টরন্টোতে বাড়ি কেনার চেয়ে ভাড়া নেওয়া কি এখন সস্তা? যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, মে ৩, ২০২৫: টরন্টোতে এখন বাড়ি কেনার চেয়ে ভাড়া নেওয়া ‘সস্তা’ – এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান বছরের পর বছর ধরে এত বেশি ছিল না। খবর সিটিভি নিউজের।
এই সপ্তাহে রিয়েল এস্টেট গবেষণা সংস্থা ‘আরবানেশন’ এর একটি নতুন প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে গ্রেটার টরন্টো এবং হ্যামিলটন এলাকায় একটি কনডোর গড় ভাড়া গত ত্রৈমাসিকে (last quarter) প্রতি মাসে ২,৬১২ ডলারে নেমে এসেছে এবং এখন ২০২৩ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের রেকর্ড সর্বোচ্চ ২,৯২৫ ডলার থেকে ১০ শতাংশ কমেছে। রিয়েল এস্টেট এজেন্ট জোশ লয়েড বলেন, “আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘টরন্টো শহরে বসবাসের জন্য আমার জন্য সবচেয়ে সস্তা উপায় কী?’ তাহলে আমি আপনার মুখের উপর মিথ্যা বলব যদি বলি ভাড়া না নিয়ে বাড়ি ক্রয় করা।”

“যদি সম্পত্তির মালিকানা ভাড়ার চেয়ে ২০ শতাংশ বা তার বেশি হয়, তাহলে সম্পত্তি কেনার চেয়ে ভাড়া নেওয়া বেশি সাশ্রয়ী,” এ কথা যোগ করেন রিয়েল এস্টেট এজেন্ট মাইকেল দেবনাথন। তিনি আরো বলেন কিছু বিনিয়োগকারীও এখন পিছিয়ে আসছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ভাড়ার দাম কমে যাওয়ার কারণ হল নতুনভাবে সম্পন্ন হওয়া ইউনিটগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি। শহরের কেন্দ্রস্থলে এখন ল্যান্ডলর্ডরা ভ্যাকেন্সী কমাতে এক বা দুই মাসের ভাড়া ফ্রি করার মতো প্রণোদনা দিচ্ছেন।
এদিকে, বাড়ির দাম আরও বেশি স্থিতিশীল প্রমাণিত হয়েছে। মার্চ মাসে, GTA-তে সমস্ত ধরণের সম্পত্তির গড় বিক্রয় মূল্য ছিল ১,০৯৩,২৫৪ ডলার যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ২.৫ শতাংশ কম ছিল।
রিয়েল এস্টেট এজেন্ট দেবনাথন বলেন, একই সময়ে ঋণের খরচ বৃদ্ধি এবং কঠোর মর্টগেজ নিয়ম-নীতির কারণে ফার্স্টটাইম বায়ারদের জন্য পছন্দের বাড়ি কেনার যোগ্যতা অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
তিনি আরো বলেন, “আমি অনেক ল্যান্ডলর্ডকে দেখছি, তারা গত বছর বাড়ির ভ্যাকেন্সী রেট কমাতে এক থেকে দুই মাসের বিনামূল্যে ভাড়ার মতো প্রণোদনা দিচ্ছেন… আমরা আগে কখনও এমনটা দেখিনি।”
“আমি অনেক ডেভলাপারের সাথে কাজ করি এবং বর্তমানে তারা কনডো তৈরির পরিবর্তে ভাড়া দেওয়ার জন্য বাড়ি তৈরি করার চেষ্টা করছে। এবং আমি লক্ষ্য করছি যে আমার বিল্ডার ক্লায়েন্টদের সাথে এই প্রবনতা আরও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। তারা মনে করে যে, কন্ডোর দ্রুত নির্মাণ ও বিক্রয় পদ্ধতির কৌশল এর পরিবর্তে ভাড়ার জন্য বাড়ি তৈরী করা হলে দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি স্থিতিশীল আয়ের পথ তৈরি হতে পারে।”
দেবনাথন ব্যাখ্যা করে বলেন যে- টরন্টোর সিটিপ্লেস, লিবার্টি ভিলেজ এবং ফোর্ট ইয়র্কের মতো জায়গাগুলিতে “ভাড়া কমে গেছে এবং বাড়ির সরবরাহ বেশি”। ফলে এই সকল এলাকায় “বাড়িওয়ালার সাথে ভাড়াটিয়ার আরও ভালো দর কষাকষির সুযোগ রয়েছে।”
“এখন বাড়ির অনেক মজুদ আছে। আপনি ১,৮০০ বা ১,৯০০ ডলারে একটি নতুন কনডোতে এক শয়নকক্ষের বাসা ভাড়া নিতে পারেন।”
তবুও, দেবনাথন বলেন যে কিছু ভাড়াটে এই আশায় বাড়ি কেনাকাটা বন্ধ করে দিচ্ছেন যে দাম বা মর্টগেজ রেট আরও কমবে।
“মানুষ ভাড়া নিতে চায় কারণ তারা বাড়ির দাম আরও কমবে কিনা এবং মর্টগেজ রেটও কমে কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে চায়,” তিনি বলেন। “কিন্তু আপনি হয়তো কখনও মূল্যহ্রাস পরিস্থিতির একেবারে নিচের সুযোগটা নেওয়ার চাঞ্চ পারবেন না। কখনও কখনও আপনি হয়তো বুঝতে পারবেন যে এটি তলানিতে পৌঁছেছে, কিন্তু তখন ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
অন্যদিকে লয়েড বলেন যে এখন বাড়ি কেনা বা ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্তটি সামাজিক মর্যাদার উপর কম নির্ভর করছে। বস্তুত বেশি নির্ভর করছে আর্থিক স্বচ্ছতার উপর।
“আমি বলছি না যে ভাড়া নেওয়া কেনার চেয়ে ভালো, এবং আমি বলছি না যে ভাড়া নেওয়ার চেয়ে কেনা ভালো,” লয়েড বলেন। “মানুষের যা করা উচিত তা হল নিজেদের সাথে বসে বোঝা যে তারা জীবন থেকে কী চায়।” সূত্র : সিটিভি/সিপি২৪