস্ত পরিবারে অসবর্ণ বিয়ে হচ্ছে সে সব পরিবারে বাংলা ভাষার ব্যবহার কমবে।

অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর : তবে আমি মনে করি, এই যেমন সালমা বাণীর উপন্যাস ‘ইমিগ্রেন্ট’, কানাডায় আমাদের পরের প্রজন্ম খুব আগ্রহের সঙ্গে পড়বে তাদের অতীত জানবার জন্য। তারা জানাতে চাইবে তাদের পূর্ব পুরুষদের বেলায় কি ঘটনা ঘটেছে, কি ভাবে তারা এদেশে এলো। মানুষের জানার যে আগ্রহ সেই আগ্রহ থেকেই তারা এই বই পড়বে। মানুষের স্বভাব হলো, সে তার শিকড় খুঁজতে চায়। এখন এই শিকড় খোঁজার প্রবনতা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বাড়বে যেটা এখন আমাদের প্রথম প্রজন্মের মধ্যে নেই। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে আমি বলবো, সালমা বাণীর ‘ইমিগ্রেশন’ উপন্যাসটি একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে।

খুরশিদ আলম: আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই তা হলো, অনেকেই বলে থাকেন যে বাংলাদেশে মৌলবাদের প্রভাব ও বিস্তার যে ভাবে দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে সেখানে আধুনিক ও প্রগতিশীল চিন্তাধারার শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতিতে প্রবাসী লেখকরাই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার বেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কথাটা কি সত্যি না এটি নিছক কল্পনা মাত্র।

অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর : আমার কথা হচ্ছে, এটি একেবারেই সত্য না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বলুন, এর অন্য নামইতো হচ্ছে এই মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখা বা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। মৌলবাদই যদি প্রভাব বিস্তার করে থাকে তবে বাংলা সাহিত্যে এত বই প্রকাশিত হচ্ছে কি করে। এখন মুক্তিযুদ্ধের উপর যত বই প্রকাশিত হচ্ছে, দুই তিন বছর আগেও এত বই প্রকাশিত হয়নি।

শহিদুল ইসলাম মিন্টু : আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশে এখন মুক্ত চিন্তার সবচেয়ে ভাল সময়। একটি উদারহণ দিয়ে বলি, কিছু দিন আগে বাংলাদেশে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয় যার নাম রূপবান। এটি ষবংনরধহ-মধু-নরংবীঁধষ-ঃৎধহংমবহফবৎ (খএইঞ) দের প্রতিনিধিত্বকারী একটি পত্রিকা। আমার ধারণা ছিল এটি প্রকাশিত হবার পরই তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে এবং কিছু লোক গ্রেফতার হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি।

অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর : আবার দেখুন, মৌলবাদীদের একজনকে তো ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে দেয়া হলো। কই কিছুইতো হলো না।

সালমা বাণী : অন্যদিকে দেখুন, জাতীয় নির্বাচনে জামাত কয়টা সিট পায়?

অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর : তবে ভয়তো একটা থেকেই যায়। কিন্তু সে ভয়টা এমন নয় যে তার জন্য গর্তের ভিতর গিয়ে লুকিয়ে থাকতে হবে।

আমাদের আনুষ্ঠানিক আড্ডা এখানেই শেষ হয়ে যায়। এর পর চলতে থাকে অনানুষ্ঠানিক আড্ডা।