কানাডায় পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে
কি অবস্থা কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীদের?
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডায় বৃদ্ধ দম্পতিতের মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবনের শেষ দিকে এসে তারা এখন বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বেশী খোলামেলা। গত বছর মার্চ মাসে স্ট্যাটিকস কানাডার বরাত দিয়ে গ্লোবাল নিউজ এই তথ্য প্রকাশ করে। গবেষণা বলছে, এ ধরণের বিয়ে বিচ্ছেদ পুরুষের চেয়ে নারীর ওপর বেশি প্রভাব রাখে।
বস্তুত, ৫০ বছর বয়সের পরে বিবাহবিচ্ছেদ-যাকে সাধারণত গ্রে ডিভোর্স বলা হয়- বিশ্বব্যাপীই বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্ট্যাটিসটিকস কানাডার মতে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে এই বয়স গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে : ১৯৮০ সালে বিবাহবিচ্ছেদের গড় বয়স ছিল ৩৬ বছর। এটি এক দশকে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের গড় বয়স পৌঁছেছে ৪৬ বয়সে।
অন্যদিকে যাদের বয়স ৬৫ এর বেশী তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। হিসাবে দেখা যায় কানাডায় ২০১০ সালে ৩৫২,০০০টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। এই সংখ্যা ২০২০ এসে দাঁড়িয়েছে ৬৩০,০০০টিতে।
গ্লোবাল নিউজ জানায়, কানাডায় বছরের পর বছর ধরে বিয়ে বিচ্ছেদের গড় বয়স ক্রমাগত বাড়ছে। এর কারণ অংশত লোকেদের একটু বেশি বয়সে বিয়ে করা। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার সর্ব সাম্প্রতিক উপাত্ত অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিয়ে বিচ্ছেদের গড় বয়স ছিল ৪৮ বছর।
স্ট্যাটক্যান-এর তথ্যমতে, গত তিন দশক ধরে কানাডায় গ্রে ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়েছে, যখন ৫০ বছর বা তারও বেশি বয়সের দম্পতিরা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। যদিও এই বয়স গ্রুপের লোকেদের বিয়ে বিচ্ছেদের হার সম্প্রতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে এবং কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম বছর ২০২০ সালে কমেছে। বিয়ে বিচ্ছেদ কখনও খুব সহজ নয়, তবে, বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৫০ বছরের বেশি বয়সী কাউকে ছেড়ে দেয়ার কিছু অভিনব চ্যালেঞ্জ আছে।

অন্টারিও’র ভনভিত্তিক পারিবারিক আইনজ্ঞ এবং ক্যাসপারস শেগিনি এলএলপির ম্যানেজিং পার্টনার কেভিন ক্যাসপারস বলেন, বিয়ে বিচ্ছেদ ঘিরে কলঙ্কের মত কিছু বিষয় জড়িয়ে থাকলেও অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ব্যক্তিরা বিবাহিত জীবনে সুখি না হলে তা থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী হন।
ক্যাসপারস গ্লোবাল নিউজকে বলেন, গত ১০ বছরে তিনি গ্রে ডিভোর্স বাড়তে দেখেছেন, বিশেষ করে ৬৫ বছর বা তারও বেশি বয়সের লোকেদের ক্ষেত্রে।
তিনি বলেন, “কয়েক বছরের মধ্যে এই বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই বেশি প্রচলিত হয়েছে। তারা (জ্যেষ্ঠ দম্পতিরা) দাম্পত্য জীবনের দিকে তাকান, যদি তারা দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে সুখি না হন, বাচ্চারা বাড়ি ছেড়ে গিয়ে থাকে এবং যেহেতু জীবন উপভোগের জন্য তাদের এখনও অনেক সময় আছে। বাড়িটা এক শুন্য নীড় হয়ে পড়লে তারা আর বিবাহিত জীবন টেনে নেয়ার কোনও কারণ খুঁজে পান না।”
সাম্প্রতিক সময়ে বিশে^ আলোচিত কয়েকটি গ্রে ডিভোর্সের তথ্য :
জাস্টিন ট্রুডো-সোফি: সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে সাড়া জাগানো বিয়ে বিচ্ছেদের মধ্যে একটি ছিল কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং মার্গারেট সোফির বিচ্ছেদ। ১৮ বছরের দাম্পত্য সম্পর্কের ইতি টানেন তারা ২০২৩ সালের আগস্টে। তবে তাদের বিচ্ছেদ কেন হয়েছে, তার মূল কারণ কেউ জানেন না। তারাও সেটা খোলসা করে বলেননি। ফলে কিছু গুজব ডালপালা মেলেছিল। এর মধ্যে একটি ছিল কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রী মেলানি জোলি’র সঙ্গে ট্রুডোর পরকীয়ার সম্পর্ক।
বিল গেটস-মেলিন্ডা: মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা, ধনকুবের বিল গেটস তার স্ত্রী মেলিন্ডা’র সাথে ২৭ বছর একসঙ্গে কাটিয়ে দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন যা বেশিরভাগ মানুষকে অবাক করে দিয়েছিল।
বেজোস-স্কট: টেক-জায়ান্ট আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ম্যাকেঞ্জি স্কট এর সাথে ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনে বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিলেন। বেজোস ম্যাকেঞ্জি স্কটকে ৩৬ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন ডিভোর্সের পর। এটি ছিল বিশে^র সবচেয়ে ব্যয়বহুল ডিভোর্স। আর এই অর্থ পাওয়ার পর বিশ্বের অন্যতম ধনী নারীর তালিকায় স্থান পান ম্যাকেঞ্জি।
গ্রে ডিভোর্স কেন ঘটছে
গোটা বিশে^ মানুষের আর্থ-সামাজিক ও চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। আর তার প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই পড়েছে মানুষের দাম্পত্য সম্পর্কেও। গড় আয়ু বেড়ে যাওয়া, বৈবাহিক সম্পর্কে থেকে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান, বয়স্কদেরও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার হার বৃদ্ধি এগুলো কোন না কোনভাবে অবদান রাখছে গ্রে ডিভোর্সের ক্ষেত্রে। লম্বা দাম্পত্যের পর বিচ্ছেদ সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর জন্য এক ধরনের মানসিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে, পরিবারগুলোর গতিপথ পরিবর্তন করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যকেও যথেষ্ট আঘাত করে।
ওয়েস্টার্ন অন্টারিও ইউনিভার্সিটির সোশিওলজি বিভাগের প্রফেসার মারগোলিস বলেন, “গ্রে ডিভোর্সের” পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে।
এর একটি কারণ হলো বেবি বুমারস, (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে জন্ম গ্রহণকারী) যাদের বয়স ৬০ বছর থেকে ৭৮ বছর এবং যারা জীবনে নানা ধরণের সামাজিক পরিবর্তনের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন।
মারগোলিস বলেন, “কানাডার বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে বহু সংখ্যকই তরুণ বয়সে বিয়ে করেছেন, (হয়ত) বয়স ২০-এর ঘরে থাকতেই তালাক পেয়েছেন, আর আমরা জানি একবার তালাক পাওয়া ব্যক্তিদের আবারও তালাকের পথে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”
তিনি আরও যোগ করেন, বেবি বুমারদের রয়েছে অন্য সব প্রজন্মের মানুষের চেয়ে বেশি সম্পদ, তাই তারা আলাদা থাকার ব্যয় নির্বাহ করতে সক্ষম।
এ ছাড়া, মারগোলিস বলেন, আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে এই মুহূর্তে অবিবাহিত বয়স্ক মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, এর অর্থ হলো, তালাক পাবার পর নতুন সঙ্গী নেবার মত অনেক বেশি মানুষ আছে।
তার ভাষায়, “বেবি বুমাররা জানেন, তালাকের সাথে যে কলঙ্ক জড়িত ছিল, সময়ের সাথে সাথে তা সত্যিই মুছে গেছে। সুতরাং, আগে দম্পতিরা এক সঙ্গে থাকারই সিদ্ধান্ত নিতেন কিন্তু এখন সেসব দূর হয়ে যাওয়ায় তালাক চাওয়া অনেক সহজ হয়েছে।”
আবার এটিও দেখা যায় যে, অনেক দম্পতি কেবল সন্তানের জন্যই একসঙ্গে থাকেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই সন্তানরা এক সময় বড় হয়, বাড়ি ছেড়ে চলে যায় নিজের জীবন গড়তে। ততদিনে সেই দম্পতি বয়স্কদের কাতারে চলে যান। তখন বাড়িতে তারা এমন এক পরিস্থিতির মুখে পড়েন যাকে বলা হয় ‘এম্পটি নেস্ট সিনড্রোম’। তারা বুঝতে পারেন যে, তাদের মধ্যে কোনো মিল আর অবশিষ্ট নেই। ফুরিয়ে যায় আকর্ষণ ও প্রয়োজন। একসঙ্গে থাকার আর কোনো কারণ তারা তখন খুঁজে পান না।
আবার কোন দম্পতির যেকোনো একজনের কোনো দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা বা রোগ থাকলে তাও বিচ্ছেদে ভূমিকা রাখে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরে যোগ হতেই পারে কোন ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী রোগ। যেটা শারীরিক অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। সেই পরিস্থিতিও ডিভোর্সের ক্ষেত্র তৈরী করতে পারে এবং এক পর্যায়ে তা ডিভোর্সের দিকেই মোড় নেয়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে
কানাডার মত যুক্তরাষ্ট্রেও পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে ডিভোর্সের হার বাড়ছে। সেখানকার বৌলিং গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক সুসান ব্রাউন এবং আই-ফেন লিনের এক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে। তাদের গবেষণায় বলা হয়, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের প্রায় দেড় কোটি মানুষ একা জীবনযাপন করছিল। এই সংখ্যা ১৯৬০ এর দশকের তুলনায় তিনগুণ বেশি। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। ওতে আরো বলা হয়, ভবিষ্যতে এই একাকী থাকার প্রবণতা নিশ্চিতভাবে আরও বাড়বে।
এই পরিস্থিতির জন্য গবেষকরা নিপীড়ন ও আসক্তিকে দায়ী করেছেন বিশেষভাবে। শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন এবং মাদক বা জুয়ার প্রতি আসক্তি যে কোন দাম্পত্য জীবনেই গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রভাব ফেলতে পারে বয়স্ক দম্পতিদের বেলায়ও। তাছাড়া পরষ্পরের প্রতি যখন আকর্ষণ কমে যায়, ফুরিয়ে যায় দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো, দেখা দেখ একঘেয়েমী তখন সম্পর্কে ফাটল ধরতে বেশী সময় লাগে না। এই সময়ে পরষ্পরের প্রতি অবজ্ঞা, অশোভন আচরণ, অপমানজনক মন্তব্যও সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে দ্রুত যা এক সময় টার্ন নেয় ডিভোর্সের দিকে।
আর্থিক সংশ্লিষ্টতা
গ্লোবাল নিউজ এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশি বয়সে উদ্বিগ্ন হবার মত অভিভাবকের দায়িত্ব কমে যায়, কারণ সন্তানরা বড় হয়ে যায় এবং তাদের আলাদা থাকার সম্ভাবনাই বেশি, তার পরও বেশি বয়সে বিয়ে বিচ্ছেদ হলে তা উভয়ের জন্যই আর্থিক দিক থেকে বোঝা হতে পারে।
পারিবারিক আইনজ্ঞ কেভিন ক্যাসপারজ গ্লোবাল নিউজকে বলেন, “কোনও ধরণের আর্থিক অস্থিতির মুখে যদি তাদেরকে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয় অথবা এভাবে বলতে পারি, কোনও ধরণের সহায়তার দায়িত্বের কারণে, তাহলে সেটি সত্যিই উদ্বেগজনক।”
তথ্য উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, গ্রে ডিভোর্সের আর্থিক প্রভাব পুরুষের চেয়ে নারীর ওপর অনেক বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।
গত বছর প্রকাশিত স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫৪ থেকে ৫৬ বছর বয়সী তালাকপ্রাপ্ত নারীর আয়ের হ্রাসপ্রাপ্তি নিঃসঙ্গ, বিবাহিত অথবা বিধবা নারীদের চেয়ে বেশি। এই সমীক্ষায় ১৯৮২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রদত্ত ট্যাক্সের পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়।
স্ট্যাটক্যান-এর সমীক্ষায় বলা হয়, “পুরুষের ওপরও তালাকের নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে, তবে তাদের আয় ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সী নারীদের তুলনায় বেশি হবার সম্ভাবনাও বেশি।
মারগোলিস বলেন, বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটনোর ব্যাপারে নারীদেরই উদ্যোগী হবার সম্ভাবনা বেশি, তবুও বিচ্ছেদের পর সাধারণত পুরুষের সম্পদ ও আয় গড় হিসাবে নারীর চেয়ে বেশি থাকে।
বর্তমান আবাসন বাজারে বাড়ির দর আকাশচুম্বী এবং উচ্চ সুদের হারের কারণে বিচ্ছেদের পর নতুন একটি আবাসন খুঁজে পাওয়াও তাদের জন্য বড় রকমের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তিনি বলেন, “কানাডায় বাড়ির দাম খুব বেশি বেড়ে যাওয়ায় এখন যারা তালাক নিচ্ছেন তাদের জন্য যথেষ্ট পরিসরের বাড়ি খুঁজে পাওয়া অতীতে তালাক নেয়া ব্যক্তিদের চেয়ে কঠিনতর।”
“সে কারণেই আমরা অনেক সময় দেখি যে, লোকেরা, বিশেষত নারীরা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে হয়ত কোনও বন্ধুর সঙ্গে অথবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাস করছেন।”
ক্যাসপারজ বলেন, বিয়ের আগের কোনও চুক্তি অথবা বিয়ের চুক্তিনামা সংশ্লিষ্ট দম্পতির দীর্ঘদিন ধরে অর্জিত সম্পদ ভাগ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
‘গ্রে ডিভোর্সের’ মানসিক যন্ত্রণা
কিছু গবেষক বলেন, দীর্ঘদিনের বিয়ে বিচ্ছেদের আবেগগত যন্ত্রণাও নারীর ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কঠিন হতে পারে।
জার্নাল অব এপিডেমিওলোজি অ্যান্ড কমিউনিটি হেলথ-এ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় ফিনল্যান্ডের পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সী পুরুষ ও নারী উভয়েরই বিয়ে বিচ্ছেদের আগে আগে বিষন্নতা নিবারণের ওষুধ সেবনের হার দ্রুত বেড়ে যায়, তবে সেটি নারীদের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি বাড়ে। সমীক্ষায় বলা হয়, নতুন সঙ্গী জোটার পরের সময়ে বিষন্নতা নিবারণের ওষুধ সেবন কমলেও তার পরিমাণ কম এবং এটি স্বল্পকাল স্থায়ী হয়। তবে এই প্রবণতা নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
সমীক্ষার লেখকরা এমন উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, নতুন সঙ্গী বেছে নেয়ার পর পুরুষের চেয়ে নারীদের ক্ষেত্রে বিষণ্নতা নিবারকের ব্যবহার সামান্য হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি এমন ব্যাখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে যে, বিয়ে জিনিসটা নারীর চেয়ে পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক বড় উপকার বয়ে আনে, আর অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সের পুরুষদের নতুন সঙ্গী খুঁজে নেয়ার সম্ভাবনা নারীদের চেয়ে বেশি।
কিন্তু কানাডায় বাংলাদেশী বয়স্ক অভিবাসীদের মধ্যে ডিভোর্সের হার কত? সেটা বলা কঠিন। কারণ এটি নিয়ে আলাদা কোন গবেষণা হয়নি। এখানে যারা, বিশেষ করে বাংলাদেশী ব্যারিস্টার আছেন এবং এদের মধ্যে যারা ফ্যামিলি ল নিয়ে প্র্যাকটিস করেন তাদের কাছে হয়তো কিছুটা আভাস পাওয়া যেতে পারে। এই উদ্দেশ্যে আমরা কথা বলেছিলাম ব্যারিস্টার জয়ন্ত কুমার সিনহার সাথে। টরন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটিতে তিনি একজন পরিচিত মুখ। প্রায় দশ বছর ধরে এই কমিউনিটিতে ল প্র্যাকটিস করছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশী-কানাডিয়ানদের জন্য সুখবর হলো, এই কমিউনিটিতে গ্রে ডিভোর্সের সংখ্যা বা হার একেবারেই কম। বলা যায় বটম লাইনে। তিনি বলেন, আমার কাছে যে ক্লায়েন্টরা আসেন তাদের সংখ্যার উপর ভিত্তিতে করে আমি এ কথা বলছি।
কি কারণ দেখিয়ে ডিভোর্স বা সেপারেশনের আবেদন করেন বয়স্করা এ প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার জয়ন্ত বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যখন কোনভাবেই আর সমঝোতা হচ্ছে না তখন তারা আসেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরকীয়া একটি বড় কারণ হিসাবে কাজ করে। এরকম একটা বয়সে এসে আমার মনে হয় কিছুটা বিপথগামী হওয়ার সুযোগ থাকে। যেটাকে মিডল এইজ ক্রাইসিস বলা হয়ে থাকে। এছাড়া আর কোন কারণ এই বয়সী দম্পতিদের মধ্যে আর দেখা যায় না ডিভোর্সের ক্ষেত্রে।
বয়স্ক বাংলাদেশীদের মধ্যে যে কজনই আসেন ডিভোর্সের জন্য তারা কি যৌথভাবে আসেন? অর্থাৎ সমঝোতার মধ্য দিয়ে সেপারেশন এবং পরবর্তীতে ডিভোর্সের পথে হাটেন? এ প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার জয়ন্ত বলেন, আমাদের কমিউনিটিতে এ কালচারটা এখনো গড়ে উঠেনি যে সমঝোতার মাধ্যমে বয়স্ক দম্পতিরা আলাদা হয়ে যাবে। এটি খুব বিরল ঘটনা তাদের বেলায়। তবে ইয়ং জেনারেশনে এটি দেখা যায়।
তিনি আরো বলেন, কেউ ডিভোর্সের জন্য আসলে আমি সাধারণত চেষ্ঠা করি কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে উভয় পক্ষকে সমঝোতায় আনতে। কিন্তু এতে দেখা যায় কেউ কেউ উল্টো ভুল বুঝেন আমাকে। তারা হয়তো ভাবেন যে এই ল’ইয়ার সম্ভবত খুব একটা কফিডেন্ট না। অথবা ভাবেন যে আমার পছন্দের মত উত্তরটা হয়নি।
তবে আমি আমার এক দশকের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমরা ফরচুনেট যে, এখানে বয়স্ক বাংলাদেশী দম্পতিদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বা সংখ্যাটা হয়তোবা কম। অথবা তারা আসে না বলে আমরা বুঝতে পারছি কম। যে ভাবেই হোক তারা চেষ্টা করেন এই বয়সে বিবাহ বিচ্ছেদের পথে না গিয়ে পুনরায় মিলিত হওয়ার।