অবশেষে প্রকাশ পেল শরীফ রহমানের খুনিদের পরিচয়
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪: পুলিশ অবশেষে শরীফ রহমানের খুনিদের পরিচয় পরিচয় প্রকাশ করলো। খুনি এই তিনজন ব্রিটিশ নাগরিক। কানাডায় এসে তারা খুন করেছিল রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী বাংলাদেশী- কানাডিয়ান শরীফ রহমানকে। খবর সিবিসি নিউজের।
প্রায় এক বছর আগে টরন্টোর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত মফস্বল শহর Owen Sound এ ব্রিটিশ এই তিন দুর্বৃত্তের হামলায় বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট মালিক শরীফ রহমান (৪৪) নিহত হন। ঐ হামলায় আহত হয়েছিলেন তাঁর এক ভাগনে।
খুনি ঐ ব্রিটিশ নাগরিকরা হলেন রবার্ট ইভান্স (২৪), রবার্ট বাসবি ইভান্স (৪৭) এবং ব্যারি ইভান্স (৫৪)। এদের মধ্যে রবার্ট ইভান্সকে খুনের প্রধান আসামী করা হয়েছে। বাকি দুজনকে সহযোগী আসামী করা হয়েছে। অন্টারিও প্রাদেশিক পুলিশ ও স্থানীয় গোয়েন্দারা ১৮ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করে।
খুনি এই তিন ব্রিটিশ নাগরিক ভিজিটর ভিসায় কানাডায় এসেছিলেন। অন্টারিও পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেন কনওয়ে জানান, খুনের ঘটনার পরপরই তারা কানাডা ত্যাগ করেন।
হামলার ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট রাতে। স্থানীয় পুলিশ জানায় ঐ দিন রাতে কাজ শেষে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শরীফ রহমান ও তার ভাগনে। এই সময় তিনজন কাস্টমার খাবার খেয়ে বিল পরিশোধ না করেই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যান। বিলের পরিমান ছিল প্রায় ১৫০ ডলার। তখন শরীফ ও তার ভাগনে তাদের পিছু নেন। রেস্টুরেন্ট এর বাইরে সাইডওয়াকে এসে ঐ তিন কাস্টমারকে বিল পরিশোধের কথা বললে তারা ক্ষেপে যান এবং শরীফের উপর হামলা চালান। হামলায় মাথায় আঘাত পেয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন শরীফ। আহত হন তার ভাগনেও।
মারাত্মকভাবে আহত শরীফকে পরে হাসপালে ভর্তি করা হয়। এক সপ্তাহ তিনি লাইফ-সাপোর্টে ছিলেন। কিন্তু সে অবস্থা থেকে তিনি আর ফিরেননি। হাসপাতালেই তিনি লাইফ-সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
খুনি তিনজনই বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং কানাডায় প্রত্যর্পণের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। তবে কবে নাগাদ তাদেরকে কানাডিয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে সে বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ।
এছাড়াও আরো যে প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলেনি তা হলো :
– এই তিনজন কানাডায় ঠিক কি করছিলেন।
– তারা কানাডায় কতদিন ধরে ছিলেন এবং কখন তারা কানাডা ত্যাগ করেন।
– তাদের পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক কি।
– যুক্তরাজ্যের কোন এলাকার বাসিন্দা তারা।
– তাদেরকে কোথায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেন কনওয়ে জানান তারা আগে খুনিদের সম্পর্কে বিশদ বিবরণ প্রকাশ করেনি আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে।
এদিকে খুনিদের গ্রেফতারের খবরে শরীফ রহমানের স্ত্রী শায়লা নাসরিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এক লিখিত বক্তব্যে নাসরিন বলেন, ‘আমি ১৭ আগস্ট, ২০২৩ সাল থেকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি এবং আমি বিশ্বাস করি খুনিদের বিচারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাবে আমার প্রয়াত স্বামী।
উপরন্তু, আমি কমিউনিটির কাছ থেকে যে সমর্থন পেয়েছি তার জন্য সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’
শরীফ রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যুতে সেদিন শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী, ছয় বছর বয়সী কন্যা, ভাই ও ভাগনে। গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছিল প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটিতেও।
নিহত শরীফের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সে সময় স্থানীয় পৌরসভার বিভিন্ন ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছিল। স্থানীয় মেয়র ইয়ান বডি পৌরসভা এবং এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষে নিহতের স্ত্রী সায়লা ও মেয়ের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শরীফ আমাদের কমিউনিটিতে একজন ব্যতিক্রমী সদস্য ছিলেন, যিনি শহর এবং কাউন্টি কমিটিতে তাঁর সময় উৎসর্গ করেছিলেন, সেই সাথে একজন সফল উদ্যোক্তা এবং পরিবারে একজন নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন।
ঙবিহ ঝড়ঁহফ সিটিতে শরীফ রহমান ছিলেন একজন সম্মানিত ব্যবসায়ী। স্থানীয় ণগঈঅ’র বোর্ড মেম্বারও ছিলেন তিনি। খুনের ঘটনার পর ণগঈঅ’র এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, আমাদের কমিউনিটিতে শরীফ রহমানের অটুট উৎসর্গ সবার মনকে ছুঁয়ে গেছে। তাঁর এই অবদান আমাদের হৃদয়ে চিরকাল খোদাই হয়ে থাকবে।
শরীফ রহমান গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘আন্তর্জাতিক উন্নয়ন’ বিষয়ে মাস্টর্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তার আগে তিনি অর্থনীতি বিষয়েও লেখাপড়া করেন। ২০১৫ সালে তিনি ঙবিহ ঝড়ঁহফ সিটিতে ‘কারি হাউস’ নামের রেস্টুরেন্টটি কিনেন।
শরীফের বিধবা স্ত্রী শায়লা নাসরীন বর্তমানে রেস্টুরেন্টটি পরিচালনা করছেন। একই সঙ্গে তাদের আট বছরের শিশু কন্যাকেও লালনপালন করছেন।