প্যারিসে অমানবিক জঙ্গী হামলা : কানাডার সাধারণ মুসলমানেরা যেন পাল্টা বিদ্বেষের শিকার না হন

ধর্মের নামে যারা নির্বিচারে নিরীহ মানুষ হত্যা করে তাদের কোন ধর্ম নেই। তারা মুসলমান নয়, হিন্দু নয়, খ্রীস্টান নয়, বৌদ্ধ নয় ইহুদীও নয়। এরা মানুষ নামের কলঙ্ক, ধর্ম এদের কাছে পন্য অথবা স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার।

আইএস এমনি একটি গোষ্ঠি যারা ইসলাম ধর্মকে বেছে নিয়েছে নিজেদের হীন স্বার্থ হাসিল করার জন্য। মানব জাতিকে পিছনে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আর এদের পিছনে যারা ইন্ধন যোগাচ্ছে অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে তারা মূলত রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাসী। আইএস এর জঙ্গীদের দিয়ে বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে সুকৌশলে নিজেদের অসাধু রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। আর এর শিকার হচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ নিরাপরাদ মানুষেরা।

আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, প্যারিসের অমানবিক হত্যাযজ্ঞের পর কানাডায় গুটি কতক মূর্খ ও অবুঝ লোক এখানকার মসজিদে আগুন লাগিয়েছে, হিজাব পরা মহিলাদের উপর হামলা চালিয়েছে এবং প্রতি সপ্তাহে একজন করে মুসলমান হত্যা করার হুমকীও দিয়েছে। এমনকি হিন্দু মন্দিরেও হামলা চালিয়েছে কিছু না বুঝেই।

আমরা মনে করি প্যারিসের কান্ডজ্ঞানহীন ও বিবেকবর্জিত হামলার সঙ্গে যেমন ধর্মপ্রান মুসলমানদের কোন সম্পর্ক নেই, তেমনি সম্পর্ক নেই বহুজাতি সংস্কৃতি ও ধর্মের বাহক এবং পৃষ্ঠপোষক মানবিক কানাডার সঙ্গে এই গুটি কতক মূর্খ ও অবুঝ লোকের।

আর সে কারণেই আমরা দেখেছি টরন্টোর নিকটবর্তী শহর পিটারবরো’র আল সালাম মসজিদে হমলার ঘটনার পর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকেই। আগুন লাগানোর কারণে মসজিদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সাহায্য উঠেছে তারচেয়ে অনেক বেশী।

অন্যদিকে মসজিদের সংস্কার কাজ সমাপন না হওয়া পর্যন্ত পিটারবরো’র একাধিক গীর্যা নামাজ আদায় করার জন্য তাদের ভবন ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায়কে। পিটারবরোর মেয়র ডারেল বেনিট বলেছেন “আমরা সকল ধর্ম বিশ্বাসের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।”

আমরা আরো দেখেছি টরন্টোতে হিজাব পরা এক মুসলমান মহিলার উপর কাপুরুষোচিত হামলার পর মেয়র জন টরি এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “নীতিভ্রষ্ট ও ন্যাক্কারজনক এই হামলা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি আমাদের নগরের মূল্যবোধকে প্রতিনিধিত্ব করে না। টরন্টো একটি সভ্য ও সহনশীল সমাজ।”

অন্টারিও’র প্রিমিয়ার ক্যাথেলীন ওয়েনী নিজেই আক্রান্ত ঐ মহিলার সঙ্গে দেখা করে তার প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এই সময়ে আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। এখানকার মুসমান সম্প্রদায় সহ অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠির কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে আমরা তাদের সঙ্গেই আছি।”

আমরা আরো দেখেছি পিটারবরো মসজিদে হামলা, কিচেনারে হিন্দু মন্দিরে হামলা ও টরন্টোতে মুসলমান মহিলার উপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, “ডাইভারসিটি আমাদের শক্তি। অসহিষ্ণুদের বিদ্বেষপূর্ণ ও শুভবুদ্ধিহীন কর্মকান্ডের কোন স্থান নেই কানাডায়।”

প্যারিসের অমানবিক হত্যাযজ্ঞের পর কানাডায় নিরাপরাধ সংখ্যালঘুদের উপর যে আক্রমন ও হত্যার হুমকী এসেছে তা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। কানাডার মূলধারার মানুষও এই আক্রমন ও হত্যার হুমকীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমরা আরো দেখেছি, কানাডার তিন স্তরের সরকার প্রধানরাও এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

বিশ্বে এরকম একটি সংকটের মুহুর্তে আমাদের সকলেরই উচিৎ পরষ্পরের প্রতি সহিষ্ণু ও সন্মানজনক আচরণ করা। কানাডার সাধারণ ও নিরাপরাধ মানুষেরা যাতে অন্যদেশে ঘটে যাওয়া অশুভ ঘটনার শিকার না হন সে দিকে সকলেরই দৃষ্টি রাখা আমাদের মানবিক কর্তব্য।