অবশেষে ধরা পড়লো শরীফ রহমানের খুনী

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক ॥ আগস্ট ১৬, ২০২৪ : অবশেষে ধরা পড়লো শরীফ রহমানের খুনি। প্রায় এক বছর আগে টরন্টোর উত্তরে অবস্থিত মফস্বল শহর ঙবিহ ঝড়ঁহফ এ তিন দুর্বৃত্তের হামলায় বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট মালিক শরীফ রহমান (৪৪) নিহত হন। ঐ হামলায় আহত হয়েছিলেন তাঁর এক ভাগনে।

হামলার ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট রাতে। স্থানীয় পুলিশ জানায় ঐ দিন রাতে কাজ শেষে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শরীফ রহমান ও তার ভাগনে। এই সময় তিনজন কাস্টমার খাবার খেয়ে বিল পরিশোধ না করেই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যান। তখন শরীফ ও তার ভাগনে তাদের পিছু নেন। রেস্টুরেন্ট এর বাইরে সাইডওয়াকে এসে ঐ তিন কাস্টমারকে বিল পরিশোধের কথা বললে তারা ক্ষেপে যান এবং শরীফের উপর হামলা চালান। হামলায় মাথায় আঘাত পেয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন শরীফ। আহত হন তার ভাগনেও।

মারাত্মকভাবে আহত শরীফকে পরে হাসপালে ভর্তি করা হয়। এক সপ্তাহ তিনি লাইফ-সাপোর্টে ছিলেন। কিন্তু সে অবস্থা থেকে তিনি আর ফিরেননি। হাসপাতালেই তিনি লাইফ-সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

পারিবারিক এ্যালবামে শরীফ রহমান তার স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে। ছবি : সংগৃহীত

শরীফ রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যুতে সেদিন শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী, ছয় বছর বয়সী কন্যা, ভাই ও ভাগনে। গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছিল প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটিতেও।

কিন্তু মর্মান্তিক এই খুনের ঘটনার পর পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে খুনিদের খুঁজে বের করতে পারেনি। পরেও দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়। স্থানীয় পুলিশ খুনিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। তবে দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে শরীফের খুনিরা। কিন্তু তদন্তের জটিলতার কারণে পুলিশ খুনিদের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলছে না এখনই। কয়জন ধরা পড়েছে তাও বলছে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে কি না সে বিষয়েও কিছু জানায়নি পুলিশ এখনো। গত ৩০ জুলাই খুনিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সিবিসি নিউজ এই তথ্য জানায়।

পুলিশের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই খুনের ঘটনা কমিউনিটির উপর এক উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে তা আমরা স্বীকার করি। আমরা এই মুহুর্তে আন্তরিকভাবে সকলের ধৈর্যের প্রশংসা করছি। সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি, এই খুনের ঘটনায় আমরা একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য যে গত প্রায় এক বছর পুলিশের নিরবতা কমিউনিটির অনেককেই হতাশ করেছিল। স্থানীয় মুসলিম এ্যাসোসিয়েশন অফ ওয়েন সাউন্ডের সভাপতি সিকান্দার ওমর সিবিসিকে বলেন, সবাই প্রশ্ন করছিল এই খুনের ঘটনার কোন তদন্ত হবে কি না বা খুনিরা ধরা পড়বে কি না। কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে খুব নীরব ছিল। ফলে কেউ এ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতো না। এখন সবাই খুশি হবে। কারণ এখন বিচার হবে। 

শরীফের বিধবা স্ত্রী শায়লা নাসরীন বর্তমানে রেস্টুরেন্টটি পরিচালনা করছেন। একই সঙ্গে

তাদের আট বছরের শিশু কন্যাকেও লালনপালন করছেন।

সিবিসি নিউজকে তিনি বলেন, শরীফ হত্যাকান্ডের পর তিনি হতাশার অনুভূতি অনুভব করছিলেন। তবে সিবিসির সঙ্গে আরও কথা বলতে অস্বীকার করেন।

স্থানীয় মেয়র ইয়ান বডি বলেন, কেউ চায়না কোন জনপ্রিয় ব্যবসায়ী বা অন্য যে কেউ সহিংসতার শিকার হয়ে তাদের রাস্তায় মারা যাক। যারা শরীফকে চিনতেন তাদের সবার কাছেই এটি একটি ক্ষতি। ক্ষতি কমিউনিটির কাছেও। মেয়র আরো বলেন, শরীফের মুখে  সবসময়েই হাসি লেগে থাকতো।

উল্লেখ্য যে, নিহত শরীফের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্থানীয় পৌরসভার বিভিন্ন ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছিল ঘটনার পর। স্থানীয় মেয়র ইয়ান বডি পৌরসভা এবং এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষে নিহতের স্ত্রী সায়লা ও মেয়ের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শরীফ আমাদের কমিউনিটিতে একজন ব্যতিক্রমী সদস্য ছিলেন, যিনি শহর এবং কাউন্টি কমিটিতে তাঁর সময় উৎসর্গ করেছিলেন, সেই সাথে একজন সফল উদ্যোক্তা এবং পরিবারে একজন নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর চলে যাওয়া আমাদের কমিউনিটির জন্য একটি মর্মান্তিক ক্ষতি। এখন আমাদের সমবেদনা ও সমর্থনের সাথে একত্রিত হওয়ার সময়।

ঙবিহ ঝড়ঁহফ সিটিতে শরীফ রহমান ছিলেন একজন সম্মানিত ব্যবসায়ী। স্থানীয় ণগঈঅ’র বোর্ড মেম্বারও ছিলেন তিনি। খুনের ঘটনার পর ণগঈঅ’র এক বিবৃতিতে বলা  হয়েছিল, আমাদের কমিউনিটিতে শরীফ রহমানের অটুট উৎসর্গ সবার মনকে ছুঁয়ে গেছে। তাঁর এই অবদান আমাদের হৃদয়ে চিরকাল খোদাই হয়ে থাকবে।

শরীফ রহমান গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘আন্তর্জাতিক উন্নয়ন’ বিষয়ে মাস্টর্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তার আগে তিনি অর্থনীতি বিষয়েও লেখাপড়া করেন। ২০১৫ সালে তিনি ঙবিহ ঝড়ঁহফ সিটিতে ‘কারি হাউস’ নামের রেস্টুরেন্টটি কিনেন।

হত্যাকারীদের বয়স ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে। তিনজনই শ্বেতাঙ্গ যুবক।