অন্টারিওতে সর্বনিম্ন বেতনভোগী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুন

প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩ : অন্টারিওতে ন্যুনতম বেতনভোগী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে ২০০৩ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত ৮ অক্টোবর প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০০৩ সালে সর্বনিম্ন বেতনভোগী শ্রমিকের হার ছিল ৪.৩ শতাংশ। চলতি বছর তা বেড়ে হয়েছে ৯ শতাংশ।

ওয়েলেসলি ইন্সটিটিউট পরিচালিত ওই গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, প্রতি ঘণ্টায় ১০.২৫ ডলার বেতন পাওয়া শ্রমিকের মধ্যে নারী, দৃশ্যমান সংখ্যালঘু ও অভিবাসীদের সংখ্যা সম্ভবত বেশি।

২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত স্ট্যাটিসটিকস কানাডা’র তথ্যের উপর ভিত্তি করে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এতে দেখা যায় তরুণ শ্রমিকদের মধ্যে ন্যূনতম বেতনে কাজ করার হার সম্ভবত বেশি। কিন্তু এদেরমধ্যে ৪০ শতাংশ অথবা এক লাখ ৮৩ হাজারের বয়স ২৫ অথবা তার থেকে বেশি।

আরো ১০ লাখ শ্রমিক যাদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স ২৫ অথবা বেশি তারা প্রতি ঘণ্টায় ন্যূনতম বেতনের চেয়ে সামান্য বেশি ১০.২৫ থেকে ১৪.২৫ ডলার আয় করে।

গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক শেইলা ব্লক বলেন, “এই গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরাই যে সর্বনিম্ন বেতনে কাজ করছে তা নয়। এতে দেখা যায়, সর্বনিম্ন বেতন চার ডলার বৃদ্ধি পেলে ২৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি তার সুবিধাভোগী হবে”। তিনি বলেন, বেতন বাড়ানো হলে তা অন্টারিওতে যেসব অভিবাসী, দৃশ্যমান সংখ্যালঘু ও নারী সর্বনিম্ন বেতনে কাজ করেন তাদের বেতন ব্যবধান কমাতেও সাহায্য করবে।

শেইলা ব্লক বলেন, “ন্যূনতম বেতনের নীতিমালা এমন একটা বিষয় যা আয় বৈষম্যকে তুলে ধরে”।

২০০৩ সালে লিবারেল’রা নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত টানা ৮ বছর অন্টারিওতে ন্যূনতম বেতন প্রতি ঘণ্টার ৬.৮৫ মার্কিন ডলারে এসে আটকে ছিল। এই সরকারের আমলে ২০০৪ থেকে ২০১০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে, ন্যূনতম বেতন বেড়ে  প্রতি ঘণ্টায় ১০.২৫ ডলারে পৌঁছায়। কিন্তু এরপর তা আর বাড়েনি।

গেলো গ্রীষ্মে, ভবিষ্যতে কিভাবে সর্বোত্তম ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করা যায় সে বিষয়ে উপর গবেষণা করতে অন্টারিওর সরকার একটি প্যানেল গঠন করে। এছাড়া, দারিদ্র বিরোধী গ্রুপগুলো বেতন বাড়িয়ে অবিলম্বে ১৪ ডলার করার আহ্বান জানায়। তাদের মতে, সর্বনিম্ন বেতন প্রতি ঘণ্টায় ১৪ ডলার হলে একজন ব্যক্তি ফুল টাইম কাজ করে অন্টারিও’র দারিদ্র সীমার ১০ শতাংশ উপরে বাস করতে পারবে।

২৬ বছর বয়সী কম্পিউটার টেকনিশিয়ান আংকিত আগারওয়াল ২০১০ সালে ভারত থেকে কানাডায় আসার পর থেকে নিম্ন বেতনের চাকরি করে আসছেন।

তিনি বলেন, শহরতলির কোনার দিকে একটি দোকানের ক্যাশিয়ার হিসেবে গেলো এপ্রিলে থেকে তার বেতন বাড়িয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১০.৯০ ডলার করা হয়। কিন্তু এরপরও খরচ বাদ দিয়ে পয়সা জমা করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। গেলো জুনে পুরনো কম্পিউটার মেরামতকারী হিসেবে তিনি আরেকটি চাকরি খুঁজে পান যেখানে তাকে প্রতি ঘণ্টায় দেয়া হবে ১১ ডলার। কিন্তু গেলো সপ্তাহে সেখান থেকে তাকে ছাটাই করে দেয়া হয়।

আগারওয়াল ভারত থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ব্যাচেলর ডিগ্রি এবং ব্যবসা প্রশাসন থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বলেন, “আমার ফিল্ডে এখানে কাজ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন”।

এমনকি সেন্টেনিয়াল কলেজ থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ডিপ্­লোমা থাকলেও দুই বছরের কনাডিয়ান অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোন অভিবাসীকে এখানকার কোন কোম্পানি নিতে চায় না।

২৩ বছর আগে বারবাডোস থেকে কানাডায় আসেন ডোরেন ক্লার্ক। এখন তার বয়স ৫১। তিনি বলেন, কানাডায় থিতু হওয়া মোটেও সহজ না। চলতি বছরের শুরুর দিকে তার চাকরি চলে যায়। সেখানে তিনি প্রতি ঘণ্টায় ১৩ ডলার পেতেন।

তিনি বলেন, “ আমি এখন অন্য আরেকটি কোম্পানিতে ফূল টাইম কাজ করি। কিন্তু যখন তারা আমাকে জানালো, বেতন প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ১০.২৫ ডলার, আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা হয়েছিল। কাজটা ছিল খুব কঠিন। কিন্তু বেতন ছিল খুবই কম”।

মূলধারার কানাডিয়ানদের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি ক্লার্কের মতো নারী, দৃশ্যমান সংখ্যালঘু ও অভিবাসী ন্যূনতম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হয়: গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে এই অনুপাত ১৩:৯।

সম্প্রতি অন্টারিওর প্রিমিয়ার ক্যাথেলিন ওয়েনী একটা সুযোগ তৈরি করেন যাতে ন্যূনতম বেতন বেড়ে প্রতি ঘণ্টায় ১৪ ডলার হতে পারে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই পরিমাণ বেতন দিতে পারবেন না।

ওয়েনী বলেন, “আমরা একটা সীমা পর্যন্ত ন্যূনতম বেতন বাড়াতে পারি কিন্তু তাতে চাকরি হারানো ভয় থাকে। সত্যি কথা বলতে কি এটাই ব্যবসা এবং আমাদের সরকারের জন্য উদ্বেগের কারণ”।

তিনি আরো বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমাদের যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে হবে। সব ধরণের স্বার্থকেই আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। বেতন বাড়াতে হলে তা একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বাড়াতে হবে”। তবে বেতন বাড়ানোর পক্ষে যারা কাজ করছেন তারা এখনো হাল ছাড়েননি। তারা তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।