নতুন অভিবাসীদের প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্যদের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডায় নতুন অভিবাসীদের প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্য বাসিন্দাদের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি, এবং এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি লোক জানিয়েছেন যে তারা প্রতারকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। ২০২৪ সালে পরিচালিত স্কশিয়াব্যাংক এর এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৩৮ শতাংশ নতুন কানাডিয়ান বলেছেন যে তারা কমপক্ষে একটি প্রতারণার শিকার হয়েছেন, যেখানে অন্যান্য কানাডিয়ানদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ বলেছেন যে তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

স্কশিয়াব্যাংক জানিয়েছে, নতুনদের লক্ষ্য করে যেসব জালিয়াতি করা হয় তার মধ্যে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া জালিয়াতি (৪৯ শতাংশ), চাকরি জালিয়াতি (৪৬ শতাংশ) এবং অভিবাসন জালিয়াতি (২২ শতাংশ)।

কানাডায় নতুন অভিবাসীদের প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্য বাসিন্দাদের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। ছবি: সংগৃহীত

কানাডিয়ান অ্যান্টি-ফ্রড সেন্টার এর মতে, শুধুমাত্র ২০২৩ সালেই কানাডিয়ানরা ৫৬৭ মিলিয়ন ডলার হারিয়েছে – যা ২০২২ সালের তুলনায় ৩৭ মিলিয়ন ডলার বেশি।

শীর্ষ স্থানে ছিল তিন ধরণের জালিয়াতি। আর এগুলোর ধরণ ছিল পরিচয় জালিয়াতি, পরিষেবা জালিয়াতি এবং স্পিয়ার ফিশিং – এগুলি সবই নতুন আসা অভিবাসীদের অর্থ প্রদান করতে বা তাদের স্যোসাল ইন্সুরেন্স নম্বর, পাসওয়ার্ড বা ব্যাংকিং তথ্যের মতো সংবেদনশীল তথ্য দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সর্বোচ্চ স্তরের আর্থিক প্রভাব ফেলেছে এমন শীর্ষ তিনটি জালিয়াতির রিপোর্ট হল বিনিয়োগ জালিয়াতি, স্পিয়ার ফিশিং এবং রোমান্স জালিয়াতি। স্পিয়ার ফিশিং হলো টার্গেট করা ব্যক্তিদের গোপন তথ্য প্রকাশ করতে প্ররোচিত করার জন্য পরিচিত বা বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের নাম হুবহু অনুকরণ করে ইমেল পাঠানোর প্রতারণামূলক অনুশীলন।

কানাডিয়ান অ্যান্টি-ফ্রড সেন্টার গত বছরে ১১৬,৪০৩ টি রিপোর্ট পেয়েছে যার মধ্যে কমপক্ষে ৪১,৮৭৩ জন জালিয়াতির শিকার হয়েছেন।

জালিয়াতি প্রতিরোধ ব্যবস্থা

নতুন আসা ব্যক্তিরা এবং অন্যান্য কানাডিয়ানরা (যথাক্রমে ৯৫ শতাংশ এবং ৯১ শতাংশ) আর্থিক জালিয়াতির বিষয়ে আরও ব্যাপক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর একমত এবং এই ক্ষেত্রে আরও সচেতনতা এবং জ্ঞান বৃদ্ধির পক্ষে।

স্কটিয়াব্যাঙ্কের জালিয়াতি প্রতিরোধ পদ্ধতির বিশ্লেষণে কানাডায় নতুন আগত এবং দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যও প্রকাশ পেয়েছে: –

Ñ নতুনদের মধ্যে আর্থিক নিরাপত্তা এবং জালিয়াতি প্রতিরোধ নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করার সম্ভাবনা দীর্ঘদিনের বাসিন্দাদের তুলনায় ৪৭ শতাংশ বেশি। এই আলোচনাটি তারা তাদের নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে করে থাকে।

Ñ নতুনদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বাসিন্দাদের তুলনায় পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অ্যাপ ব্যবহার করার সম্ভাবনা ৪৬ শতাংশ বেশি।

Ñ অনলাইন অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার জন্য ঘন ঘন পাসওয়ার্ড আপডেট করার ক্ষেত্রে, নতুনরা দীর্ঘস্থায়ী বাসিন্দাদের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি সক্রিয়।

স্কশিয়াব্যাংকের গ্লোবাল জালিয়াতি ব্যবস্থাপনার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্যামি ম্যাককিনন বলেন, ‘অযাচিত যোগাযোগের ব্যাপারে সকলেরই সচেতন থাকা এবং সন্দেহপ্রবণ থাকা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে কেউ যদি অর্থপ্রদানের কথা বলেন বা ব্যক্তিগত তথ্যের জন্য অনুরোধ করেন। এই জাতীয় অনুরোধের বৈধতা সরাসরি কোনও অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট বা চ্যানেলের মাধ্যমে যাচাই করা সর্বদাই ভালো। তাই, যদি কেউ কোনও ডেলিভারি কোম্পানির কাছ থেকে কল পান, তাহলে ফোন কেটে দেওয়া এবং সেই ডেলিভারি কোম্পানিকে ফোন করাই ভালো। আমরা লোকেদের নিয়মিতভাবে তাদের আর্থিক বিবৃতি এবং তাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। যদি একাউন্টে কোন গড়মিল দেখা যায় তবে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক এর সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিৎ।’

‘ব্যাংক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলি আজকাল তাদের মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের স্তর বৃদ্ধি করছে, এবং অনেক প্রতিষ্ঠানই আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের জন্য ওয়ান-টাইম পাসকোড নামে কিছু পাঠাবে। ব্যাংক থেকে কেউ কখনও আপনার কাছে এটি চাইবে না। আমরা সুপারিশ করছি যে ওয়ান-টাইম পাসকোডটি কারও সাথে শেয়ার না করার জন্য। যদি কেউ সেই পাসকোডটি চাইতে ফোন করেন, তাহলে নিশ্চিত ধরে নিতে পারেন যে সেটি স্ক্যামারদের ফোনকল। সেই ওয়ান-টাইম পাসকোডটি কাউকে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না। এরকম ফোনকল আসলে সাথে সাথে ফোন ডিসকানেক্ট করে দিন এবং আপনার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শাখায় কল করুন অথবা সরাসরি সেই শাখায় যান।’ -সূত্র : নিউ কানাডিয়ান মিডিয়া/সেনেকা পলিটেকনিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *