সিনোপ্সিস ৬৩/৬৫/৬৬
ফয়জুল হক দুলা
সিনোপ্সিস ৬৬
কানাডার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাকে প্রয়োজন- Christia Freeland, Pierre Poilievre & Mark Carney?
১। Christia Freeland
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১ম টার্ম-এ USMCA (United States-Mexico-Canada Agreement ) negotiation এর সময় ক্রিষ্টিয়া ফ্রিল্যান্ড কানাডার রিপ্রেজেন্টেশন করেন। কিন্তু ট্রাম্প ফ্রিল্যান্ডকে কোনভাবেই পছন্দ করেন নাই। তাকে বদলানোর জন্য সরাসরি কানাডাকে প্রস্তাব করেন। সুতরাং ফ্রিল্যান্ডকে লিবারেল পার্টির লিডার এবং পরবর্তীতে প্রাইম মিনিস্টার বানানো হবে মারাত্মক রিস্কি বিজনেস। এছাড়া ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার রিফিউজি নিয়ে এসে ক্রাইসিস সৃষ্টি করার জন্যও অনেক কানাডিয়ান ফ্রিল্যান্ডকে দায়ী করেন। সুতরাং ফ্রি ল্যান্ডকে লিবারেল পার্টির লিডার নির্বাচন করা হবে Pierre Poilievre কে প্রাইম মিনিসটারের ফ্রি পাস দেওয়া।
২। Pierre Poilievre
কনজারভেটিভ পার্টির লিডার Pierre Poilievre এর ফরেন পলিসির সাথে ট্রাম্পের পলিসির রয়েছে বিস্তর ফারাক। ইউক্রেন থেকে ঢালাও ভাবে রিফিউজি নিয়ে আসার জন্য বার বার তাগাদা দেওয়া , ইউক্রেনকে ব্যাপকভাবে সামরিক সাহায্য করা, ফিলিস্তিনে জেনোসাইডে কে অবজ্ঞা করে ইজরাইলকে সাপোর্ট, আন্তর্জাতিক আদালতে ইজরাইলী জেনোসাইডের বিরুদ্ধে সাউথ আফ্রিকার মামলা করাকে কন্ডেম করা ইত্যাদি অনেক কিছুই কানাডিয়ান ভেল্যুর সাথে মিলে না । অন্যদিকে ট্রাম্পের সাথে দরকষাকষি করে কানাডাকে রক্ষা করার মত ফাইনেন্সিয়াল , পলিটিক্যাল , ইকনোমিক বা ব্যবসায়িক পর্যাপ্ত নলেজ তার নাই । তাই রিস্ক হবে ব্যাপক।
৩। Mark Carney
মার্ক কার্নি ’র নাম লিবারেল পার্টির লিডারশীপ রানে যুক্ত হওয়ায় অনেকে যেন ভরসা পাচ্ছেন। তিনি ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড এর গভর্নরের পদে (২০১৩-২০২০) এবং ব্যাংক অব কানাডা’ র গভর্নরের পদে ছিলেন (২০০৮-২০১৩), তিনি হারভার্ড এর গ্র্যাজুয়েট এন্ড পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট ফ্রম অক্সফোর্ড। তিনি একজন ওয়ার্ল্ড ক্লাস ইকোনমিষ্ট যার হাত দিয়ে কানাডা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রিসেশন ঠেকানোসহ হয়েছে ইকনোমিক রিফর্ম ।
সাম্প্রতিক ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্যারিফ থ্রেট , দুই দেশের মধ্যে ট্রেড , ইমিগ্রেশন ও ড্রাগ ট্রাফিকিং , হিউম্যান ট্রাফিকিং নিয়ে কানাডার সাথে যে বাত বিতন্ডা চলছে তা মোকাবেলা করতে মার্ক কার্নির বিকল্প আছে কি ? কানাডিয়ানরা কি বাকী দু জনের উপর ভরসা করতে পারবেন ? লিবারেলকে নয় –কানাডার বৃহৎ স্বার্থে এই মুহুর্তে অন্ততঃ মার্ক কার্নির পেছনে সবাইকে দাঁড়ানো উচিত তা নাহলে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে ।
ইরানিয়ান স্টাইলে প্রক্সি সার্ভার গড়ে তোলার পথে দিল্লী !! মিডিয়া সন্ত্রাসে জর্জরিত বাংলাদেশ!!
বিগত কয়েক দিনে শুভানুধ্যায়ীদের কয়েক জন বললেন আমি নাকি ইদানীং দেশ নিয়ে খুব তৎপর। জীবন সূর্য যখন পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে ঠিক তখনই দেখছি আমার জন্মভূমি নিয়ে দেশী বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র। আজ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিটি নাগরিকের সম্মুখে অগ্নি পরীক্ষা। মনে রাখা উচিত দেশই যদি না থাকে তখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি –মুসলিম লীগ , জামাত , হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সবার জায়গা হবে এক খোয়াড়ে! তাই মাভৈঃ মাভৈঃ বলে “কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ”।
(এক)
রাষ্ট্রীয় স্পন্সরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রপাগান্ডা মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে বাংলাদেশকে ঘায়েল করার প্রথম মিশন ফেল করেছে ভারত। চিন্ময়কে অ্যারেস্ট আর চট্রগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার মধ্যদিয়ে দেশে জাতিগত দাঙ্গা বাধানো ছিল বিজেপি আরএসএস এজেন্টদের মূল লক্ষ্য। এই ফাঁদে কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী পা দেয় নাই। তার অর্থ এটা না যে ‘র’ তার মিশন বন্ধ করে দিয়েছে। আমেরিকাতে ভারতীয় সংখ্যালঘু শিখ নেতা হত্যায় কিলিং মিশনে সরাসরি নেতৃত্ব দেয় “র” –ঠিক একইভাবে কানাডাতে সংখ্যালঘু শিখ নেতা হত্যায় অংশ নেয় ‘র” ও ইন্ডিয়ান কন্স্যুলেট। এই দুটি কিলিং মিশন সরাসরি অমিত শাহ’র নির্দেশে সম্পন্ন হয় যা আমেরিকার সিআইএ ও কানাডার আরসিএমপি কনফার্ম করে। সুতরাং রাষ্ট্র যখন তার নিজ দেশের সংখ্যালঘু নিধনে সন্ত্রাস আর টেরোরিজমকে পলিসি হিসাবে গ্রহণ করে নেয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে কোন অপারেশন সম্পন্ন করা ভারতের জন্য মামুলি ব্যাপার মাত্র। সাম্প্রতি ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘু নেতা ও পার্লামেন্টারিয়ান মি. আসাদুদ্দিন ওয়াইসী স্বীকার করেছেন এই বলে যে “বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে ভারতের মুসলিমদের উপর বিজেপি ও আরএসএস কে লেলিয়ে দিয়েছে মোদী-অমিতশাহ। আজ ভারতীয় সনাতনিরা মন্দিরে গিয়ে ভগবানকে না খুঁজে মসজিদ আর মাজারের নিচে ভগবানকে খুঁজছে”। এক ঢিলে দুই পাখী-বাংলাদেশের সংখ্যালঘু আর ভারতের সংখ্যালঘু । ১৯৪৭ সালের ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী বাবরি মসজিদ ছাড়া কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের রদবদল বা সম্পত্তি নিয়ে মামলা বা প্রশ্ন তোলা যাবে না কিন্তু ভারতের সংখ্যাগুরুরা আজ সোনা রুপা আর খনিজ সম্পদ আহরণে পাহাড় পর্বত বাদ দিয়ে মসজিদ আর মাজারের নীচে খনন কার্য পরিচালনা করতে ব্যস্ত। এই সাম্প্রদায়িক আচরণ পার্শ্ববর্তী দেশ হিসাবে আমাদের বাংলাদেশের সিকিউরিটির জন্য হুমকি নয় কি?
বাংলাদেশকে অঙ্গরাজ্যের মত ব্যবহার করার সকল সুযোগ হারানো ভারতের জন্য বিশাল ক্ষতি। সেই ক্ষতির বিড়ম্বনা রুখতে এইবার মিডিয়াকে অন্যত্র ব্যবহার করতে চলেছে বিজেপি। তারা গুজব ছড়াচ্ছে এই বলে যে, “পাক আর্মিরা বাংলাদেশে চলে এসেছে আর বাংলাদেশি আর্মিদেরকে ট্রেনিং দিচ্ছে ”, “পাকিস্তান থেকে জাহাজ ভর্তি করে গোলাবারুদ আনা হচ্ছে ।” ইতিমধ্যেই আনন্দবাজারে প্রায় ২০ টি নিউজ প্রকাশিত হয়েছে । আজকের পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশ তার প্রতিবাদও জানিয়েছে। আনন্দবাজার এটিও বলতে বাদ দেয় নাই যে “পাকিস্তানি আর্মিরা চিকেন নেকের কাছে অবস্থান নিয়েছে- যে কোন সময় দখল করে সেভেন সিস্টারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাবে।” এই প্রোপাগান্ডার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ভারতীয় সাধারণ মানুষকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অ্যাগ্রেসিভ করে তোলা আর পাকিস্তানের সাথে ভারতের চির শত্রুতার সমান্তরাল রেখায় বাংলাদেশকেও চিরশত্রু হিসাবে চিহ্নিত করা।
ভারতের মিডিয়াগুলোর মধ্যে পশ্চিম বাংলার মিডিয়া ও মানুষগুলো সবচেয়ে বেশী বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত যা আমাকে বিস্মিত করেছে। শুধু তাই নয়, পশ্চিম বাংলার প্রবাসী বাঙালিরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ( নর্থ আমেরিকা ও ইউরোপে ) বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা ও প্রপাগান্ডায় সরাসরি জড়িত। ওরা সাধারণত ঝোপ বুঝে কোপ মারে অর্থাৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রবাসী রাজনৈতিক সংগঠনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, ধর্মীয় সংগঠনের উদারতার সুযোগ নিয়ে –সামাজিক সংগঠনের সাথে মিশে যায় । তারপর ইন্ডিয়ার সমালোচনাকারী সকল বাংলাদেশিদেরকে পাকিস্তানের এজেন্ট হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশিদেরকে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করে- বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরার সকল প্রয়াস ওরা বাংলাদেশিদেরকে ব্যবহার করে ভারতীয় বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে পরিচালনা করে( ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম টার্মে হোয়াইট হাউস পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া প্রিয়া সাহা’র কথা অবশ্যই সবার মনে আছে) –প্রবাসে বাংলাদেশিদেরকে বিভাজনে রেখে কম্যুনিটির উন্নয়ন স্থবির করে দেওয়া ইত্যাদি নানাবিধ বাংলাদেশ বিরোধী কর্মতৎপরতায় পশ্চিম বাংলার বাঙালিরা সকলভারতীয়দের সাথে সম্মুখ সমরে লিপ্ত। আমরা বাংলাভাষী বলে যাদেরকে নিজেদের হিসাবে গণ্য করি তারাই খুব সন্তর্পণে এই গোপন কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে- এটা সত্যিই Shocking and Frightening.
(দুই)
ভারত বাংলাদেশকে সব সময়ই তার মস্তিষ্কে একটি ‘ক্যান্সারাস টিউমার’ হিসাবে গণ্য করে। যে টিউমারের উপর কোন অপারেশন চালানো হবে আত্মঘাতী অর্থাৎ ক্যান্সার সমগ্র দেহে ছড়িয়ে নির্ঘাত মৃত্যু নিয়ে আসা; অথচ এই টিউমারের কন্ট্রোল নিজ হাতে ধরে রাখতে হলে কেমো থেরাপিতেও কাজ হচ্ছে না, প্রয়োজন শুধু Give and Take policy. এই পলিসির হেরফের হলে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে সাউথ এশিয়াতে আমেরিকার বিশ্বস্ত সামরিক বন্ধু আর চায়নার ইকোনমিক হাব –তখন পাকিস্তান হবে বাংলাদেশের আজ্ঞাবহ Proxy Server (striking force). ভারত কোন সময়ই চাইবে না তার গলার এত কাছে বসে কেউ ছুরি চালাক । তাই ভারত বাংলাদেশকে কন্ট্রোলে রাখতে Arakan Army কে Proxy server হিসেবে ব্যবহারের পাঁয়তারা করছে।
ইতিমধ্যে রাখাইন প্রদেশের অধিকাংশ অঞ্চলই আরাকান আর্মিদের দখলে চলে গেছে । এই রাখাইন প্রদেশই হচ্ছে এখন ভারত ও চায়নার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ভারত ৪৮৪ মিলিয়ন ডলার খরচ করে রাখাইন প্রদেশে গড়ে তুলেছে সামুদ্রিক পোর্ট (Kaladan Multi Modal Transit Transport Project) যেখানে সমুদ্র পথে কোলকাতা থেকে জাহাজ পৌঁছে যাবে রাখাইন (মিয়ানমার) পোর্টে। পোর্ট থেকে রাখাইনের মধ্য দিয়ে ট্রেন সার্ভিস মাধ্যমে মিলিটারি সরঞ্জামসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল পৌঁছে যাবে রেল যোগে সেভেন সিসটারে। যেহেতু এই ট্রানজিট প্রজেক্ট আরাকান আর্মির সম্পূর্ণ দখলে –তাই আরাকান আর্মিদের সাথে দ্বিপাক্ষিক গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা ছাড়া ভারতের আর কোন পথ খোলা নাই । চিকেন নেক দিয়ে ট্রান্সপোর্ট খরচ ১৩২৮ কিলোমিটারের বেড়ে যায়, বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে দেওয়া অনিশ্চিত তাই রাখাইনই শেষ ভরসা।
আগেই বলেছি ভারত তার নিজের সিকিউরিটির কারণেই সরাসরি বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করবে না তবে প্রক্সি যোদ্ধা গড়ে তোলার এই সুযোগ হাতছাড়াও করবে না । আরাকান আর্মিরা ভারতের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে পারলে বিভিন্ন ভাবে নিজেদের বেনিফিট দেখবে। পোর্ট ও ট্রানজিট সুবিধার জন্য মোটা অঙ্কের রুপি, নিজেদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল, অস্ত্র সাহায্যসহ ইন্টারন্যাশনাল স্বীকৃতি। অন্যদিকে – মিয়ানমার আর্মিরা যখন রোহিঙ্গা নিধনে নামে তখন রাখাইনের এই আরাকান আর্মিরা ও স্থানীয় আরাকান বুদ্ধিষ্ট জনসাধারণ এই হত্যাযজ্ঞে সহায়তা করে। সুতরাং আরাকান আর্মিরা রোহিঙ্গাদেরকে রাখাইনে ফেরত নিতে চাইবে না – উপরন্তু বাকী রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত এই সুযোগ কাজে লাগানোর পথেই হাঁটছে। যে কোন মুহূর্তে আরাকান আর্মি বাংলাদেশে আরো রোহিঙ্গাদেরকে পুশ শুরু করলেই ধরে নিতে হবে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী । তখন বাংলাদেশকে শুধু আরাকান আর্মির সাথে নয় যুদ্ধ করতে হবে ভারতের “হিযবুল্লাহর” ( আরাকান আর্মি) সাথে। বাংলাদেশ এই সম্ভাবনাগুলোকে যত তাড়াতাড়ি সিরিয়াসলি নিবে ততই ভালো অবস্থানে থাকবে তা না হলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিশেষে এই টুকু বলা যায়, বিএনপি ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল না , ৭৫’র পর আওয়ামীলীগও দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় ছিল না এবং হয়তো আগামী ১৫ বছর ক্ষমতায় আসতে পারবেও না। তাই ভারতকে রিয়েলিটি মেনে নিতে হবে। ভারত বাংলাদেশের জনগণের ম্যান্ডেটকে শ্রদ্ধা দেখিয়ে সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ করলেই সব ল্যাটা চুকে যায়। বাংলাদেশ সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে রয়েছে তাদের অবদান সেটা সব সময়ই শ্রদ্ধার চোখে দেখে । তাই একটি স্বাধীন দেশের ইচ্ছা অনিচ্ছার বিষয়কে মেনে নিতেই হবে ভারতকে । Give & Take এর ভিত্তিতে একটি সু সম্পর্ক গড়ে তোলার বিকল্প নাই। বাংলাদেশকেও কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে আমেরিকা, চীন, নেপা্ল, ভূটান পাকিস্তান, মায়ানমার গং দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক জোরদারকরণের প্রস্তুতি নিতে হবে । এতে ভারতের উপর বাণিজ্যিক নির্ভরতা যেমন কমবে ভারতও ধীরে ধীরে বড়ভাই সুলভ আচরণ থেকে বের হয়ে আসবে। অন্যদিকে আরাকান আর্মিদের সাথে বাংলাদেশ এক্ষুনি যোগাযোগ স্থাপন করে নিতে হবে , আমেরিকা চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত পাঠাতে রাজী করাতে পারলেই কেল্লা ফতে। তখন আরাকান হবে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির একটি বড় বাজার । রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত পাঠাতে জনাব ইউনূসের ক্যারিসমেটিক ইন্টেলিজেন্স ও কানেকশন ব্যবহার করলে ফল আসবে বলে আমি মনে করি ।
সিনোপ্সিস ৬৫
Modern Approach (Social changes) নিয়ে ইউনাইটেড জালালাবাদ ফাউন্ডেশন’র অভিষেক
গত জানুয়ারি ৫ তারিখে টরন্টোস্থ ইউনাইটেড জালালাবাদ ফাউন্ডেশন’র অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে প্রায় ৭.১৫ মিনিটে পৌঁছে গেলাম কেনেডি কনভেনশন হলে। মনে হচ্ছিল এ এক এলাহি কাণ্ড। লোকে লোকারণ্য হলের ভিতর বাহির। নতুন পুরাতন সিলেটিদের এক মিলন স্থল হয়ে উঠেছিল পুরো এলাকা। নবাগত শত শত যুবক যুবতিদের কাউকেই চিনার উপায় নেই – সবারই মধ্যে যেন প্রাণ চাঞ্চল্য, উৎসুক দৃষ্টি, আর ভবিষ্যৎকে জয় করার এক দৃঢ় সংকল্প। আমার মনে পড়ে গেল স্কুল শেষ করে কলেজে প্রথম দিনের নবীনবরণ অনুষ্ঠানের কথা। ধীরে ধীরে ভিতরে গেলাম , স্টেজের কর্নারে গিয়ে পেয়ে গেলাম আমাদের কম্যুনিটির পুরাতন মেম্বারদেরকে যাদের সাথে প্রবাসের এই দীর্ঘ দিনের পথ চলা।
(এক)
কোন অনুষ্ঠান বা ইভেন্টের সফলতা নির্ভর করে অর্গেনাইজিং কমিটি এবং সর্বোপরি আহ্বায়কের উপর। মঞ্চ সজ্জা ছিল চমৎকার-বিশেষতঃ ডিজিটাল ডিস্প্লেতে বাংলা ইংরেজিতে প্রদর্শন বেশ এফেক্টিভ। Modern Approach শব্দ দুটো ব্যবহারের পেছনে আমার ব্যক্তিগত যে লজিক কাজ করেছে তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আহ্বায়ক তানভীর কোহিনূরের Subject matter expertise, Fat free communication and art of speaking. বাংলা ইংরেজি দুটোতে সমান দক্ষতা , বাংলাদেশি কালচার এবং কানাডীয় কালচার দুটোর সম্যক ধারণা ও তার ব্যবহারে তানভীরের রয়েছে সমান দক্ষতা যার প্রতিফলন আমরা দেখেছি মঞ্চে। এই দক্ষতা electromagnetic influence র মতই কাজ করে বার্তা পৌঁছে দিয়েছে অডিয়েন্সের কাছে। এখানেই আয়োজনের সার্থকতা । অডিয়েন্সের সম্মুখে বসা শুধু বাংলাভাষীই ছিলেন না । ছিলেন টরন্টো সিটি মেয়র অলিভিয়া চাও, সাবেক ট্রাস্টি ও বর্তমান কাউন্সিলর পার্থি কান্ডাবাল প্রমুখ । সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে যে আমাদের মেসেজটা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাংলা ইংরেজিতে সমান দক্ষ প্রেজেন্টার অত্যাবশ্যক। আমাদের কম্যুনিটির পরিচিত মুখ ফ্যামিলি ডক্টর মি: তরুণ তার বক্তব্যটি ইংরেজিতেই ডেলিভারি করেছেন দেখে বেশ ভাল লেগেছে । পার্থি কান্ডাভাল’র বক্তব্যে একটি কথা খুব পরিস্কারভাবে উঠে এসেছে যে এখানের পলিটিশিয়ান, সিটি এবং গভর্নমেন্ট মূলত কমিউনিটির সাথে কমিউনিকেশনের জন্য প্ল্যাটফরম খুঁজতে থাকে; তার ভাষায় ইউনাইটেড জালালাবাদ ফাউন্ডেশন হয়ে উঠতে পারে সেই প্ল্যাটফরম ( contact point) এর একটি। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে আমাদের মেসেজ পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রথম প্ল্যাটফরম , তারপর দক্ষতা , কানাডীয় সামাজিক-পলিটিক্স নিয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক । আমি উপস্থিত শিক্ষিত যুবক-তরুণদের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ Deliverable Skills দেখেছি।
( দুই)
সংগঠন ফরম করা সহজ ও নেতৃত্ব গ্রহণ করাও সহজ কিন্তু সেই নেতৃত্বে যদি সমাজ, কম্যুনিটি দেশের কল্যাণ করার মানসিক দৈন্যতা থাকে তাতে আর কিছু হলেও সমাজের লাভ হয় না। Leadership Style or Management Style এর উপর নির্ভর করে একটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন তার লক্ষ্য অর্জনে কতটুকু এগোতে সম্ভব হবে। Lead by example হচ্ছে একজন সত্যিকারের নেতার আদর্শ। এই সংগঠনের নেতৃত্বে যারা এসেছেন তাদের বেশির ভাগই নতুন-কিন্তু কর্ণধার দুলু ভাই ( দুলু চৌধুরী) আমাদের বাংলাদেশি কম্যুনিটির একজন পরীক্ষিত সমাজ সেবক । সুযোগ যেহেতু পেয়েই গেলাম তখন তার সম্পর্কে দুটো কথা না বললেই নয়। কোভিড’র সময় এই টরন্টো যখন এক ভূতুড়ে নগরীর রূপ নিয়েছিল , প্রতিদিন কম্যুনিটির কারো না কারো মৃত্যুর সংবাদ আসছিল –হসপিটাল থেকে লাশ গ্রহণ করতে যখন নিকটাত্মীয়জনকেও পাওয়া যেত না সেই ভয়াল মৃত্যুপুরীর দ্বারে দ্বারে গিয়ে লাশ গ্রহণ করে কাঁধে নিয়ে গিয়ে গোসল দিয়ে দাফন করে আসা, মৃতের ফ্যামিলির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া । নিজের ফ্যামিলির রিস্ক উপেক্ষা করে মৃত্যুকে বার বার আলিঙ্গন করে যে মানুষটি রানারের মত দুর্বার ছুটে চলেছিলেন আহ্বায়ক তানভীর কোহিনূরকে সাথে নিয়ে তিনি আমাদের দুলু ভাই – আজকের ইউনাইটেড জালালাবাদ ফাউন্ডেশন’র সভাপতি। এরচেয়ে বেশী কিছু কম্যুনিটি সেবার উদাহরণ দেওয়ার দরকার আছে কি? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে সেই দুঃসময়ে নবাগত ইমিগ্র্যান্ট, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট-এবং বিপদ্গ্রস্ত ও অভুক্ত কমিউনিটি মেম্বারদের দরজায় দরজায় খাবার পৌঁছে দেওয়া , ঘর ভাড়া দেওয়া , ডলার দিয়ে সাহায্য করা ইত্যাদি মহৎ কাজে যারা এগিয়ে এসেছিলেন তাদের মধ্যে প্রয়াত ব্যারিস্টার রিজুয়ান রহমান, নওশের আলী , ডলি বেগম, দুলু চৌধূরী, তানভীর কোহিনুর সহ আরো কয়েকজনের নাম কম্যুনিটি কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করবে । সুতরাং একটি যোগ্য নেতৃত্বের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব অর্পণ হয়েছে-এবং সত্যিকারের কম্যুনিটি কাজের বাস্তবায়ন দেখবো বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
(তিন)
অনুষ্ঠানে পৌঁছাতেই হাতে আসলো “হাখম” নামে গোছানো সুন্দর একটি স্যুভেনির। প্রাইম মিনিস্টার জাস্টিন ট্রুডো, কেবিনেট মিনিস্টার বিল ব্লেয়ার , মেয়র অলিভিয়া চাও , এমপি নাথানিয়েল, এমপি সালমা জাহিদ, এমপিপি ডলি বেগম এর শুভেচ্ছা বানী গুলো স্যুভেনির ও সংগঠনকে সমৃদ্ধ করেছে নিঃসন্দেহে। সাথে প্রকাশিত হয়েছে সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে বেশ ক’টি লিখা যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
ম্যাগাজিনের সাথে পেয়েছি সংগঠনের প্রিন্টেড গঠনতন্ত্র । সম্পূর্ণ পড়ার সময় হয়ে উঠে নাই । তবে “লক্ষ্য উদ্দেশ্য সেকশনে”দেখলাম কম্যুনিটির জন্য একটি ফিউনারেল প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে যা সত্যিকার অর্থে একটি মহৎ কাজ। এবং আমার বিশ্বাস নতুন উদ্যোমী মেম্বারদেরকে নিয়ে সভাপতি এই কাজে সফল হবেন । ভবিষ্যতে কম্যনুটির জন্য অন্তত ১০টি কবর স্থান – অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য ফান্ডস, একটি নিজস্ব কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তোলার মত প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার জন্য আমাদের অনুরোধ থাকলো ।
(চার)
দেশ থেকে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সেলিম চৌধূরী, সাথে ছিলেন স্থানীয় শিল্পীগণ। চমৎকার একটি সন্ধ্যা উপহার দেওয়ার জন্য সকল আয়োজকদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সাথে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো ও স্যুভেনিরে আমার লেখা ছাপানোর জন্য আহ্বায়ক তানভীর কোহিনূরকে অসংখ্য ধন্যবাদ রইল।
ফয়জুল হক দুলা, ccp
(Fellow of the Credit Institute of Canada)