পিকারিং মাল্টিকালচারাল উৎসবে বাঙালী কালচারাল সোসাইটির অংশগ্রহণ

টরন্টো, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪ : গতকাল শনিবার জাঁকজমকভাবে অনুষ্ঠিত হলো পিকারিং মাল্টিকালচারাল উৎসব। টরন্টোর নিকটবর্তী পিকারিং এ অনুষ্ঠিত এই মাল্টিকালচারাল উৎসবে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মত উপস্থাপন করে অন্টারিও বাঙালী কালচারাল সোসাইটি। পিকারিং সিটি হলের বিশাল প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের তাবুটি ছিল শাস্বত বাংলার ঐতিহ্যবাহী সব উপকরণে সজ্জিত। তাঁবুর পেছনে বিশাল আকারের বাংলাদেশের পতাকাটি দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাঙালী কালচারাল সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ফারহানা পল্লবের বক্তব্য দিয়ে শুরু হয় সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তিনি প্রথমে দর্শকদের সামনে বাংলাদেশের পরিচিতি উপস্থাপন করেন। এই সময় মঞ্চে যন্ত্রসঙ্গীতে বাজছিল বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি…’।

ফারহানা পল্লব বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতটি বিশ্ববিখ্যাত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কবি বাংলার গর্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাসের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম হয়। এই জাতীয় সঙ্গীত তখনকার মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিল এবং আজো আমাদের মত শত সহস্র প্রবাসীদের আবেগাপ্লুত করে। সবুজ মাঠের মাঝখানে লাল সূর্য। বাংলাদেশের পতাকার এই সবুজ রং –কে ধরা হয় দেশটির সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক হিসাবে এবং, বৃত্তের লাল রং – কে বিবেচনা করা হয় উদীয়মান সূর্য এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক হিসাবে।

আপনারা আজ বাংলাদেশী বুথকে এর পতাকা দেখে চিনতে পারবেন। আজ আমরা সদস্যরাও বাংলাদেশের পতাকার রং এর সাথে সাযুজ্য রেখে আমাদের সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পোশাক শাড়ি পরেছি। কবি জীবনানন্দ দাসের কবিতার পঙ্ক্তি- “বাঙলার মুখ আমি দেখিয়াছি , তাই পৃথিবীর রূপ আর খুঁজিতে যাইনা।” দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন ফারহানা পল্লব।

বাংলাদেশের পরিচিতি পর্ব শেষ হওয়ার পর বাঙালী কালচারাল সোসাইটির সদস্যবৃন্দের পরিবেশনায় দলীয় সঙ্গীতে নেতৃত্ব দেন ইয়াসমিন খায়ের। এতে অংশগ্রহণ করেন- গোলাম মহিউদ্দিন, মোনা দেওয়ান, মোহাম্মদ সালাম, বাহাউদ্দিন রতন, নুরুন্নাহার বেগম, সৈয়দা রুখসানা বেগম শানু ও রুখসানা বেগম ঝিনুক। তবলায় সঙ্গত করেন অমিত সাহা। সীমা বড়ুয়ার পরিচালনায় গীতাঞ্জলী মিউজিক একাডেমীর তিনটি নাচ দর্শকদের মাতিয়ে তোলে। নৃত্য পরিবেশনায় ছিলেন-সঞ্চিতা রায় চৌধুরী, সাইদা চৌধুরী লিসা, প্রিয়ংকা বড়ুয়া পিউ ও মেরী মউ রোজারীও। মাল্টিকালচারাল ফ্যাশন শো তে বাংলার পোষাক চেক আর ব্লকের শাড়ি পরে কলসী কাঁখে অংশগ্রহন করে আরিশা জামান ও এঞ্জেল চৌধুরী। সাথে ছিল ইউজিন অদিত আখতার। অন্য সদস্যদের মধ্যে বাহাউদ্দিন রতন, গোলাম মহিউদ্দিন, মোহাম্মদ সালাম ও শেখ জামাল উদ্দিন-লুঙ্গী পরে, মাথায় গামছা বেধে মঞ্চে উপস্থিত হনে। এদের কারো হাতে ছিল একতারা, কারো হাতে হুক্কা। কেউ আবার হাতে হাত পাখা নিয়ে প্রদর্শন করেন বাংলার ঐতিহ্য। এই সময় দর্শকদের করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ।

অনুষ্ঠানটি সার্থকভাবে সম্পন্ন করার জন্য সোসাইটির সভাপতি জনাব জসিমউদ্দিন ও অন্যান্য সদস্যসের মধ্যে মাসুদ রোমেল, মাহবুবাউদ্দিন পেছন থেকে কাজ করেছেন। উদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফরিদা রহমান, মণিষ পাল, হাসিনা আক্তার জানু, নাসরিন খান, নাসিরুদ্দিন খান, আফজাল সুবহানী, সাবরীনা সহ আরো অনেকে। অনুষ্ঠানে মেহেদী সজ্জায় ভলান্টিয়ার হিসাবে ছিলেন নাফিজা ও তাসমিন। বাঙালী কালচারাল সোসাইটি বিগত প্রায় দুই দশক সময় ধরেই কানাডার বহুজাতিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ ও তার সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করে আসছে। আগামীতে আরো সক্রিয়ভাবে প্রবাসীদের শিল্প সংষ্কৃতি চর্চায় সহযোগিতা করবে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এ সংগঠন।