উইন্টার সেলিব্রেশন ২০২৫
ডা.পুলক : কানাডায় প্রচন্ড শীত জেঁকে বসেছে। তাপমাত্রা মাইনাসে চলছে বেশ অনেকদিন ধরে। অনেকের কাছেই শীত মোটামুটি সয়ে গেছে, নতুনদের কাছে হয়তো বেশীই। তবু শীতের এই সময়টাতে সুদূর প্রবাসে বসে দেশকে খুব মনে পড়ে সবার। মনে পড়ে শীতে পিঠা খাওয়ার দিনগুলো। আর তারই ধারাবাহিকতায় আমরা এক হয়েছিলাম SSC98_HSC2000_Canada_Chapter এর ব্যানারে । উদ্দেশ্য ছিল সবাই একে অপরকে জানব, আনন্দ করব, পিঠা খাব আর রাতের খাবার খাবো।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন বিধায় ২৫ই জানুয়ারী শনিবার দিনটাকে আমাদের বেছে নিতে হলো “Winter Celebration 2025” এর জন্য। সময় বেঁধে দেওয়া ছিল বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। প্রায় একমাস ধরে রেজিস্ট্রেশন খোলা ছিলো, শিশুসহ প্রায় আশিজন নাম লিখিয়েছিলো অনুষ্ঠানে আসবার জন্য ।
অনুষ্ঠানটি ছিল টরন্টোর সুপরিচিত বাংলাপাড়ার একটি কন্ডোর পার্টি রুমে । সব বন্ধুদের বলা ছিলো সবাই যেন সময় মতো চলে আসে, কারণ একটা অন্য রকম আনন্দ আছে। আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেল ৫টায়। প্রথমে পরিচিত পর্বে সবাই সবার সাথে পরিচিত হয় । শিশুদের নিয়ে প্রায় এক ঘন্টার অনুষ্ঠান হয় যেখানে ছিলো আরানার গান, আরানা-জারাহ-সাজমীনের নাচ, রিমঝিমের গান আর অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ফারিশা-জুনাইরাহ-রায়ার “Apt” গানে নাচ।
শীতে যেহেতু বাইরে কিছু করবার উপায় নাই তাই বন্ধুবান্ধব ইনডোরে একসাথে হবো, সাথে হবে নাচ গান আর থাকবে খাওয়া দাওয়া । ছোটবেলায় কনকনে শীতের সকালে নানী বাড়ি বা দাদাবাড়ি বা রাস্তার ধারের নতুন চাউলের ভাপা পিঠার গন্ধের কথা সবারই মনে থাকার কথা। কিংবা সরিষাবাটা দিয়ে চিতই পিঠা খেয়েছে সবাই। তাই সবাইকে সন্ধ্যায় পরিবেশন করা হয় ভাপা পিঠা , দু ’পদের ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা আর শিশুদের জন্য মজার পিজা ।
ঘণ্টাখানেক চলল আমাদের পিঠা খাওয়া আর পিঠার ফটোসেশন। খাওয়ার সাথে সাথে সবাই উপভোগ করতে থাকলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । এই অনুষ্ঠানের জন্য চারদিন রিহার্সাল হয় আফজালের সাউন্ড সিষ্টেম দিয়ে আর স্টেজ সাজাতে পোষ্টার প্রিন্ট করে জাহান আর ডেকোরেশনে সাহায্য করে ফারজানা-মামুন ভাই, তানজীর-ডরোথী, মুন,স্নিগ্ধা , রুমা-পুলক আর সিজার।

পিঠা খাওয়ার পর শুরু হলো বড়দের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলো আমাদের প্রিয় মুখ মিষ্টি মেয়ে সুরুচি । তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠান এতই উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল যে দুই ঘণ্টা কীভাবে চলে গেল তা আমরা বুঝতেই পারলাম না। এই উৎসবের মূল লক্ষ্যই ছিল ফেলে আসা ২০২8 এর পর নতুন করে বরণ করা ২০২৫ কে। মনে হচ্ছিল টরন্টো হয়ে উঠেছিলো যেন একখন্ড ৯৮ । পুরো অনুষ্ঠানে ছবি তুলেছে আরিফা আর ভিডিও করেছে ফয়েজ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় দলীয় সঙ্গীত “আগে কি সুন্দরদিন কাটাইতাম” দিয়ে। দুলাভাই বখতিয়ার ভাইয়ের সাথে কন্ঠ মেলাই আমি, আদনান রানা আর ফয়েজ। এরপর ছিল নাচ, গান, ফ্যাশন শো ও দ্বৈত সংগীত। বর্ণালীর মিষ্টি কন্ঠে পরিবেশন করলো ভালোবাসার গান” ভালবেসে সখী” । এরপর “কানাডার ৯৮ ব্যাচের আইয়ুব বাচ্চু” আদনান রানা গাইলো ” সুখেরই পৃথিবী”। তারপর ডুয়েট গেলো তন্দ্রার সাথে “এখন তো সময় ভালোবাসার” । তারপর , ৯৮ এর কানাডার গর্ব তন্দ্রা দর্শকদের আনন্দ দিলো ” আমার মাঝে নেই আমি” গানে । বখতিয়ার ভাই আর আদনান রানা গাইলো ” চলোনা ঘুরে আসি” আর বখতিয়ার ভাই সবাইকে আনন্দ দিলো “নীলান্জনা” গানে ! লিসা আর পিপলি দুটো মনোমুগ্ধকর নাচে সকলকে বিমোহিত করলো ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ “ফ্যাশন শো” হয় তারপর । অভি-সিজার জুটি নাচে নাচে মুগ্ধ করে পান্জাবীওয়ালা গানে, ফারজানা আর রিনি নাচে” আকাশে বাতাসে”, আদনান রানা আর সুরুচি নাচ করে ” বাবুরাম সাপুড়ে” গানে, পুলক ও রুমা করলো ” চুমকি চলেছে একা” গানে ,রিনি আর তন্দ্রা নাচে “দেশী গার্ল” , জাহান ও ফারহানা নাচে”রঙ্গে রঙ্গে” গানে, মার্জিয়া, স্নিগ্ধা আর মুন ওয়াক করলো “চাকা চাক” গানে আর শেষে ৯৮ ব্যাচের পাওয়ারহাউজ রিনি নাচে “ভাল্লাগে” গানে ,সঙ্গ দেয় পুলক। সবাই প্রাণভরে উপভোগ করলো সবার চমৎকার পরিবেশনা।
এরপর বাঙালি বলে কথা। পার্টি হবে আর ভাত না খেলে হয়। তাই ডিনার শুরু হলো রাত প্রায় নয়টা। মেনু ছিল মুরগি ও গরুর মাংস,টুনা কাবাব, বুটের ডাল আর সঙ্গে ছিল গোলাপজামুন। খেতে খেতে প্রায় রাত ১০টা। তারপর তন্দ্রা গাইলো “দুষ্টু কোকিল” আর বখতিয়ার ভাই আর তন্দ্রা গাইলো “আমার গরুর গাড়িতে” । দুটো গানেই সবাই মিলে খুব নাচলো । রাত সাড়ে দশটা , এবার বিদায় নেবার পালা।
কবির ভাষায়, ‘যেতে নাহি দেব হায়, তবু যেতে দিতে হয়’। পরিশেষে, পুলক সব সদস্যকে অনুষ্ঠানে আসার জন্য ধন্যবাদ জানায়। এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় সদ্য পিতা হারানো তন্ময় সহ সকল স্বজনদের জন্য । মার্জিয়া সকলকে ধন্যবাদ জানায় কারণ সবার সম্মিলিত উপস্থিতি আমাদের অনুষ্ঠানটিকে নিয়ে গেছে একটি ভিন্নমাত্রায়। তাই আলাদা আলাদা করে সকলকে ধন্যবাদ দিয়ে পরবর্তীতে আবার দেখা হবার আশ্বাস পেয়ে অনুষ্ঠান শেষ করা হয় ।