ক্রমবর্ধমান সংখ্যক আমেরিকান এখন কানাডার নাগরিকত্ব নিয়ে এদেশে চলে আসতে চাইছেন
ট্রাম্পের কারণে আমেরিকায় অনেকেই নিরাপদ বোধ করছেন না
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডায় আত্মীয়-স্বজন রয়েছে এমন আমেরিকানদের মধ্যে সম্প্রতি ক্রমবর্ধমান হারে কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া বা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর কিছুটা কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন। খবর সিটিভি নিউজের।
অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন যে তারা এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে আবেদন করার আগ্রহ লক্ষ্য করছেন যাদের কানাডিয়ান বাবা-মা বা দাদা-দাদি আছেন এবং এখন তারা উত্তর দিকে চলে আসতে চাইছেন।
আমেরিকায় অধিকার, সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ
যারা আবেদন করছেন তাদের মধ্যে LGBTQ2S+ সম্প্রদায়ের সদস্যরাও রয়েছেন, যারা আমেরিকায় অধিকার এবং সুরক্ষা বিষয়ে উদ্বিগ্ন। সেইসাথে বৈচিত্র্য, ন্যায্যতা এবং অন্তর্ভুক্তি (DEI) নীতিগুলির বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যারা কানাডায় আসার বিষয়ে আগ্রহী।

‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে কিছু লোক খুবই অস্বস্তিতে আছেন,’ অভিবাসন আইনজীবী চ্যান্টাল ডেসলজেস সম্প্রতি সিটিভি নিউজ-কে এ কথা বলেন। ‘ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা, বিশেষ করে সমাজের কিছু ক্ষেত্রের উপর কঠোর ব্যবস্থা আরোপ, দমন-পীড়ন ইত্যাদির কারণে কিছু লোক নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।’
এই কথার প্রতিধ্বনি লক্ষ্য করা গেছে অভিবাসন আইনজীবী ম্যাক্স চৌধুরীর বক্তব্যেও। তিনি সিটিভি নিউজ-কে বলেছেন যে তার অনেক ক্লায়েন্ট, বিশেষ করে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবর্তিত সরকারি নীতিগুলিকে ক্রমশ উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন। তিনি আরো বলেন, কিছু পরিবার তাদের সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ চাওয়ার কারণে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন, বিশেষ করে যখন তারা মনে করেন যে আমেরিকার সামাজিক সুরক্ষাগুলি হুমকির মুখে।
‘হারানো কানাডিয়ানদের’ জন্য আশার আলো
লক্ষণীয় যে, কানাডার নাগরিকত্ব নীতিমালা আরও সহজলভ্য হয়ে ওঠার সময় আবেদনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মার্চ মাসে, প্রাক্তন অভিবাসন মন্ত্রী মার্ক মিলার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে তথাকথিত ‘হারানো কানাডিয়ানদের’ও নাগরিকত্ব প্রদান করা হোক।
‘হারানো কানাডিয়ান’ শব্দটি এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা দেশের বাইরে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তাদের কানাডিয়ান বাবা-মা-ও অন্য দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন।
২০০৯ সালে তৎকালীন কনজার্ভেটিভ সরকার আইন পরিবর্তন করে যাতে বিদেশে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিরা তাদের সন্তান কানাডায় জন্মগ্রহণ না করলে তাদের নাগরিকত্ব হস্তান্তর করতে না পারেন। তবে ২০২৩ সালের শেষের দিকে অন্টারিও সুপিরিয়র কোর্ট অফ জাস্টিস রায় দেয় যে আইনটি অসাংবিধানিক এবং বর্তমান লিবারেল সরকার এই রায়ের সাথে একমত।
বিভিন্ন ধরণের আবেদনকারী
দেখা গেছে কানাডিয়ান নাগরিকত্ব চাওয়া এই ব্যক্তিরা কেবল একটি বয়স বা আর্থ-সামাজিক শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নন। ভ্যাঙ্কুভার-ভিত্তিক অভিবাসন আইনজীবী রিচার্ড কুরল্যান্ডের মতে, আবেদনের এই বৃদ্ধি অভূতপূর্ব।
তিনি আরো বলেন,‘মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরে, প্রাথমিকভাবে কানাডায় আসার বিষয়ে অনুসন্ধানের ঢেউ ওঠে, তবে এটি সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে আসে যারা আমেরিকা থেকে চলে যাওয়ার সামর্থ্য রাখেন। আমরা আরো লক্ষ্য করছি বিভিন্ন রাজনৈতিক ভাবধারায় বিশ^াসী এবং বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থানের লোকেরাও কানাডায় আসার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছেন এবং এটি সবটাই নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতির প্রতি ভয়ের কারণে। আমেরিকানদের অধিকার এবং ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে সাধারণ ভয়।’
অভিবাসন আইনজীবী চ্যান্টাল ডেসলজেসও এই ভয়ের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বয়সের দিক থেকে ষাট এবং সত্তরের কোঠায় যারা আছেন তাদের কাছ থেকে এবং যারা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করার জন্য উদ্বিগ্ন সেই সব অভিভাবকদেরকেও কানাডায় চলে আসার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখছি। তাদের মধ্যে আমেরিকায় নিরাপত্তার বিষয়ে প্রকৃত ভয় আছে। মানুষ এই বিষয়ে সত্যিই সিরিয়াস।’
ভয়ের কারণেই এইসব হচ্ছে
আমেরিকার অনেকেই কানাডায় চলে আসার সিদ্ধান্তটা নিচ্ছেন মূলত ভয়ের কারণেই।
অভিবাসন আইনজীবী রিচার্ড কুরল্যান্ড বলেন, আমি কখনো এইরকম অবস্থা দেখিনি। হতে পারে কানাডায় আসতে চাওয়া প্রতিটি পরিবারের নিজ নিজ ইস্যু রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কমন ইস্যু হলো ভয়।
বর্তমান বাস্তবতাটা হচ্ছে, কানাডার নাগরিকত্বের পথ খুঁজছেন এমন মার্কিন নাগরিকদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। আর এদের অনেকেই ট্রাম্প-পূর্ববর্তী সময়ে কানাডায় চলে আসার বিষয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন।
কুরল্যান্ড বলেন, “কানাডায় আসতে চাওয়াদের মধ্যে কেউ কেউ নাগরিকত্ব পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে নারাজ। তারা অস্থির হয়ে উঠেছেন কবে কখন কানাডায় চলে আসতে পারবেন। এ কারণে তারা সাময়িকভাবে কানাডায় প্রবেশের পথ খুঁজছেন এবং এখানে অবস্থান করে অভিবাসন প্রক্রিয়া সমাধান করতে চাচ্ছেন।