ডলি বেগমের হ্যাট্রিক জয় : রইল আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন

অন্টারিও’র পার্লামেন্ট নির্বাচনে তৃতীয়বারের মত বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ডলি বেগম আবারও ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ডলি বেগম ভোট পেয়েছেন সাড়ে চৌদ্দ হাজারেরও বেশী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টি অব অন্টারিও’র প্রার্থী দারামোলা অ্যাডি ভোট পেয়েছেন প্রায় সাড়ে দশ হাজার।

ডলি বেগম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন অন্টারিও নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে। তার এই ঐতিহাসিক বিজয়ে আনন্দে ভাসছেন কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্ত অভিনন্দন জানাচ্ছেন দলমত নির্বিশেষে সবাই।

অন্টারিও’র পার্লামেন্ট নির্বাচনে তৃতীয়বারের মত জয়ী ডলি বেগম। ছবি: প্রবাসী কণ্ঠ

পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবারের নির্বাচন ডলি বেগমের জন্য ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারণ ড্যাগ ফোর্ডের নেতৃত্বাধীন প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টি অব অন্টারিও’র জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। এই সুযোগে ড্যাগ ফোর্ড হঠাৎ করেই নির্ধারিত সময়ের ১৪ মাস আগাম নির্বাচন ডেকে বসেন। যদিও পার্লামেন্টে তার ছিল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র এক মাস। কিন্তু তারপরও ডলি বেগম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েন। তার অতীত কর্মতৎপরতা ও স্কারবরো সাউথওয়েস্ট রাইডিং এর জনগণের প্রতি তার ভালবাসা তাকে আবারও নির্বাচনী যুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করে।

বস্তুত কানাডায় আমাদের প্রথম প্রজন্মের অধরা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন আমাদেরই দ্বিতীয় প্রজন্মের মেয়ে ডলি বেগম। তিনি ২০১৮ সালে অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনে এমপিপি পদে জয়ী হয়েছিলেন প্রথম। এর আগে আর কোনো বাংলাদেশী-কানাডিয়ান এরকম কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি। সেদিন তিনি সৃষ্টি করেছিলেন কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য অনন্য এক ইতিহাস।

আমরা জানি ইতিপূর্বে ব্রিটেনে এরকম ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন রুশনারা আলী। তিনি ২০১০ সালে পূর্ব লন্ডনের ‘বেথনাল গ্রিন এ্যান্ড বো’ আসনে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসাবে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের মেয়াদেও তিনি একই পদে পুনর্র্নিবাচিত হন। ঐ বার তার সাথে নির্বাচিত হন আরো দুই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও রূপা হক। এরা তিনজনই লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আমরা জানি ব্রিটেনে বাঙ্গালীদের অবস্থান আজ প্রায় দেড় শত বছর ধরে। উইকিপিডিয়ার এক তথ্যে দেখা যায় ১৮৭৩ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সিলেট অঞ্চলের বাঙ্গালীরা রাঁধুনি হিসাবে ব্রিটেনে আসতে শুরু করেন। সেই হিসাবে বলা যায়, ব্রিটেনের পার্লামেন্টে একটি আসন দখল করার জন্য বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ইমিগ্রেন্টদেরকে চার/পাঁচ প্রজন্ম ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। ব্রিটেনের তুলনায় কানাডায় আমাদের ডলি বেগম অনেক অল্প সময়ে সেই ইতিহাস সৃষ্টি করলেন।

ডলি বেগম স্কুল এবং ইউনিভার্সিটিতে অত্যন্ত ভাল রেজাল্ট করে নিজের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন আগেই।  ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো বিশ্বসেরা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি। সেখান থেকে পলিটিক্যাল সাইন্সে ডিগ্রি নিয়ে Development Administration and Planning এর উপর মাস্টার্স শেষ করেন ব্রিটেন থেকে।

ডলি বেগম পলিটিক্যাল সাইন্সে ডিগ্রি অর্জন করলেও বাস্তব জীবনে কখনোই দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না আগে। ইতিপূর্বে প্রবাসী কণ্ঠের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন তার মূল উদ্দেশ্য ছিল কীভাবে মানুষকে হেলপ করতে পরবেন, কি ভাবে কমিউনিটিকে হেলপ করতে পারবেন। তিনি তার বিশ্বাস বা দর্শনের সাথে মিল খুঁজে পেয়েছিলেন এনডিপি’র নীতি  ও আদর্শের। সেই থেকেই এক পর্যায়ে এনডিপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান।  তারপর ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আজ তিনি এক সফল রাজনীতিবিদ। একজন জনপ্রিয় এমপিপি।

আমরা ডলি বেগমকে জানাই আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন ও সাধুবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *