টরন্টোতে মেমোরি লেইনের প্রথম কনসার্ট
সঙ্গীত পিপাসু দর্শক শ্রোতাদের ব্যাপক আগ্রহ আর অপেক্ষায় ইতি টেনে অবশেষে টরোন্টোতে আয়োজিত হলো নর্থ আমেরিকার বাংলা মিউজিক ব্যান্ড মেমোরি লেইনের প্রথম কনসার্ট। ফুটন্ত সামারের তাপদাহ অগ্রাহ্য করে হলভর্তি দর্শকের মুহুর্মুহু করতালি আর সংক্রামক উচ্ছ্বাসের স্রোত প্রথম মঞ্চ পরিবেশনাতেই মেমোরি লেইনের অর্জনে যোগ করলো একটি সাফল্য পালক। অনবদ্য পরিবেশনায় স্মৃতি জাগানিয়া ঢেউ তুলে মেমোরি লেইন ছুঁয়ে গেলো আগত ৬০০ র ও বেশী শ্রোতা দর্শকদের। ২২শে জুন শনিবার সন্ধ্যেবেলায় শহরের গান পাগল বাংলা ভাষাভাষীদের গন্তব্য ছিলো বিশপ মারক্কো স্কুলের অডিটোরিয়াম। আর সমাগত দর্শক শ্রোতাদের প্রত্যাশা বিমুখ হতে হয়নি একেবারেই। সুরে সঙ্গীতে নস্টালজিয়ায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শকদের মাতিয়ে রাখলো মেমোরি লেইন। কনসার্ট আয়োজনের নেপথ্যে ছিলো র্যাসকসন্স ইনকর্পোরেটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রথম পরিবেশনায় তারাও অনুষ্ঠানকে নিখুঁত করে তুলতে আয়োজনের ত্রুটি রাখেনি। ফারিয়া এবং শিপলুর প্রাণবন্ত উপস্থাপনা ও গ্রন্থনায় পুরো অনুষ্ঠান এগিয়েছে সাবলীল গতিতে। শুরুতেই ছিলো জনপ্রিয় ইন্সট্রুমেন্টাল ‘এল বিম্বো’। এরপর ব্যান্ডের ভোকাল টিনা গাইলো ‘স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে গান তো লিখেছি’। পরের গান রিদম গিটারিস্ট ও ভোকাল টিটোর মনকাড়া পরিবেশনায় বাপ্পা মজুমদারের জনপ্রিয় গান ‘দিন বাড়ি যায়’। মহীনের ঘোড়াগুলির একটি জনপ্রিয় গান শুরু করবার আগে টিনার চমৎকার মুখবন্ধে দর্শক নিশ্চয়ই অনুমান করে থাকবে কোন গানটি সে গাইবে এবার। অডিটোরিয়াম টুইটুম্বুর করা গায়কী আর কম্পোজিশনে ‘পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে’…গানটির পরিবেশনা এক কথায় চমৎকার। আশিকুজ্জামান টুলুর ভক্ত শ্রোতাদের কাছে ‘সেদিনও আকাশে ছিলো চাঁদ’ কিংবা ‘নাতি খাতি বেলা গেইলো’র মতন গানের আবেদন আজও অম্লান। আর তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে কনসার্টে এসে। ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’, ‘দম মারো দম’, ‘একটা দেশলাই কাঠি জ্বালো’, ‘ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে’, ‘যে ছিলো দৃষ্টির সীমানায়’, কিংবা আজম খানের ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’র মতন জনপ্রিয় গান দর্শক শ্রোতাদের মাতিয়েছে শুরু থেকে শেষতক। পুরো অনুষ্ঠানে ব্যান্ডের সিনক্রোনাইজেশন ছিল চমৎকার। লাবীবা আর রিজওয়ানার হামিং গানগুলোয় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ড্রামে ঝড় উঠেছে শাহেদুল হুদা লালুর হাতে। মনে পড়ে গেছে এককালের স্পন্দন, মাইলস এর মতন ব্যান্ডে তাঁর তুখোড় বাদনার কথা। শেলীর দক্ষ হাতে বেইস গিটার সোজা ভাষায় লা-জবাব। জনপ্রিয় ব্যান্ড উইনিং কিংবা পেন্টাগনের
পর মেমোরি লেইনে শেলী নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল সংযোজন। আশিকুজ্জামান টুলুর সুরেলা কী বোর্ড ধরে রেখেছে বাকী শিল্পীদের, বলতেই হয়। সব মিলিয়ে গান ছিলো ছাব্বিশটি, প্রতিটি গানের আগেই গানটির মূল শিল্পী বা ব্যান্ড এবং কম্পোজিশন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত মুখবন্ধ থেকে মেমোরি লেইনের বিনয়ের বিষয়টি পরিস্কার বোঝা যায়। উৎসাহী দর্শকদের কাতারে টরোন্টোর শিল্পী পরিবারের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি অনুষ্ঠানে প্রাণ সঞ্চার করেছে। অন্য থিয়েটার লাল গোলাপ দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে ব্যান্ড সদস্যদের। সুদূর বাংলাদেশ থেকে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় সঙ্গীত ব্যক্তিত্বরা তাঁদের শুভকামনা জানিয়েছেন মেমোরি লেইনের এই শুভযাত্রায়।
বাংলাদেশের এককালের জনপ্রিয় ব্যান্ড উইনিং এর ভোকাল চন্দনের গাওয়া ‘সোনার মেয়ে’ গানটি দর্শক শ্রোতাদের জন্যে ছিলো একটি দারুন চমক। অনুষ্ঠানের সর্বশেষ পরিবেশনা ছিলো ফিড ব্যাকের ‘মেলায় যাইরে’। কনসার্টে উপস্থিত সকল মিউজিশিয়ানকে মঞ্চে ডেকে মেমোরি লেইন চমৎকার এক দৃষ্টান্ত তৈরি করলো। সমবেত শিল্পীদের পরিবেশনায় মঞ্চে ছিলো উৎসবের আমেজ, যা মনে করিয়ে দিলো টরোন্টোর শিল্পীরা সবাই এক পরিবারেরই সদস্য। অনেকেই নিশ্চয়ই গুনগুনিয়ে চেনা সুর ভাঁজতে ভাঁজতে বাড়ি ফিরেছে সেদিন রাতে।
এই শহরের গান পাগল মানুষ বহুদিন মনে রাখবে এই অনবদ্য সুর সন্ধ্যার আয়োজন নিশ্চিত। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি