কানাডায় ব্যাপক সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ সম্পূরক আয়ের উপর নির্ভরশীল
ক্রমবর্ধমান ব্যয় অনেককে অতিরিক্ত কর্মসংস্থান খুঁজতে বাধ্য করছে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : সারা দেশে কানাডিয়ানদের অনেকে বিভিন্ন ধরণের অস্থায়ী বা খন্ডকালীন কাজে (Gig work) অংশগ্রহণ করছেন। এবং তারা বিভিন্ন কারণে এটি করছেন, সিকিউরিয়ান কানাডার (Securian Canada) প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় চার মিলিয়ন মানুষ – তাদের প্রাথমিক আয়ের পরিপূরক হিসেবে এই ধরণের কাজের উপর নির্ভর করে।
এ ধরনের কাজে কানাডিয়ানদের জড়িত হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (৩১%) গিগ কর্মী উল্লেখ করেছেন।
এখনকার জব মার্কেটে এই গিগ কর্মীরা উল্লেখযোগ্যভাবে বৈচিত্রময়। এ কথা বলেন সিকিউরিয়ান কানাডা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাইজেল ব্র্যাঙ্কার। তিনি বলেন, “আমাদের তথ্য দেখায় যে গিগ কর্মীরা প্রায়শই আর্থিকভাবে দুর্বল থাকেন, যা এই উদীয়মান কর্মী গোষ্ঠীর দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।”

তথ্য অনুসারে, কানাডিয়ান গিগ কর্মীরা গিগ কাজে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সৃজনশীল, যার মধ্যে রয়েছে ৩০% গিগ কর্মী ফটোগ্রাফি এবং পরামর্শের মতো বিশেষায়িত পরিষেবাগুলিতে অংশগ্রহণ করেন, ২৫% অনলাইন বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করেন এবং ২১% ফ্রিল্যান্স ডিজিটাল পরিষেবা যেমন টিউটরিং এবং গ্রাফিক ডিজাইনে অংশগ্রহণ করেন।
কানাডায় অর্থনৈতিক চাপ গিগ ওয়ার্ককে চালিত করছে
দেখা গেছে এক-চতুর্থাংশ (২৬%) লোক তাদের গিগ ওয়ার্ককে একটি শখ হিসেবে দেখেন, তবে বেশিরভাগই এটিকে একটি প্রয়োজনীয়তা হিসেবে দেখেন। গিগ কর্মীদের অর্ধেকেরও বেশি (৫৭%) তাদের প্রাথমিক আয়ের পরিপূরক হিসাবে এই ধরণের কাজের উপর নির্ভর করে, যা প্রায় চার মিলিয়ন মানুষের সমান। সমস্ত গিগ কর্মীদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ (৭৩%) তাদের গিগ ওয়ার্কের বাইরে পূর্ণকালীন বা খণ্ডকালীন নিযুক্ত।
কানাডিয়ানদের গিগ কাজে নিযুক্ত হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (৩১%) গিগ কর্মী উল্লেখ করেছেন। গিগ কর্মীরা জানিয়েছেন যে এই আয় গড়ে তাদের মোট আয়ের মাত্র ১৫ শতাংশ।
বীমার অভাবের ফলে আর্থিক দুর্বলতা আরও বেড়ে যায়
গিগ কর্মীরা অন্যান্য সমস্যারও মুখোমুখি হন। যেমন উল্লেখযোগ্যভাবে, অনেক গিগ কর্মী বীমাবিহীন। যখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তাদের জীবন, স্বাস্থ্য এবং দাঁতের, গুরুতর অসুস্থতা বা অক্ষমতার মতো নির্দিষ্ট ধরণের বীমা আছে কিনা, তখন প্রায় এক-পঞ্চমাংশ (১৮%) গিগ কর্মী বলেছেন যে তাদের বীমা নেই।
অন্যদিকে যারা আয়ের একমাত্র উৎস হিসাবে গিগ কাজের উপর নির্ভর করে, তাদের মধ্যে ৫০% বলেছেন যে তাদের বীমা নেই।
এদিকে অন্য এক গবেষণা থেকে জানা যায়, টানা ছয় বছর ধরে আর্থিক চাপের কারণে কানাডার প্রায় অর্ধেক মানুষের রাতে ভালো ঘুম হচ্ছে না। এই তথ্য প্রকাশ করে নাউটরন্টো.কম।
কানাডার গবেষণা সংক্রান্ত কোম্পানি এফপি ২০২৩ সালে কানাডার আর্থিক চাপ সূচক শীর্ষক সমীক্ষা করেছে। লেগারের অনলাইন প্যানেল ব্যবহার করে ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ২,০০৪ জন কানাডীয়র মধ্যে অনলাইনে একটি জরিপ চালানো হয়। যাদের নিয়ে জরিপ করা হয় তাদের মধ্যে বিভিন্ন জাতিগত ও সাংস্কৃতিক পটভূমির লোকজন ছিল যাতে জরিপের ফলাফলে সমস্ত কানাডীয়র অবস্থার প্রতিফলন নিশ্চিত করা যায়।
গবেষণায় দেখা যায়, ৪০ শতাংশ কানাডীয়র জন্য অর্থই মানসিক চাপের প্রধান কারণ। প্রায় অর্ধেক (৪৮ শতাংশ) কানাডীয় আর্থিক চাপের কারণে ঘুমাতে পারছেন না। এর ফলে প্রতি তিনজনে একজন (৩৬ শতাংশ) কানাডীয় উদ্বেগ অথবা বিষণ্নতার মত মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখে পড়ছেন।
এফপি কানাডার প্রেসিডেন্ট এবং সিইও তাসিয়া ব্যাটস্টোন গত মাসে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “কানাডীয়রা তাদের আর্থিক অবস্থার সঙ্গে অব্যাহতভাবে সংগ্রাম করছেন এবং আর্থিক চাপের প্রভাব কেবল আর্থিক কল্যাণের ওপরেই নয় বরং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও পড়তে পারে।”