জীবনের বহু রং

সাইদুল হোসেন

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

ঋণমুক্ত থাকা ও ধনী হওয়ার উপায়

অকটোবর ৩১, ২০২৪

Money management-এর উপর কিছু বই পড়লাম যেখানে লেখকরা ঋণমুক্ত থেকে ধনী হওয়ার নানা পন্থা আলোচনা করেছেন। অনেকগুলো পন্থা রয়েছে যা অবলম্বণ করাটা বেশ কষ্টকর বলে মনে হলেও তা অসম্ভব কিছু নয়। তাঁদের আলোচনার সারকথা হলো জীবনে সুখসাচ্ছন্দ্য চাইলে সেই সাফল্যের জন্য চেষ্টাটা শুরু করতে হবে স্কুলে ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকেই মনেমনে একটা দৃঢ় সংকল্প নিয়ে। মধ্য এবং শেষজীবনে সুখের জন্য বীজবপনটা করতে হবে জীবনের শুরুতেই যখন একটা কিছু কাজ করে অর্থোপার্জন করার সামর্থ্য অর্জন করার সুযোগটা হাতে/আয়ত্বে আসবে। আমি এখানে একটা short summary দিচ্ছি।  It’s a continuous process. নীতিমালাটা খানিকটা এরকম :

১.         অল্প বয়সেই অর্থোপার্জনের চেষ্টাটা শুরু করতে হবে।

২.         মিতব্যয়ী স্বভাবটা গড়ে তুলতে হবে; আয় বুঝে ব্যয় করতে হবে।

৩.         অহেতুক খরচ থেকে বিরত থাকতে হবে। জিনিসটা দেখে পছন্দ হলো, মন চাইলো, কিনে ফেললাম। না, কখনো না। Impulse buying থেকে দূরে থাকতে হবে।

৪.         সাধ্যের অতীত কেনাকাটা করা থেকে দূরে থাকতে হবে। যা-ই কিনবেন পাঁচটা store ঘুরে price, quality, warranty ইত্যাদি যাচাই করে তবে কিনবেন।

৫.         ফুটানি করার জন্য, বন্ধুবান্ধবের সস্তা বাহবা কেনার জন্য নিজের পয়সা খরচ করে তাদের entertain করা থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ এটা একটা মূর্খতা।

৬.         Credit Card use করাটা কমাতে হবে। মাসের শেষে credit card purchases-এর billটার full payment করে দিতে হবে, কোন balance রাখা চলবে না।

৭.         বাড়ির mortgage-এর মাসিক installmentটা দিতে কখনো গড়িমসি করবেন না।

৮.         যথা সম্ভব কিছু অর্থ প্রতিমাসে জমাতে হবে (save করতে হবে)।

৯.         যথা সম্ভব নিয়মিত কিছু অর্থ profitably invest করতে হবে।

১০.       Personal loan নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে; আর সেটা কোন কারণে বাধ্য হয়ে নিলেও যথাসময়ে সেটা পরিশোধ করতে হবে।

১১.       আয় বাড়ার সংগেসংগে তাল মিলিয়ে জীবনযাত্রার মান অহেতুক বাড়ানো থেকে দূরে থাকতে হবে। সংযমী হতে হবে।

১২.       গাড়িটা কেনার আগে student loanটা পরিশোধ করতে হবে।

১৩.       বাড়ি যদি কিনতেই হয় তাহলে সেটা নিজের আর্থিক ক্ষমতার ভেতরেই কিনতে হবে। বড় বাড়ি, luxury house জীবনের শুরুতেই নয়।

১৪.       Competitive lifestyle বর্জন করতে হবে। ধনী বন্ধু অথবা আত্মীয়ের অমুক জিনিসটা আছে, সেটা আমাকেও কিনতে হবে। না, কখনো নয়।

১৫.       আপনি একজন ধনবান ব্যক্তি, তারা আবদার করলেই, জেদ ধরলেই সবকিছু কিনে দেবেন, এমন একটা ধারণা আপনার সন্তানদের মনে জন্মাতে দেবেন না কখনো। তারা তখন খুব demanding স্বভাবের হয়ে পড়বে। তাদেরকে জীবনের শুরু থেকেই value of money বুঝাবেন/শেখাবেন। Need and want-এর মাঝে পার্থক্যটা শেখাবেন।

“ভাইজান, ইংলিশে আমাকে একটা কবিতা লিখে দিতে হবে।”

অকটোবর ৩১, ২০২৪

আজ সকালে একজন ফোন করলেন বহু বছর পর। আমরা বহুদিনের পরিচিত। অতীতে কিছুটা ঘনিষ্ঠতাও ছিল। তিনি একজন বয়ষ্ক ব্যক্তি। কিন্তু আমি বয়সে কিছুটা বড় বলে তিনি আমাকে “ভাইজান” বলে সম্বোধন করতেন, আমাকে সম্মান প্রদর্শন করতেন। আজ ফোনে কথাবার্তা বলে তিনি খুব খুশী হলেন। বললেন আবার শিঘ্রই ফোন করবেন।

তিনি ফোনটা রেখে দেয়ার পর তাকে কেন্দ্র করে মজার একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।

আজ থেকে ১২-১৩ বছর আগে তিনি হঠাৎ করে একদিন আমাদের বাসায় গিয়ে উপস্থিত। আমরা তখন টরন্টো সিটিতে বসবাস করতাম। তিনিও টরন্টো সিটিতেই বেশ দূরে কোথাও সপরিবারে বাস করতেন। স্ত্রী ও দুই কন্যা। কন্যা দু’টিই কলেজে অথবা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতো।

জানতে চাইলাম, “ভাই, আকষ্মিকভাবে আপনার আগমণের হেতুটা কি?”

তিনি বললেন, “অতি জরুরী প্রয়োজনেই আজ আপনার দারস্থ হলাম। ভাইজান, ইংলিশে আমাকে একটা কবিতা লিখে দিতে হবে এক্ষুণি। কি কি লিখতে হবে সব লিখে এনেছি। আশা করি আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না।”

তার কথা শুনে আমি খুবই অবাক! তিনি বাংলাদেশের লোক, দাড়ি-টুপীওয়ালা, চলনে-বলনে পরিপূর্ণ মুল্লা। নিয়মিত নামাযী-মুসল্লী মানুষ। টরন্টোতে বসবাস করছেন বহুদিন ধরে। তিনি ইংলিশ কবিতা লিখাতে চান। কি ব্যাপার?

তিনি তার ব্যাগ থেকে একটা কাগজ টেনে বের করলেন। বললেন, “এটাতে সব লেখা রয়েছে।”

কাগজটা হাতে নিয়ে কথাগুলো পড়লাম। তাতে বাংলায় এবং ইংরেজীতে লেখা রয়েছে কিছু গুণগান ও প্রশংসাবাণী, সংগে অশেষ কৃতজ্ঞতার কথা। যার মাথামুন্ডু কিছুই বোধগম্য হলো না।

তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “ভাইজান, আমার বড় মেয়েটার বিয়ে। এই নিন আপনাদের জন্য দাওয়াত পত্র। মেয়েটার বিয়ে হচ্ছে এক উর্দুভাষী পরিবারে। ছেলেটি ওর ক্লাসমেইট। খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি ভালো খানদান, লোকজন সব ভদ্র, মার্জিত। আমরা খুব খুশী যে মেয়েটা আমাদের ভালো পরিবারের ছেলেকেই ওর হাজব্যান্ড হিসাবে সিলেক্ট করেছে।

“আমার পরিবার অথবা আমি উর্দু জানি না, বলতে-বুঝতে পারি না। অন্যদিকে ওরাও বাংলা ভাষা বুঝে না। তাই আমরা আমাদের খুশী-আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই ইংরেজী ভাষায়। কবিতাটা আমি পড়বো বিয়ের অনুষ্ঠানে সবার উপস্থিতিতে। ওরা জেনে খুশী হবে যে পাত্রীপক্ষ তাদের উপর খুব সন্তুষ্ট।”

“লেখাটা কবিতার আকারে হলে আমার পক্ষে পড়াটা সহজ হবে। তাই একটা কবিতা চাই। সেটা আমরা প্রিন্ট করাবো, বিলাবো।”

থামলেন তিনি দম ফেলে।

বহুক্ষণ চেষ্টার পর লেখা ইংরেজী কবিতাটা (প্রশংসাপত্রটা) তার খুব পছন্দ হলো। তিনি আমার সংগে তার হাত মিলিয়ে, বুক মিলিয়ে বহুত বহুত শুকরিয়া জানিয়ে সেদিনের মত বিদায় নিলেন।”

মানুষের রুচি-পছন্দ কতই না বিচিত্র!

আজ ফোনে আলাপ শেষ করার আগে জানতে চাইলাম, “আপনার সেই মেয়েটা কেমন আছে?”

“খুুব ভালো আছে”, জানালেন তিনি। সংগে আরো জানালেন যে তিনটি নাতি-নাতনি হয়েছে। ওর ছোটবোনেরও বিয়ে হয়েছে। ওরও তিন সন্তান। মোট ছয়জন নাতি-নাতনি নিয়ে তারা আনন্দেই আছেন।

দৃষ্টিভংগীরও রঙ বদলায়

নভেম্বর ১০, ২০২৪

এই দুনিয়াটা একটা আকর্ষণীয় আরাম-আয়েশ উপভোগ করার স্থান যতদিন যৌবন ও সামর্থ্য টিকে থাকে, হতাশ-নিরাশ হওয়ার মত কোন কারণ না ঘটে। জীবনটাকে উপভোগ করতে হলে যৌবন ও আর্থিক সামর্থ্যরে বাইরেও কিছু উপকরণ লাগে। যথা নারী, সুরা, নৃত্য ও সংগীত। এগুলো ছাড়া আয়েশটা পূর্ণ হয় না। অতীতের প্রখ্যাত মনীষী ওমার খাইয়্যামের ভাষায় :

দু’টুকরো রোটি, এক বোতল শরাব, একটি উত্তম কিতাব এবং সংগে একটি যুবতী নারী- জীবনটাকে উপভোগ করতে হলে এর বেশী আর কি চাই?

প্রখ্যাত মনীষী ওমার খাইয়্যামের কবিতার একটি ইলাস্ট্রেশন। ছবি : সংগৃহীত

আরো দেখুন অন্য কবির রচনা :

“শরাবকা সাথ আগার শবাব না হো

 তো পীনাভী কেয়া, ঔর জীনাভী কেয়া।”

(অনুবাদ : শরাব খাওয়ার সময় পাশে যদি একটি যুবতী নারী উপস্থিত না থাকে, তাহলে মদ খাওয়া অথবা বেঁচে থাকা দু’টিই অর্থহীন।)

অন্য ধরনের প্রকাশভংগীরও দেখা পাওয়া যায় উর্দু কবিতাতে। যথা-

“দরিয়া আজীব চীজ হ্যায় আগার মওজ না হোতা,

জওয়ানী আজীব চীজ হ্যায় আগার জইফ না হোতা,

মুহাব্বত আজীব চীজ হ্যায় আগার মওত না হোতা ॥”

যার অনুবাদটা হচ্ছে-

সাগর এক আশ্চর্য বস্তু যদি সেখানে ঢেউ না থাকতো,

যৌবন এক আশ্চর্য বস্তু যদি বার্ধক্য এসে তাকে ধ্বংস না করে দিতো,

প্রেম এক আশ্চর্য বস্তু যদি মৃত্যু এসে তার অবসান না ঘটাতো।

কিন্তু বাস্তবতা তো এই যে এজগতে সাগরে ঢেউ থাকবেই, বার্ধক্য এসে যৌবনের উদ্দীপনাকে দূরে সরিয়ে দেবেই, এবং মৃত্যু এসে প্রেমের অবসান ঘটাবেই।

কিন্তু যৌবন বা উপভোগ চিরস্থায়ী নয়, এরা সবাই মানব জীবনের ক্ষণস্থায়ী অতিথি মাত্র। যা সত্য তা হচ্ছে দৈহিক সামর্থ্যরে ক্রমাবনতি, জরা-বার্ধক্য, চলার পথে আঘাত, বঞ্চনা, হতাশা এবং জীবনের প্রতি আকর্ষণের সমাপ্তি। সর্বশেষে স্রষ্টার কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন। এই প্রসংগে বিখ্যাত এক উর্দু কবি বলে গেছেন (মির্জা গালিব) :

“দুনিয়াকি মেহ্ফিলোঁসে উগ্তা গেয়া হুঁ, ইয়া রব্,

কেয়া লুৎফ হ্যায় আন্জুমান্মেঁ

জব দিলহি বুঝ্ গেয়া হো।”

( অনুবাদ : হে  প্রভু, এই জগতের জৌলুশ-আনন্দ থেকে হৃদয় আমার বিমুখ হয়ে গেছে, আমার মনটা মরে গেছে, জাগতিক কোন আনন্দই আর আমাকে আকর্ষণ করতে সমর্থ নয়।)

অন্য এক কবি বলেছেন :

কুচ নেহী রাহা ইস্ দুনিয়ামেঁ মেরি দিল বেহ্লানেকে লিয়ে,

বুলালে মাওলা মুঝে আব তেরি পাস”

(এ জগৎ আকর্ষণহীন হয়ে গেছে,

 হে প্রভু, তুমি আমাকে এখন তোমার কাছে ডেকে নাও।)

অন্যদিকে সহজ-সরল বা ঝামেলামুক্ত জীবন হলেও বয়স হওয়ার পর, সংসারের সব দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার পর অখন্ড বিশ্রাম ভোগ করাকালীন অবস্থায় মনে নানা প্রশ্ন জাগে একজন বিবেকবান মানুষের মনে :

১.         আমার জীবনটা কি সফল?

২.         আমার সব আশা-আকাংখা কি পূর্ণ হয়েছে?

৩.         আমার দ্বারা কেউ কখনো ক্ষতিগ্রস্ত বা অযথা অপদস্থ হয়েছে কি?

৪.         আমার আর্থিক অর্জন এবং সঞ্চয় বৈধ পথে হয়েছে কি?

৫.         আজীবন আমি আমার সব কাজেকর্মে, ব্যবহারে সৎ নিয়মনীতি মেনে চলেছি কি? Fair behaviour করেছি কি?

৬.         আমি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছি কি কখনো?

৭.         আমি আমার দেশের স্বার্থ রক্ষা করে একজন উত্তম দেশপ্রেমিক নাগরিক হতে পেরেছি কি?

৮.         আমার প্রতি কেউ অসদাচরণ করে থাকলে আমি কি তার যথাযোগ্য প্রতিশোধ গ্রহণ করেছি, না তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি?

৯.         কারো প্রয়োজনের মূহুর্তে আমি তার সাহায্যে এগিয়ে যেতে পেরেছি কি?

১০.       আমার ধর্মীয় আদেশ-নিষেধ পালন করে আমি জীবনযাপন করেছি কি?

১১.       আমি আমার সন্তানদের সামনে, পরিবারের সামনে একজন সৎ, সদাশয়, নীতিবান এবং অনুকরণীয় চরিত্রের ব্যক্তি বলে দৃষ্টান্ত রেখে যেতে পেরেছি কি?

এসব প্রশ্ন এবং সেগুলোর জবাব- positive or negative- মানুষটির মনে প্রশান্তি এবং অশান্তি দু’টিরই সৃষ্টি করে কারণ ভুলক্রটি, অন্যায় কোথাও না কোথাও অবশ্যই ঘটেছে কারণ আমরা মানুষ, আমাদের চরিত্রে নানা দুর্বলতা [কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মদ-মাৎসর্য) সর্বদাই আমাদের কাজকর্ম ও চলনবলনকে প্রভাবিত করে যাচ্ছে। আমরা ভুল করে থাকি। এমতাবস্থায় করণীয় কি?

করণীয় একটাই- স্রষ্টার কাছে করজোড়ে বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

মানুষের জীবন বহতা নদীর মত

ডিসেম্বর ১১, ২০২৪

মানুষের জীবন তো একটা বহতা নদীর মত, সে শুধু সামনের দিকে এগিয়েই চলে, এগিয়েই চলে যতক্ষণ পর্যন্ত সাগরের সংগে তার সংগম (মিলন) না ঘটে। পথমাঝে তার দু’তীরের যাত্রীদের পারাপারে নিয়মিত সহায়তা করে সে খেয়াতে চড়িয়ে। সৃষ্টি হয় নূতন নূতন কাহিনীর। মৃত্যু এসে সবকিছু স্তব্ধ করে দেয়।

উর্দু একটা গানে এই কথাগুলোর দেখা পেলাম ঃ

“জিন্দেগী কুচ্ তো বাতা

আপ্না পাতা, জিন্দেগী…

“তু হ্যায় তো ম্যায় হুঁ

তু হ্যায় তো খুদা

তু হ্যায় তো রব্

তু হ্যায় তো ফলক

তু হ্যায় তো যমী-ন,

জিন্দেগী…”

বাংলা অনুবাদ।

হে জীবন!

তোর নিজের খবর তো কিছু বল,

তোর নিজের রহস্য কিছু তো জানতে দে, কারণ

তুই আছিস, তাই আমিও আছি,

তুই আছিস, তাই খুদাও আছে,

তুই আছিস, তাই আল্ল­াহও আছে,

তুই আছিস, তাই উপরে আকাশও আছে,

তুই আছিস, তাই নীচে পৃথিবীও আছে।”

সার কথাটা হলো এই যে বেঁচে থাকলেই শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা যায়, অন্যদের নিয়ে, ভিন্নভিন্ন প্রসংগ নিয়ে ভাবা যায়। মৃত লোকদের তো সৃষ্টিকর্তা বা আকাশ-পৃথিবী নিয়ে কোন প্রকার দুশ্চিন্তাই নেই।

তাই জীবনের বা বেঁচে থাকার রহস্যটা, কলাকৌশলটা জানা খুবই জরুরী।

আমার জীবনটাও ঠিক তাই। এগিয়ে চলেছি, নানাদিক থেকে জ্ঞানাহরণ করে যাচ্ছি। সেসবেরই কিছু সংলগ্ন কাহিনীগুলোতে বর্ণনা করেছি। পাঠকই বিচার করবেন তারা কি পেলেন।

(এক)

বন্ধু আমার

ডাউনটাউন মিসিসাগার বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম আজ সকাল ১০টায়। হাল্কা-হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছিলো। স্নো নেই। ঠান্ডাও না। ডিসেম্বর মাসের একটা শীতের দিন বলেই মনে হচ্ছিলো না। সংগে আমার ওয়াইফও ছিলো।

এমনি সময় দৌড়ে সামনের রাস্তাটা পার হয়ে একজন বয়ষ্ক মোটাসোটা ক্যানাডিয়ান আমাদের বাস শেল্টারে এসে এসে ঢুকলো। লক্ষ্য করলাম ওর হাতে একটা নামকরা ইটালিয়ান bakery’র নাম লেখা ব্যাগ, বেশকিছু খাদ্যসামগ্রী আছে তাতে। গায়ের জ্যাকেটটা থেকে বৃষ্টির পানি ঝরাতে সে দেহে একটা ঝাঁকি দিলো। তারপর সেখানে উপস্থিত বাসের জন্য অপেক্ষামান যাত্রীদের উদ্দেশ করে বললো,

“যাচ্ছি এক ফ্রেন্ডের সংগে দেখা করতে। ডাউনটাউনে নিজের বাড়িতেই থাকে। একাকী জীবন ওর। বউ ওকে ছেড়ে চলে গেছে বহু বছর আগেই। আমরা দু’জন স্কুল জীবনের বন্ধু যদিও ওর বন্ধু হওয়াতে গর্ব করার মত কিছু নেই। হাড়কিপটে চিরকালের। Freeloader সেই ছেলেবেলা থেকেই। এখন তো বৃদ্ধ, কিন্তু স্বভাবটা বদলায়নি। বাড়ি আছে, পেনশান/ওল্ডএইজ সিকিউরিটি পায় প্রতিমাসে। ব্যাংকে জমায়, নিজের জন্যও খরচ করে না। So Stupid.

“আমাকে মাঝে মাঝে ফোন করে। বলে, “একবার এসে দেখে যা।” আকর্ষণীয় কিছুই নেই ওর মাঝে, তবুও যাই। কেমন যেন একটা মায়ার জালে জড়িয়ে গেছি। তাই যাই।

এইতো গত দু’সপ্তাহ আগেও যেতে অনুরোধ করলো। গেলাম। হতভাগা ফ্রিজটা খুলে এক গ্ল­াস পানি পর্যন্ত অফার করলো না। আমি নিজেই ফ্রিজটা খুললাম। দেখলাম সেটা সম্পূর্ণ শূন্য, ভেতরে কিছুই নেই। মনে খুব কষ্ট পেলাম। ঘরে রান্না করে না, বাইরে গিয়ে খেয়ে আসে।

“গতরাতে আবার ফোন করে যেতে অনুরোধ করলো। তাই যাচ্ছি, তবে খালিহাতে নয়। কিছু ফুড সংগে নিলাম। বাস থেকে নেমে কোন একটা স্টোর থেকে এক ডজন পানিও কিনে নেবো। হতভাগা হয়ত না খেয়েই মরে যাবে একদিন, খবরও পাবো না। ওর ব্যাংকে জমানো ডলারগুলো ওর মৃত্যুর জন্য ওঁৎপেতে  বসে থাকা কোন আত্মীয় বা বন্ধু উঠিয়ে নিয়ে ভোগ করবে। ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।”

তিনি চুপ করলেন। কথা বলা শেষ। আমরা শুনলাম কানপেতে।

ভিন্ন ভিন্ন প্রসংগ নিয়ে কিছু কথাবার্তা

(এক)

মানব জীবনের অর্থ কি?

Once a wise man was asked, ”What is the meaning of life?”
He replied, “Life itself has no meaning. Life is an opportunity to create a meaning.”

জ্ঞানী ব্যক্তিটি সত্যই বলেছেন বলে আমি মনে করি। গবধহরহমভঁষ অর্থাৎ অর্থবহ/গুরুত্বপূর্ণ/দৃষ্টান্তমূলক কিছু কাজ করে যেতে পারলেই মনুষ্য জীবনটা সার্থক হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়, অন্যথায় শুধু গতানুগতিক জীবন অর্থহীন। জন্মালাম, ভোগবিলাস-বিনোদন করে একদিন মরে গেলাম- না, এমন নিষ্ফল জীবন কখনো কাম্য হতে পারে না। সেই জীবন তো meaningless.

(দুই)

ডিম পাড়া ও বাচ্চা প্রসবকারী প্রাণী

রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বিখ্যাত সাহাবী হজরত আলী (রাঃ)কে একদিন মক্কার কিছু লোক প্রশ্ন করেছিল, “আচ্ছা আলী, তুমি আমাদের বলতো প্রাণীদের মাঝে কোন প্রজাতির প্রাণী ডিম পাড়ে এবং কোন প্রজাতির প্রাণী বাচ্চ প্রসব করে?”

জবাবে তিনি বললেন, “যে প্রজাতির কান তাদের মাথার ভেতরে থাকে তারা ডিম পাড়ে, আর যে প্রজাতির কান তাদের মাথার বাইরে থাকে, ওরা বাচ্চা প্রসব করে।”

জবাবটার সত্যতা প্রশ্নকারীদের হতবাক করে দিলো।

(চলবে)

সাইদুল হোসেন

মিসিসাগা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *