জীবনের বহু রং

সাইদুল হোসেন

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

নূতন কিছু কথা (গল্পগুচ্ছ)

(কিছু রকমারি স্বাদের গল্প)

ডিসেম্বর ২০, ২০২৪

আমি একজন নূতনত্বের অনুসন্ধানী মানুষ। ঘরে অথবা বাইরে সর্বত্র আমি আমার চোখ-কান খোলা রাখি নূতন কিছু একটা দেখতে অথবা নূতন একটা কিছু শুনতে। কিছু পড়াশোনাও করি। (TV/Internet দেখি)। এবং যেহেতু আমার গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ লেখার একটু অভ্যাস আছে, আমি চাই সেই সব কাহিনীর/ঘটনার সংগে আমার লেখার পাঠকপাঠিকাদেরও পরিচয় করিয়ে দিতে। তাই করছি। লেখাগুলোর মাঝে কিছু চিন্তা-ভাবনার খোরাকও আছে বলে আমি মনে করি।

(এক)

ডিসেম্বর ২০, ২০২৪

পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখার দায়ভার

সকালে ব্রেকফাস্ট খাচ্ছি এমন সময় ওয়াইফ আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলো, “আগামী সপ্তাহে তোমাকে ব্যাংকে থেকে বেশ কিছু ডলার উঠাতে হবে। আমাকেও উঠাতে হবে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ এই চার মাস সময়কালে ১৩টি জন্মবার্ষিকীতে গিফ্ট দিতে হবে আমাদের দু’জনকে। মাথাপ্রতি অন্ততঃ ১০০ ডলার তো অবশ্যই। তুমি ৫০ ডলার, আমি ৫০ ডলার। তাছাড়া আছে এক ভাগ্নের বিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে। সেটা আরো বড় খরচ।

শুনলাম এবং স্তব্ধ, নির্বাক রইলাম। হাতের মুষ্ঠিটা ভালোমতই খুলতে হবে। আমার ওয়াইফের জন্মবার্ষিকীটাও উল্লি­খিত চার মাসের ভেতরেই সেকথাটাও মনে রাখতে হবে।

ওদিকে আয়ের উৎস তো একমাত্র Old Age Security’র নির্দিষ্ট মাসিক অংকটা। ব্যাংকে সঞ্চয় যৎসামান্য। কিন্তু শুনে কে?

পারিবারিক সম্পর্কের মিষ্টতা/মসৃণতা বজায় রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব সামাজিক জীবনে যা পালন না করতে পারলে মুখ থাকে না আমাদের মত বৃদ্ধদের।

অতএব …….

 (দুই)

ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

CAR THEFT IN CANADA

কানাডায় প্রতি পাঁচ মিনিটে একটি গাড়ি চুরি হচ্ছে। ছবি : সিবিসি নিউজ

CAA Magazine FALL 2024 (Page 42) says that ‘’Every five minutes in Canada, a car is stolen” —which is more than ever before. “Car thieves are serious criminals”:
“A vehicle is stolen from a driveaway or parking lot, on an average every five minutes. Tech-savvy thieves use electronic tools to steal vehicles without damaging windows, locks or steering columns. In many cases, these vehicles are stolen quickly and in under two minutes.”
Descriptions of brand and make of frequently stolen vehicles have been listed on page 42 of the Magazine.

(তিন)

ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

সম্পদের লোভের যন্ত্রণা থেকে দূরে থাকতে চাই

(অবিশ্বাস্য একটি সত্য ঘটনা)

ঘটনাটা ঘটেছে অতি সম্প্রতি আমাদেরই পরিচিত দুই মুসলিম পরিবারে।

ঢাকানিবাসী ধনী সম্পদশালী পিতা, বয়স ৮৫-৮৬ বছর, তাঁর দুই ছেলেকে ১০ কাঠা ১০ কাঠা করে জমি লিখে দিলেন। বড় মেয়েকে দিলেন ৫ কাঠা। সে স্বামী-সন্তান নিয়ে ক্যানাডায় নিজেদের বিরাট এক বাড়িতে বসবাস করে। আয়-রোজগার যথেষ্ট।

তারই ছোটবোনও ক্যানাডায় তার স্বামী-সন্তান নিয়ে নিজেদের বাড়িতে বসবাস করে। সচ্ছল পরিবার। বাবা যখন তাকে বললেন, “তোর অংশ ৫ কাঠা জমি তোর নামে রেজিস্ট্রেশন করে দিতে চাই, তোরা কয়েকদিনের জন্য ঢাকাতে আয়”, তখন মেয়েটি তাঁকে জানালো, “আমি ঐ জমি চাই না।”

মেয়ের কথা শুনে ওর বাবা আশ্চর্যান্বিত হয়ে তাকে বললেন, “বর্তমানে ঢাকায় এই ৫ কাঠা জমির মূল্য ৫ কোটি টাকা। তোর নামে রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে সেটা বিক্রি করে সেই টাকাগুলো ডলার বানিয়ে তো ক্যানাডায় নিয়ে যেতে পারিস।”

“তা হয়তো পারবো কিন্তু সেটা করারও কোন ইচ্ছা নেই কারণ এতগুলো ডলারের আমার কোন প্রয়োজনই নেই। নিজেদের বাড়িতেই থাকছি, আয়-রোজগার ভালো, আর্থিক কোন অনটন নেই। নূতন বাড়ি কিনে সেখানে উঠে যাওয়ারও কোন ইচ্ছা নেই। যেমন আছি বেশ আছি। আলহামদুলিল্লাহ!” বললো মেয়েটি। তারপর যোগ করলো :

“এতগুলো ডলার ব্যাংকে অযথা পড়ে থাকবে। ইন্টারেস্ট পাবো কিন্তু সেটা তো হারাম। কোথাও ইনভেস্ট করলেও হারাম ইন্টারেস্টই পাবো। তদুপরি সেই অপ্রয়োজনীয় ডলার সম্পদ হিসাব করে প্রতি বছর সেটার উপর জাকাতও দিতে হবে।”

“এতসব ঝামেলায় যেতে চাই না, আব্বা। জমিটা তোমারই থাক। আমাদের জন্য দু’আ করো, সেটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।”

জমিটা সে নিতে রাজীই হলো না!

এই গল্পটা শুনিয়ে গেল ওরই বড় বোন একদিন আমাদের বাসায় বেড়াতে এসে। বর্তমান যুগে এমন আর একটা দৃষ্টান্ত অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে কি?

(চার)

ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪

প্রজন্ম (Generation)

এই প্রজন্ম, বর্তমান প্রজন্ম, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কথাগুলো মৌখিক এবং লিখিতভাবে আমরা বাংলাদেশীরা অহরহ-ই ব্যবহার করে যাচ্ছি নানা প্রসংগ আলোচনার ক্ষেত্রে।  Generation কথাটাও শোনা যায়। একটা ইংলিশ ডিকশনারীর মতে Generation is a group of people born and living during the same time.

বর্তমান যুগে শোনা যায়, বইপত্র-ম্যাগাজিনেও চোে খ পড়ে Gen X, Gen Y, Gen Z ইত্যাদি। বিষয়টা আমার কাছে  দুর্বোধ্য/অবোধ্য মনে হতো।

তবে ভাগ্যক্রমে MACLEAN’S MAGAGINE এর February 2020 issueটার Page 48-50 পড়ে যা জানলাম তা নীচে পরিবেশন করছি :

Rough guide to the generations

Generation Born during

Boomers (Baby Boomers) 1946-1964
Generation X 1965-1980
Generation Y 1981-1996
Generation Z 1997-2012
What comes next?
“Futurists are now talking about Generation Alpha: an entire generation of people who have never lived without a tablet or a smartphone to distract them.”

উপরোক্ত ফর্মুলা অনুসারে আমাদের বড় নাতনি হচ্ছে Generation Y (জন্ম ১৯৮৫), মেজো নাতনি হচ্ছে Generation Y (জন্ম ১৯৮৯), ছোট নাতনি হচ্ছে Generation Z (জন্ম ১৯৯৭)। বড় নাতনির ছেলেরা হচ্ছে Generation Alpha, কারণ ওদের জন্ম ২০১২-এর পরে, এবং ওদের education and entertainment-এর medium হচ্ছে tablet (small size computers) and other electronic devices. Smartphone অবশ্য হাতে পায়নি এখনো।

(পাঁচ)

ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪

Some jokes and wise counsel

(From the Internet)
Senior citizens are the nation’s leading carriers of AIDS:

  • Hearing aids,
  • Band-Aids,
  • Medical aids,
  • Organ aid, and most important of all,
  • Monetary aid to their children.

-Getting old is mandatory,
-Feeling old is optional.

-Keep your mind busy with creative habits. If you don’t use it, you lose it.

-Be a good listener. You will learn more.

-Never initiate a discussion on any unpleasant topic. Silence is much better.


LAUGH. SMILE. LIVE.

(নয়)

মার্চ ৭, ২০২৫

Small change, big difference

স্টোর থেকে এক বাঞ্চ কলা কিনে ঘরে আনলাম। সেটাকে ব্যানানা হ্যাংগারে ঝুলাতে গিয়ে চোখে পড়লো যে একটা কলার গায়ে লাল রংয়ের ছোট একটা স্টিকার আঠা দিয়ে লাগানো রয়েছে। পড়ে দেখলাম যে সেটাতে লেখা রয়েছে : small change, big difference.

কথাটা আমার খুব পছন্দ হলো কারণ বাস্তব জীবনে এমনটা তো প্রায়শঃই ঘটছে যে সতর্ক হয়ে নিজেদের ত্রুটিযুক্ত আচার-আচরণে সামান্য এতটুকু উত্তম পরিবর্তন আনলেই বহু শুভ ফলাফল ভোগ করা যায়, quality of life gets much better.
Change of attitude from negative to positive or from pessimistic to optimistic, or introvert to extrovert is sure to bring a big admirable improvement in life. That’s a big difference indeed. What is needed is awareness for a change towards better. Let’s try.

(দশ)

 মার্চ ৩১, ২০২৫

ঈদ মুবারক!

রমজানের শেষে গতকাল ছিল ঈদুল ফিতর। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য খুশী-আনন্দের দিন। দৈহিক অসামর্থ্যরে কারণে ঘরের বাইরে গিয়ে কোথাও জামাতে ঈদ করতে আমি অসমর্থ বহু বছর ধরেই। ঘরে বসে ফোনেই আত্মীয়-বন্ধুদের ঈদ মুবারক জানাই। এবারও তাই করেছি একেএকে ২৫ জনকে। কাউকে পেয়েছি, কাউকে পাইনি। অতি স্বাভাবিক ঘটনা। এই আলাপচারিতার মাঝে কিছু দুঃখজনক খবর পেলাম বিভিন্ন জনের কাছ থেকে। একেএকে বলছি।

(এক)

গত ২০ বছর ধরে পরিচিত একজনকে “ঈদ মুবারক” বলার পর অপর পক্ষ থেকে প্রশ্ন করে জানতে চাইলো, “আপনি কে কথা বলছেন?” প্রশ্ন শুনে খুব অবাক হলাম। তথাপি আমার নামটা বললাম। শুনে তিনি জানালেন, “গত কিছুদিন হলো আমি আমার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। কথা বললে জবাব দিই কিন্তু কার সংগে কথা বলছি তার নামটা মনে করতে পারি না, ফোনে থাকলে কখনো কখনো তার চেহারাটাও মনে ভেসে উঠে না। বিজনেস অন্যকে দিয়ে দিয়েছি, আমি ঘরে বসেই দিন কাটাচ্ছি। স্মৃতিশক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য ডাক্তারের দেয়া অষুধ নিয়মিত খাচ্ছি কিন্তু কোন উপকার হচ্ছে না। আমি দুঃখিত যে আপনাকে আমি চিনতে পারছি না।”

(দুই)

ফোন করলাম। বললাম, “ভাই, ঈদ মুবারক!:

শুনে তিনি বললেন, “না ভাই, মুবারক অবস্থায় আমরা নেই।” “কি কারণ?” জানতে চাইলাম আমি।

জবাব পেলাম, “আমার ছেলের বউটা হঠাৎ করে ছেলেটাকে ছেড়ে ওর বাবামায়ের কাছে চলে গেছে। বলে গেছে আর ফিরে আসবে না। কোর্ট থেকে ডিভোর্সের কাগজপত্র আসবে সময়মত।”

(তিন)

“ঈদ মুবারক!” বললাম একজন বন্ধুকে।

শুনে তিনি কাঁদতে কাঁদতে জানালেন যে তার বড় বোন গতকাল হঠাৎ হার্টফেইল করে মারা গেছেন ঢাকায় তার নিজ বাড়িতে। শুনে দুঃখ পেলাম। “ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন” বলে তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলাম।

(চার)

আরো আছে।

ঈদ মুবারক জানালাম অপর একজনকে। জবাবে তিনি বললেন, “বড় কষ্টে আছি। নিউমোনিয়ার তীব্র আক্রমণে প্রায় মরেই গিয়েছিলাম দু’সপ্তাহ আগে। হাসপাতাল থেকে মাত্র ছাড়া পেয়েছি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ধুঁকছি। আল্ল­াহ ভরসা। ঈদ আসেনি আমাদের জন্য এবছর। আমার জন্য দু’আ করবেন।”

এই সব শোকাবহ কাহিনী শুনতে শুনতে সুদূর অতীতের একটা উর্দু গানের কথা মনে পড়ে গেল- যার শুরুর কলিটা ছিল এরকম :

              জাহা বাজ্তি হ্যায় শেহনাই

ওহা মাতম ভী হোতি হ্যায় ॥

অর্থটা হচ্ছে : জগৎটা এমনি একটা বিচিত্র স্থান যে সেখানে কোথাও যদি আনন্দময় বিয়ের অনুষ্ঠানের শানাই বেজে উঠে তখন সেখানেই আশেপাশে কোথাও আপনজনের মৃত্যুর শোকে সেই পরিবারের নারীপুরুষ গভীর বেদনা নিয়ে বুকফাটা কান্নাতেও ভেংগে পড়ে।

একটা হিন্দি গানেও ঠিক এই কথাগুলোর প্রতিধ্বনি শোনা যায়। গানটার কথাগুলো এরকম : “ঘর ঘরমেঁ দিওয়ালী, মেরা ঘরমেঁ আন্ধেরা” যার অর্থ ঃ প্রতিটি ঘরে আজ দিওয়ালী উৎসবের আলো জ্বলছে কিন্তু আমার ঘরটা শোকে অন্ধকার।

সাইদুল হোসেন

মিসিসাগা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *