জীবনের বহু রং
সাইদুল হোসেন
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
(দুই)
BYOB
অকটোবর ২০, ২০২৪
আমাদের সিনিয়র সিটিজেনস বিল্ডিংয়ের বাসিন্দাদের Thanks Giving Dinner টা হয়ে গেলো গত সপ্তাহে। এই উপলক্ষ্যে আমাদের লবীতে হাতে লেখা যে নোটিসটা পিন দিয়ে আটকানো ছিলো তাতে উল্লেখ করা ছিল ডিনারের তারিখ, সময়, স্থান, কি কি খেতে দেয়া হবে তার বর্ণনা, এবং কত ডলার দিতে হবে। সর্বশেষে লেখা ছিল BYOB.
নোটিস বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটা পড়তে গিয়ে BYOB কথাটা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো সেটার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে না পেরে পাশে দাঁড়ানো এক রেসিডেন্টকে জিজ্ঞাসা করলাম, “John, would you mind telling me what this BYOB mean? I am perplexed. Does it mean Be Your Own Boss?”
আমার অজ্ঞতায় বেশ মজা পেয়ে John হেসে বললো, “Be Your Own Boss? No. But I like it. However, as a matter of fact, BYOB means Bring Your Own Booze. Booze means alcoholic drink. That 20 dollars they are going to charge for the dinner per person does not include the cost of alcoholic drink.”
তারপর প্রশ্ন করলো, “Do you get me, my friend?”
“Yes, I do understand now. Thanks for educating me.” বললাম আমি।
“That’s ok”, বলে John তার নিজের কাজে চলে গেলো।
(তিন)
ঋতু আমার নাম
অকটোবর ২৩, ২০২৪
নিকটস্থ পাবলিক লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখলাম গত সপ্তাহে যে তাদের বহু পুরানো বই অল্পমূল্যে SALE-এ দিয়েছে। ASTRONOMY নিয়ে লেখা [বহু রঙীন ফটোদ্বারা সম্মৃদ্ধ] একটা মোটা বই আমার পছন্দ হয়ে গেল। সেটা হাতে নিয়ে লাইব্রেরী এসিস্টেন্টের কাউন্টারে গেলাম। জানতে চাইলাম বইটার জন্য কত ডলার দিতে হবে।
মহিলা বললো, “Two dollars only.”
আমি বিষ্ময় প্রকাশ করে বললাম, “Only two dollars for such a big book?”
মহিলা ইন্ডিয়ান। আমার গায়ের রং ও চেহারা সাধারণ ইন্ডিয়ানদের মতোই যদিও রাজনৈতিক কারণে এখন আমরা বাংলাদেশী। তাই আমাকে ইন্ডিয়ান মনে করে সে জবাব দিলো তাদের ভাষা হিন্দিতে, “হাঁনজি।”
সেটা শুনে আমি হেসে দিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, “What’s your name, lady?”
জবাবে বললো, “RITU.”
জিজ্ঞাসা করলাম, “Are you from West Bengal, India? A Bengali?”
ওর পাল্টা প্রশ্ন, “Why do you want to know?”
বললাম, “I am from Bangladesh. We speak Bengali. We have a word RITU in Bengali which in English, means a season. What does your name RITU mean in your Hindi language, ma’m?”
এবার ওর হাসির পালা।
মুখভরা হাসি দিয়ে বললো (পরিষ্কার বাংলা ভাষায়), “আমি ওয়েস্ট বেংগলের মেয়ে নই, আমার বাড়ি বিহার। কিন্তু আমি বাংলা বলতে পারি। বাংলায় যেমন, আমাদের হিন্দিতেও ঠিক তেমনি RITU কথাটার অর্থ হলো season, কোন পার্থক্য নেই। কোয়ী ফারাক নেহী।”
ওর জবাবটা শুনে আমি চমৎকৃত!
(চার)
আজ আমার শ্বশুরের মৃত্যুদিবস
অকটোবর ২৭, ২০২৪
আমার শ্বশুরের মৃত্যুর আজ ৩০ বছর পূর্ণ হলো। তাই স্ত্রীর সংগে বসে তাঁর স্মৃতিচারণ করছিলাম।
১৯৯৪ সন, জুলাই মাস। ঢাকা থেকে ফোন এলো, তিনি খুবই অসুস্থ। আমার স্ত্রী তাঁর প্রথম সন্তান। আমরা ক্যানাডায় বাস করি, টরন্টো সিটিতে।
তাঁর দ্বিতীয় সন্তান (ছেলে) সপরিবারে ক্যানাডাবাসী।
চতুর্থ সন্তান (ছেলে) ইংল্যান্ডে বাস করে। পঞ্চম সন্তান (মেয়ে) স্বামীর সংগে আমেরিকায় বাস করে। তৃতীয় সন্তান (ছেলে) মৃত, ওর স্ত্রী তার ছোট সন্তানসহ আমার শ্বশুরের বাসায় তখন থাকতো।
আমার শাশুড়ি আগেই মারা গেছেন। আমার শ্বশুর ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিজবাড়িতেই বসবাস করতেন। বাংলাদেশ সরকারের Foreign Affairs Ministry তে কাজ করাকালীন রিটায়ার করেছিলেন তিনি।
তাঁর সেবাযত্ন করার জন্য আমার স্ত্রী ঢাকা গেলো। আমেরিকা থেকে তাঁর ছোট মেয়েটিও গেলো। সাধ্যমত সেবাযত্ন করলো সে চার মাস ধরে তার ছোটবোন ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের সাহায্য নিয়ে। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি নেই। এদিকে তার ক্যানাডা ফিরে আসার তারিখও দ্রুত এগিয়ে আসছে। ২৭ অকটোবর, ১৯৯৪, প্লেইন টিকেটের শেষ দিন। সেদিন ভোরবেলা তার বাবা কেমন আছে তাঁর রুমে দেখতে গিয়ে তাঁর গায়ে-মাথায় হাত দিয়ে সে বুঝতে পারলো যে তিনি এজগতের মায়া কাটিয়ে অন্য জগতে চলে গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
শুরু হলো হাউমাউ কান্না এবং অন্যদের ডেকে ডেকে ঘুম থেকে উঠানো, আত্মীয়স্বজনদের ফোন করে মৃত্যুসংবাদটা জানানো। অল্পক্ষণের মাঝেই বাড়ি ভরে গেলো তাদের আগমণে। শুরু হয়ে গেলো তাঁর কাফন-দাফনের তৎপরতা।
এরই মাঝে অতি হৃদয়বিদারক ঘটনা আরো একটি ঘটলো আমার স্ত্রীর জীবনে। প্লেইন টিকেটের মেয়াদ বাড়ানোর কোন সুযোগ ছিলো না। তাই তাকে তার বাবার মৃতদেহটা বিছানার উপর রেখে, তাঁকে কবরস্থ না করেই কাঁদতে কাঁদতে এয়ারপোর্টে গিয়ে ক্যানাডা ফেরার প্লেইনটা ধরতে হলো। বড় কঠিন মানসিক আঘাত সইতে হলো তাকে জীবনের বাস্তবতার দাবী মিটাতে গিয়ে।
আমার শ্বশুর ছিলেন একজন উদার হৃদয় ব্যক্তি। কেউ তাঁর কাছে কিছু চাইলে তিনি তাকে সেটা দিতে তাঁর সাধ্যমত চেষ্টা করতেন। নিজের সাধ্যাতীত হলে যাকে দিয়ে সেটা করানো সম্ভব তার কাছে নিয়ে যেতেন।
তাঁর উদারতার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ হচ্ছে তাঁর বড় মেয়েটির সংগে আমার বিয়ে। ১৯৫৯ সনে।
আমি তখন একটা আধাসরকারী কর্পোরেশনে অল্প বেতনে চাকরী করছি। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে B.Com. degree আছে (১৯৫৫)।
আমি যখন বিয়ের প্রস্তাবটা রাখলাম এবং খোঁজ নিয়ে তিনি জানলেন যে এই বিয়েতে তাঁর মেয়েটির কোন অমত বা আপত্তি নেই, তিনি সানন্দে রাজী হয়ে গেলেন এবং অনতিবিলম্বে বিয়ের কাজটা সমাধা করে দিলেন।
তিনি বললেন, “ওর চাকরি জীবনের এই তো মাত্র শুরু। ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি আছে, hard work and efficiency দেখাতে পারলে দ্রুতই সে আরো উপরে উঠবে।”
তাঁর ভবিষ্যদ্বানীটা বিফলে যায়নি। আমি বারবার প্রমোশন পেয়ে বহু উপরেই উঠেছিলাম। তিনি তা দেখে যেতে পেরেছেন। আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন।
(পাঁচ)
মায়ের কান্না ও অভিযোগ
অকটোবর ২৮, ২০২৪
কিছুদিন আগে আমার স্ত্রী আমন্ত্রিত হয়ে এক পরিবারের সাথে ডিনারে যোগ দিয়েছিলো। ডিনারশেষে বাসায় ফিরে এসে সে সেখানে আলোচিত এই গল্পটি আমাকে শুনালো।
বাংলাদেশী এক মহিলা (এম.এ.ডিগ্রিধারী), দুই adult ছেলেমেয়ের মা, তার স্বামীকে তালাক দিয়ে তার সেই স্বামীর চেয়ে অধিক ধনী এবং প্রতিপত্তিশালী দুই adult সন্তানের পিতা অপর এক ভদ্রলোককে বিয়ে করেছে। সেই ভদ্রলোকও তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে এবং সেই মহিলা একটা ভাড়া করা বাড়িতে উঠে গিয়ে একাকী জীবন কাটাচ্ছে। তিনি একজন চাকরিজীবি মহিলা।
নূতন স্বামীস্ত্রী দু’জনেরই বয়স ৫০-এর কাছাকাছি। নববিবাহিতা স্ত্রী তার দুই সন্তানকে ওদের বাবার বাড়িতে রেখে নূতন স্বামীর ঘরে চলে এলো। দিন গড়িয়ে চললো যথারীতি।
কিন্তু অল্প কয়েক মাস পরই সেই তালাকপ্রাপ্তাস্ত্রীর কানে খবর পৌঁছলো যে তার বড় ছেলে তার বাবার নূতন স্ত্রীর আগের পক্ষের বড় মেয়েটিকে বিয়ে করেছে এবং নিজেদের ভাড়া করা বাড়িতে দু’জনে মিলে বসবাস করছে।
খবরটা মহিলার মনে তীব্র একটা আঘাত হানলো, সে অপমানিত বোধ করলো তার ছেলের এমন নিষ্ঠুর ব্যবহারে, কর্মকান্ডে। তার মনে বড় দুঃখ। তার ছেলের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ : “তোর বাবা বিনাদোষে আমাকে তালাক দিলো, অপমান করলো, ঘরছাড়া করলো যে নারীকে বিয়ে করার জন্য, তুই আমার কেমন বুকের দুধ-খাওয়া সন্তান যে তুই সেই নারীরই মেয়েকে বিয়ে করলি? তুই কি করে এত বড় পাষন্ড, অকৃতজ্ঞ হলি তোর মায়ের প্রতি? তাকে এমনভাবে অপমান করলি? তোর বিবেক ও মনুষ্যত্ব গেল কোথায়? মায়ের প্রতি তোর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা গেল কোথায়? দেশে বিয়ে করার মত অন্য কোন মেয়ে খুঁজে পেলি না তুই?”
(ছয়)
এ জগতে আমার কেউ নেই
অকটোবর ২৮, ২০২৪
একটা সিনিয়র সিটিজেন্স রেসিডেনশিয়াল বিল্ডিংয়ের চারতলায় একটা এপার্টমেন্টে আমরা স্বামীস্ত্রী দু’জন বাস করি। বিল্ডিংয়ের একতলায় ক্যানাডিয়ান এক white মহিলা বাস করেন। একা। সদাসর্বদা ফিটফাট থাকেন। নানা কাজ নিয়ে ঘরেবাইরে ব্যস্ত থাকেন। নিজের গাড়ি ড্রাইভ করেন। ছোটখাট মহিলা, ভেরী স্মার্ট। দেখা হলেই হাই-হ্যাল্লো করেন হাসিমুখে। তাকে আমাদের খুব পছন্দ। ধারণা ছিলো যে তিনি একজন সুখী মানুষ, a happy person. কিন্তু ধারণাটা সম্পূর্ণরূপে পাল্টে গেল তার বক্তব্য শুনে।
একদিন আমরা দু’জন বাইরে থেকে ফিরে এসেছি, চাবি দিয়ে main entrance-এর দরজাটা খুলতে যাচ্ছি এমনি সময়ে দরজাটা ভেতর দেখে কেউ একজন খুলে দিলো। চোখ তুলে দেখি সেই মহিলা। “থ্যাংক ইউ” জানালাম তাকে। হাসিমুখে বললেন, “ওয়েলকাম”।
তারপর বিনা ভূমিকাতেই তিনি হঠাৎ বলতে শুরু করলেন-
“আমার চালচলন দেখে তোমাদের মনে হতে পারে যে আমি খুব সুখে-আনন্দে আছি, কিন্তু আসলে আমি তা নই। প্রকৃত ব্যাপারটা এর বিপরীত। আমার জীবনটা দুঃখ-বেদনা-বঞ্চনায় ভরা। আপন বলতে এজগতে আমার কেউ নেই! না স্বামী, না সন্তান, না বাবামা, না সিন্সিয়ার কোন আত্মীয় অথবা বন্ধু।
নানা ধরনের অসুখে ভুগছি, ডাক্তার-ওষুধ-থেরাপিতে প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করছি, কিন্তু আরোগ্য অথবা আরামের মুখ দেখছি না। গাড়ি আছে তবে সেটা পার্কিং করাই থাকে, চালিয়ে কোথাও গিয়ে দুদন্ড আড্ডা মেরে রিলাক্স করে আসবো তেমন অন্তরংগ কেউ নেই। তাছাড়া গাড়ি ড্রাইভ করাটাও বেশ কষ্টকর আমার অসুখের নানা উপসর্গের কারণে। বয়স এখন ৭৬ বছর। আর কতদিন এই দুর্গতি ভোগ করতে হবে একমাত্র Jesus-ই জানেন। [এই বলে বুকে Cross আঁকলেন।]
তোমরা আমার অপরিচিত, তবু তোমাদেরকে আমার মনের কথাগুলো জানালাম, মনটা হাল্কা করলাম। দুঃখ-বেদনার অসহনীয় ভারটা কতদিনইবা হৃদয়ে চেপে রাখা যায়?”
তিনি থামলেন। তার চোখে কান্নার আভাস।
”May God bless you and give you peace. See you later. Bye now,” বলে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দু’জনে বিদায় নিলাম।
(সাত)
SLEEP DIVORCE
অকটোবর ২৯, ২০২৪

১.০ স্বামীস্ত্রীর মাঝে বিবাহবিচ্ছেদ (Divorce) কথাটা বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানব সমাজে পরিচিত। কিন্তু Sleep Divorce কথাটা নূতন যুগের আবিষ্কার, তবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে এর কারণগুলো পুরাতন। Sleep divorce-এর জন্য ল’ইয়ারের সাহায্যে কোর্টে মামলা দায়ের করার সংখ্যা দেশেদেশে ক্রমেই বাড়ছে।
২.০ ২০২৩ সনের জুলাই ১৫ তারিখে Toronto Star পত্রিকায় প্রকাশিত VINAY MENON-এর লেখা একটা প্রবন্ধ থেকে quote করছি :
“রাতের বেলা বেডরুমে ঘুমাতে গিয়ে ঘরের বাতি নিভানোর পর husband or wife or the partner ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের অজ্ঞাতে কি কি করে তার বর্ণনা-
১. They snore, 2) They steal covers, 3)They wake up at 2 am to check their phone, 4) They mumble gibberish, 5) They kick the partner, 6) They frequently toss and turn, 7) They roll over you, 8) They frequently cross the partner to go to the bathroom, 9) They sleepwalk.”
২. “এসবের ফলে স্বস্তিকর ঘুম হয় না রাতে, দেহে-মনে tension সৃষ্টি করে, পরদিন সকালে একটা fresh feeling নিয়ে কাজে যাওয়া সম্ভব হয় না। মেজাজটা থাকে খিটখিটে।”
৩. “এসব উপদ্রবের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে নিম্নলিখিত পন্থাগুলোর (যেকোন একটা) অবলম্বন করা যেতে পারে ঃ
ধ) আলাদা আলাদা বিছানায় শোয়া;
ন) ঘুমাবার আগে দু’কানে ear plug লাগানো যাতে snoring (নাক ডাকার শব্দটা) শোনা না যায়;
প) Sleep clinic-এ গিয়ে snoring বন্ধের চিকিৎসা করানো;
ফ) Sleep divorce lawyear-এর কাছে গিয়ে কোর্টে divorce-এর জন্য মামলা দায়ের করা।”
৪. “আগেকার দিনে স্ত্রীরা মুখ বুঁজে সব সহ্য করতো, ফলে ঘরে শান্তি বিরাজ করতো। কিন্তু বর্তমান যুগের শিক্ষিতা কর্মজীবী স্ত্রীরা আর চুপ করে থাকতে রাজী নয়। নারী স্বাধীনতা। ফলে সংসারে সংঘাত (conflict, tension) ক্রমেই বেড়ে চলেছে, এবং তৎসংগে বাড়ছে এর জন্য কোর্টে আবেদনের সংখ্যাটাও।”
৩.০ YouTube-এ বাংলাদেশী এক মুল্লার এক video lecture থেকে জানলাম যে বর্তমানে বাংলাদেশে কোর্টে তালাকের আবেদন করে যত মামলা দায়ের করা হচ্ছে তার অধিকাংশই স্ত্রীদের পক্ষ থেকে। এবং তার মতে এর মূল কারণ হচ্ছে দেশে ব্যাপক উচ্চতর নারী শিক্ষা যার ফলে আধুনিক শিক্ষিতা স্ত্রীরা তাদের সহনশীলতা গুণটুুকু হারিয়ে ফেলেছে।
(আট)
বাংলাভাষার বিবর্তন ও রূপান্তর
অকটোবর ৩০, ২০২৪
অতিথি। বাংলা ভাষা। মুসলিম পরিবারে/সমাজে তাদের পরিচয় হলো তারা মেহমান। ফার্সী ভাষা।
কিন্তু দিন বদলেছে, ভাষারও বিবর্তন ও রূপান্তর ঘটেছে- কি দেশে, কি বিদেশে। ইংরেজী ভাষার দর্পিত উপস্থিতি সর্বত্র- কি ঘরে, কি বাইরে। Internet-এর অবদান। ইংরেজী শিক্ষার ফসল। আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণ এখন রূপ নিয়েছে party তে। অতিথি বা মেহমান আর নয়, তারা এখন আমাদের visitors or guests. যে কোন অনুষ্ঠানের শুরুতেই আজকাল আমরা guests list (Visitors list) তৈরী করি এবং তাদের সংখ্যার উপরে নির্ভর করে প্রয়োজনীয় আয়োজন করি।
বর্তমানে আমরা breakfast, lunch এবং dinner খাই, ঘুমাতে হলে bed-এ যাই, ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে Thank you বলি, আমন্ত্রণ জানাতে হলে invite করি, আপত্তি জানাতে হলে objection দিই, শুভেচ্ছা জানাতে congratulations! বলি। অমত জানাতে হলে disagree করি, উচিৎ-অনুচিৎ বোঝাতে বলি fair অথবা unfair. শ্বশুর-শাশুড়ি হয়েছেন father-in-law এবং mother-in-law ভাবী-দুলাভাই ও শালা-শালীর পরিচয় তারা আজ আমাদের brother-in-law এবং sister-in-law চাচা-মামা-খালু-ফুফা হয়েছেন uncle তেমনি চাচী-মামী-খালা-ফুফু হলেন auntie. বন্ধুরা তো friends (boyfriend-girlfriend তো ভিন্ন বিষয়)।
স্বামী husband, স্ত্রী wife, জীবন তো life. রান্নাঘর kitchen, মশলা spice, কিছু কাটতে হলে ছুরি নয়, চাই knife.
বাংলা প্রতিশব্দ খুঁজতে যাওয়া নির্বুদ্ধিতা যদি হয় light-fan-fridge-freezer-cooling-heating. এমন কি ঠকবাজিও হয়ে গেছে আজকাল cheating. বিশ্রাম তো নিই না, নিই rest অথবা break. পিঠা-পায়েসের যুগ হয়েছে বাসি, বর্তমানে আমরা খাই ice cream, yogurt, cake, pastry অথবা cheese. রুটি-মাখন ভুলিনি বটে তবে dining table-এ শোভা পায় butter and bread. খবরবার্তা রূপ নিয়েছে message-এ অথবা text-এ, চিঠিপত্র তো email. বিস্কুটের বদলে এখন খাই cookies. হাঁস-মুর্গি-গরু-খাসিও খাই আগেরই মত তবে নাম তাদের goat-beef-duck and chicken.
বাংগালী আমরা তাই সন্তানের নাম রাখতে গিয়ে পছন্দ করি বাংলা নাম হোক না সে নাম অর্থহীন অথবা হাস্যকর। বাংগালী সমাজে ইন্ডিয়ান হিন্দি সিরিয়াল অথবা মুভির পাত্র-পাত্রীর নাম রাখতে ভালোবাসি সেটা হোক না কেন যতই অসাঞ্জস্যপূর্ণ। বাংগালী মুসলিম সমাজ আরবী-ফার্সী নামের ভক্ত যদিও তাদের নেই সেসব ভাষার কোন জ্ঞান। ফলে দেখা যায় অর্থহীন, অসাঞ্জস্যপূর্ণ বিপরীত লিংগ নাম। তাছাড়া ইংরেজী নাম তো আছেই।
(নয়)
এক ধনী বিধবা মহিলার আত্মকথা
অকটোবর ৩১, ২০২৪
আমার বসবাসের জন্য ঢাকা শহরে আধুনিক একটা এপার্টমেন্ট আছে। ড্রাইভার আছে, ঘরের কাজের এবং রান্নার জন্য বুয়া আছে।
আমার বয়স এখন ৭৫ বছর। কয়েক বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। আমি এখন স্বামীহারা, বিধবা। বাড়িতে একাকী বাস করি।
দুই ছেলেমেয়ে আমার। তারা উচ্চশিক্ষিত। ছেলে বিদেশে থাকে। মেয়ে ওর স্বামীর সংগে থাকে ঢাকা শহরেই। আমার নিয়মিত খোঁজখবর রাখে, বাসায় আসে।
আমার নিজের এপার্টমেন্ট ছাড়াও ঢাকায় আর একটা বিল্ডিং আছে একটা মার্কেটে। বছরে লক্ষাধিক টাকা ভাড়া পাই সেখান থেকে। আর্থিক কোন অভাব-অনটন নেই আমার। একা মানুষ আমি। তবে…
তবে আমি সুখে-শান্তিতে নেই। কারণ আমি আমার মাসিক/বার্ষিক আয় ব্যয়ের সঠিক হিসাব জানি না। আমার ম্যানেজার আমাকে যা বুঝায় তার বাইরে আর কি ঘটছে আমি তা জানি না। সব আয়ব্যয়ের হিসাব মুখেমুখে, লিখিত কাগজপত্র নয়। আমি দোকান ভাড়া সঠিক পাচ্ছি কিনা তা-ও জানি না। ব্যাংকের হিসাব বুঝি না। ম্যানেজারকে কোন প্রশ্ন করতে ও ভয় পাই। কি কারণ?
কারণ আমি লেখাপড়া তেমন জানি না, ইংরেজীতে আমার কোন জ্ঞান নেই। একমাত্র বাংলা ভাষাই আমার ভরসা।
এই দুর্গতি বা দুরবস্থাটার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী আমি নিজে। শিক্ষার গুরুত্বটা আমি বুঝিনি। মাবাবার নিত্য তাগাদা সত্ত্বেও ক্লাস নাইনে উঠার পর আর লেখাপড়া করিনি, স্কুলে যাইনি। পড়াশুনাতে আমার কোন আগ্রহই ছিল না। অলস সময় কাটাতে ভালোবাসতাম। অল্প বয়সে বিয়ে করে বসলাম সুখ-আরামের আশায়। আজীবন স্বামীই সব দায়িত্ব বহন করে যাবে আর আমি সাড়ি-গয়নাতে সেজে পটের বিবি হয়ে সুখে কাল কাটিয়ে দেবো, সেই স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। স্বামী আগে মরে যেতে পারে, সংসারের সব দায়িত্ব আমার ঘাড়ে এসে পড়তে পারে, সেই অবস্থায় প্রয়োজনীয় শিক্ষাদীক্ষা থাকলে সব সামলে নিতে পারবো, পরমুখাপেক্ষী হতে হবে না, ক্ষতি হবে না- এসব কথা স্বপ্নেও ভাবিনি কোনদিন।
অথচ ঠিক সেটাই ঘটে গেল আমার জীবনে। এখন প্রতিটি মূহুর্তে হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি লেখাপড়ার/শিক্ষার কি অসীম মূল্য। কিন্তু এখন বুঝেও কোন লাভ নেই। নির্বুদ্ধিতার মূল্য আমাকে দিতেই হবে বাকী জীবন।
(চলবে)
সাইদুল হোসেন
মিসিসাগা