সাবধান : দাঙ্গায় মুখোশ পড়া এখন দণ্ডনীয় অপরাধ – দোষী সাব্যস্ত হলে অপরাধীকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : দাঙ্গা বা বেআইনী সমাবেশে মুখোশ পড়া এখন থেকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সেইসাথে দোষী সাব্যস্ত হলে অপরাধীকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
সি-৩০৯ বিলটি ২০১১ সালে উত্থাপন করেন কনজারভেটিভ সংসদ সদস্য ব্ল্যাক রিচার্ডস। ২৩ মে বিলটি সিনেটে পাশ হয় এবং ১৯ জুন সিনেটের রয়াল অ্যাসেন্ট সিরেমনিতে বিলটিকে আইন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
রিচার্ডস বলেন, একটি আইনসম্মত বিক্ষোভ যাতে দাঙ্গায় পরিণত হতে না পারে এবং দাঙ্গার সময় কারা ধ্বংসাত্মক অথবা বেআইনী কাজের জড়িত ছিল তা সনাক্ত করতে এই আইন পুলিশের জন্য সহায়ক হবে।
রিচার্ড বলেন, দাঙ্গার ক্ষতিকর প্রভাব এবং দাঙ্গা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে টরন্টো, ভ্যানকুভার, মন্ট্রিয়েলসহ অন্যান্য শহর শহরের নগর কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে এই বিলটি উত্থাপন করা হয়।
১৯ জুন প্রকাশিত এক বিবৃতিতে রিচার্ডস বলেন,“আইনটি শিগগিরই কার্যকর হবে। এটি কার্যকর হলে পুলিশ অফিসারগণ মুখোশ পড়া দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় এই আইন কাজে লাগাতে পারবে”।
এই বিল একটি নতুন ক্রিমিনাল কোড সৃষ্টি করেছে, যার ফলে দাঙ্গা অথবা বেআইনী সমাবেশে মুখোশ পড়া অথবা নিজের পরিচয় গোপন করা যায় এমন কিছু পরিধান করাকে বেআইনী হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে যে সে ধর্মীয় অথবা চিকিৎসাজনীত কারণে মুখ ঢেকেছে তাহলে ভিন্ন কথা।
মূল বিলে এই অপরাধের জন্য পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু হাউজ অব কমন্সের বিচারিক কমিটি একে সংশোধন করে শাস্তির মাত্রা দ্বিগুন করে ১০ বছরের কারাদণ্ডের প্রস্তাব দেয়।
রিচার্ডস তার বিবৃতিতে আরো উলল্লেখ করেন, একজন প্রাইভেট মেম্বারের বিল আইনে পরিণত হওয়ার ঘটনা সচরাচর ঘটে না। তিনি আরো জানান, বিলটি চূড়ান্ত করতে টানা দুই বছর পরিশ্রম এবং পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের সাথে ব্যাপক আলোচনা করতে হয়েছে। রিচার্ড বলেন,“আমাদের কমিউনিটি এখন অনেক বেশি নিরাপদে থাকবে, এটা জেনে আজ আমরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবো”।
তবে বিলটি সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়নি।এই আইন মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে এই উদ্বেগ থেকে কয়েকজন এর বিরোধীতা করেছেন।
সমালোচকদের মতে, নতুন এই আইনটি অপ্রয়োজনীয়। কারণ বর্তমান ক্রিমিনাল কোডে অপরাধ সংঘটনের সময় ছদ্মবেশ ধারণ সম্পর্কিত একটি ধারা রয়েছে। নাগরিক স্বাধীনতা বিষয়ক পরামর্শকদের যুক্তি, এই আইন বাক স্বাধীনতার ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলবে, এবং অনেক সময় এমনও হতে পারে যে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীরা হঠাৎ করেই নিজেদেরকে একটি অবৈধ সমাবেশে জড়িত হিসেবে আবিস্কার করবে। তারা বলেন, বিক্ষোভে মুখোশ পড়ার বেশ কিছু আইনসম্মত কারণ রয়েছে; অনেকেই প্রত্যাঘাতের আশংকা করতে পারে, উদাহরণস্বরুপ যদি কোন রাজনৈতিক সমাবেশে তাকে দেখা যায়।
বৃটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক গবেষক ও বি.সি’র বোর্ড মেম্বার মাইকেল বায়ার্স বলেন, “নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব হয় এমন আইনকে যথেষ্ট পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে হয়। আমার মনে হয় এমন কোন পরীক্ষা এক্ষেত্রে হয়নি”।
বায়ার্স বলেন, বিলটি তৈরিতে বাক স্বাধীনতার বিষয়টি সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং এটি রাজনৈতিক মতপ্রকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
তবে রিচার্ডসের মতে এই বিল বিক্ষোভকারীদের আইনগত অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। কারণ এই আইনের ফলে অবৈধ বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বা সমাবেশকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত অথবা কোন ধরণের ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, পুলিশ তাকে জানিয়েছে, বর্তমান ক্রিমিনাল কোডে ছদ্মবেশ সংক্রান্ত যে ধারা রয়েছে তা সশস্ত্র ডাকাতির মতো অপরাধ দমনে বেশি কার্যকর; তবে এই আইন বিক্ষোভ পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা কঠিন।
সম্প্রতি এক স্বাক্ষাতকারে রিচার্ডস বলেন, তার বিল নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে এবং সব সময়ই কিছু মানুষ থাকবে যারা এর সাথে দ্বিমত পোষণ করবে। তিনি বলেন, একটি সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরে এবং তার সমাধান বের করতে পেরে তিনি গর্বিত।রয়াল এসেন্ট পাওয়ার পর বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে।