স্কারবরোর একটি মসজিদে বিদ্বেষী হামলা

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক॥ অক্টোবর ১৫, ২০২৪ : গ্রেটার টরন্টো এলাকার স্কারবরোতে আবারও এক বিদ্বেষী হামলার ঘটনা ঘটলো এক মসজিদে। গত ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ১২২৫ কেনেডি রোডে অবস্থিত ‘আতিয়া ইনস্টিটিউট অফ নলেজ’ এ এই হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, ঐ দিন দুপুর বেলায় রবিন লাকাতোস নামের এক ব্যক্তি মসজিদের ভিতর প্রবেশ করে উপস্থিত মুসুল্লিদের উদ্দেশ্যে বিদ্বেষী বক্তব্য প্রদান করে এবং গালিগালাজ করতে থাকে। এই সময় সেখানে ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী এক ডজনেরও বেশি শিক্ষার্থীও উপস্থিত ছিল।

আকস্মিক এই ঘটনার পর এক পর্যায়ে মুসল্লিরা ঐ ব্যক্তিকে জোরপূর্বক মসজিদ থেকে বের করে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয় এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিতে গ্রেফতার করে।

স্কারবরোতে অবস্থিত এই মসজিদে গত ১০ অক্টোবর এক বিদ্বেষী হামলার ঘটনা ঘটে। ছবি : ইউটিউব

৪১ ডিভিশন পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ৪১ বছর বয়সী রবিন লাকাতোস নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয় মসজিদে প্রবেশ করে মুসল্লিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষী ও ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রদান এবং হত্যা বা শারীরিক ক্ষতি করার হুমকি প্রদান করায়।

ঘটনার সময় উপস্থিত কয়েকজন সিটিনিউজ-কে জানায় অভিযুক্ত ব্যক্তিটি যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন তাকে শান্ত প্রকৃতিরই মনে হচ্ছিল। এমনকি সে মসজিদের ইমামের সঙ্গে করমর্দনও করে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে এবং উপস্থিত লোকজনের বিরুদ্ধে হুমকি প্রদান শুরু করে। বিদ্বেষী কথাবার্তার পাশাপাশি সে মুসল্লিদেরকে শারীরিকভাবে আঘাত করার হুমকি দেয় এমনকি হত্যার হুমকিও প্রদান করে।

বিদ্বেষী এই ঘটনার পর টরন্টোর মেয়র অলিভিয়া চাও সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে বলেন, এটি ইসলামোফোবিয়ার একটি ‘ভয়ংকর’ উদাহরণ যা কমিউনিটিকে নাড়া দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে ইসলামোফোবিয়া এবং যে কোন ধরনের ঘৃণা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং আমাদের শহরে এ ধরনের ঘটনা সহ্য করা হবে না। টরন্টো অবশ্যই এমন একটি জায়গা যেখানে লোকেরা নিরাপদ বোধ করতে পারে, যেখানে তারা তাদের সংস্কৃতি, তাদের পরিচয় উদ্যাপন করতে এবং ভয় ছাড়াই উপাসনা করতে পারে।’ তিনি ঘটনার তদন্ত এবং হুমকি প্রদানকারীকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।

এদিকে ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ কানাডিয়ান মুসলিমস’ এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে এবং ইসলামোফোবিক ও বর্ণবাদী বক্তব্য দেয়। এই ব্যক্তি ফিলিস্তিনি বিরোধী বক্তব্যও দেয়। নামাজরত ব্যক্তিদের প্রতি এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিও হুমকি প্রদান করে।

কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, এই ঘটনায় মুসল্লিরা আতঙ্কিত। তবে কেউ আহত হয়নি।

ঘটনার বিষয়ে কারো কাছে কোন তথ্য থাকলে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছে টরন্টো পুলিশ।

উল্লেখ্য যে, গত জুনে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান বলছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর টরন্টোতে ঘৃণামূলক অপরাধের ঘটনা বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। সিবিসি নিউজের এক খবরে এ কথা বলা হয়।

পরিসংখ্যান বলছে এ বছর ঘৃণামূলক অপরাধের ঘটনা অর্ধেকের বেশী ঘটেছে ইহুদিদের বিরুদ্ধে। কিন্তু বাস্তবতা সম্ভবত ভিন্ন। কারণ এই পরিসংখ্যানে সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ না পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। টরন্টোর পুলিশ প্রধান Myron Demkiw নিজেই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন ইসলামোফোবিক বা মুসলিম বিদ্বেষী ঘটনাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে কম রিপোর্ট করা হচ্ছে। টরন্টো পুলিশের এক কর্মকর্তা  Jack Gurr বলেন, এর কারণ হতে পারে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা পুলিশকে বিশ্বাস করে না বা তাদের উপর নির্ভর করতে পারে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *