প্রশাসনকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে ইসলামোফোবিয়া মোকাবেলায়
কানাডায় এবার এক মুসলিম নারীর হিজাবে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। টরন্টোর নিকটবর্তী শহর এজাক্সের একটি লাইব্রেরিতে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে গত ২২ মার্চ শনিবার। হামলার এক পর্যায়ে হিজাবের উপর তরলজাতীয় পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়।
পুলিশ বলছে, লাইব্রেরিতে একজন হিজাব পরিহিতা মুসলিম নারী পড়াশোনা করছিলেন, এই সময় একজন অজ্ঞাত নারী তার কাছে এসে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার মাথায় কিছু ছুঁড়ে মারেন। পুলিশ বলছে, ২৫ বছর বয়সী সন্দেহভাজন নারীটি তখন লাইব্রেরিতে থাকা ঐ নারীর হিজাব খুলে ফেলার চেষ্টা করেন এবং তার উপর অজানা তরল ঢেলে দেন। আক্রান্ত নারীটি তখন সাহায্যের জন্য চিৎকার করলে নিরাপত্তারক্ষীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
সিটি অব এজাক্সের ওয়েবসাইটে মেয়র শন কোলিয়ার এবং লাইব্রেরি বোর্ডের চেয়ারম্যান পিয়ালি কোরেয়া’র পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে ঘটনাটি “ইসলামফোবিয়া দ্বারা অনুপ্রাণিত বলে মনে হচ্ছে।”

স্থানীয় পুলিশ ঘটনাটিকে “বিনা উসকানিতে আক্রমণ” হিসেবে বর্ণনা করছে।
ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ কানাডিয়ান মুসলিমস-এর প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ব্রাউন বলেন, “এটা খুবই ক্ষোভের বিষয় যে এই ধরনের সহিংসতা আমাদের নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইসলামোফোবিয়ার ঘটনাগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমরা মনে করি আমাদের নির্বাচিত নেতাদের এগিয়ে আসার এবং সহযোগিতামূলকভাবে এই সমস্যাটি মোকাবেলা করার সময় এসেছে।”
উল্লেখ্য যে, গত বছর জুনে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান বলছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর টরন্টোতে ঘৃণামূলক অপরাধের ঘটনা বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। সিবিসি নিউজের এক খবরে এ কথা বলা হয়।
কিন্তু বাস্তবতা সম্ভবত ভিন্ন। কারণ এই পরিসংখ্যানে সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ না পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। টরন্টোর পুলিশ প্রধান Myron Demkwi নিজেই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন ইসলামোফোবিক বা মুসলিম বিদ্বেষী ঘটনাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে কম রিপোর্ট করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কানাডায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অ্যাক্টিভিস্ট ও সরকারি কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন।
আমরা লক্ষ্য করছি মুসলমানদের উপর ছোটখাট বিদ্বেষী হামলার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে কানাডায়। মসজিদে হামলা, হিজাব পরা মহিলাদের উপর হামলা ঘটেই চলেছে এবং দিনে দিনে এর মাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এগুলো ঘটাচ্ছে কানাডার উগ্র শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা।
এই সহিংসতা সবচেয়ে বড় বেদনাদায়ক দৃষ্টান্ত হিসাবে সামনে আসে ২০১৭ সালে যখন কুইবেকের একটি মসজিদে ছয় মুসলিমকে হত্যা করা হয়। সেদিন ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব কুইবেকে মাগরিবের নামাজ আদায়কালে আলেকজান্ডার বিসোনেট নামের এক যুবক অতর্কিতে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হামলা চালায়। বন্দুক হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৬ জন মুসল্লি। হামলার ঘটনায় আহত হন আরো ১৯ জন। পুলিশ পরে বিসোনেটকে গ্রেফতার করে।
পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৬ জুন লন্ডন অন্টারিওতেও ঘটে আরেক বেদনাদায়ক ঘটনা। এক সন্ত্রাসীর হামলায় প্রাণ হারান এক মুসলিম পরিবারের তিন প্রজন্মের চার সদস্য। রাস্তা পারাপারের সময় অতর্কিতে তাঁদের উপর একটি পিকআপ ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা ঘটানো হয়। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ন্যাথানিয়েল ভেল্টম্যান নামের ২০ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ যুবককে আটক করে স্থানীয় পুলিশ।
উল্লেখ্য যে প্রতিবারই মুসলিমদের উপর কোন হামলার ঘটনা ঘটলে কানাডার রাজনীতিকরা বিবৃতি দেন মিডিয়ায়। তারা এই ধরনের হামলার তীব্র নিন্দা জানান। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো কানাডায় ইসলামোফোবিয়া পরিস্থিরিত কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এটি নিশ্চিতভাবেই উদ্বেগজনক। আমরা মনে করি এর জন্য প্রশাসনকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে এই পরিস্থিতির কোন উন্নতি ঘটবে না।