কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন মার্ক কার্নি : মন্ত্রিসভার আকার নামিয়ে আনলেন প্রায় অর্ধেকে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, মার্চ ১৪, ২০২৫ : ব্যাংক অব কানাডা এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের প্রাক্তন গভর্নর মার্ক কার্নি আজ শুক্রবার ১৪ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে জাস্টিন ট্রুডোর কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে সকালে অটোয়ার রিডো হলে এক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন জাস্টিন ট্রুডো। খবর গ্লোবাল নিউজের।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কানাডার গভর্নর জেনারেল মেরি সাইমন। এই অনুষ্ঠানে মার্ক কার্নির নতুন মন্ত্রীসভার সদস্যরাও শপথ গ্রহণ করেন। সদ্য পদত্যাগ করা জাস্টিন ট্রুডোর মন্ত্রীসভার তুলনায় মার্ক কার্নির মন্ত্রীসভার আকার প্রায় অর্ধেক। ২৩ জন মন্ত্রী নিয়ে মার্ক কার্নির যাত্রা শুরু। এদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ এবং ১১জন মহিলা। ট্রুডসহ তার মন্ত্রীসভার সদস্য ছিল ৩৯ জন।

মার্ক কার্নি কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিলেও তিনি পার্লামেন্টর সদস্য নন। আশা করা হচ্ছে পার্লামেন্টে একটি আসন চাইবেন তিনি এবং জল্পনা চলছে যে তিনি দ্রুত একটি আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারেন।

উল্লেখ্য যে, মার্ক কার্নির নতুন মন্ত্রী সভায় টরন্টোর বাঙ্গালী অধ্যুষিত পাশাপাশি দুই রাইডিং এর দুই এমপি বিল ব্লেয়ার ও নাথানিয়েল এরস্কাইন-স্মিথ রয়েছেন। তারা ট্রুডোর মন্ত্রী সভায়ও ছিলেন।

কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি । ছবি : অ্যাড্রিয়ান ওয়াইল্ড-দ্য কানাডিয়ান প্রেস

এর আগে গত ৯ মার্চ ২০২৫ তারিখে লিবারেল পার্টি অফ কানাডার দলীয় সদস্যদের বিপুল সমর্থন পেয়ে দলটির নতুন নেতা নির্বাচিত হন মার্ক কার্নি। তিনি ভোট পান ৮৫% । তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিনা  ফ্রিল্যান্ডসহ অন্যান্য প্রার্থীরা ভোটে পিছিয়ে ছিলেন ব্যাপকভাবে। মার্ক কার্নির ধারে কাছেও ছিলেন না কেউ। তিনি ফ্রন্টরানার ছিলেন। তবে তার  সমর্থকরাও ভাবেননি এরকম বিশাল জয় পাবেন তিনি।

রাজনীতিতে মার্ক কার্নি একেবারেই নবীন। মাত্র দুই মাসের অভিজ্ঞতা তার। মার্ক কার্নির বয়স ৫৯। তিনি ব্যাংক অফ কানাডার গভর্নর পদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০০৮ সালে। সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতা স্টিফেন হারপার তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই সময় কানাডার অর্থনীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করে যথেষ্ট সুনাম কামিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছন।

মার্ক কার্নির জন্ম কানাডার নর্থওয়েস্ট টেরিটরিতে। যখন তার বয়স ৬ তখন তার পরিবার চলে আসে এডমন্টন প্রভিন্সে। কার্নি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন, তারপর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

মার্ক কার্নি এবং তার স্ত্রী ডায়ানা পরিবারে চার কন্যা রয়েছে। ডায়না নিজেও একজন অর্থনীতিবিদ।

২০১৪ সালে মার্ক কার্নি ‘অর্ডার অব কানাডা’ খেতাবেও ভূষিত হন।  এটি কানাডার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মানজনক খেতাব।  

উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত কানাডার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে  পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। গত ৬ জানুয়ারি তার নিজ বাসভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। সেদিন তিনি বলেছিলেন, দল নতুন নেতা নির্বাচন করার পর দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন তিনি। আজ সেই নতুন নেতা নির্বাচিত হলেন মার্ক কার্নি।

সম্প্রতি দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতিকে কেন্দ্র করে বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন ট্রুডো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বড় বড় প্রতিশ্রুতি পূরণ না করতে পারা নিয়ে ট্রুডোর প্রতি জনগণের হতাশা আছে। অভিবাসনের মতো বিষয়গুলো সামাল না দিতে পারা নিয়েও তাদের হতাশা আছে।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর কানাডার ফেডারেল পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিরুদ্ধে উত্থাপন করা হয়েছিল এক অনাস্থা প্রস্তাব। কিন্তু ঐ যাত্রায় বেচে যান তিনি। কারণ অপর দুই বিরোধী দল এনডিপি ও Bloc Québécois এই অনাস্থা প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানায়নি। অনাস্থা প্রস্তাব পরেও আনা হয়েছি কয়েকটি। কিন্তু সেগুলোও টিকেনি।

তবে জনমনে দিন দিন জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি সমর্থন দ্রুত কমতে থাকে এবং অতি সম্প্রতি তা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকে। এমনকি লিবারেল পার্টির দলীয় এমপিদেরও অনেকে জাস্ট্রিন ট্রুডোর প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করেন এবং তাকে পদত্যাগ করার জন্য ক্রমশ চাপ দিতে থাকেন।

এরপর গত ডিসেম্বরে উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড আচমকা পদত্যাগ করে বসেন। এটি ছিল ট্রুডো সরকারের জন্য এক বড় ধাক্কা। কারণ, ক্রিস্টিয়া ছিলেন ট্রুডোর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সহযোগীদের একজন। তিনি ট্রুডোর দেওয়া ব্যয়বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করার পর তাঁর বিরাগভাজন হয়ে পড়েন।

ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করে যে চিঠি লেখেন, তাতে অভিযোগ করা হয়, ট্রুডো দেশের জন্য ভালো কিছু করার দিকে মনোযোগ না দিয়ে ‘রাজনৈতিক ছলচাতুরী’র আশ্রয় নিচ্ছেন।