কানাডায় এক কোটিরও বেশী মানুষ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রেডন গ্যাসের মধ্যে বাস করছেন নিজেদের আবাসস্থলে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট, অক্টোবর ২৪, ২০২৪ : চার কোটি মানুষের দেশ কানাডায় এক কোটিরও বেশী মানুষ ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রেডন (Radon) গ্যাসের মধ্যে বাস করছেন নিজেদের আবাসস্থলে। আর এই ঝুঁকি ক্রমাগতই বৃদ্ধি পাচ্ছে কানাডাজুরে। খবর মাইকেল ফ্র্যাঙ্কলিন- সিটিভি নিউজ।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালগারির এক সমীক্ষায় সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশিত হয়। সমীক্ষায় বলা হয় বর্তমানে প্রায় ১৮ শতাংশ কানাডিয়ান বাড়িতে উচ্চ মাত্রার রেডন গ্যাস রয়েছে যা হেলথ কানাডার গ্রহণযোগ্য মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।
হেলথ কানাডার ‘ন্যাশনাল রেডন প্রোগ্রাম’ এর সদস্য ডা. পাওয়েল মেকারস্কি বলেন, আমরা প্রথম কানাডাব্যাপী রিপোর্ট প্রকাশ করার পর থেকে গত ১২ বছরে যে প্রমাণ পেয়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে উচ্চমাত্রায় রেডন গ্যাস রয়েছে এমন বাড়ির সংখ্যা বাড়ছে।
রেডন গ্যাস সম্পর্কে ২০২৪ সালে প্রকাশিত সমীক্ষাটি আরো আপ-টু-ডেট তথ্য উপস্থান করছে যা কানাডিয়ানদেরকে রেডন এক্সপোজার থেকে রক্ষা করার গুরুত্ব তুলে ধরছে।
রেডন কি?
রেডন একটি বর্ণহীন, গন্ধহীন তেজস্ক্রিয় গ্যাস এবং বিশ্ব্পী ফুসফুসের ক্যান্সার সৃষ্টিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম কালপ্রিট। এটি তৈরি হয় যখন মাটি ও পাথরে থাকা ইউরেনিয়াম ব্রেকডাউন হয়। কানাডার মাটি ও পাথরে এই কমন উপাদানটির উপস্থিতি রয়েছে। হেলথ কানাডা বলছে, এই গ্যাস মাটির সংস্পর্শে থাকা যে কোন ছিদ্রপথে ঘরের ভিতর প্রবেশ করতে পারে। যেমন ঘরের মেঝে বা দেয়ালের ফাটল, কন্ট্রাকশন জয়েন্ট, সার্ভিস পাইপের চারপাশে কোনো ফাঁক ইত্যাদি।
বাড়ির অভ্যন্তরে র্যাডনের মাত্রা কতটুকু হতে পারে সেটি নির্ভর করে স্থানীয় ভূতত্বের উপর। এছাড়া বাড়ি নির্মাণের কলাকৌশল এবং ভেন্টিলেশনের উপরও নির্ভর করে এটি।
সমীক্ষায় বলা হয়, কানাডার কোন অঞ্চলই রেডন এক্সপোজার থেকে মুক্ত নয়। সে কারণে বাসিন্দাদের উচিত তাদের বাড়ি পরীক্ষা করে দেখা। কারণ দীর্ঘদিন ধরে রেডন গ্যাসের মধ্যে থাকলে ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে।
বাড়িতে র্যাডনের উপস্থিতি পরীক্ষা করা ও প্রশমিত করা
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালগারি’র একজন অনকোলজিস্ট ড. ডোরিন ইজেইফ বলেন, বাড়িতে ডিটেক্টর দিয়ে এই গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা যেতে পারে। আর একবার সেই গ্যাসের উচ্চ উপস্থিতি পাওয়া গেলে তা অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, রেডন প্রশমন কোম্পানির সাথে কথা বলুন। তারা আপনার বাড়িতে এসে বেসমেন্টে একটি ইউনিট স্থাপন করতে পারে যা ফ্যান ব্যবহার করে রেডন গ্যাস দূর করবে।
ড. ডোরিন জানান বিজ্ঞানীরা কানাডার বাড়িঘরে র্যাডনের উপস্থিতি এবং স্বাস্থ্যের উপর তার বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে জানতে পেরেছে মাত্র বছর দশেক আগে।
তিনি আরো জানান, দীর্ঘ সময় ধরে রেডনের প্রভাবে অনেক রোগীর ফুসফুসে টিউমার হতে পারে এবং এই টিউমার কোন লক্ষণ ছাড়াই ফুসফুসে বেড়ে উঠতে পারে এবং যখন তা আবিষ্কৃত হয় তখন সেটি অলরেডি অ্যাডভান্স পর্যায়ে চলে আসে।
ড. ডোরিন আরো জানান, বাড়ির মালিকেরা অনলাইনের মাধ্যমে একটি টেস্ট কীট সংগ্রহ করতে পারেন। এই টেস্ট কীট বাড়িতে ফিট করলে তা তিন মাসের ডাটা সংগ্রহ করবে। এরপর এই কীট কোম্পানির কাছে ফেরত পাঠালে তারা সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাড়ির মালিককে জানাবে সেখানে কত মাত্রার রেডন গ্যাসের উপস্থিতি রয়েছে।
বাজছে অ্যালার্ম
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগারি’র গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য ডা. অ্যারন গুডারজি বলেন আপডেট করা রিপোর্টটি জানাচ্ছে কানাডিয়ানরা কি ভাবে রেডনের সংস্পর্শে আসছেন। আর রিপোর্ট এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে, কানাডিয়ানরা পৃথিবীতে সবচেয়ে উচ্চ মাত্রায় রেডন এক্সপোজারের ঝুঁকিতে রয়েছে। এবং এর মানে হলো যে আমাদেরকে জরুরিভাবে এটির সমাধান বের করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এর খারাপ প্রভাব থেকে কানাডিয়ানরা মুক্ত থাকতে পারেন। তিনি আরো বলেন, বিশ্বের যে কটি দেশে ধূমপানের হার সবচেয়ে কম কানাডা তার মধ্যে একটি। কিন্তু ফুসফুসের ক্যান্সারের হার দেশটি সবচেয়ে বেশি।