পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও ১৪ মাস আগেই ফোর্ড কেন আগাম নির্বাচনের ডাক দিলেন?
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫ : অন্টারিও প্রভিন্সে হঠাৎই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ড। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আসছে ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে। হাতে সময় আর মাত্র এক মাস।
এই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ৪ জুন। তাহলে প্রায় ১৪ মাস আগে কেন হঠাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন দেখা দিল? এই প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।

উল্লেখ্য যে, ড্যাগ ফোর্ডের সরকার এমনিতেই অন্টারিও শাসন করছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টে কোনো আইন পাশ করাতে হলে অন্য কোনো দলের সমর্থন দরকার নেই তাদের। এই প্রভিন্সে কোনো রাজনৈতিক অঘটনও ঘটেনি সাম্প্রতিক কালে বা ড্যাগ ফোর্ডের দলের ভিতরও কেউ তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেননি। কিন্তু তারপরও ১৮৯ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ড্যাগ ফোর্ড অন্টারিওতে আগাম নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। কারণ তার ক্যালকুলেশন হলো, এই মুহূর্তে তার নিজের ও তার নেতৃত্বাধীন প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টি অব অন্টারিও’র জনপ্রিয়তা অন্য দলগুলো থেকে অনেক বেশী। তবে তিনি মুখে বলে বেড়াচ্ছেন যে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ মোকাবেলায় তার আরো বেশি শক্তিশালী সাপোর্ট দরকার।
উল্লেখ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা থেকে পণ্য আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার হুমকি দেন। কানাডার প্রায় ৭৫ শতাংশ পণ্য ও পরিষেবা রফতানি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এর প্রতিবাদে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন ড্যাগ ফোর্ড। পাশাপাশি ‘কানাডা ইজ নট ফর সেল’ স্লোগানের প্রচারণা চালিয়েও অন্টারিওবাসীর মন জয় করেন তিনি। এই স্লোগান তিনি শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরেক হটকারী আহ্বানের প্রতিবাদে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই কানাডাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসাবে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন ট্রাম্প।
এর পাশাপাশি বর্তমানে কানাডার জাতীয় পর্যায়েও সমমনা রক্ষণশীল বা কনজার্ভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা রয়েছে তুঙ্গে। এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ফেডারেল কনজার্ভেটিভ পার্টি নিংস্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এমনই জরিপ তথ্য রয়েছে মিডিয়াতে। আর এসব মিলিয়েই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত- ড্যাগ ফোর্ডের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে।
ড্যাগ ফোর্ড এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চান না। আগামী ১৪ মাসে অন্টারিও’র রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তাই এখনই একটি নির্বাচন করে নিতে পারলে আগামী আরও চার বছরের জন্য ক্ষমতার মসনদ পাকাপোক্ত করে রাখা যাবে। এই ভাবনা থেকেই ড্যাগ ফোর্ড নড়েচড়ে বসেছেন। নির্বাচনের ব্যবস্থাও ইতিমধ্যে করে ফেলেছেন।
অন্টারিও’র অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এরকম একটা পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাই মাত্র এক মাস সময়ের মধ্যে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে ড্যাগ ফোর্ডের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবে সেরকম সম্ভাবনা খুবই কম। তাছাড়া তারা ড্যাগ ফোর্ডের বর্তমান জনপ্রিয়তার তুলনায় অনেকদূর পিছিয়ে আছে।
গ্লোবাল নিউজ এর জন্য করা Ipsos এর এক জরিপ বলছে এই মুহূর্তে অন্টারিওতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ড্যাগ ফোর্ডের দলকে ভোট দিবেন ৫০% ভোটার। অন্যদিকে অন্টারিও লিবারেল পাটিকে ভোট দিবেন ২৪ % ভোটার। এনডিপি-কে ভোট দিবেন ২০% এবং গ্রীন পার্টিকে ভোট দিবেন ৬% ভোটার।
জরিপে দেখা যাচ্ছে প্রধান দুই বিরোধী দল সম্মিলিতভাবে যে ভোট পাবে তারচেয়েও বেশী ভোট পাবে ড্যাগ ফোর্ডের দল। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টি অব অন্টারিও টানা তিনবারের মত সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করবে।
‘শতাব্দীর শুরু থেকে অন্টারিওতে যে কোন দলের এটাই সবচেয়ে বড় লিড।’ গ্লোবাল নিউজকে এ কথা বলেন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড্যারেল ব্রিকার। তিনি আরো বলেন, ‘গতবার ড্যাগ ফোর্ড ১৪ পয়েন্টে জিতেছিলেন। এবার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে তিনি ২৬ পয়েন্টে জিতবেন। তাহলে কি তিনি এই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা সঠিক সময়ে দিয়েছেন? আমার মনে হচ্ছে তাই।’
জরিপে আরো দেখা যাচ্ছে ড্যাগ ফোর্ডের ব্যক্তিগত অনুমোদনের রেটিংও বেড়েছে। অন্টারিওর ৫৭ শতাংশ মানুষ তার সরকারের কর্মক্ষমতাকে সমর্থন করেন, যা ২০২২ সালের নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে ছিল ৫১ শতাংশের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে ডেমোগ্রাফিক বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে ৫২ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৮ শতাংশ নারী ফোর্ডের দলকে তাদের পছন্দ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ৪৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন তারা ফোর্ডের দলকে ভোট দিবেন। আবার ৪৮ শতাংশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শহুরে ভোটার বলেছেন তারা ফোর্ডকে ভোট দিবেন। গ্রামীণ ভোটারদের মধ্যে এই সংখ্যা ৭৪ শতাংশ।