কানাডার সার্বভৌমত্বের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকী

চরমভাবে বর্ণবাদী, প্রকৃতিতে উন্মাদ, কথাবার্তায় অমার্জিত একজন ব্যক্তি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সাথে তিনি প্রতিশোধপরায়ণ এবং ভয়ানকভাবে অহংকারীও। এই খেতাবগুলো তাঁর কপালে জুটেছে অনেক আগেই যখন তিনি প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফায় দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যেন আরো বেশী মাত্রায় আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন আচার আচরণে এবং কথাবার্তায়। তার একটি নজীর হলো কানাডার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি কানাডাকে মার্কিন যুক্তরাষ্টে ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসাবে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এটি যে একটি দেশের সার্বভৌমত্বের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ এটুকু অনুধাবন করার মতো শিক্ষা তাঁর আছে বলে মনে হয় না।

তবে আরও দুঃখজনক বিষয় হলো, কানাডার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও এ নিয়ে জোড়ালো কোন প্রতিবাদ করছেন না। ট্রাম্পের এই নগ্ন হস্তক্ষেপের বিষয়ে সরকারী এবং বিরোধী দলীয় সব নেতাই কেমন যেন একটা নতজানু প্রতিবাদের নীতি নিয়েছেন। সোজা কথায় ভীরু মানুষের প্রতিবাদ যা মুখ ফুটে বের হয় না। কেবলই মিন মিন করা মাত্র। আর তাঁদের এই মিন মিন ভাব দেখে ট্রাম্প আরো বেশী আসকারা পেয়ে গেছেন।

ট্রাম্প সম্প্রতি স্যোসাল মিডিয়াতে এই মানচিত্রটি শেয়ার করেছেন, যেখানে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত

গত ৭ জানুয়ারি ট্রাম্প তার নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একটি মানচিত্র শেয়ার করেছেন, যেখানে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

সাংবাদিকরা কিছুদিন আগে ট্রাম্পের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি কানাডা অধিগ্রহণের জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করছেন কিনা। জবাবে তিনি বলেন, সামরিক শক্তি না, অর্থনৈতিক বল করা হবে।

উল্লেখ্য যে, এর আগে ট্রাম্প কানাডা থেকে পণ্য আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার হুমকি দেন। কানাডার প্রায় ৭৫ শতাংশ পণ্য ও পরিষেবা রফতানি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। আর তাতেই ঘাবড়ে যান কানাডিয়ান নেতৃবৃন্দ। গ্রহণ করেন নতজানু নীতি।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সম্প্রতি বলেছেন, ট্রাম্প কানাডাকে ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ করার যে ইচ্ছা প্রকাশ করেছন তা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এই পর্যন্তই তার প্রতিবাদ। ট্রাম্পের এই ইচ্ছা প্রকাশ যে কানাডার সার্বভৌমত্বের উপর সরাসরি আঘাত সে বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি।

অন্যদিকে কানাডার প্রধান বিরোধী দলের নেতা পিয়েরে পোইলিয়েভ ইতিমধ্যে এক্সে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কানাডা কখনোই ৫১তম অঙ্গরাজ্য হবে না। আমরা একটি মহান ও স্বাধীন দেশ।’ পিয়ের পইলিয়েভও কানাডার সার্বভৌমত্বের উপর যে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে তা নিয়ে কোন কথা বলেননি।

তবে ট্রাম্পকে কঠোর ‘হুঁশিয়ারি’ দেওয়ার সৎসাহস দেখিয়েছেন কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী Jean Chrétien। তিনি গত ১১ জানুয়ারী কানাডার গ্লোব এ্যান্ড মেইল পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন। ঐ নিবন্ধে তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য করার যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য একটি অপমান এবং এটি কানাডার সার্বভৌমত্বের প্রতি অভূতপূর্ব হুমকি। আমরা এমনিতে সহজ-সরল ও ভদ্র, কিন্তু আমাদের মেরুদণ্ড রয়েছে এবং আমরা কঠিনও হতে পারি। তাই ভুলেও আমাদের দুর্বল ভাববেন না।’

তিনি ট্্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, ‘কানাডা বিশ্বের সেরা দেশ এবং আপনি কী করে এটা ভাবলেন যে কানাডীয়রা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হওয়ার জন্য নিজেদের দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দেবে?’

উল্লেখ্য যে, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য মিলে যখন ইরাকের বিরুদ্ধে এক কাল্পনিক অভিযোগ তুলে সামরিক হামলা চালিয়েছিল তখন Jean Chrétien যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল চাপের মুখেও সে যুদ্ধে অংশ নেননি। সেদিন তিনি বলেছিলেন ইরাকের হাতে যে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে তার অকাট্য প্রমাণ দিতে হবে আগে।

Jean Chrétien এর মত এটুকু সৎসাহস আমরা মনে করি কানাডার বর্তমান নেতৃবৃন্দের থাকা উচিত। মেরুদন্ডহীন নেতা দিয়ে দেশ চলে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *