৪০১ মহাসড়কের নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গপথ নির্মানের পরিকল্পনা বাস্তব না অলিক কল্পনা?

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গ্রেটার টরন্টোর ৪০১ মহাসড়কের নিচ দিয়ে বিশে^র সর্ববৃহৎ সুড়ঙ্গপথ নির্মানের মহাপরিকল্পনা গ্রহণের চিন্তা করছেন অন্টারিও’র প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ড। গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টের নির্বাচনের আগে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জয়ী হলে তিনি এই কাজটি করবেন। কারণ প্রচন্ড ট্রাফিক জ্যাম লেগেই থাকে এই মহাসড়কটিতে সকালে এবং বিকালে।

তবে সেই সময় অনেকেই বলেছিলেন এটি অন্তসারশূন্য একটি অবাস্তব পরিকল্পনা। নির্বাচনের আগে চমক সৃষ্টির জন্য কিছু প্রতিশ্রুতি দিতে হয় দলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য। সুড়ঙ্গপথ তৈরীর পরিকল্পনা সে রকমই এক প্রতিশ্রুতি। তবে বাস্তবে তা কখনোই সম্ভব নয়।

গত নির্বাচনের আগে ৪০১ মহাসড়কের নিচ দিয়ে বিশে^র সর্ববৃহৎ সুড়ঙ্গপথ নির্মানের মহাপরিকল্পনার কথা শুনিয়েছিলেন প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ড। ছবি: গ্লোব এ্যান্ড মেইল

নির্বাচনে ড্যাগ ফোর্ড জয়ী হয়েছেন। শুধু জয়ী নয়, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা নিয়েই জয়ী হয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠাতা তার আগেরবারও ছিল। কিন্তু তারপরও তিনি প্রায় আট মাস আগেই আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর হিসাবটা ছিল, ঐ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্যারিফ আরোপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার হুমকী দেওয়াতে প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টি’র জনপ্রিয়তা অন্য দলগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ছিল। ঐ সুযোগটাকে তিনি কাজে লাগিয়ে পরবর্তী আট মাসের পরিবর্তে আরো চার বছর ক্ষমতার আসনটি পাকাপোক্ত করে নিতে চেয়েছিলেন তিনি।

নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে তার পরিকল্পনা কাজে লেগেছে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই তিনি আবার মসনদে ফিরে আসেন। এখন তিনি তার নির্বাচনপূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতি ৪০১ এর নিচ দিয়ে মহা সুড়ঙ্গপথ নির্মানের ব্যাপার নড়েচড়ে বসেছেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বরাবর চিঠি লিখেছেন সুড়ঙ্গ পথ নির্মানসহ আরো কিছু প্রকল্পে ফান্ড বরাদ্দ করার আবেদন জানিয়ে।

সুড়ঙ্গ পথটির নির্মান কাজ বাস্তবায়িত করার জন্য সময় লাগতে পারে প্রায় তিন বছর। অর্থাৎ ২০২৭ সালের মধ্যে এই সুড়ঙ্গপথ নির্মানের কাজ শেষ হতে পারে।

সুড়ঙ্গ পথটি মার্কহাম এলাকা থেকে শুরু করে ব্যাম্পটন পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ড্যাগ ফোর্ড বলেন, ২০৫১ সালের মধ্যে অন্টারিও’র ‘গোল্ডেন হর্স’ এলাকার জনসংখ্যা ১২ মিলিয়নে পৌঁছাতে পারে। আর আগামী এক দশকের মধ্যে অত্র এলাকায় অবস্থিত ৪০০ সিরিজের মহাসড়কগুলো গাড়ির ধারণক্ষমতার যে সীমা রয়েছে তা পুরণ অথবা অতিক্রম করতে পারে। ‘গোল্ডেন হর্স’ এলাকা বলতে বুঝায় গ্রেটার টরন্টো, হ্যামিলটন, নায়েগ্রা, সিমকো এবং আশেপাশের এলাকাটিকে।

তবে ড্যাগ ফোর্ড সুড়ঙ্গ পথ নির্মানের পক্ষে যুক্তি যাই দেখান না কেন, অন্টারিওর অনেকেই এই প্রকল্প পছন্দ করছেন না। সামাজিক সংবাদ সমষ্টি এবং সামাজিক মিডিয়া প্লাটফর্ম ‘রেডডিট’ ব্যবহারকারী এক ব্যক্তি এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, হাতে নেওয়ার মত অনেক মূল্যবান প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে এই সুড়ঙ্গ পথ পড়ে না। রেডডিট ব্যবহারকারীর এই প্রতিক্রিয়াটি তুলে ধরে নাউ টরন্টো.কম তাদের এক প্রতিবেদনে। 

রেডডিট ব্যবহারকারী আরেকজন বলেন, ৪০১ এর নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ পথ নির্মান জাতি বিনির্মানের এর মধ্যে পড়ে না, এমনকি রাজ্য বিনির্মানের এর মধ্যেও নয়। এটি গ্রেটার টরন্টো বিনির্মানের এর মধ্যে পড়ে। 

ড্যাগ ফোর্ড এই সুড়ঙ্গ নির্মানের যৌক্তিকতা তুলে ধরার জন্য একে জাতি গঠন বা বিনির্মানের মধ্যে ফেলতে চাচ্ছেন।

‘রেডডিট’ ব্যবহারকারী অন্যান্যরা পরামর্শ দিচ্ছেন এই বলে যে, অন্টারিও’র উচিৎ হবে পরিবহন প্রকল্পগুলোতে মনোযোগ দেওয়া, যেমন এলআরটি, উচ্চ-গতির ট্রেন এবং বিদ্যমান মহাসড়কগুলোর উন্নয়ন।

কেউ কেউ আবার বলছেন তারা সুড়ঙ্গ নির্মানের সমর্থক নন। তবে টরন্টোতে যানজট নিরসনে ড্যাগ ফোর্ডের যে প্রচষ্টা রয়েছে তার প্রশংসা করেন। ড্যাগ ফোর্ডের সরকার প্রস্তাবিত এই সুড়ঙ্গ পথ নির্মানের জন্য কোন আনুষ্ঠানিক তহবিল  এর ঘোষণা দেয়নি এখন পর্যন্ত। এর নির্মান কাজে কত খরচ হতে পারে তাও উল্লেখ করেনি। তবে বলেছে যে এটি প্রায় ১০০ বিলিয়ন ট্রানজিট পরিকল্পনার অংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *