প্রবাসী বাংলাদেশীদের অকৃত্রিম ভালবাসায় আমি অভিভুত
টরন্টোতে নাগরিক সংবর্ধনায় ওয়েষ্টার্ন ইউনিভারসিটির প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যান্সেলর অমিত চাকমা
প্রবাসী কন্ঠ রিপোর্ট , অক্টোবর ৫, ২০১৪: আমার প্রতি আপনাদের যে অশেষ ভালবাসা, যেটা আমি আজকে উপলব্দি করতে পেরেছি আপনাদের মাঝ থেকে তাতে আমি সত্যিই অভিভূত। গত ১৩ সেপ্টেম্বর টরন্টোতে আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ওয়েষ্টার্ন ইউনিভারসিটির প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যান্সেলর আমিত চাকমা এ ভাবেই প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি তার অনুভূতি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, আজকে যারা আমাকে উদ্দেশ্য করে এই নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন তাদেরকেও জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। আর বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার ভ্রাতৃপ্রতিম, অনুষ্ঠানের মূল পরিকল্পনাকারী কানন বড়ূয়াকে যিনি তার সহযোগীদের নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই অনুষ্ঠানটিকে সফল করেছেন।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের গৌরব, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, ইউনিভারসিটি অফ ওয়েষ্টার্ন, লন্ডন, অন্টারিও এর প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. অমিত চাকমাকে টরন্টোতে এক নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হয়। নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করেন টরন্টো প্রবাসী বাংলাদেশীরা। ইউনিভারসিটি অব টরন্টোর স্কারবরো ক্যাম্পাসের লেকচার থিয়েটারে এই নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অমিত চাকমার স্ত্রী মীনা চাকমাও উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করা শিক্ষাবিদ অমিত চাকমা ২০০১ সালে অন্টারিওর ওয়াটারলু ইউনিভারসিটির একাডেমিক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রভোস্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার গবেষণার মূল বিষয় প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকৌশল এবং পেট্রোলিয়াম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ২০০৯ সালের ১লা জুলাই অমিত চাকমা ওয়েস্টার্ন ইউনিভারসিটির প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যান্সেলর এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে টরন্টোর বিশিষ্ট শিল্পী নাহিদ কবীর কাকলী ‘আগুনের পরশমিন’ গানটি পরিবেশন করায় তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে অমিত চাকমা বলেন, সঙ্গীত আমার প্রিয় বিষয়। বিশেষ করে রবীন্দ্র সঙ্গীত আমার খুব ভাল লাগে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকায় ধর্মগুরু স্বর্ণপাল ভিক্ষুর প্রতিও অমিত চাকমা বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অমিত চাকমা বলেন, আপনারা অনেকেই আমার কাছে জানতে চেয়েছেন আমার আজকের এই অবস্থানে আমি কি করে পৌঁছেছি। এটি কিন্তু আসলে খুব সহজ পথে হয়ে উঠেনি। আমি যখন পাশ করে বের হই তখন আমাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরীর আবেদন করার
পর সেখান থেকে আমার নামে শত শত রিজেক্ট লেটার এসেছে। সেগুলো দেখলে অনেকেই অবাক হবেন। আমার একটি আলাদা বাইন্ডারই ছিল ঐ রিজেক্ট লেটারের জন্য। আমার স্ত্রী ঐ রিজেক্ট লেটারগুলো দেখে খুব হতাশ হয়ে পড়তেন। ঐ রিজেক্ট লেটারের সংখ্যা দেখলে অনেকেরই পাগল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমি হতাশ হয়নি। সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছি। তারই ফলাফল আমার আজকের এই অবস্থান। তাই আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো, ডোন্ট গিভআপ। হতাশ হবেন না।
অনুষ্ঠানে অমিত চাকমা সমাজে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য মহিলাদের এগিয়ে আসার প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি তার মায়ের স্মৃতিচারণ করেন। উল্লেখ্য যে, অমিত চাকমা বাংলাদেশের চট্রগ্রামে এশিয়ান ইউনিভারসিটি অব উইমেন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন।
কানাডার প্রতি অমিত চাকমা তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমি যখন এ দেশের জাতীয় সঙ্গীত “ও কানাডা” শুনি তখন আমার মনে হয় এটিই আমার দেশ, এটিই আমার জন্মভূমি।
অমিত চাকমা ওয়েস্টার্ন ইউনিভারসিটিতে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, শুনেছি বাংলাদেশে ইউনিভারসিটিগুলোতে ভাইস চ্যান্সেলরদের অনেক ক্ষমতা। কিন্তু এখানে এই কানাডায় আমার সেই ক্ষমতা নেই। এখানে আমি কোন ছাত্র-ছাত্রীর ভর্তির ব্যাপারে কোনরকম সুপারিশও করতে পারিনা। এমনকি নিজের ছেলের ব্যাপারেও না। যদি করতে যাই তবে আমি নিজেই বিপদগ্রস্থ হব। আমাকে আমার পদ থেকে সরে দাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অমিত চাকমাকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ডাকসুর সাবেক সহকারী সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ দোজা। স্মৃতিচারণ করেন অমিত চাকমার বাল্যকালের সহপাঠী স্বপন বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য যারা বক্তব্য রাখেন তারা হলেন, ফেয়ারটেক্সে এর এম. সাহাব, ফার্মাসিস্ট কানন বড়ূয়া,উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী টরন্টোর সভাপতি দীনা সায়েদ, বুয়েট এলামনাই এসোসিয়েশন অব কানাডার ড. দেলোয়ার হোসেন, রাজশাহী ইউনিভারসিটি এলামনাই এসোশিয়েন এর মনিরুজ্জামান, খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভারসিটি এলামনাই এসোসিয়েশনের মি. আলম, বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোশিয়েশন অব টরন্টো ইউনিভারসিটির অদিতি, প্রজন্ম একাত্তর কানাডার ফারহানা আজিম শিউলী, ঢাকা ইউনিভারসিটি এলামনাই এসোশিয়েন এর ফকরুল ইসলাম চৌধুরী, আবাকন এর ফায়জুল করীম, অন্টারিও প্যারেন্ট-টিচার এসোসিয়েশন এর তৌহিদ নোমান, বাংলা মেইলের সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টু, জুনায়েদ আনোয়ার, ননী গোপাল দেবনাথ, অশোক অংকুর বড়–য়া ও শহিদ উদ্দিন । সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন মনীষ পাল।
চট্রগ্রাম সমিতির প্রাক্তন সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংবর্ধনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বর্ণপাল ভিক্ষু, ড. এহসান করীম ও সৈয়দ আব্দুল গাফফার।
অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন টরন্টোর জনপ্রিয় শিল্পী নাহিদ কবীর কাকলী ও ফারহানা শান্তাসহ আরো কয়েকজন। সবশেষে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠি কানাডার শিল্পীবৃন্দ সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন নাসির উদ দোজা, ননি গোপাল দেবনাথ, মোহাম্মদা ইলিয়াস মিয়া, শিবু চৌধুরী, মনির বাবু ও কানন বড়ূয়া।