ছায়া মানব

ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস

এ কে এম ফজলুল হক

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

দুই 

কথায় বলে ‘গুরুজন পথের দিশা’ – আজ সে কথার প্রমাণ পেলাম চাক্ষুষ। উনি যেন কিছু হয় নি এমনভাব করছেন। সারা ঘরে দোআ পড়ে ফু দিচ্ছেন, একবার এই মাথায় আরেকবার ওই মাথায় একা একাই হেটে বেড়াচ্ছেন।

আমাদের বললেন ‘এই তোমরা চা টা খাবে?’

আমরা বললাম ‘খাবো না’

‘কেন খাবে না। অবশ্যিই খাবে’। তিনি ভাবিকে ডেকে বললেন,

‘এই বৌমা চা করো’

ভাবি বললেন ‘ওরে ব্বাবা, আমি যেতে পারবো না পাক ঘরে।’

শফিক ভাইকে বললেন- ‘এই তুই যা সাথে।’

তারা দু’জন চা করতে গেলো পাকঘরে। ভাবি চায়ের হাড়ি খুঁজছেন। চা পাতা, দুধ আমরা সাথেই এনেছি, শুধু টেপ থেকে পানি। পানির সাথে দুধ মিশিয়ে চড়িয়ে দেয়া হলো চুলায়। দুধ উতরাচ্ছে। দুধ উতরানোর সাথে সাথে টি ব্যাগ দেয়া হয়েছে হাড়িতে। এমন সময়ের ঘটনা, ভাবি চায়ের কাপের জন্য আসলেন এ রুমে। পিছে পিছে শফিক ভাই ও চলে আসলেন। জিজ্ঞেস করলেন ‘কে কে চা খাবা?’ উনার কথা শুনে তিনজন জানালো তারা খাবে। শফিক ভাই বললেন, ‘মাত্র তিনজন? তাহলে এতো কষ্ট করে চা বানানোর কি দরকার ছিল!’

ভাবি আবার পাকঘরে গেলেন। ঢুকেই চিৎকার ‘ও মাগো, গেলাম গো’। আমরা দ্রুত ছুটে গেলাম সেখানে। কে নাকি জানালা দিয়ে চুলার নব ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমরা স্বচক্ষে দেখলাম চুলার আঁচ সর্বোচ্চ। একটা ঘন ফেনা’র ধারা পাতিলের উপর দিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে ক্রমশ। সাথে একটা পোড়া গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে দুধের। এবার আর কেউ চা খাবে না। সবাই ঠান্ডায় জমে যাওয়ার মতো ঠুক ঠুক করে কাঁপছে।

এসব দেখে শাশুড়ি বুঝেও না বুঝার ভান করছেন। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সবাইকে স্বাভাবিক রাখতে, বললেন-

‘কেন এতো ভয় পাচ্ছ – ভয়ের কিছু নেই। আমি কত দেখেছি।’ একবার কি হয়েছে জানো? আমি তখন রংপুর সুগার মিলে। ও’র বাবা জি,এম। আমরা নতুন বদলি হয়ে এসেছি- সম্ভবত ঠাকুরগা সুগার মিল থেকে। নতুন আসলে যা হয়, গোছ-গাছ করতে সময় লাগে। আমরাও তাই করছি, এ সময়ের ঘটনা। আমাদের জি,এম এর বাংলোয় কে যেন হাটা হাটি করে। রাত দুপুরেও আমরা এ’রুমে থাকলে ওই রুমে যায়। কখনো ডাইনিং টেবিলের চেয়ার ধরে নাড়া চাড়া করে। আবার কখনো ঘরে ঢিল মারে। অনেকবার বললাম চলে যেতে। কিছুতেই যাচ্ছে না। পরে রংপুর বড় মসজিদের ইমাম সাহেবের থেকে পানি পড়া এনে সারা ঘরে ছড়িয়ে দিলাম। ব্যাস। এর পর থেকে আর কিছু নেই। আসল কথা কি জানো? ‘আল্লাহ রসূলের নাম নিলে এসবে কোন ভয় নেই।’ উনার দেখাদেখি আমরাও এবার দো’আ দুরুদ শুরু করলাম। জোরে জোরে।

অস্কার আসলো অনেকক্ষণ পর। পুলিশের গাড়িতে করে সাইরেন বাজিয়ে। তার সাথে আরেক অফিসার। অফিসারের মাথায় চুল নেই। ক্যারিবিয়ান চেহারা। অস্কার কিন্তু কানাডিয়ান। আমাদের দেখেই একগাল হেসে বললো : ‘সরি-  আই এম লেইট। আমার আরেকটা কল এসেছিলো। হাউ’এভার এখন বলো কোথায় দেখেছো সে মেয়েকে।’ শফিক ভাই সে জায়গা দেখালেন ‘ঘরের পেছনে’। অস্কার দেখে হেসে উড়িয়ে দিলো। আমাদের তিনজনকে দেখিয়ে বললো ‘এটা তোমাদের ডিলুশন। অনেক সময় পুরানো বাড়ি দেখলে আমাদের এই ডিলুশন হয়। কারণ আমরা হরর মুভি দেখে অভ্যস্থ। হরর মুভিতে এসব পুরানো বাড়ি থাকে। যার ফলে ব্রেইন এক ধরনের সিকোয়েন্স তৈরি করে। বুঝলে, এসব ব্রেইনের কারসাজি। আচ্ছা বাদ দাও, আজকের খেলা দেখেছো?’

ফরিদ বললো ‘কোন খেলা?’

: ‘বাস্কেটবল’। 

আমরা বললাম ‘দেখি নি’।

‘দেখোনি মানে?’-

অস্কার চোখ মুখ উজ্জ্বল করে বললো: ‘মিস করেছো, আরে রেপটর্স তো ফাটিয়ে দিয়েছে। স্টেট ওয়ারিয়রস’কে হারিয়েছে হান্ড্রেড ফোর্টিন টেনে। কি খেলা রে বাবা!’ 

আমরা দুঃখ মাখানো কণ্ঠে জবাব দিলাম ‘সরি ওই মিসড ইট’।

অস্কার বাস্কেটবল পাগল। ভদ্রতার  খাতিরে ওর সাথে কিছু কথা চালিয়ে যেতে হয় ভেবে শফিক ভাইকে ঠেলে দিলাম আলোচনায়। আমাদের খেয়াল- ওকে যতক্ষণ ধরে রাখা যায় ততক্ষণ বাচ্চারা একটু রিল্যাক্স থাকবে।

তিনি বললেন ‘দেখো আমি কিন্তু ‘এন ওয়াই কে’র (নিউ ইয়র্ক নিক্স) সাপোর্টার।’

: ‘দে আর নট ডুইং গুড।’

: ‘তোমার কথা আমি মানতে পারলাম না।’

: ‘কি মানতে পারলে না?’

: ‘নিক্স মানে নিক্স। ওদের খেলার স্টাইলই আলাদা’ 

: ‘আলাদা হোক, বাট আফটার অল পারফমেন্স দিয়ে কথা।’

অস্কার আর শফিক ভাইয়ের মধ্যে আলোচনা জমে উঠেছে। আমরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুনছি।

এই সময় অষ্কারের সাথের অফিসার বলে উঠলো –

: ‘আচ্ছা এখানে আর কি কি আছে?’

আমরা বললাম, ‘একটা আস্তাবল আর লেকের উপর ঘাট, এইতো।’ 

: ‘চলতো একটু আস্তাবলটা দেখে আসি।’

আমরা ও বললাম -‘চলো।’

আস্তাবলের ভিতর ঢুকে আমরা হতবাক। হিমি এখানে। আমি হিমি’কে দেখে দৌড়ে বের হয়ে যাবো এমন সময় ফরিদ আমাকে টেনে ধরলো। আমার হাত পা কাঁপছে। ফরিদে’র ও তাই।

অষ্কার বলে : ‘হু আর ইউ?’

: ‘আই এম হিমি।’

শফিক ভাই বললো ‘সি ইজ মাই নিসেস ডটার। কিন্তু তুমি এখানে কেন, তুমি না ঘরে ছিলে’

: ‘ঘর থেকে চলে এসেছি।’ এমন সময় ফরিদ ফোন বের ঘরে শাহানাকে জিজ্ঞেস করলো-

‘এই দেখতো হিমি কোথায়?’

: ‘ও তো এখানেই বসা ছিল। এখন দেখছি না।’ এই হিমি কোথায়, হিমি কোথায় বলে তিনি চিৎকার শুরু করলেন।

ফরিদ গলা উচিয়ে বললো ‘হিমি তো এখানে। আস্তাবলে। এসে দেখে যাও’ সাথে সাথে সবাই ঘর থেকে দৌড়ে চলে আসলো। এখন হিমি’কে  জিজ্ঞেস করছে,

: ‘মা তুমি কখন এলে?’

: ‘একটু আগে’

শাহানা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে ‘মা তুমি কি করে এলে এই অন্ধকারে’

: ‘ওকে দেখতে’।

: ‘কাকে দেখতে?’

: ‘যে আমার সাথে খেলতে চেয়েছিলো, তাকে’। 

: ‘এখন কোথায় ও’?

: ‘তোমাদের দেখে চলে গেছে।’

‘মা কি বলছো এসব। দেখেন ফরিদ মামা ও এসব কি বলছে।’ বলেই শাহানা ঢুকরে কেঁদে উঠলো। তার দেখাদেখি অন্য সবাই। পুলিশ বেকুব হয়ে তাকিয়ে আছে। তাদের চোখ মনে হয় ঠিকরে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু পুলিশ পুলিশই। সহজে ছাড়ার পাত্র নয়। অষ্কার বললো ‘ওকে গাইজ গো ব্যাক টু ইওর প্লেস, আমি ওর সাথে একটু নির্জনে কথা বলবো’। এই বলে সে হিমি‘কে নিয়ে গেলো সামনের খোলা জায়গায়। আমরা কটেজে ফিরে আসলাম। 

পুলিশ যাওয়ার পর ঠিক হলো আমরা সবাই চলে যাবো। মালপত্র গাড়িতে উঠানো হলো।

হিমি বললো, ‘আম্মু, আমি যাবো না আমি ওর সাথে খেলবো’।

কি মুশকিল। হিমি’কে এক রকম জোর করে গাড়িতে তোলা হলো। হিমি’র ছোট রিমি কেবলি বলছে ‘আপু এরকম করে না প্লিজ, আমরা তো ভয় পাচ্ছি।’

শফিক ভাই চিৎকার করে উঠলেন ‘চুপ সবাই চুপ। গাড়িতে উঠো’। আমাদের দুই গাড়ি। সামনের গাড়ি চালাচ্ছেন শফিক ভাই। পিছনের গাড়ি ফরিদ – আমি তার পাশে বসা। গাড়ি চলতে শুরু করেছে হঠাৎ ফরিদ ফিস ফিস করে বললো ‘পিছনে তাকান’। আমি মাথা ঘুরে তাকিয়ে দেখি। ‘সর্বনাশ’ আমাদের দেখা সেই মেয়েটি দাড়িয়ে আছে। ঘরের বাইরে। যেন যুগ যুগান্তরের ওপার থেকে কেউ আমাদের দেখছে। তার দাঁড়ানোর ভঙ্গি অসহায়। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।

শাহানার জামাই রিশাদ। দেশে থাকে। গার্মেন্টসের ব্যবসা  করে। ব্যবসা বেশ জম জমাট। কানাডা আসার জন্য তাকে টিকিট করতে বলা হলো আর্জেন্ট। মেয়ের শরীর খারাপ। কেমন খারাপ তাকে জানানো হলো। সে প্রথম প্রথম পাত্তা দেয় নি। দু একদিন মেয়ের সাথে কথা বলে তার আক্কেল গুড়ুম। বাবা মেয়ের কথা হচ্ছে এরকম-

: ‘মা তুমি কেমন আছো?’

: ‘আমি ভাল আছি’।

: ‘শুনলাম তোমার মন খারাপ’?

: ‘খারাপ না তো কি – তোমরা আমাকে যেতে দিচ্ছ না ও’র কাছে’।

: ‘মা এসব নিয়ে ভাবার দরকার নেই’।

: ‘বাবা আমি সত্যি বলছি- তোমরা আমাকে রেখে আসো ওখানে’।

: ‘ছিঃ ওখানে কেন যাবে তুমি ? তুমি তো আমাদের কাছে থাকবে’।

হিমি সেকথার কোন উত্তর দেয় নি । চোখ মুখ শক্ত করে বললো-

: এই তুই চুপ করবি নাহলে…।’ বদমাশ কোথাকার – গলাটা কিন্তু হিমি’র না। অন্য কারো।

রিশাদ পাগলের মতো গিয়ে টিকেট জোগাড় করলো। এদিকে আমরা তার মেয়েকে নিয়ে কঠিন দিন পার করছি। প্রথমে তাকে নেয়া হলো সাইকোলজিস্ট এর কাছে। সেখানে সে অত্যন্ত স্বাভাবিক। বললো আমার কিছু হয় নি।  সাইকোলজিস্ট তাকে ক্লিনিকাল ইন্টারভিউ নিলেন। সে সব প্রশ্নের উত্তর ঠিক ঠিক দিলো। এক সময় সাইকোলজিস্ট বললো ‘না সে পুরোপুরি সুস্থ। আপনারা তাকে বাসায় নিয়ে যান।’

বাসায় আসার পর শুরু হলো আগের মতো। সে রাতে জ্বর আসলো, প্রচন্ড জ্বর; সাথে খিঁচুনি। চোখ দুটি জবা ফুলের মতো লাল টকটকে। উ™£ান্তের মতো চেহারা। কেবলি বলছে , ‘ও আমাকে ডাকছে, আমাকে ওর কাছে যেতে দাও’।

শফিক ভাই বললেন ‘ও কোথায়’?

: ‘ওই জায়গায়’।

: ‘আচ্ছা দিয়ে আসবো। তুমি এখন খাওয়া দাওয়া করো, আগে জ্বর সারুক তারপর দেখা যাবে’।

‘তারপর কেন, এখনই’ বলে হাত পা ছুড়াছুড়ি করছে। ছুড়াছুড়ির কারণে হাতে পায়ে ছোটোখাটো জখম হয়েছে সে দিকে তার খেয়াল নেই। তার গায়ে কোত্থেকে এতো  শক্তি এ’লো তিন জন মিলে ধরে রাখা যাচ্ছে না। আমরা তাকে হসপিটালে নিয়ে গেলাম এবার ইমার্জেন্সিতে। ইমার্জেন্সি থেকে বলে সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে যাও। আমরা সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে গেলাম। সেখান থেকে দিলো কিছু ঘুমের ওষুধ। তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে প্রায়ই। হঠাৎ হঠাৎ সে ঘুম থেকে জেগে উঠে গভীর রাতে। জিনিসপত্র ছুড়াছুড়ি করে। শাহানার মাথা পাগল হওয়ার মতো অবস্থা। আমরা একেকজন একেকদিন তার বাসায় ডিউটি করছি। আজ আমার দিন। আমি ভীতু মানুষ তারপরও কোন এক অজানা কারণে আমার বুকে সাহস ভর করলো। করার কারণ আমার বাচ্চা গুলো। খুব গভীর ভাবে চিন্তা করলাম এ’বিপদ তো আমারও হতে পারতো। তখন আমার পাশে কে দাড়াতো? সুতরাং এখন পিছালে চলবে না। যা হবার হবে – মানুষ তো মৃত্যুকে ভয় পায় আবার সে মানুষই কঠিন রোগগ্রস্ত হয়ে মৃত্যু কামনা করে -কারণ তখন তার আর উপায় থাকে না। আমিও নিরুপায় হয়ে শাহানার বাসায় উপস্থিত হলাম। যে বাসা এতদিন ঝকঝকে পরিপাটি সে বাসা আজ লণ্ডভণ্ড। ড্রয়িং রুমে কাথা বালিশ, ওষুধের ডিবা। সসের বোতল উল্টে কফি টেবিল মাখামাখি। বই খাতা মেঝেতে ছড়ানো। আমি কোনমতে সোফার একপাশে গিয়ে বসলাম। কতক্ষণ পর শাহানা আসলো।

আমি বললাম ‘এখন কি করছে’?

বললো ‘ঘুমুচ্ছে’।

আমি বললাম ‘ঘুমাক। এই ফাঁকে তুমিও বরং একটু ঘুমিয়ে নাও’।

: ‘আমি ঘুমাবো কিন্তু রিশাদ তো আসবে রাতে’।

: ‘কখন আসবে?’

: ‘তিনটা চারটার দিকে’।

: ‘আসুক সমস্যা নাই- আমি দরজা খুলে দিবো। আর হিমি উঠলেই আমাকে ডেকে দিবে কেমন?’

শাহানা বললো ‘আচ্ছা’।  

আচ্ছা -এমনভাবে বললো শুনে আমার ভিতরটা ফাঁকা হয়ে গেল। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না, কিভাবে তাকে সান্তনা দেয়া যায়।

খুব কঠিন সময়ে মানুষের সঙ্গী হয় ‘বই’। আমিও বই সাথে এনেছি রাতে পড়বো বলে। বইয়ের নাম ‘অব হিউমান বনডেজ’। লেখক সমারসেট মম। গল্পটার শুরু এভাবে’ ফিলিপ কেরি নামের এক বালক চাচার কাছে মানুষ হয়। চাচার এখানে ছকে বাধা জীবন-তার ভালো লাগে না। সে জার্মানি পড়তে যায়। সেখানেও তার ভালো লাগে না। আবার ফিরে আসে ইংল্যান্ড। এরপর চার্টার্ড একাউন্টিং শুরু করে। সেটাও ভালো লাগে না, পরে ডাক্তারি। এভাবে ঘুরতে থাকে। একদিন মিলড্রেড রজার্স নামের এক ওয়েট্রেসের সাথে সাক্ষাত হয় – বই পড়তে পড়তে আমার চোখের পাতা ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম। কলিং বেল বাজার শব্দে ঘুম ভাঙলো। আমি উঠে দরজা খুলে দেখি রিশাদ এসে গেছে। শাহানা শব্দ পেয়ে উপর থেকে নেমে আসে। রিশাদকে জড়িয়ে ধরে তার কি কান্না! তাদের জামাই বৌয়ের কান্না আমার সহ্য হলো না। নীরবে বের হয়ে এলাম।

বাড়িওয়ালি সেদিন ফোন ধরে নি। পরে জানায় সে প্রেসারের ওষুধ খেয়ে শুয়েছে তাই ধরতে পারে নি। ভালো কথা। আমরা তাকে বাড়ির সমস্যার কথা জানালাম। সে বলে- নাতো এ ধরণের কিছু তার জানা নাই। তাকে আবার মেসেজ করা হলো তারপরও সে পাত্তা দেয় নি। এ দেখে শফিক ভাই ভীষণ ক্ষেপলেন। তিনি ঠিক করলেন তার বিরুদ্ধে মামলা করবেন। মামলার কাগজ পত্রও জোগাড় হচ্ছে জানালেন। ওই রাতের পুলিশ রিপোর্ট সংগ্রহ করে তাকে কপি পাঠালেন। ব্যাস আর যায় কোথায়। এখন সে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। বারে বারেই বলছে ‘তুমি আমার সাথে বস। আমরা যে কোন একটা টিম হর্টনে বসতে পারি তুমি। যা করতে বলবে আমি তাই করবো’। শফিক ভাই গা করছেন না ।

শেষমেশ তিনি রাজি হলেন । কিন্তু শর্ত আমাকে তার সাথে যেতে হবে। আমি বললাম ‘ভাইরে আমাকে এসব মামলা মোকদ্দমায় জড়ায়েন না’। ‘আরে পাগল, মামলা করতে যাচ্ছে কে। ভয় দেখলাম শুধু। আমার উদ্দেশ্য এ’র রহস্য খুঁজে বের করা’

আমি বললাম ‘রহস্যের চিন্তা বাদ দিয়ে আগে ওর চিকিৎসা করান’।

: ‘কি যা তা বলছো সব, রোগের কারণ না জানলে চিকিৎসা হবে কিভাবে?’

আমি বললাম ‘রোগের কারণ আবার কি?’

: ‘দেখো এ পৃথিবীতে কোন কিছু এমনি এমনি হয় না। এর পেছনে কারণ থাকে। এই যে সূর্য দেখছো আলো দিচ্ছে। এর পেছনে ও কারণ আছে, কেউ একজন তাকে দিতে বলেছে, তাই সে দিচ্ছে। যদিও বিজ্ঞান বলছে অন্য কথা।’

আমি বললাম ‘বিজ্ঞানটাই তো মানুষ বিশ্বাস করে।’       

: ‘আমিও করি, কিন্তু সবটুকু না’

: ‘সবটুকু না মানে?’

: ‘সবটুকু না মানে- বিজ্ঞান অনেক সময় ভুল করে।’ কিন্তু ধর্ম বিশেষ করে কোরান দেখো, চোদ্দশ বছর ধরে একটু’ও ভুল করে নি। ধরো সূর্যের কথা – বিংশ শতাব্দীতেও বিজ্ঞান বলেছে ‘সূর্য স্থির। পৃথিবী চারপাশে ঘুরে’। বাট নাউ দে চেঞ্জড দেয়ার ওয়ার্ড -অথচ এ কথা কোরান প্রথম থেকেই বলে আসছে ‘প্রত্যেক গ্রহ নক্ষত্রই তার কক্ষে ঘূর্ণায়মান’।

: তাহলে আপনি হিমির ব্যাপারটার জন্য কাউকে দায়ী করছেন?

: অফ কোর্স ।

শফিক ভাই পড়াশুনা করা মানুষ। এ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা তর্ক করতে পারবেন ভেবে আমি জাল কেটে বেরিয়ে গেলাম। অগত্যা রাজি হতে হলো। (চলবে)

এ কে এম ফজলুল হক

লেখক পরিচিতি :
কানাডা প্রবাসী এ কে এম ফজলুল হক একজন সাবেক ব্যাংকার। অবসরে লেখালেখিও করেন। বর্তমানে টরন্টোর নিকটবর্তী পিকারিং এ পরিবার নিয়ে বাস করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *