ছায়া মানব

এ কে এম ফজলুল হক

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

পাঁচ

জন নামের ভদ্রলোকের সাথে আমার দেখা টরোন্টোর এক হোটেলে। আমি এ হোটেলে এসেছি জনকে রুম বুক করে দিতে- সাথে শফিক ভাই। জন লম্বা চওড়া, কিন্তু চেহারা ভাঙা চোরা। থাকে ভারমন্ট নামের এক জায়গায়, নিউ হেমশায়ার। শফিক ভাই প্রপার্টি এডমিন থেকে তার ঠিকানা নিয়ে যোগাযোগ করেছেন। সে হিসেবে জনের এখানে আসা। সে নাকি কিছুতেই আসতে চায় নি। কিন্তু শফিক ভাই তাকে ম্যানেজ করেছেন। কিভাবে করেছেন সে কথা পরে শুনবো। আমরা এখন হোটেল কাউন্টারে। কাউন্টারের মেয়েটা রুম খুঁজছে। সিঙ্গেল রুম বেলকনিসহ। লেক অন্টারিও ফেসিং। এ’রকম রুম নাই। ডাউনটাউন ফেসিং আছে। শফিক ভাই বললেন যে করে হোক খুঁজে বের করো। আমি ওই রকম রুম চাই।

জন বললো ‘আমার কিছু যায় আসে না যে কোন এক রুম হলেই চলবে’। শফিক ভাই বললো ‘আমার আসে যায়, বিকজ ইউ আর মাই গেস্ট’। জন হেসে  উত্তর দিলো ‘সো কাইন্ড অফ ইউ’।

মেয়েটি এবার নানা জায়াগায় যোগাযোগ করছে। কাকে যেন টেলিফোনে করলো ‘হ্যালো, আমি অমুক হোটেলের কাউন্টার থেকে বলছি। তোমার রিজারভেশন করা আছে- কন্ডিশনাল, তুমি কি কন্ফার্ম করবে ‘ওই পাশ থেকে কি বললো বুঝা গেলো না। সে কম্পিউটার চেক করে বললো ‘একটা রুম পাওয়া গেছে কিন্তু ভাড়া বেশী’।

শফিক ভাই বললো ‘সমস্যা নাই তুমি ওকে করো’।

আমরা জন‘কে তার রুমে তুলে দিলাম। সত্যিই অসাধারণ রুম। জানালা খুলে দিলে লেকের বাতাসে গা ঠান্ডা হয়ে যায়। হিমেল ঠান্ডা। জনের লাগেজ বলতে একটা ঢাউস সাইজের ব্যাগ। তার খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও হলো। সকালের নাস্তা এখানে। দুপর আর রাতের জন্য পাশের এক হোটেলে যেতে হবে। এই আতিথেয়তা দেখে জন খুবই খুশি। কথা প্রসঙ্গে জন জানতে চাইলো – ‘রিচেলকে কি আমি যোগাযোগ করতে পারি?’ শফিক ভাই বললো ‘অবশ্যই পারো, তবে এখন নয় আমরা ঘুরে আসি তারপর’।

‘ও’কে নো প্রব্লেম’। জন হ্যান্ড শেক করলো শফিক ভাইয়ের সাথে। তারপর আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমিও বাড়ালাম। শার্টের হাতা সামান্য উপরে উঠে গেছে ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে ট্যাটু ‘সার্কেল অব উইচক্র্যাফট’। হাত খসখসে শিরিষ কাগজের মতো। আমি চমকে উঠলাম। তার মানে কি এ’ও সে সবের সাথে জড়িত। আমি কোনমতে হাত ছাড়িয়ে নিলাম।

ফেরার পথে শফিক ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম,

: জনের সাথে আপনার দেখা কিভাবে?

: ‘আর বোলো না। আমি’তো তার ঠিকানা খুঁজে খুঁজে হয়রান। এরমধ্যে সে বাড়ি বদল করলো। আমি সে বাসায় গিয়ে উপস্থিত। ঘটনা শুনে সে বলে ‘সরি, আমিতো উইচ হিলিং করি না, তুমি কোন উইচ হিলারের কাছে যাও’। ‘আমি উইচ হিলার কোথায় পাবো’? বললো ‘এখানে একটা ইগলেসিয়া আছে সোজা মাইল খানেক পরে। এ রাস্তা দিয়ে সোজা গেলেই পাবে। আমি সে রাস্তা ধরে ইগলেসিয়ায় পোঁছালাম। পুরানো একটা গির্জার মতো অনেক লোক বসা ভিতরে। সবার হাতে ধরা কি সব সিম্বল। সামনে স্টেজে আগরবাতি জ্বলছে। কেমন ধম বন্ধ করা পরিবেশ, নিশ্বাস নিতে পারছিনা এমন। আমি একটা টুলে গিয়ে বসলাম। দেখি পাশে এক লোক ঝিমাচ্ছে। আস্তে করে বললাম ‘এক্সকিউস মি’। সে চোখ খুলে তাকালো। বললাম ‘এখানে উইচ হিলার কে’? সে দেখিয়ে দিলো স্টেজে বসা এক বুড়োমতো লোককে। বুড়োর কাছে গেলাম – দৈত্যের মতো বাজখাই গলা। খে খে করে জিজ্ঞেস করলো ‘কার পরিচয়ে তুমি এখানে এসেছো’। ‘কারো পরিচয়ে আমি আসি নি। জন নামের এক লোক আমাকে আসতে বলেছে’। টাকা পয়সা কিছু এনেছো ? আমি বললাম ‘হা এনেছি’।

কাকে নিতে চাও তুমি। আমি বললাম জনকে।

জন তো উইচ হিলিং করে না সে আমাদের মেম্বার শুধু। যাহোক তুমি যখন বলছো আমি জনকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারি কিন্তু অনেক টাকা লাগবে; শুনে নিলাম কত, তারপর বললাম ‘হা’ আমি রাজি। সে ঠিকানা নিলো।

দু’দিন পর জন আমার হোটেলে এসে হাজির। বলে দেখো আমাদের এ সোসাইটিতে কিছু নিয়ম কানুন আছে। আমরা কারো সাথে সরাসরি কথা বলতে পারি না। এখানকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের পুরোহিত। তুমি যার সাথে কথা বলেছো সে-ই আমাদের পুরোহিত। আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘তুমি সত্যি তো এডওয়ার্ড নর্টনের ছেলে’ বললো ‘হা আমিই সে’। ‘কিন্তু তুমি না ব্যবসা করতে ?’

‘সে অনেক কথা। আগে বলো ‘তোমার পেশেন্ট কোথায়?’

বললাম ‘টরন্টো’। ‘চলো দেখি কিছু করতে পারি কি না’। কিন্তু  তার আগে আমি আমার হান্টসভিলের বাড়িটায় যাবো আমার সরচারির (জাদুবিদ্যা) কিছু সিম্বল মিসিং। খুঁজে দেখি ওখানে পাই কিনা। মনে মনে বললাম ‘বেটা এটাই তো আমি চেয়েছি ।

শফিক ভাই বলে এখন জার্নি টু হান্টসভিল’। আমি বললাম আপনার ধারণা এতে কাজ হবে ?

বললো কাজ হোক না হোক আমরা এর ভেতরেটা জানতে পারবো। আমি নিশ্চিত নর্টন ফ্যামিলির ভেতরে কিছু গন্ডগোল ছিল যার কারণে এসবের উৎপত্তি।

:পথে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কিছু ?

:করার সুযোগ পেলাম কই। বেটা গাড়িতে উঠেই এক ঘুম। সে ঘুম তার এখানে এসে ভাঙলো। আমার মনে হয় সে ড্র্যাগ’স ট্র্যাগ’স নেয়। কেমন ভাঙাচোরা চেহারা দেখো না। আমি বললাম হতে পারে।

শনি রোববার ম্যানেজ করতে আমাদের অনেক কষ্ট হলো। তার কারণ সাথে সোমবার’ও আছে। যদি সোমবারও থাকতে হয় সে জন্য সোমবারও ছুটি নেয়া হলো। যাওয়া নিয়ে রিচেলের সাথে কথা বললো শফিক ভাই। সে বলে ‘তোমরা চারজন যাবে ঠিক আছে যাও। কিন্তু যত ঘটনা হয় আমাকে শেয়ার করবে’। তিনি বললেন করবো।

‘ও হা আস্তাবলের ভেতরে যেও না’

শফিক ভাই বললো ‘কেন’ ?

‘কি দরকার ওসব পুরোনো জিনিস পত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে’

‘পুরোনো জিনিস তো হেরিটেজ আমরা একটু হেরিটেজটা দেখতে চাই।

বললো ‘না না ওসব দেখাদেখি এখন বাদ দাও। তোমাদের কাজ হলে চলে এ’স। আর ও বাড়িতে আমার কিছু কাজ ও আছে। তোমরা আসার পর আমি সিসিটিভি লাগাবো’।

‘এতদিন লাগাও নি কেন ?

‘প্রাইভেসির কারণে। আমি কারো প্রাইভেসি ভায়োলেট করতে চাই না। এখন তো দেখি আর পারছি না। বাড়ির নামে কি সব কমপ্লেইন আসছে আমাকে লাগাতেই হবে ।

রিচেলের সাথে কথা শেষ হতেই শফিক ভাই বললেন ‘দেখবে তুমি ও টিভি ফিভি কিচ্ছু লাগাবে না। ওর ধান্ধা – এইটা হাই প্রাইসে বিক্রি করে অন্য কারো ঘাড়ে আপদ তুলে দেয়া। ফাউ ফাউ মিলিয়নস ডলার প্রফিট।

আমরা গুছাচ্ছি শনি রোববারের জন্য। এর মধ্যে শুনি হিমি খাওয়া দাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। সারাক্ষণ মুখ বেজার করে থাকে। কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তরও দেয় না। উত্তর দেয়াটা কোন ব্যাপার না কিন্তু না খাওয়ার কারণে শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। মনোরোগের ভাষায় এ’কে বলে ‘ডিসথাইমিয়া’। ডাক্তার লক্ষণ দেখে বলে খুবই খারাপ- এর আগে সিজোফ্রেনিয়া, এর সাথে আরেকটা যোগ হলো এ তো মহা বিপদ। আমরা তাকে বিখ্যাত এক মানসিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। টরন্টোর ডাউন টাউনে বসে এ ডাক্তার। মাঝারি বয়সের ভদ্রলোক বেশ হ্যান্ডসাম। খুব সুন্দর করে কথা বলেন স্পষ্ট উচ্চারণে। মনে হয় যেন ভাষা শিক্ষার ক্লাস নিচ্ছেন। ডাক্তার তাকে প্রথমেই একটা ওষুধ খেতে দিলো। সিরাপ। হিমি কিছুতেই খাবে না। রিশাদ অনেক অনুনয় বিনয় করে খাওয়ালো। আধাঘণ্টা পর হিমি কথা বলতে শুরু করেছে। ডাক্তার তাকে এবার জিজ্ঞেস করলো “এই যে দেখছো আমার হাতে একটা কার্ড- এর উল্টো দিকে কি আছে বলতো”? হিমি বলে ‘একটা হরিণ’। ভেরি গুড মিলে গেছে কিন্তু কিভাবে পারলে? হিমি বলে ‘তোমার পেছনে একটা আয়না আছে’। ‘এইতো লক্ষ্মী মেয়ে তাহলে আমি আয়নাটা সরিয়ে ফেলি।’

‘এবার বলতো পরের টা কি’। ‘একটা হাতি’ উত্তর কিন্তু দৈত গলায়। তাও ঠিক হলো। এভাবে একে একে দশটা কার্ড শেষ হলো। ডাক্তার অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইলো তার মুখের দিকে। জিজ্ঞেস করলো ‘কিভাবে পারলে তুমি’? বললো ‘তোকে বলবো কেন’? তুই একটা খারাপ মানুষ। তোকে আমি খেয়ে ফেলবো তোর চোখ খারাপ। রিসেপশনের মেয়েটার সাথে রিলেসন করো; তাই না? হিমি ক্রমান্বয়ে ভয়ংকর হওয়ার শুরু হচ্ছে। আমরা দেখলাম চোর ধরা খেলে যে রকম করে ডাক্তারেরও সে অবস্থা। সে উঠে সোজা অন্য রুমে চলে গেলো। ভয়ে আমার বুক কাঁপছে, ডাক্তার যাবার পর এবার রেসিপশানের মেয়েটা ঢুকলো ‘তুমি এসব কি বলছো ছিঃ’। হিমি সোজা তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ‘আমি ঠিক বলছি কিনা তুমিই বোলো। – এমনভাবে বললো যে সে মেয়েটাও চুপ। রিশাদ ধরলো মেয়ের মুখ চেপে, তাতেও লাভ হলো না। প্রচন্ড শক্তিতে ছুটে যেতে চাইছে ও। এক সময় ডাক্তার খবর পাঠালো, ওকে এখনি হাসপাতালে ভর্তি করাও। আমরা এম্বুলেন্স কল করলাম। এম্বুলেন্স আসলো হিমিকে ধবধবে স্ট্রেচারে করে তোলা হলো গাড়িতে। মনে হলো হাওয়ায় ভেসে যাওয়া কোন অপ্সরীর অবঞ্জিতে মোড়া এক প্রতিবিম্ব। আমি মনে মনে বললাম হিমিকে আমরা ফেরত পাবো’তো।

হাসপাতাল জীবন বড়ো মর্মান্তিক। আর দশটা পাগলের সাথে বসবাস করা যে কি কঠিন কেউ না গেলে বুঝবে না। তারপর হিমি অন্য জগতের মানুষ। ছোটবেলা থেকে অতি আদরে আদরে মানুষ হয়েছে। ওর জন্য মানসিক হাসপাতাল দোজখের মতো। হাসপাতালের একটা নমুনা দেয়া যাক- রোগীরা যে কোন সময় ভায়োলেন্ট হতে পারে। ভায়োলেন্ট হয়ে কারো মাথা টাথা ফাটিয়ে ফেললে ও যেন কিছু হয় নি’র মতো স্বাভাবিক। শাহানা ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে। আপাতত শাহানা থাকছে তার সাথে। কড়া ডোজের কারণে হিমি প্রায়ই ঘুমিয়ে থাকে। ঘুম থেকে উঠেই বলে ‘আম্মু আমি বাসায় যাবো’। এমন করুণভাবে বলে শাহানা কেঁদে কেটে অস্থির। আমি শফিক ভাই আর ফরিদ একদিন দেখতে গেলাম। অতি ঘুমের কারণে, স্ল্যারিং হচ্ছে। ঘুম জড়ানো গলায় সে বলে ‘তোমরা আমাকে ঘুমের দেশে দিয়ে আসো। আমি আমি ঘুমুতে চাই অনেক ঘুম।’

শফিক ভাই বলে ‘হিমি তুমি ঠিক হয়ে যাবে, বিশ্বাস করো তুমি ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।’

এ সবের কারণে সে শনিবারও আমরা যেতে পারি নি। পরের শনিবারে যাত্রা। যাত্রার আগে সবাই মিলে নাস্তা করলাম ঠেসে তার সাথে ব্ল্যাক কফি – যাতে ঘুম না আসে শফিক ভাই আগেই বলেছে ‘সাবধান ঘুমাবে না রাত ছাড়া -আর পালা করে ঘুমাবে। সব সময় চোখ কান খোলা রাখবে। খোলা রাখতে হবে -কেন ? এখানে প্রচুর ঘটনা আছে। পরে বুঝবে। তারপর “ওই বেটাকে সবসময় সজাগ রাখতে চেষ্টা করবে কথাবার্তা বলে। কিন্তু কোন ব্যক্তিগত প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে না ‘এই যেমন তোমার বাবা মা কই’। শুধু আমিই জিজ্ঞেস করবো ‘এসব’। তোমরা জিজ্ঞেস করবে হালকা কথা- এই যেমন ‘জন’ এখন কেমন লাগছে আজ, রাতে ভালো ঘুম হয়েছে ?’ ঠিক আছে ?

আর ওকে রাগাবে না। ও রেগে গেলেই সর্বনাশ। বলবে আমি তোমাদের সাথে আর নেই তখন আমাদের ‘ধান ও যাবে গোলা ও যাবে’, মাঝখান থেকে আমরা শূন্য। শেষ কথা আমাদের যত কমিউনিকেশন মোবাইলে -টেক্সটের মাধ্যমে। মনে থাকবে তো? আমরা নির্দেশগুলো আরেকবার মশকো করে নিলাম। এভাবে- ফরিদ বলে আমার দিকে তাকান। এক নাম্বারটা  ‘নো ব্যক্তিগত প্রশ্ন ’। আমি বললাম ‘না হয় নি’- ‘পালাক্রমে ঘুমানো’। আচ্ছা ঠিক আছে। ‘নো ঘুম অল টুগেদার, নো ব্যক্তিগত প্রশ্ন, তিন নাম্বারটা ‘নো রাগারাগি’ আর চার নাম্বারটা ‘টেক্সট বাই ফোন’ -কি ঠিক আছে তো? আমি বললাম ঠিক আছে। দেখলাম ফরিদ অতিমাত্রায় টেন্সড। কিন্তু সে তো টেন্সড হওয়ার পাত্র না। ‘থোড়াই কেয়ার করি’ভাবের একটা ছেলে এভাবে বদলে গেলো, কারণটা কি? কারণ হিমি। সে হিমিকে অনেক পছন্দ করে। যে করে হোক হিমিকে ভালো করা চাই। এ’জন্য সে আরো কিছু করতে হলেও করবে।

(চলবে)

এ কে এম ফজলুল হক

লেখক পরিচিতি :

কানাডা প্রবাসী এ কে এম ফজলুল হক একজন  সাবেক ব্যাংকার। অবসরে লেখালেখিও করেন। বর্তমানে টরন্টোর নিকটবর্তী পিকারিং এ পরিবার নিয়ে বাস করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *