ছায়া মানব

এ কে এম ফজলুল হক

ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

তিন

রহস্যের খোঁজে শফিক ভাইকে নিয়ে আমি আজ ‘টিম হর্টনে’। টরোন্টোর ওয়ার্ডেন রোডের উপরে ‘সেটেক স্কুলে’র গলিতে ঢুকতেই এই দোকান, ভিতরে অনেক জায়গা বসার। আমাদের আগেই বাড়িওয়ালি এসে উপস্থিত। আমরা মুখোমুখি এক টেবিলে। প্রথমে আলাপ পরিচয়। ওর নাম ‘রিচেল’, আমরাও পরিচয় দিলাম। এরপর শুরু আলোচনা-

: আচ্ছা, তুমি এ বাড়ি কিনেছো কবে?

: এই ধরো -পাঁচ মাস।

: কার থেকে কিনেছো?

বললো “এটা তো এস্টেট একাউন্ট। ‘এডওয়ার্ড নর্টন’ নামের এক ভদ্রলোকের এ এস্টেট। সে মারা যাওয়ার পর আমি কিনেছি। তার উত্তরাধিকারীরা সম্পত্তির টাকা নিয়ে গেছে। তবে সম্পত্তিটা অনেক দিন পড়ে ছিল।

: এস্টেট একাউন্টে তো অনেক ঝামেলা থাকে, তুমি কিভাবে কিনেছো ?

: ল’ইয়ারের মাধ্যমে ‘এস্টেট অ্যাডমিন’ থেকে কিনেছি।

: তারপর ?

কিনে রেনোভেট করেছি। আমার খেয়াল রিটায়ারমেন্টের সময়টা আমি এখানে কাটাবো।

: বেশ ভালো কথা, কত দিয়ে কিনেছো ?

: সেটা কি জানা তোমার খুব জরুরী ?

: না জরুরী কিছু না, এমনি জিজ্ঞেস করলাম; তোমার বলতে ইচ্ছা না করলে বলার দরকার নাই।

: আমি বলতে চাচ্ছি না।

: ঠিক আছে।

শফিক ভাইর হাতে নোট বুক। তিনি টুকটাক নোট করছেন। আমি চুপচাপ বসে আছি পাশে। তিনি মুখ তুলে রিচেলকে বললেন “তুমি চা কফি কিছু খাবে ?”

ও বললো “কফি হলে মন্দ হয় না।”

: কি খাবে?

: ডাবল ডাবল (কফির সাথে দু চামচ দুধ, দু চামচ চিনি)

: ও’কে নেক্সট, তুমি কি এ বাড়ির ইতিহাস কিছু জানো?

: আমি অতো কিছু জানি না, তবে বাড়িটা যখন কিনি মালিকের দুই ছেলে এসেছিলো আমেরিকা থেকে। তারা ওখানে সেটেল করেছে। তারা জানিয়েছিল- তাদের বাবা ছিল হান্টসভিলের বিরাট ব্যবসায়ী। কাঠের ব্যবসা করতো। শেষ বয়সে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। মারা যাওয়ার সময় ছেলেরা কাছে ছিল না।

: আচ্ছা, আমরা বাড়িটা কি আবার দেখতে যেতে পারি?

: অবশ্যই পারো ও কখন যেতে চাও?

: এখনো ঠিক করি নি। যাওয়ার আগে তোমাকে জানাবো। 

: বাই দা ওয়ে- তুমি কি এ বাড়িতে থেকেছো কখনো? 

এবার রিচেল ঢোক গিলে বললো-

: হা থেকেছি, তিন চার রাতের মতো হবে।

: কিছু দেখেছো?

: না আমি কিছু দেখিনি, বলে রিচেল ভ্রু কুঁচকে চোখ মুখ শক্ত করে ফেললো।

শফিক ভাই বললো “ঠিক আছে আমরা তাহলে উঠি’- বলে চলে আসলাম।

ফেরার পথে দেখি শফিক ভাইয়ের মুখ ভীষণ গম্ভীর। আমি জিজ্ঞেস করলাম “ কি হয়েছে ?”

বললো “ব্যাপারটা অনেক জটিল। ভদ্র মহিলা আমাদের সব খুলে বলে নি। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।” আমি জিজ্ঞেস করলাম- “কি বলে নি?”

বললো “আগে বাসায় চলো তারপর বলবো”

শফিক ভাই সেদিন আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। সপ্তাহ খানেক পর খোঁজ করলেন আবার।

: এই কি করছো?

আমি বললাম “অফিসের কাজ”।

: দু মিনিট কথা বলা যাবে?

: দু মিনিট না- আপনাকে দশ মিনিট সময় দিলাম ও দশ মিনিট পর্যন্ত বলতে পারবেন” 

: আচ্ছা তুমি ‘হেকেল’ মানে কি জানো ?

আমি আকাশ থেকে পড়লাম । ‘হেকেল’ এ শব্দ তো আমি বাপের জনমেও শুনি নি।  

শফিক ভাই বললো “হেকেল হলো যখন কোন প্রাণী উত্তেজিত হয়ে যায় তার ঘাড়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। দেখেছো কখনো ?”

আমি বললাম “হা দেখেছি আমাদের বাড়ির কুকুর গুলো এরকম করতো -অন্য বাড়ির কুকুর দেখলে”।

: হা তাহলে এবার রিচেলের বিহেভিওর মিলাও।

: কি মিলাবো ?

: ও শেষের দিকে কিছুটা নার্ভাস কিছুটা এক্সসাইটেড। মানুষ যখন কোন কিছু হাইড করতে চায়, তখন এ ধরণের আচরণ করে। সে ঢোক গিললো এবং চোখমুখ শক্ত করে ফেললো। : আমি বললাম তাইতো।

তিনি আরো বললেন “তার এ আচরণ দেখে আমার সন্দেহ হয়। আমি ইতিমধ্যে বাড়িটার হিস্ট্রি বের করেছি ‘হান্টসভিল মিউনিসিপাল্টি’ থেকে। এ বাড়ি ‘রিচেল’ বাজার মূল্য থেকে অনেক কম দামে কিনেছে। তার কারণ বাড়িটি অনেকদিন পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছিলো না। বিক্রি না হওয়ার কারণ তো বুঝ। ভিতরে সমস্যা। আমি ভিতরের সমস্যা খুঁজতে গিয়ে আরেকটা খবর জানতে পারি।

: কি খবর ?

: বাড়ির মালিক অসুখে মারা যায় নি। তাকে খুন করা হয়েছে।

: খুন করা হয়েছে! বলেন কি, মহা গেঞ্জাম। আমরা তো কিছুই জানি না। না জেনেই রেন্ট করলাম এখন তো দেখি মহা ফাঁড়া!”

: হা ও’ই রকমই তো দেখছি। শুধু এটা না তারপরও আছে।

আমি বললাম “কি আছে?” 

: ওই বাড়িতে অকাল্ট প্রাক্টিস হতো এক সময়।

আমি বললাম “ভাই আমার আর শুনতে ইচ্ছা হচ্ছে না”

: আচ্ছা থাক, আর বলবো না, চলো এবার হিমি’কে একটু দেখে আসি

: আমি বললাম “হা চলেন, আমিও তাই ভাবছি। কখন যেতে চান”?

: বিকালে।

: ও’কে ঠিক আছে বিকালে আপনি আমাকে তুলে নিবেন।

: বললো “আচ্ছা”

আমি জানি শফিক ভাই কোথাও একলা যেতে চান না। সব সময় তার ‘দোকলা’ চাই। তার এ’দোকলায় মাঝে মাঝেই আমাকে সঙ্গ দিতে হয়। আমিও অবলীলায় এ সঙ্গ দেই।

বিকালে যাবো বলেও যেতে পারি নি। যেতে যেতে রাত হয়ে গেলো। রাতের পথে বার্চমাউন্ট রোড ধরে গাড়ি চলছে। গাড়ির গ্ল­াস নামানো। হালকা বাতাস। বাতাসে গাছের পাতা দুলছে। আমরা যখন বার্চমাউন্ট আর ওয়ার্ডেনের কর্ণারে ‘পাইন হিল সিমেট্রি’ অতিক্রম করছি তখন দেখি গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে বিশাল চাঁদ। রজত শুভ্র বর্তনীর মতো। চাঁদের আলোয় কেমন ঘোর ঘোর ভাব। আমি শফিক ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম-

: আজ কি পূর্ণিমা ?

বললো “হা পূর্ণিমা”।

: আচ্ছা পূর্ণিমার রাত গুলো এমন হয় কেন; ঘোরের মতো লাগে।

: সাইন্স বলে এটা চাঁদের গতি বেগের ভিন্নতা। বাট, আমি মনে করি চাদের অপার বিস্ময়কর আলো। এই আলো দূর দূরান্তকে রহস্যময় করে তোলে। তুমি দেখবে চাদর আলোয় চেনা জনকেও লাগে কেমন অচেনা। ঠিক না ?

আমি বললাম : হা ঠিক; আচ্ছা আরেকটা কথা -শুনেছি ছোটবেলায় আম্মা বলতেন পূর্ণিমার রাতে পরী নামে; আপনি কি মনে করেন ?

: নামলেও নামতে পারে।

: আপনি কি জ¦ীন পরী বিশ্বাস করেন?

: অবশ্যই করি। এ জন্যই করি যে আমাদের অদেখা ভুবনে অনেক কিছু হচ্ছে আমরা এ’র কিছুই জানি না।

কথা বলতে বলতে আমরা হিমিদের বাসায় চলে এলাম। ড্রয়িং রুমে রিশাদ বসে আছে ঝিম ধরে। শফিক ভাই গাড়ির পিছন থেকে দু’টা পেকেট বের করে আনলেন। হিমি রিমির জন্য জামা। দু’টাই একই রকম দেখতে- শুধু রং ভিন্ন। হিমির জন্য অফ হোয়াইট আর রিমির জন্য নীল। শফিক ভাই ও’দেরকে ডাকলেন “এই তোমরা দুজন কোথায়”। দু’বোন উপর থেকে নেমে আসলো। হিমির চোখের নীচে কালি। চেহারা মলিন। কিছুটা ফ্যাকাসে। ডাক্তার নাকি বলেছে রক্ত দিতে হবে।

আমার প্রশ্ন ‘রক্ত দিতে হবে কেন?’

শাহানা পাক ঘরে। রান্না করছিলো ডাল জাতীয় কিছু। বাগার দিচ্ছিলো বোধ হয়। বাগারের গন্ধে পুরো ঘর গন্ধময়। সে জবাব দিলো ওর রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে।

আমি বললাম বলো কি, এ’টাতো খারাপ কথা, তোমরা রক্তের সব টেস্ট করিয়েছো ?

বললো হা করিয়েছি। কোন কিছুই তো পাওয়া যায় নি।

শফিক ভাই বললেন ও কিছু না। রক্ত শূণ্যতা হতেই পারে। আয়রন টায়রণ খেতে দাও ঠিক হয়ে যাবে। এখন বলো তোমাদের আর খবর কি?

: আমরা আছি এই তো – রিশাদ জবাব দেয়।          

: এর মধ্যে কোন সমস্যা হয়েছে?

: এই টুকটাক তো হচ্ছেই।

: ওর সাইকোলজিস্ট কি বলেছে?

: বলেছে স্কুলে দিয়ে দিতে ‘সোশ্যাল এডাপটেশনের’ জন্য।

ভেরি গুড। এবার মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বললেন এই মেয়েরা জামা পছন্দ হয়েছে?

দু’ বোন এক সাথে জবাব দিলো হা হয়েছে?

রিমি মানে ছোটটা জিজ্ঞেস করলো আচ্ছা আমার জন্য নীল আর ওর জন্য হোয়াইট কেন?

শফিক ভাই বললো -এর কোন কারণ নেই আর যদি থেকে ও থাকে আরেক দিন বলবো।

: না আজি বলবেন আমি শুনতে চাই। 

: ও বড় তাই ওর জন্য সাদা- আর তুমি ছোট তাই তোমার জন্য রঙিন।

: না হয় নি, আপনি ঠিক বলছেন না।

: আচ্ছা তুমিই খুঁজে বের করো কি ঠিক বলছি না, পারলে ওয়ান হান্ড্রেড ডলার।

: “সত্যি দিবেন? প্রমিস।

: হা প্রমিস।

প্রমিস বলে বললেন, ঠিক আছে তোমরা এবার যেতে পারো, আমি জরুরী কিছু কথা বলবো তোমাদের বাবা মার সাথে।

তারা চলে গেলো। তিনি রিশাদের দিকে ফিরে বললেন-

: এর মধ্যে কি হয়েছে খুলে বলো।

রিশাদ বললো : ওই একই। মাঝে মাঝে রাতে উঠে বসে থাকে। কিছু জিজ্ঞেস করলে কেমন দ্বৈত গলায় কথা বলে। বলে আমাকে দিয়ে আসো ওর কাছে। বিশ্বাস করেন ওর ভয়ে আমরা রাতে ঘুমাই না- কখন আবার বেরিয়ে যায়। ডাক্তাররা এ’টা শুনে বলে ‘সিজোফ্রেনিয়া’। আমার কেন আমার চৌদ্দ গুষ্টিতেও কারো এ’রোগ নাই। কি একটা ফেসাদে পড়লাম রে, ভাই।আমরা কথা বললাম না, ওর অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম শুধু।

শাহানার বাসা ডুপ্লেক্স। উপরে তিন বেড। নিচে ড্রয়িং আর ডাইনিং। আমরা ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলছি ও শাহানা মাঝখানে এসে যোগ দিলো। শাহানা বললো আজকে থেকে যান আপনারা দুজন’ই।

শফিক ভাই বললো, পাগল – কাজের চাপে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না তোমার এখানে বেড়াবো।

: মামা এমন করেন কেন! একদিনের জন্যইতো বলছি।

: আগে সব ঠিক হোক তারপর না হয় এসে থাকবো।

আমিও আপত্তি করলাম ‘না আজ না অন্য একদিন’। এমন সময় উপর থেকে চিৎকার -মা এসে দেখে যাও আপু কেমন জানি করছে। আমরা সবাই উপরে গেলাম। গিয়ে দেখি হিমির চোখ উল্টানো। মুখ দিয়ে ফেনা ঝরছে। মুখে বলছে “যা, সরে যা, আজ রাতে আমি চলে যাবো ওর কাছে”। রিশাদ ঝাপ্টে ধরলো মেয়েকে। আমি হাত ধরলাম। হিমির গা থেকে আগুন বেরুচ্ছে। হাপরের আগুন। শফিক ভাই বললো “হিমি কি হয়েছে আমাকে বলো?”

: আমাকে ছেড়ে দে আমি চলে যাবো। ওর কাছে যাবো। আজ রাতে আমরা খেলবো লেকের ধারে।

শফিক ভাই বললো “আমি কি তোমার সাথে যেতে পারি”

: না পার না।

: কেন পারি না।

: তুমি অপরিচিত তাই।

আচ্ছা আরেকটা কথা বলো – “আজ রাতে কেন ?”

: আজ রাতে ওখানে অনেক আলো। চাঁদের আলো আমার অনেক পছন্দ-দেখো দেখো ওই লোকটা আসছে।

: কোন লোকটা?

: ওই যে বোর্ড নিয়ে বসে থাকে। কাঠের বোর্ড। আমাকে বলে তোমার পুতুল দাও, খেলনা দাও, রক্ত দাও।

আমরা কিছুই বুঝলাম না। আধাঘণ্টা দস্তাদস্তির পর হসপিটালে নিয়ে যাবো। গাড়িতে উঠালাম – এমন সময় দেখি পুরাপুরি সুস্থ। রিশাদ জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছিল তোমার ?” বলে “কই কিছু না, আমি তো ঠিকই আছি” বলে আমাদের মুখের দিকে তাকাতে থাকে।

শফিক ভাই ওর দিকে তাকিয়ে বলে “তুমি সত্যি করে বলতো ওই লোকটাকে চেনো তুমি?”

হিমি অবাক হয়ে বলে “কোন লোকটা”?

শফিক ভাই বলে “না ঠিক আছে আমার জবাব আমি পেয়ে গেছি”।

বাইরে ঘন কুয়াশা। এই কুয়াশার ভিতর আমরা হিমিকে ঘরে দিয়ে আবার গাড়িতে উঠলাম -চলে যাবো। শাহানা বাইর পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এসে জিজ্ঞেস করে – “মামা কি হয়েছে কিছু তো বলেন না! আমার মেয়ের কি হয়েছে ?”

শফিক ভাই বললেন “কি হয়েছে আমি নিজেও জানি না তবে জানার চেষ্টা করছি”। শাহানা ভারাক্রান্ত মুখে ঘরে চলে গেলো। শফিক ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন “কটা বাজে?”

আমি ঘড়ি দেখে বললাম “রাত সাড়ে বারোটা”। ও বললো “মাইন্ড ইট”।

আমি চাকরি করি এক কানাডিয়ান কোম্পানিতে। কুইবেক বেইজড কোম্পানি। এসব কোম্পানিতে যা হয় -বসেরা পেছনে লেগেই থাকে। ক’দিন থেকেই দেখি অফিসের ঝামেলা। হেড অফিস থেকে অডিট এসেছে। কয়েকটা পয়েন্ট নিয়ে তাদের আপত্তি – আপত্তিগুলো তাদের চোখে মারাত্মক আসলে তেমন কিছু না। এদেশে কমপ্লায়েন্স যে এতো বেশি বলে শেষ করা যাবে না। আমি এসব ঝামেলা পোহাচ্ছি। এমন সময় রিচেল মানে বাড়িওয়ালির ফোন। আমি আশ্চর্য হলাম-“তুমি আমার নাম্বার পেলে কি করে?” বললো, শফিক আমাকে দিয়েছে এমার্জেন্সির জন্য’,

“ও আচ্ছা। এখন কি করতে পারি”?

“শফিক কোথায় ?”

আমি বললাম “সরি, আমি তো জানি না, ও কোথায় ? আমার সাথে ক’দিন কথা হয় না। তার নাম্বারে চেষ্টা করেছো?”

: হা করেছি, কিন্তু নাম্বার বন্ধ।

: কি ব্যাপার বলতো? 

: সে প্রপার্টি এডমিনের -মানে যার মাধ্যমে আমি বাড়িটা কিনেছিলাম, তার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো। আমি তার পারমিশন নিয়েছি; তুমি কি তাকে একটু জানিয়ে দিবে”?

আমি বললাম-“অবশ্যই দেব”।

: তুমি কি ফোন নাম্বারটা একটু লিখে নিবে ? বললাম “তুমি টেক্সট করে দাও, আমি আবার কখন হারিয়ে ফেলি। সে হাসলো। হেসে বললো “ইউ আর সো ফানি”।

আমি বললাম “ইয়েস আই এম, থ্যাংক ইউ”।

থ্যাংক ইউ বলে দেখি সময় চলে যাচ্ছে দ্রুত। কাজ কিছুই আগায়নি। বললাম “সরি আই এম ইন বিটুইন সামথিং আর কিছু বলবে ?”

: ও’হা- আরেকটা কথা শফিককে বলো এসব নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি না করে।

আমি অবাক হয়ে বললাম, “কেন ? আমাদের মেয়ে এতো অসুস্থ। তাকে নিয়ে আমাদের যমে মানুষে টানাটানি আর তুমি বলছো বাড়াবাড়ি না করতে”?

: দেখো, তোমাদের আমি সব খুলে বলেছি। তারপরও তোমরা সন্তুষ্ট না।

: সন্তুষ্ট হওয়ার কি কোন কারণ আছে? তুমি একটা বলো এর পিছে আরেকটা ঘটনা বের হয় ; উই নিড টু ফাইন্ড আউট দা আলটিমেট ট্রুথ।

: আচ্ছা, ঠিক আছে তোমাদের যা ইচ্ছা করো- বলে সে ফোন রেখে দিলো।

আমি আবার কাজে ফিরে আসলাম। কাজে আর মন বসাতে পারি না। এ লোকটা আবার গেলো কোথায়! কয়েকবার ফোন করলাম, ধরলো না। বিকালে বাসায় ফিরলাম। বউ’কে জিজ্ঞেস করি-“কি ব্যাপার তোমার ভাই কই?”

বললো “ভাইয়া তো আমেরিকা?”

: আমেরিকা মানে ?

: আমেরিকা মানে স্টেটস, ভাবি কে নিয়ে গেছে বেড়াতে ।

: আমাকে বলে নাই কেন?

: তোমার অফিসের কাজ দেখে তোমাকে জানাতে নিষেধ করেছে।

: তাই বলে আমাকে কিচ্ছু জানাবে না। এদিকে তোমার ভাইকে মানুষ হেজাক বাতি দিয়ে খুজছে।

বললো ‘কে খুঁজছে’। বললাম ‘রিচেল মানে বাড়িওয়ালি’। আমি রিচেলের খোঁজার কারণটাও বললাম তাকে। এমন সময় দেখি আমার শাশুড়ি এসে ঢুকলেন ‘এ ঘরে। বললেন “কি ব্যাপার তোমাকে তো আমি দেখি’ই না। আমি ঘুম থেকে উঠলে তুমি নাই আবার রাতে দেরি করে আসো যখন আমি ঘুমে। আমি বললাম “অফিসের ঝামেলা যাচ্ছে তাই দেখছেন না ।  (চলবে)

এ কে এম ফজলুল হক

লেখক পরিচিতি :
কানাডা প্রবাসী এ কে এম ফজলুল হক একজন সাবেক ব্যাংকার। অবসরে লেখালেখিও করেন। বর্তমানে টরন্টোর নিকটবর্তী পিকারিং এ পরিবার নিয়ে বাস করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *