বুলিং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে
University of British Columbia এবং Angus Reid Institute এর যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে (যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭) bullying বা নিপীড়ন ও অপমানের শিকার হতে হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা গেছে দৃশ্যমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীদের তুলনায় তিনগুণ বেশী ব্যক্তিগত নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছে। অন্যদিকে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছে দ্বিগুণ।
গবেষণায় আরও বলা হয়, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বলেছে তারা তাদের স্কুলে বর্ণবাদী আচরণ লক্ষ্য করেছে অথবা নিজেরাই বর্ণবাদের শিকার হয়েছে। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজন (৫৮%) বলেছে তারা অন্য শিক্ষার্থীদেরকে নির্যাতন বা অপমানের শিকার হতে দেখেছে তাদের বর্ণ পরিচয় বা এথনিসিটির জন্য। আর ১৪% শিক্ষার্থী বলেছে তারা নিজেরাই তাদের বর্ণ পরিচয় বা এথনিসিটির জন্য নির্যাতন বা অপমানের শিকার হয়েছে।
যে সকল শিক্ষার্থী স্কুলে বর্ণবাদী আচরণকে প্রত্যক্ষ করেছে বা নিজেই বর্ণবাদের শিকার হয়েছে তারা জানায় প্রায়শ শিক্ষকরা এই ধরনের আচরণকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেন এবং এটি নিয়ে বর্ণবাদী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। আর দশজনের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী জানায় যারা বর্ণবাদী আচরণ করে তাদেরকে সাধারণত শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় বা সাসপেনশন করা হয় অথবা আটকে রাখা হয়।
কিন্তু তারপরও দেখা যাচ্ছে স্কুলসমূহে বুলিং পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি ঘটছে না। দৃশ্যমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা বেশি মাত্রায় বুলিং এর শিকার হচ্ছেই। এটি স্পষ্টতই বর্ণবাদের কারণে ঘটছে।
ইতিপূর্বে হাফিংটন পোস্টের এক রিপোর্টে বলা হয়, “দুঃখজনক হলেও সত্যি যে গত কয়েক বছর ধরেই বিরাজ করছে বুলিং এর এই অবস্থা যদিও বিভিন্ন মহল থেকে ক্রমাগত দাবি উঠেছে এ পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।”
দেখা গেছে বুলিং সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যারা বুলিং করে এবং যারা বুলিং এর শিকার হয় তারা উভয়ই অধিকতর মাত্রায় আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকে। শিশুকালে যারা বুলিং এর শিকার হয় তারা বয়সকালে ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে। আর যারা বুলিং করে তাদের ক্ষেত্রে ড্রাগ ও এ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে উঠার ঝুঁকি বেশী। নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও এদের ক্ষেত্রে বেশী।
মনে রাখতে হবে, যারা বুলিং এর শিকার বা যারা বুলিং করে সে সব শিশুর বেলায় কোন রকম অবহেলা করা চলবে না। আর ভুলেও বুলিং এর শিকার শিশুকে পাল্টা বুলিং এর পরামর্শ দেয়া যাবে না। কারণ এতে করে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
এক জরিপ তথ্যে দেখা যায় যারা স্কুল জীবনে বুলিং করে বেড়ায় তারা ২৪ বছর বয়সের মধ্যেই কোন না কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং যারা বুলিং এর শিকার এবং যারা বুলিং করে তাদের উভয়ই শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকিতে থাকে।
বুলিং একটি মানবাধিকার ইস্যু। যারা বুলিং এর শিকার হয় তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। জাতি সংঘের শিশু অধিকার সনদে কানাডা স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর একটি। সুতরাং আমরা মনে করি বুলিং এর কারণে কোন শিশুর মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয় সেটি দেখার দায়িত্ব রয়েছে সরকারের। একই সাথে বুলিং এর শিকার সব শিশুর ব্যাপারেই সমান গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।