কানাডার চাকরির বাজারে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সুদক্ষ ও মেধাবী অভিবাসীরা

তামসিন ম্যাকমাহোন : মানিকুরভি’র জন্মস্থান ভারত, তিনি বেড়ে উঠেছেন সৌদি আরবে আর পড়াশুনা করেছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে।২০০৮ সালে বিয়ে করার পর থাকতেন সিলিকন ভ্যালিতে।সেখানে মোবাইল ফোনের জন্য গুগুল ম্যাপ তৈরির কাজে একদল প্রকৌশলীর নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। পাড়ুকুন কাজ করতেন সিঙ্গাপুরের সর্ববৃহৎ বিনিয়োগ ব্যাংকে। মানিকুরভি’র যুক্তরাষ্ট্রে পারমানেন্ট ওয়ার্ক ভিসা না থাকায় তার স্ত্রী সেখানে কাজ করার অনুমতি পাননি। কাজেই গুগুল মানিকুরভিকে কম্পানির টরন্টো অফিসে বদলি করে দেয়। সেখানে প্রকৌশল ও ফিনান্সে ডিগ্রিধারী এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং এ অভিজ্ঞ পাড়ুকুন চাকরি খুঁজে পাবেন বলে আশার করা হচ্ছিল।

কিন্তু শেষমেশ দেখা গেলো সে আশার গুড়ে বালি। ‘অতঃপর তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো’-গল্পের পরিসমাপ্তি এ ধরণের হলো না। বরং কানাডায় নতুন অভিবাসীরা কতটা করুণ বাস্তবাতার মুখোমুখি হয় তাদের গল্পে ফুটে উঠলো তারই প্রতিচ্ছবি।

একটি চাকরি পেতে পাড়ুকুন রীতিমত লড়াই করতে থাকেন। অনেক সময় নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে কোন প্রতি উত্তরই আসতো না। আবার অনেক ক্ষেত্রে তাকে বলা হতো যে চাকরির জন্য কানাডিয়ান কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই দম্পতি এবং তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা আশা করেছিলেন ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু অচিরেই এখানকার বাস্তবতার কঠিন দেয়ালে ধাক্কা খান তারা। মাভিনকুরভি বলেন,“আমার স্ত্রীকেও যে এই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে এই চিন্তা আমি আমার মাথায় আসতে দিতে চাইতাম না”। তিনি দেখলেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী অনেকেই এখানে ট্যাক্সি চালায়। এরপর ২০০৯ সালের শেষদিকে তারা তল্পিতল্পা গুটিয়ে আবার সিয়াটলে ফিরে যান। সেখানে পাড়ুকুন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ক পারমিট পেতে সক্ষম হন। অ্যামাজান সদর দফতরে একটি চাকরিও পেয়ে যান তিনি। তারা যে কয়টাদিন কানাডায় ছিলেন সেই স্বল্প সময়ে এই দম্পতি কানাডায় অভিবাসন সম্পর্কে বিস্তর অভিজ্ঞতা লাভ করেন। মাভিনকুরভি বলেন, “এসব কথা কোন কানাডিয়ানই শুনতে চাইবে না। কিন্তু এটা সত্যি যে কানাডা অভিবাসীদের জন্য সহজ জায়গা নয়”।

কানাডার পয়েন্ট সিসটেম হচ্ছে বিশ্বে এ ধরণের প্রথম সিসটেম যা বহুমাত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে তৈরি করা হয়েছে সেইসব লোকজনকে বেছে নিতে যারা দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সফলতা নিশ্চিত করবে। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এর ফল হয়েছে উল্টো। এমনকি কানাডা যখন বিশ্বের সবচেয়ে শিক্ষিত কর্মীকে আকর্ষণ করতে আন্তরিকভাবে কাজ করেছে, তখনও দেশটি তাদের সবচেয়ে দক্ষ অভিবাসীর অর্থনৈতিক কল্যাণের ক্ষেত্রে নাটকীয় অবনমন প্রত্যক্ষ করেছে। তবে যেসব দেশ সাধারণত কানাডার মতো এতোটা সুদক্ষ কর্মী খুঁজে বেড়ায় না তারা কিন্তু এই অবনমন ঠিকই এড়িয়ে চলতে পেরেছে।

১৯৭০ সালে অভিবাসীরা কানাডায় জন্মগ্রহণকারী কর্মীদের বেতনের প্রায় ৮৫ শতাংশ আয় করতেন যা এক দশক পর বৃদ্ধি পেয়ে ৯২ শতাংশে দাঁড়ায়। স্ট্যাটিসটিকস কানাডার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৯০ সালের শেষ দিকে তারা আয় করতো মাত্র ৬০ শতাংশ, যা ১৫ বছর পর বৃদ্ধি পেয়ে ৭৮ শতাংশ হয়।সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী নতুন অভিবাসীদের গড় আয় কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদের ৬৭ শতাংশ।

এমনকি  আগের প্রজন্মের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসীরা বেশি শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও এই অবনতি আরো মারাত্মক হয়েছে।

স্ট্যাটিসটিকস কানাডার হিসেবে ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে কানাডায় অভিবাসী হওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ দক্ষ কর্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ছিল। সেই তুলনায় কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত কর্মীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী ছিল মাত্র ২৫ শতাংশ। এটা অনস্বীকার্য যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী অভিবাসী ও কানাডিয়ান বংশোদভূতদের মধ্যে বেতনের ব্যবধান অনেক বেশি। কানাডায় বসবাসকারী দরিদ্র অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই এদেশে এসেছে দক্ষ কর্মী হিসেবে।

বিষয়টি কানাডার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিশ্বে কানাডার অভিবাসনের হার অন্যতম, ফলে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এ দেশ দক্ষ কর্মীদের আকৃষ্ট করে বেশি।

দক্ষ অভিবাসীদের বেছে নেয়া হয় কারণ তাদের যে দক্ষতা আছে তা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে বলে ধারণা করা হয়। এদের সংখ্যা মোট কানাডিয়ান অভিবাসীর প্রায় অর্ধেক। যা যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ১৬ শতাংশ। সাবেক অভিবাসনমন্ত্রী জেসন কেনি স্বীকার করেছিলেন, অভিবাসীদের আর্থিক নিরাপত্তার অবনমন “একটি বড় সমস্যা”।

কানাডিয়ান অভিজ্ঞতার বিপরীতে মার্কিন অভিবাসী এবং আামেরিকান বংশোদ্ভূত কর্মীদের মধ্যে আয়ের ব্যবধান প্রকৃতপক্ষেই অনেক কমে এসেছে। ১৯৮০ সালে মার্কিন অভিবাসীদের আয় ছিল

আমেরিকান বংশোদ্ভূত কর্মীদের ৮০ শতাংশ, এই ব্যবধান কানাডার প্রায় সমান ছিল। ২০১১ সালের মধ্যে মার্কিন অভিবাসীদের আয় বেড়ে দাঁড়ায় আমেরিকান বংশোদ্ভূত কর্মীর আয়ের ৯৩ শতাংশে।

সবশেষ অর্থনৈতিক মন্দার সময় ২০১০ সালে বিদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী অভিবাসীদের বেকারত্বের হার ৮.৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। (যারা দেশটিতে ৫ বছরের কম সময় বসবাস করেছেন তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১৪ শতাংশ।) সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৪.৪ শতাংশ। এমনকি অর্থনৈতিক মন্দার সবচেয়ে কঠিন সময়েও কানডিয়ান বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩.৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকে।

শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই যে কানাডাকে লজ্জার মধ্যে ফেলেছে তা নয়। বৃটেনে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য যেকোন দেশ থেকে আসা অভিবাসী এবং বৃটিশ বংশোদ্ভূতদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় সমান। অস্ট্রেলিয়াতে ১৯৯০ সালে অভিবাসন নীতি সংস্কার করা হয় যাতে অভিবাসীদের কর্মসংস্থান ও আয় নিয়মিতভাবে বাড়তে পারে। অরগানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট(ওইসিডি)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ২৩ শতাংশ কানাডিয়ান অভিবাসী দরিদ্রের মধ্যে বাস করে যেখানে ওইসিডি-এর গড় হার ১৭ শতাংশ। এছাড়া কানাডায় শিক্ষা ও কর্মস্থান এই দু’টি বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় করাও বেশ কঠিন। শুধুমাত্র ৬০ শতাংশ সুদক্ষ কানাডিয়ান অভিবাসী তাদের যোগ্যতার সাথে মানানসই কাজ করছে। যেখানে একটি ওইসিডি’র গড় হার ৭১ শতাংশ। অভিবাসন বিষয়ে এই উভয় সঙ্কট বেতন কাঠামোকে আরো ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অভিবাসনের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে তুলনামূলক গবেষণা করেছেন হার্ভার্ডের অর্থনীতিবিদ জর্জ বোরজাস এবং স্ট্যাটিসটিকস কানাডার সাবেক গবেষক আব্দুর রহমান আইডেমির। গবেষণায় তারা দেখতে পান কানাডা তার অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নয় বরং প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এরফলে যেসব চাকরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি চাওয়া হয়, সেসব চাকরিতে বেতন কমে যাচ্ছে। অপরদিকে যেসব চাকরিতে স্বল্প দক্ষ এমনকি যেসব ক্ষেত্রে হাই স্কুল পাশেরও দরকার হয় না সেসব চাকরির বেতন বাড়ছে। ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে যখন কানাডা অভিবাসনের সংখ্যার সাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যোগসূত্র স্থাপনের দীর্ঘদিনের অনুশীলন বাতিল করে এবং প্রধানত কানাডিয়ান বাসিন্দাদের আত্মীয় স্বজনকে নিয়োগ দেয়ার নীতি থেকে সরে এসে কানাডার স্থানীয় লোকজনের সাথে সম্পর্কহীন কিন্তু দক্ষ অভিবাসীদের নিয়োগ দিতে থাকে, তখন থেকে বিশ্ববিদ্যালিয়ের ডিগ্রিধারীদের বেতন আট শতাংশ কমে যায়, অপরপক্ষে হাইস্কুল থেকে ঝরে পড়া কর্মীদের বেতন আট শতাংশ বৃদ্ধি পায়।নীতির এই পরিবর্তন প্রাথমিকভাবে কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত কর্মীদের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী অভিবাসীদের উপর অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের উপর এর বিপরীত প্রভাব রয়েছে। মেক্সিকো ও সেন্ট্রাল আমেরিকা থেকে আসা স্বল্প দক্ষ অবৈধ শ্রমিকদের কারণে আমেরিকার হাইস্কুল থেকে ঝরে পড়া কর্মীদের বেতন ২০ শতাংশ কমে গেছে। অপরদিকে নিয়োগকর্তারা যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদের স্পন্সর করে তাদের বেতন সম পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বিদেশে কাজের অভিজ্ঞতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী সম্ভাব্য হাজার হাজার চাকরীপ্রার্থী থেকে কর্মী বাছাই করতে কানাডিয়ান কম্পানিগুলো এখন নিয়মিতভাবে “কানাডিয়ান কাজের অভিজ্ঞতা” চায়। এই অনুশীলন বৈষম্যমূলক। টরন্টো ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ ফিলিপ ওরিওপোলাস চাকরীর বিজ্ঞাপন দেখে কয়েক হাজার জীবন বৃত্তান্ত পাঠিয়েছিলেন। এরপর যে বিষয়টা তিনি আবিস্কার করেন তাহলো জীবন বৃত্তান্তে অ্যাংলোফোনি, ভারতীয় অথবা চাইনিজ থাকলে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পাওয়ার হার ৫০ শতাংশ কমে যায়। বেশিরভাগ নিয়োগকর্তাই ধরে নেন বিদেশী নাম মানেই ওই কর্মীর ইংরেজিতে দক্ষতা নিম্নমানের। কিন্তু নিয়োগকর্তাদের “কানডিয়ান অভিজ্ঞতা” চাওয়ার পেছনে অন্য আরেকটি কারণ রয়েছে, তাহলো যে পরিমাণ কর্মী দরকার তার তুলনায় বিপুল সংখ্যক আবেদন জমা পড়া। কর্মী বাছাই সহজ করার জন্য কানাডিয়ান অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। ওরিওপোলাস বলেন, “অন্যদেশ থেকে আসা কারো প্রতি তাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে এমন, ‘এই ব্যক্তি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না, আমি সুযোগ নিতে চাচ্ছি না’”। আমেরিকান নিয়োগকর্তারাও অনেকটা কানাডিয়ান কম্পানির মতোই বৈষম্যমূলক। কিন্তু যেহেতু অভিবাসনের জন্য একটি চাকরীর প্রস্তাব দরকার সেহেতু একজন সম্ভাব্য অভিবাসী সাধারণত ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পূর্বে ওই বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে।

অভিবাসীদেরকে নিয়োগকর্তা অথবা অর্থনীতির খেয়ালের ওপর ছেড়ে দেয়ায় আমেরিকার অস্থায়ী কর্মসংস্থান ভিত্তিক অভিসান প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। কিন্তু মানিকুরভি জানান, এই নীতির কিছু অপ্রত্যাশিত সুযোগ সুবিধা রয়েছে। তিনি বলেন, “আমেরিকান সিসটেমে যারা ঝুঁকি নিতে পারে তারা কিছু অস্বাভাবিক সুবিধা পায়। “এটি সত্য হোক বা মিথ্যা, যারা বিনামূল্যে সুবিধা পায় তাদের সংখ্যা কানাডার তুলনায় আমেরিকায় কম। কিছু লোক আছে যারা বলে “ফ্রি স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার গ্যারান্টির আমার দরকার নেই। আমাকে যদি আমেরিকা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়, তাতেও আমি পরোয়া করি না। আমি ওই দেশে যেতে চাই যা আমাকে ফেসবুক ও গুগল দেবে”। তিনি বলেন, ভারতে প্রায়ই শোনা যায় চাকরি হারিয়ে এবং অস্থায়ী কাজের ভিসা বাতিল হওয়ায় অভিবাসীদের আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে।

এই ধরণের গল্প দক্ষ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, যারা কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা হতে আসে, তারা কানাডাকে স্থিতিশীল কাজের ক্ষেত্র হিসেবেই দেখে। সাসকাচিওয়ান ইউনিভার্সিটির কারা সামারভিল ও স্কট ওয়ালসওর্থ দম্পতির একটি দল ২০১১ সালে ভারত সফর করে। তাদের সফরের উদ্দেশ্য ছিল কানাডায় নবাগতরা দারিদ্রের মধ্যে বাস করে, চাকরি জোগার করা কঠিন হয়ে পড়ে তারপরও কেন বিপুল সংখ্যক লোক কানাডায় অভিবাসী হতে ইচ্ছুক হয়-সে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা। ভারতের ৫০০ শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলার পর তারা দেখতে পান, নতুন দেশে কতটা লড়াই করতে হচ্ছে সে বিষয়টা কানাডিয়ান অভিবাসীরা দীর্ঘদিন লুকিয়ে রাখেন। কারণ দেশের বাড়িতে তারা এক ধরণের সামাজিক চাপের মধ্যে থাকেন। যেকারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা নিজেকে সফল হিসেবে দেখাতে চান। লোকজনে ঠাঁসা নিজের অ্যাপার্টমেন্টের পরিবর্তে সবুজে ঘেরা প্রতিবেশির অ্যাপার্টমেন্টের সামনে নিজের ছবি তোলেন। সে যে ক্যাফেটারিয়ায় কাজ করে এ কথা উল্ল্লেখ না করে তার কম্পানি কত বড় সে বিষয়টা ফুলিয়ে ফাপিয়ে গল্প করে। সামারভিল বলেন, “তারা প্রথম কয়েকটা মাস হয়তো তাদের লড়াইয়ের কথা অন্যকে বলে, কিন্তু সেটা বেশিদিন নয়”। মানকিুরভির মতো অভিবাসীদের জন্য সমাধান খুব সহজ: নিয়োগকর্তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দেয়া হোক বিশ্বের কোন দক্ষ শ্রমিক তাদের দরকার এবং অভিবাসীদের পাওয়া বিশেষ সুবিধা লংঘন না করা। তিনি বলেন, “কানাডিয়ান নীতির মধ্যে সবচেয়ে বড় ত্রুটি হচ্ছে এই নীতিতে অটোয়ার আমলারা সিদ্ধান্ত নেয় কানাডিয়ান অর্থনীতিতে অবদান রাখার মতো সঠিক যোগ্যতা কার রয়েছে।

ক্ষমতায় আসার পর কনজারভেটিভরা অভিবাসন নীতি সংস্কারের লক্ষ্যে নিয়মিত কাজ করেছে, অস্থায়ী কাজের ভিসার সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে এবং প্রাদেশিক সরকারের প্রতি নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তন করেছে। কেনি অভিবাসন মন্ত্রী থাকা কালে বলেন, সবচেয়ে নাটকীয় পরিবর্তন আসছে আগামী বছর যখন সরকার বছরের পর বছর ধরে চলা আসা পুরোনো পয়েন্ট সিসটেম সংস্কার করবে। নতুন গৃহীত নীতিতে যদি সম্ভাব্য অভিবাসীরা পাশ করে তাহলে তারা অভিবাসনের জন্য মনোনীতদের অন্তর্ভূক্ত হবে। নিয়োগকর্তারা শ্রমিকদের তালিকা দেখতে পারবেন এবং যে ধরণের কর্মী তারা খুঁজছে সেরকম কাউকে পেয়ে যায় তাহলে তারা দক্ষ কর্মী প্রগ্রামের জন্য প্রচলিত পাঁচ বছরের অপেক্ষমান তালিকার পরিবর্তে এক বছরের মধ্যে ওই কর্মীকে নিয়োগ দেয়ার আবেদন করতে পারবে। কেনি বলেন, এটি অনেকটা নিয়োগকর্তা ও সম্ভাব্য অভিবাসীদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ডেটিং সার্ভিসের মতো।

এটি হবে একটি সৃদৃঢ় পরিবর্তন। সেইসাথে দীর্ঘদিন ধরে চলা আসা পয়েন্ট সিসটেম যে কাজ করছে না এই পরিবর্তন হবে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে একটি স্বীকারক্তি। নিয়োগকর্তাদের পরিচালিত অভিবাসন নীতি বিতর্কিত হতে বাধ্য। এরইমধ্যে একটি বি.সি. কয়লা খনিতে একটি চীনা কম্পানি দু’শোর বেশি চীনা শ্রমিককে নিয়োগ দেয়ার জন্য মনোনিত করার পর কানাডার অস্থায়ী বিদেশী-শ্রমিক প্রোগ্রাম বিতর্কের মুখে পড়েছে।

সমালোচকদের মতে, দক্ষ অভিবাসন নীতির কেন্দ্রস্থলে নিয়োগকর্তাদের স্বল্প-মেয়াদী প্রয়োজনকে স্থাপন করা কোন সমাধান নয়, নিয়োগকর্তাদের যে ধরণের দক্ষ কর্মী আজকে দরকার পাঁচ বা দশ বছর তাকে প্রয়োজন নাও হতে পারে। কিন্তু অন্যরা সতর্ক করে দেন যে বর্তমান নীতি আরো বেশি খারাপ। ওরিওপোলাস বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা কারণ অভিবাসীদের নির্বাচনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি নীতি আছে যা সম্ভবত শ্রম বাজারে সফল হবে কিন্তু সেক্ষেত্রে আমরা এখনো সঠিক লোককে নির্বাচন করতে পারছি না।

সমারভিলের মতে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করলেই যোগ্যতার চেয়ে নিম্নতর চাকুরীর হার কমবে না এবং কানাডায় অভিবাসিত হতে পুরো নীতিটিতে একটি সংস্কার প্রয়োজন।

সূত্র : ম্যাকলিনস