পুরুষ সপ্তাহে কাজ করে প্রায় ৭২ ঘণ্টা, আর নারী প্রায় ১২৮ ঘণ্টা, পার্থক্য প্রায় ৫৬ ঘণ্টার : অপি
অনলাইন ডেস্ক : শোবিজের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ অপি করিম। তবে একসময়ের ব্যস্ত এই অভিনেত্রী এখন অভিনয়ে অনেকটাই অনিয়মিত। অভিনয়ের বাইরেও দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত তিনি। বর্তমানে দেশের স্বনামধন্য একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন এই অভিনেত্রী। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি জানায় সম্প্রতি আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রচারে এসেছে তার একটি সচেতনতামূলক ওয়েব কনটেন্ট, যার কেন্দ্রীয় ভূমিকায় প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। একটি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির পক্ষ থেকে রাসেল মাহমুদের স্ক্রিপ্টে এটি নির্মাণ করেছেন সজল আহমেদ।
‘হোক দিনবদল’ ট্যাগলাইনে প্রচারে আসা সেই ভিডিও কনটেন্টে ‘নারীদের নিয়ে কিছু না বলা সত্য কথা’ তুলে ধরেছেন অপি করিম।

তিনি বললেন, ‘সেদিন ইন্টারনেটে র্যানডম সার্চ করতে করতে ছোট্ট একটা ডেটা পেলাম। আপনাদের সাথে শেয়ার করি? ঘরে-বাইরে মিলিয়ে একজন পুরুষ সপ্তাহে কাজ করে প্রায় ৭২ ঘণ্টা। আর একজন নারী প্রায় ১২৮ ঘণ্টা। পার্থক্য প্রায় ৫৬ ঘণ্টার। এটা শেয়ার করলাম কারণ আজকে আমি কিছু প্রশ্ন করব, প্রশ্ন করব আপনাকে, প্রশ্ন করব আমাকে, প্রশ্ন করব সোসাইটিকে।’
এ বিষয়ে তিনটি প্রশ্ন রেখেছেন অপি। তাঁর কথায়, ‘প্রথম প্রশ্ন, আচ্ছা বলেন তো- নারী বললে প্রথমে কী মাথায় আসে? বা কী ধরনের ছবি চোখে ভাসে? সুপারওম্যান? ওহ ম্যান! আমরা নারীরা একইসাথে অফিস করি, সংসার করি, সন্তানদের টেইক কেয়ার করি, মানিয়েও চলি সবার সাথে। দিনে-রাতে এটা-ওটা-সেটা, যখন যার প্রয়োজন যেটা, সামলাই দুই হাতে। সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি খুললেই দেখা যায়, আমরা স্ট্রং, রেজিলিয়ান্ট, আনব্রেকাবল। ছোট-বড় যেকোনো দায়িত্ব, আমাদের কাছে জাস্ট একটা সিম্পল টাস্ক কেবল।’
যোগ করে তিনি বলেন, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। নারী আনে শান্তি। পুরুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ কাজ করেও শরীরে আসে না ক্লান্তি। আসবে কেন? আমরা তো সুপারওম্যান!’
দ্বিতীয় প্রশ্ন রেখে নন্দিত এই অভিনেত্রী বলেন, ‘দায়িত্বের নামে হাজারটা বোঝা আমাদের কাঁধে, সেটাকে আবার শব্দ-মাধুর্যে বলা হয়, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে! আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন-পুরুষদের কেন গ্লোরিফাই করা হয় না এমন প্রবাদে? অল্প কিছু উদাহরণ বাদে পুরুষের কাজ মানে শুধুই ঘরের বাইরে! ভাইরে, ঘরেও যে কত কাজ থাকে সেটা তো পান না টেরও। আর ছুটির দিনে একটু এক্সট্রা ঘুমের ইচ্ছা হয় আমাদেরও।’
তৃতীয় প্রশ্নে অপি বলেন, ‘‘আমার তৃতীয় প্রশ্ন, ক্যারিয়ার, ফ্যামিলি, রেসপন্সিবিলিটি, সাথে আবার পারফেকশন! সব মিললে তবেই আদর্শ নারী। কেন হতে হবে আমাদের এতটা এক্সট্রা অর্ডিনারি? সেই হাউজ-ওয়াইফের কোনো গুরুত্ব নেই, যে শুধু ঘরেই কাজ করে। আবার যে ওয়ার্কিং উইম্যান বাসায় এসে রাঁধে না, তাকে সবাই জাজ করে। রেজাল্ট? ওই যে সপ্তাহে প্রায় ৫৬ ঘণ্টা বেশি! তবু থাকে গিল্ট-প্রেশারে, ওই প্রেশার কখনও কমে না, শুধুই বাড়ে। সত্যি বলি মন থেকে? আমি মেয়ে বলে আমাকে সব করতে হবে না দুই হাতে, হবে না সবকিছু সামলাতে। তোমার সুপারওম্যান হতে হবে না, তুমি হও তোমার মতোন। যে মানুষটা সব পারবে না অথবা পারবে, যেটা করবে ঠিকঠাক, এই তো! নারী মানে এই না যে চেকলিস্ট ধরে ধরে সব টিক মার্ক দিয়ে যেতে হবে। নারী মানে সেট করে দেয়া অসম্ভব সব স্ট্যান্ডার্ড ছুড়ে ফেলে তোমাকে ‘তুমি’ হতে হবে।’’ সবশেষে অপি বলেন, ‘এই উইম্যান্স ডে-তে স্টেরিওটাইপ ভাবনাগুলো বদলে যাক। হোক সত্যিকারের দিনবদল। হ্যাপি উইম্যান্স ডে।’