‘কু ক্লাক্স ক্ল্যান’এর সদস্যরা কানাডায় আবারও তাঁদের অস্তিত্বের জানান দিল
খুরশিদ আলম
হোয়াইট সুপ্রিমেসি বা শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী কুখ্যাত ‘কু ক্লাক্স ক্ল্যান’ ((Ku Klux Klan) এর সদস্যরা কানাডায় আবারও তাঁদের অস্তিত্বের জানান দিল। আর এটি করার জন্য তাঁরা এবার বেছে নিয়েছিলেন নোভা স্কোশিয়ার নর্থ সিডনিতে অনুষ্ঠিত এক হ্যালোইন পার্টিকে। সেদিন রাতে স্থানীয় ফায়ার ফাইটার্স ক্লাবে হ্যালোইন পার্টি চলছিল। এমন সময় হঠাৎ চারজন লোক কু ক্লাক্স ক্ল্যান এর বিশেষ ধরনের পোষাক পরে পার্টি রুমে ঢুকে পড়েন। এই সময় প্রবেশদ্বারে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীরা তাঁদেরকে বাধা দেননি। কিন্তু পরে যখন পার্টিরূমে এ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয় তখন স্বেচ্ছাসেবীরা এগিয়ে আসেন এবং তাঁদেরকে পোশাকের হুড খুলে ফেলার আহ্বান জানান। কিন্তু তাঁদের কয়েকজন সেটি করতে অস্বীকার করেন। এই সময় অবশ্য স্বেচ্ছাসেবকরা তাঁদের একজনের হাতে থাকা বড় আকৃতির একটি ক্রুশ সরিয়ে নেন। কিন্তু এই কুখ্যাত কু ক্লাক্স ক্ল্যান সদস্যদেরকে পার্টি রুম থেকে বের করে দেয়া হয়নি। পরে সোশ্যাল মিডিয়াতে যখন এ নিয়ে ব্যাপক হৈচৈ শুরু হয় তখন আয়োজকদের হুস হয়। গ্লোবাল নিউজ জানায়, নর্থ সিডনি ফায়ার ফাইটার্স ক্লাব এর একজন নির্বাহী তার ফেসবুক পেজে ক্ষমা চেয়ে বলেন, কু ক্লাক্স ক্ল্যান এর বিশেষ ধরনের পোশাক পরে যাঁরা হ্যালোইন পার্টিতে এসেছিলেন তাঁরা কোনোভাবেই আমাদের এই ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্কিত নন।
অন্যদিকে এক পৃথক ফেসবুক পোস্টে স্থানীয় ডেপুটি ফায়ার চিফ ওয়েড গৌথ্রো ঘটনার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, “অনেক সময় আমরা ভাবি- ‘আরে এটিতো একটি পোষাক মাত্র।’ কিন্তু এর যে একটা কালো অতীত ইতিহাস রয়েছে সেটি আমরা ভাবিনা। সে কারণে আপনারা যখন মন্তব্য করেন যে তাঁদেরকে প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত হয়নি এবং এ বিষয়ে আমরা আরো ভাল পদক্ষেপ নিতে পারতাম তখন আপনারা সঠিক কথাই বলেন। আমরা ভবিষ্যতে আরো সতর্ক থাকবো।”
গ্লোবাল নিউজ জানায়, স্থানীয় ফায়ার চিফ লয়েড ম্যাকিনটোশ বলেন, ‘তাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দেয়াটা ছিল ভুল। এটা হওয়া উচিত ছিল না।
অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ ‘স্টপ দা ভায়োলেন্স’ এর প্রতিষ্ঠাতা কোয়েনট্রেল প্রোভো ‘কু ক্লাক্স ক্ল্যান’ সমর্থকদের পরিহিত হ্যালোইন পোশাককে বর্ণবাদী পোশাকের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘এর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে কেবল ক্ষমা চাওয়া অর্থহীন।’
নিউ ব্রান্সউইক ইউনিভার্সিটির ক্রিমিনোলজি বিভাগের পরিচালক ডেভিড হফম্যান সিবিসি নিউজকে বলেন ‘কু ক্লাক্স ক্ল্যান’ ভাবধারায় বিশ্বাসী লোকেরা হ্যালোইন পার্টিতে বিশেষ ধরনের পোষাক পরে উপস্থিত হওয়ার অর্থ হলো তাঁরা শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের ঘৃণ্য মনোভাবকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।
ডেভিড হফম্যান বিভিন্ন সংবাদ পত্রের রিপোর্ট এবং পাবলিক রেকর্ড থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জানান আটলান্টিক কানাডায় (New Brunswick, Newfoundland and Labrador, Nova Scotia, and Prince Edward Island.) ২০০০ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের মধ্যে শ্বেতাঙ্গদের ২৯টি অতি-ডানপন্থী উগ্রপন্থি গোষ্ঠী সক্রিয় ছিল এবং ১৪৮ জন ব্যক্তি এই মতাদর্শ প্রকাশ করেছেন বা এই সমস্ত কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি আরো জানান, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে উগ্রপন্থীরা সম্পত্তির ক্ষতিসহ ৭৫টি ঘটনা ঘটিয়েছে।
নিউ ব্রান্সউইক ইউনিভার্সিটির গবেষণা অনুসারে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আটলান্টিক কানাডায় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের ইন্ধনে বিদ্বেষী ঘটনার সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, নোভা স্কোশিয়াতে ঘটেছে সবচেয়ে বেশী ঘটনা এবং তারপরের অবস্থানে রয়েছে নিউ ব্রান্সউইক।
সিবিসি জানায়, হ্যাফম্যান অবশ্য বলেছেন বেশিরভাগ ঘটনা ছিল অহিংস। তবে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে সহিংসতার দিকে মোড় নিতে পারে। হ্যাফম্যান ঘৃণামূলক বক্তব্য বা বৈষম্যের মতো সহিংসতার ঘটনার পরিসংখ্যান রেকর্ড করতে পাবলিক সেফটি কানাডার সাথে কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, বেশিরভাগ মানুষ ‘কু ক্লাক্স ক্ল্যান’কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করে থাকেন। তবে এই শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের একটি উল্লেখযোগ্য ইতিহাস রয়েছে আটলান্টিক কানাডায়।
এদিকে সিটিভি জানায় নোভা স্কোশিয়ার কেপ ব্রিটন রিজিওনাল মিউনিসিপালিটির মেয়র সিসিল ক্লার্ক লক্ষ্য করেছেন তাঁর এলাকায় বর্ণবাদী এবং অসহিষ্ণু আচরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানকার নবাগতরা বর্ণবাদী আচরণের মুখোমুখি হচ্ছেন।
The Ku Klux Klan in Canada: A Century of Promoting Racism and Hate in the Peaceable Kingdom এর লেখক অ্যালান বার্টলি বলেছেন, ‘এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আটলান্টিক কানাডায় এ সংগঠনটির উপস্থিতি রয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরের বছরগুলোতে সারা দেশে দশ হাজারেরও বেশী কার্ডধারী সদস্য ছিলেন, যার মধ্যে অনেকেই আটলান্টিক কানাডায় বাস করতেন।’
হাফম্যান বলেন কানাডায় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা তাঁদের বিশ্বাস বা আদর্শ প্রচারে এখন আরো বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এদের একটি অংশ সহিংস আচরণও করতে পারেন। আর এ কারণেই আমাদেরকে এদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এবং সোচ্চার কণ্ঠে বলতে হবে ‘কু ক্লাক্স ক্ল্যান’দের মত বিশেষ ধরনের পোষাক পরা গ্রহণযোগ্য নয়।
স্মরণ করা যেতে পারে যে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা কু ক্লাক্স ক্লান নামের বর্ণবাদী সংগঠনের অধীনে অতীতে ভয়াবহসব নৃশংসতা চালিয়েছেন কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে। সেই সময় তাঁদের টার্গেট ছিল কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী। কৃষ্ণাঙ্গদেরকে গুলি করে হত্যা করার পাশাপাশি ঘরের ভিতর আটকে রেখে পুড়িয়ে মারার ঘটনাও ঘটিয়েছেন তাঁরা। আজকে তাঁরা নর্থ আমেরিকায় মুসলিম সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সাউথ এশিয়ান, মিডল ইস্টার্ন ও আফ্রিকান অঞ্চল থেকে আসা ইমিগ্রেন্ট এবং রিফিউজিদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়ে উঠছেন এবং সমাবেশ ও মিছিল করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চরম মানবতা বিরোধী দাসপ্রথা থাকবে কি থাকবে না তা নিয়ে ১৮৬১ সাল থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত মার্কিন ফেডারেল সরকারের সঙ্গে দক্ষিণের ১১টি অঙ্গরাজ্যের তীব্র সংঘাত চলে। ঐ সংঘাত মার্কিন ইতিহাসে ‘আমেরিকান সিভিল ওয়ার’ নামে পরিচিত। সেই সিভিল ওয়ার বা গৃহযুদ্ধের পর মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক অধিকার দেওয়া হয় – যে অধিকার থেকে আগে তাঁরা বঞ্চিত ছিল। কিন্তু সেটি মেনে নিতে পারেনি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী আমেরিকানরা। আর তার প্রতিবাদ হিসেবে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার দক্ষিণে কু ক্লাক্স ক্লান নামে একটি গুপ্ত সন্ত্রাসী সংগঠন গড়ে ওঠে। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ মার্কিনদের আধিপত্য বজায় রাখা। ক্লানের সদস্যরা ছিল অধিকাংশই প্রোটেস্টান্ট ধর্মের অনুসারী শ্বেতাঙ্গ মার্কিন নাগরিক।
আমরা বলে থাকি মানুষ আজ সভ্য হয়েছে। অনেক অগ্রসর হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আজও অনেক মানুষ মুক্ত হতে পারেনি যুগ যুগ ধরে চলে আসা বর্ণবাদের অপরিচ্ছন্ন ও কলুষিত মানসিকতা থেকে। যুগে যুগে এই বর্ণবাদের ভয়ংকর থাবা কলঙ্কিত করেছে মানবজাতিকে।
বর্ণবাদের আসলে কোন দেশ কাল নেই, সেই সীমানা। সব দেশে, সব অঞ্চলে, সব সমাজেই ঘৃণ্য এই বর্ণবাদ প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে বিদ্যমান ছিল এবং বিদ্যমান আছে। মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এই বর্ণবাদ। বর্ণবাদ দাবিয়ে রেখেছে সমাজের এক অংশের মানুষকে। শোষণ নির্যাতন ও নিপীড়ন করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিঃস্ব করে রেখেছে তাঁদের।
কানাডার সাবেক জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী র্যল্ফ গুডেল ইতিপূর্বে বলেন, ডানপন্থি, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ও নব্য নাৎসি গ্রুপগুলো কানাডীয়দের জন্য ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। এসব গ্রুপ ইহুদি-মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উসকে দেয় যা সহিংসতা এবং অন্য ধরনের অপরাধের মধ্যে লক্ষণীয়।
আমরা লক্ষ্য করলে দেখবো, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বর্ণবাদী রক্ষণশীল গ্রুপের অতিতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে কানাডায়। এর মধ্যে আছে Soldiers of Odin এবং La Meute। এরা কট্টরভাবে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় ও ইমিগ্রেন্ট বিরোধী। এবং একই সাথে মুসলিম বিরোধী। অবশ্য প্রকাশ্যে তাঁরা এ অভিযোগ স্বীকার করেন না। কিন্তু তাঁদের কার্যক্রমই প্রমাণ করে তাঁরা মুখে বলেন এক কথা আর কাজে করেন তার উল্টোটা। La Meute এর প্রতিষ্ঠাতাগণ মনে করেন কুইবেক হলো উত্তর আমেরিকায় ইউরোপীয় সভ্যতার প্রধান কেন্দ্রস্থল। কিন্তু সেই কুইবেক এখন ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাস থেকে সংযোগহীন হয়ে গেছে। আর এ কারণেই এখানে ইসলামি মৌলবাদ তার কালো হাত প্রসারের সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে।
Soldiers of Odin এর মূল উৎপত্তি হলো ফিনল্যান্ডে। ফিনল্যান্ডের Soldiers of Odin এর কার্যকলাপে অনুপ্রাণিত হয়ে কুইবেকের রক্ষণশীলদের একটি গ্রুপ এখানে একটি চ্যাপ্টার খুলেছেন। কানাডায় Soldiers of Odin এর সদস্য সংখ্যা রয়েছে বর্তমানে প্রায় ৩৫০০।
সাম্প্রতিককালে কানাডায় এই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের বর্ণবাদী তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কানাডার মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে সিবিসি নিউজে প্রকাশিত জনাথন মন্টপেটিট এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখে করা হয় ‘৯/১১ এর পর থেকে কানাডার গোয়েন্দা বিভাগের অধিকাংশ মনোযোগ নিবদ্ধ করা হয় ইসলামি জঙ্গীদের উপর। কিন্তু আইএস বা আল-কায়দার মত জঙ্গি গোষ্ঠীর উপর যতটা গুরুত্ব দেয়া হয়ে আসছে, ততটা গুরুত্ব কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস এবং রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ এর পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে না বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের উপর।’
এখানে গুরুত্ব আরোপ করার মতো একটি বিষয় হলো – উত্তর আমেরিকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুধু ইসলামি জঙ্গিরাই চালাচ্ছেন তা সত্য নয়। কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চরমপন্থি ও বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরাও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সাম্প্রতিককালে তাঁদের কার্যক্রম যথেষ্ট পরিমাণে বিস্তার লাভ করেছে। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসী কার্যক্রমে তাঁরা ইসলামি জঙ্গীদেরকেও পিছনে ফেলে দিয়েছেন! ইতিপূর্বে টরন্টো স্টার এ প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে এই তথ্য জানা যায়।
উল্লেখ্য যে, অতীতে কানাডায় বর্ণবাদী আচরণ প্রকাশ্যেই করা হতো। বর্ণবাদ তখন অলিখিত বৈধতা পেয়েছিল। এই ধরনের আচরণকে সেই সময় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হতো না। কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড নিজেই একজন প্রচণ্ড বর্ণবাদী শাসক ছিলেন। বর্ণবাদকে সমর্থন করার পিছনে তার যুক্তি ছিল এই রকম- ‘আমি এরকম একটি দেশ চালাচ্ছি যে দেশটি বর্ণবাদী মানুষে ভরা। এ কারণেই আমি বর্ণবাদকে সমর্থন করে গেছি।’
নিউ ইয়র্ক টাইমস এর কলামিস্ট ইয়েন অস্টিন ইতিপূর্বে তার এক কলামে লিখেন, ‘ম্যাকডোনাল্ড এর যাঁরা ভক্ত তাঁরাও জানতেন তিনি ছিলেন একজন চরম বর্ণবাদী ব্যক্তি।’
ম্যাকডোনাল্ড কানাডায় বসবাসরত চাইনীজদেরও ভাল চোখে দেখতেন না। চাইনিজদের বিরুদ্ধেও তিনি বর্ণবাদী আচরণ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নারী বিদ্বেষ এর অভিযোগও রয়েছে! কানাডার আদিবাসীদের সন্তানদের জোর করে ধরে এনে বিতর্কিত আবাসিক স্কুলে ভর্তি করানোর পিছনেও তাঁর ভূমিকা ছিল জোরালো। সেই স্কুলে আদিবাসী শিশুদের উপর চালানো হয়েছিল নির্মম অত্যাচার। যৌন নির্যাতনেরও শিকার হয়েছিল ঐ শিশুরা।
অন্যদিকে ইপসস- পরিচালিত ইতিপূর্বের এক জরিপে দেখা গেছে কানাডীয়দের প্রায় অর্ধেকই স্বীকার করেন যে, তাঁদের মধ্যে বর্ণবাদী চিন্তা-চেতনা আছে এবং আগের বছরগুলোর তুলনায় এখন তাঁরা সেইসব চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। একান্তভাবে গ্লোবাল নিউজের জন্য পরিচালিত ঐ জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ এদেশে বর্ণবাদকে একটি গুরুতর সমস্যা বলে মনে করেন। অথচ ১৯৯২ সালে বর্ণবাদকে গুরুতর সমস্যা বলে মনে করতেন ৬৯ শতাংশ মানুষ। অংশ গ্রহণকারীদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ নিজেকে বর্ণবাদী নন বলে দাবি করেছেন তবে অনেকেই বলেছেন যে, তারা বর্ণবাদী চিন্তা-ভাবনা লালন করেন কিন্তু সেগুলো তারা অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা করেন না।
ইপসস-এর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট সিন সিম্পসন বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে, (প্রায়) ৫০ শতাংশ মানুষ বর্ণবাদী চিন্তা-ভাবনা থাকার বিষয়টিকে যথার্থ এবং প্রকৃতপক্ষে স্বাভাবিক বলে মানেন।’
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজেই একবার বলেছিলেন, ‘বর্ণবাদ শুধু আমেরিকার সমস্যা নয়। কৃষ্ণাঙ্গ বিরোধী মনোভাব কানাডায়ও বিদ্যমান। আমাদেরকে আরো কাজ করতে হবে কৃষ্ণাঙ্গ ও আদিবাসীদের বিরুদ্ধে যে পদ্ধতিগত বর্ণবাদী আচরণ হচ্ছে তা প্রতিহত করার জন্য।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যদিও বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে অনেকদূর এগিয়েছি কিন্তু এই সমস্যাটি এখনো কানাডায় রয়ে গেছে।’
উল্লেখ্য যে, কানাডায় সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন রক্ষণশীল গোষ্ঠী ও দলগুলো বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আর সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে তাঁদের বর্ণবাদী কার্যক্রমও। নোভা স্কশিয়ার ঘটনা তারই প্রমাণ বহন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চরম বর্ণবাদী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তা বেশ লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিতে যাচ্ছেন আর দিন কতক পরেই। এই সুযোগে কানাডার শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী বা বর্ণবাদীরা আবারও নতুন উদ্যমে আরো বেশি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেন। প্রশাসন আর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি এখনই সক্রিয় না হন তবে আগামীতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কণ্ঠ