কানাডিয়ান শিশুদেরকে বন্ধু তৈরি করতে লড়াই করতে হয়
মোকাবিলা করতে হচ্ছে বুলিং এরও : ইউনিসেফের প্রতিবেদন
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ১৩ মে, ২০২৫ : ইউনিসেফের একটি বিশ্বব্যাপী সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অনেক কানাডিয়ান শিশু বা তরুণ তরুণী অসুখী। তাদের যন্ত্রণা বা অসুখী হওয়ার কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বুলিং এবং বন্ধু তৈরিতে হিমশিম খাওয়া। খবর দি কানাডিয়ান প্রেস এর।
ইউনিসেফের ১৯তম রিপোর্ট কার্ডে দেখা গেছে যে কানাডার প্রতি পাঁচজন শিশু বা তরুণ তরুণীর মধ্যে একজন ঘন ঘন উৎপীড়নের শিকার হয়, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন একাকী থাকে এবং প্রতি চারজনের মধ্যে একজনকে বন্ধু তৈরি করতে লড়াই করতে হয়।
বিশেষ করে ১৫ বছর বয়সীদের জীবনে সন্তুষ্টির হার হ্রাসের জন্য বুলিং দায়ী, যা ২০১৮ সাল থেকে তিন শতাংশ পয়েন্ট কমে ৭৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
জরিপ চালানো ৩৬টি দেশের মধ্যে ১০টি ধনী দেশ রয়েছে যার মধ্যে একটি কানাডা। কিন্তু তা সত্ত্বেও কানাডার অবস্থান ৩৬টি দেশের মধ্যে ১৯তম স্থানে রয়েছে কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যা, শিশু মৃত্যুহার এবং সামাজিক দক্ষতার বিবেচনায়। অর্থাৎ কানাডার অবস্থান তলানিতে নেমে এসেছে।

ভ্যাঙ্কুভারের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রাথমিক শিক্ষা ইউনিটের প্রধান বলেছেন ফলাফলগুলি বিশেষভাবে হতাশাজনক। কানাডার কিশোর কিশোরীরা যে সমস্যার মোকাবেলা করছে তা সমাধানের জন্য এই খাতে পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ করা উচিত।
হিউম্যান আর্লি লার্নিং পার্টনারশিপের পরিচালক ড. মারিয়ানা ব্রুসোনি বলেন ‘শিশুরা, অনেক দিক থেকেই আরও খারাপ করছে। কিন্তু তাদের জন্য সহায়তা বৃদ্ধির পরিবর্তে হ্রাস পাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন,‘শিশু বা তরুণরা পরিবারের অংশ, যা সম্প্রদায়, পাড়া এবং সমাজেরও অংশ, তাই কেবল শিশু বা তরুণরাই সংগ্রাম করছে তা নয়। তাদের চারপাশের সবকিছু সম্পর্কে আপনাকে ভাবতে হবে, এবং আমরা দেখেছি যে বাবা-মা কীভাবে সংগ্রাম করছেন এবং সম্প্রদায়গুলি কীভাবে কঠিন সময় পার করছে।’
গত ১৩ মে প্রকাশিত একটি সহযোগী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে কানাডায় বুলিং জীবনের সন্তুষ্টি হ্রাসের একটি প্রধান কারণ। এখানে ১৫ বছর বয়সী ২২ শতাংশ তরুণ তরুনীরা বলেছেন যে তারা ঘন ঘন বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে ৪০টি দেশের মধ্যে ২৬তম স্থানে রয়েছে কানাডা।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, সামাজিক দক্ষতার ক্ষেত্রে ৪১টি দেশের মধ্যে কানাডা ২৮তম স্থানে রয়েছে, যেখানে ১৫ বছর বয়সী চারজনের মধ্যে একজন বলেছে যে স্কুলে বন্ধু তৈরি করা সহজ ছিল না – যা প্রতিবেদনের গড় সংখ্যার চেয়ে কিছুটা বেশি এবং উদ্বেগজনক প্রবণতার অংশ।
‘ইউনিসেফ এর এই প্রতিবেদনটি আমাদের শিশু এবং তরুণ তরুণীদের জন্য যে ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন তার উপর আলোকপাত করেছে, যেমন তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, শিক্ষা এবং সুখ।’ ইউনিসেফ কানাডার সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেভান পালভেটজিয়ান এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছেন।
‘কানাডায় শিশু এবং যুবকদের জীবনে তৃপ্তি যেভাবে হ্রাস পাচ্ছে তাতে আমি গভীরভাবে হতাশ। মানসিক সুস্বাস্থ্য শৈশবের ভিত্তি, তবুও এটি এখনও উপেক্ষিত।’ এ কথা যোগ করেছেন ইউনিসেফ কানাডার যুব প্রবক্তা বা অ্যাডভোকেট মতিন মোরাদ খান।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের শিক্ষা, তহবিল এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় মৌলিক নীতিগত পরিবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে প্রতিটি শিশু এবং তরুণ তরুণীর উন্নতির সুযোগ থাকে।’
জাতিসংঘ শিশু তহবিলের এই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোভিড-১৯ অনেক পরিবারের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে দেওয়ার অস্বাভাবিক সময়কালে সামাজিক দক্ষতা মূলত স্থিতিশীল ছিল।
মহামারীর কারণে কানাডার বেশিরভাগ অংশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস অনলাইনে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল এবং কিছু পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমও বাতিল করা হয়েছিল, সীমিত করা হয়েছিল সমাবেশ। এ সবই করা হয়েছিল সেফটির কারণে।
রিপোর্টে বলা হয়, সামগ্রিক জীবন সন্তুষ্টির জন্য কানাডা ১৩তম স্থানে, এবং যদিও সামান্য পতন ঘটেছে, গবেষণায় বলা হয়েছে যে এটি পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়নি।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে কানাডা আত্মহত্যা এবং শিশু মৃত্যুর হার পরিস্থিতি উন্নত করেছে, কিন্তু এখনও তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে রয়েছে। আত্মহত্যার জন্য ৪২টি দেশের মধ্যে কানাডার অবস্থান ৩৩তম এবং শিশু মৃত্যুর জন্য ৪৩টি দেশের মধ্যে ২৫তম।
২০১৮ সাল থেকে কানাডায় কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার হার প্রতি ১০০,০০০-এ ১০.১ থেকে কমে ৮.৪-এ দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রতি ১০০,০০০-এ ৬.২-এর গড় যে হার, তার চেয়ে অনেক বেশি রয়ে গেছে। আত্মহত্যা কানাডায় কিশোর-কিশোরীদের মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হিসেবে রয়ে গেছে।
কানাডায় পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ জনে ০.৯৪ থেকে কমে ০.৮৮-এ দাঁড়িয়েছে, কিন্তু এই উন্নতি অন্যান্য বেশিরভাগ দেশের তুলনায় কম ছিল, অন্যদিকে শিশুদের অতিরিক্ত ওজনের মোকাবেলায়ও খুব কম অগ্রগতি হয়েছে। কানাডায় প্রতি চারজনে একজনেরও বেশি (৩০%) শিশু অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছে।
তবে একাডেমিক দক্ষতার ক্ষেত্রে কানাডার পরিস্থিতি ভাল। এ বিষয়ে ৪২টি দেশের মধ্যে কানাডার অবস্থান ষষ্ঠ।