কানাডায় জঙ্গীবাদ
খুরশিদ আলম
টরন্টোতে ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী আক্রমণ পরিচালনা করার পরিকল্পনা করছিলেন দুই ব্যক্তি। সম্পর্কে এরা বাবা-ছেলে। বাবার নাম আহমেদ ফুয়াদ মোস্তফা এলদিদি। বয়স ৬২। ছেলের নাম মোস্তফা এলদিদি। বয়স ২৬। গত ২৮ জুলাই পুলিশ এঁদের দু’জনকেই গ্রেফতার করেছে রিচমন্ডে অবস্থিত এক হোটেল থেকে। তাঁদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে একটি কুড়াল এবং একটি বড় আকৃতির ছুরি। খবর সিবিসি নিউজের।
সম্ভাব্য ভয়াবহ সন্ত্রাসী আক্রমণের কথা বলা হলেও বাবা-ছেলের কাছে কোন বন্দুক বা বিষ্ফোরক পাওয়া গেছে কি না সে বিষয়ে পুলিশ কিছু বলেনি। এঁদের মধ্যে ফুয়াদ এলদিদি কানাডার নাগরিক। তবে ছেলে মোস্তফার নাগরিকত্ব বিষয়ে কিছু জানা যায়নি এখনো। বাবা ফুয়াদ এলদিদি এক সময় মধ্যপ্রাচ্যের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী গ্রুপ আইএসআই এর হয়ে কাজ করেছেন বলে পুলিশ জানায়।
তাঁরা কোন দেশ থেকে কানাডায় এসেছেন সে সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়নি পুলিশ এখনও। তবে ধারণা করা হচ্ছে তাঁরা মিশর থেকে এসেছেন কানাডায়।
এদিকে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। তারা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে এই ফুয়াদ এলদিদি কি করে অতীতের সন্ত্রাসী রেকর্ড এড়িয়ে কানাডায় নাগরিকত্ব পেল।
বাবা ফুয়াদ এলদিদি অবশ্য দোভাষীর মাধ্যমে দাবী করছেন তাঁর ছেলে মোস্তফা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। ছেলেও দোভাষীর মাধ্যমে একই দাবী করছেন।
আরসিএমপি’র এক কর্মকর্তা জেমস পার সিবিসি নিউজকে বলেন, সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্য ছিল টরন্টো। কিন্তু হুমকির সঠিক প্রকৃতি প্রকাশনা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ায় বিস্তারিত কিছুই বলা যাচ্ছে না এই মুহুর্তে। তবে তিনি জানান, শহরের বাসিন্দাদের জন্য কোন চলমান বিপদ নেই। আগামী ৭ আগস্ট তাঁদের হিয়ারিং এর ডেট পড়েছে আদালতে।
এই ব্যক্তিদ্বয়ের বিরুদ্ধে এমন এক সময় সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ উঠলো যখন টরন্টোতে মুলিম বিদ্বেষ বাড়ছে। টরন্টো পুলিশ জানায় গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ঘৃণামূলক অপরাধের ঘটনা ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ের মধ্য পুলিশ ২৪০টি অভিযোগ দায়ের করেছে। খবর সিবিসি নিউজের।
পরিস্থিতি সামাল দিতে টরন্টো পুলিশ তাদের হেট ক্রাইম ইউনিটে ৬ জনের একটি দলে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৩২ এ উন্নীত করেছে। এই সদস্যরা হাজারেরও বেশী সংখ্যক ঘৃণামূলক অপরাধের ঘটনায় সাড়া দিয়েছে। গত বছর ঘৃণামূলক অপরাধের এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি।
পুলিশ জানায় এ বছর ঘৃণামূলক অপরাধের ঘটনা অর্ধেকের বেশী ঘটেছে ইহুদিদের বিরুদ্ধে। ক্রমানুসারে এর পর যারা টার্গেট হয়েছেন তাঁরা হলেন 2SLGBTQ+, কৃষ্ণাঙ্গ এবং মুসলিম সম্প্রদায়।
ইহুদিদের উপাসনালয়ে (synagogues) এবং মুসলিমদের মসজিদে হামলার ঘটনায় উভয় সম্প্রদায়কেই নাড়া দিয়েছে। বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটানো হয়েছে আপত্তিকর গ্রাফিটি অংকন, হামলা বা হুমকীর মাধ্যমে। এর মধ্যে একটি ইহুদি স্কুলে গুলি চালানো হয়েছে এবং একটি ইহুদি মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে এ বছর ঘৃণামূলক অপরাধের ঘটনা অর্ধেকের বেশী ঘটেছে ইহুদিদের বিরুদ্ধে। কিন্তু বাস্তবতা সম্ভবত ভিন্ন। কারণ এই পরিসংখ্যানে সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ না পাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। টরন্টোর পুলিশ প্রধান Myron Demkiw নিজেই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন ইসলামোফোবিক বা মুসলিম বিদ্বেষী ঘটনাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে কম রিপোর্ট করা হচ্ছে। টরন্টো পুলিশের এক কর্মকর্তা Jack Gurr বলেন, এর কারণ হতে পারে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা পুলিশকে বিশ্বাস করে না বা তাঁদের উপর নির্ভর করতে পারে না।
এখন আমাদের আশঙ্কা হলো, এই বাপ-বেটার কীর্তিতে টরন্টোসহ গোটা কানাডায়ই মুসলিম বিদ্বেষ আরো বাড়বে। গুটি কয়েক ধর্মান্ধ লোকের কারণে গোটা মুসলিম সমাজই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা জানি ইতিপূর্বে মুসলিম বিদ্ধেষের কারণে কানাডায় তিনটি স্থানে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসকল ঘটনায় ১১ জন নিরীহ মুসলিমের প্রাণ হানি ঘটেছে।
প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল কুইবেক সিটিতে। সেখানে আলেকজান্ডার বিসোনেট নামের এক যুবক স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হাতে নিয়ে স্থানীয় এক মসজিদে প্রবেশ করে ৬ জন মুসল্লীকে হত্যা করেন। ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারী এই ঘটনা ঘটে। এই তরুণ আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্রাম্প এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐ হামলা চালিয়েছিল। চরম মুসলিম বিরোধী হিসাবে খ্যাতি রয়েছে ডোনান্ড ট্রাম্পের।
মুসলিম হত্যার দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ইটোবিকোক এর ইন্টারন্যাশনাল মুসলিম অর্গানাইজেশন অব টরন্টো’র মসজিদের সামনে। ঐ মসজিদের স্বেচ্ছাসেবক এক মুসল্লিকে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করেন শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের সমর্থক Guilherme ’William’ Von Neutegem নামের এক যুবক। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আসলিম জাফিস।
পরবর্তীতে কানাডার অন্টারিও প্রভিন্সের লন্ডন শহরে সন্ত্রাসী এক হামলার ঘটনা ঘটে। ঐ হামলায় প্রাণ হারান একই পরিবারের তিন প্রজন্মের চার সদস্য। আর অল্পের জন্য বেঁচে যায় ৯ বছরের এক শিশু। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ন্যাথানিয়েল ভেল্টম্যান নামের ২০ বছর বয়সী এক শে^তাঙ্গ যুবককে আটক করে স্থানীয় পুলিশ। লন্ডন পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে এই হামলা ছিল পরিকল্পিত এবং মুসলিম বিদ্বেষপ্রসুত।
উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে কানাডায় ঘটে যাওয়া কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাও দেশটিতে ইসলামোফোবিয়া বৃদ্ধির পেছনে অবদান রেখে থাকতে পারে। বেশ কয়েক বছর আগে আমরা দেখেছি, রাজধানী অটোয়াতে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবন সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিল এক কনভার্টেড মুসলিম যুবক কর্তৃক। ঐ হামলায় নিহত হয়েছেন একজন তরুণ কানাডিয়ান সৈন্য। তারও আগে কুইবেকে একজন কানাডিয়ান সৈন্য নিহত হয়েছেন সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে। তিউনিশিয়ার এক মুসলমান যুবক গ্রেফতার হয়েছেন কানাডার ভিয়া (VIA) রেল সেতু ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করায়। পাকিস্তানী এক মুসলমান যুবক গ্রেফতার হয়েছেন টরন্টোর মার্কিন কনসুলেট অফিস উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করায়। মন্ট্রিয়লের বিমান বন্দর থেকে ১০ জন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছিল যারা জঙ্গী সংগঠন ‘আইএস’ এর সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য দেশ ত্যাগ করতে যাচ্ছিল। সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আইএস’ এ যোগ দেওয়ার জন্য ৪ জন বাঙ্গালী তরুণ কানাডা ছেড়েছিলেন এমন খবরও রয়েছে। কয়েক বছর আগে টরন্টোতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ১৮ জন মুসলমান যুবক যাঁরা পার্লামেন্ট ভবন সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
ফ্রান্সের প্যারিসেও আমরা লক্ষ্য করেছি কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে ইতিপূর্বে। প্যারিসে বিদ্রুপাত্মক সাময়ীকী শার্লি এবদোর কার্যালয়ে জঙ্গি হামলা থেকে এ পর্বের ভয়াবহতার শুরু। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারীতে পরিচালিত ঐ হামলায় ১২ জনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর পরদিন প্যারিসেরই এক শহরতলিতে এক নারী পুলিশ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন একটি ইহুদিদের খাবারের দোকানে হামলা চালিয়ে চারজনকে জিম্মি ও হত্যা করা হয়। তবে প্যারিসের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি ঘটে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে। একযোগে নগরের বাতাক্লঁ থিয়েটার হল, ফুটবল স্টেডিয়ামের সামনে ও একটি রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন ১৩০ জন। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় নিস শহরে রাতে বাস্তিল দিবসের উৎসবে জড়ো হওয়া জনতার উপর বেপরোয়া ট্রাক তুলে দেয় এক চালক। এতে শিশুসহ অন্তত ৮৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।
কানাডাসহ পাশ্চাত্যে ইসলামোফোবিয়ার ঘটনা বৃদ্ধির পিছনে এ সকল নৃশংস হত্যাকান্ড নিশ্চিভাবেই ভূমিকা রাখছে। তবে এ সকল অমানবিক ও নৃশংস ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় আদর্শ বা বিশ^াস যাই থাকুক বা না থাকুক, মানুষ হত্যা করা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
এখন এই বাপ-বেটা মিলে টরন্টোতে কোন উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল তা আমাদের জানা নেই। পুলিশও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি এখনো। আর একটা কুড়াল আর একটা ছুরি নিয়ে কতটা ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটাতে পারতো সেটা আন্দাজ করা কঠিন। তবে আশ্চার্যের বিষয় হলো, এই ৬২ বছর বয়সেও জঙ্গীপনা করার শারীরিক ও মানসিক শক্তি ফুয়াদ এলদিদি পেল কি করে? হতে পারে শারীরিকভাবে সে এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী। কিংবা ধর্মীয় উন্মাদনা তার মধ্যে এতটাই প্রবলভাবে বিদ্যমান যে বয়স তার কাছে কোন বিষয় না।
ধর্মীয় উন্মাদনা মানুষকে কতটা অন্ধ ও মরিয়া করে তুলে তার আরেকটি নজির হলো রিহাব দামেশ নামের আরেক মহিলার কান্ড। স্কারবরোর মার্কহাম ও লরেন্স ইন্টারসেকশনে অবস্থিত কানাডিয়ান টায়ারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এই মহিলা ইতিপূর্বে জঙ্গী হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। এই সময় তাঁর মাথায় মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গী গোষ্ঠী ‘দায়েশ’ এর চিহ্ন আঁকা মস্তকাবরণ ছিল। হামলা চালানোর সময় তিনি জঙ্গী গোষ্ঠী দায়েশের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন। মহিলার নাম রিহাব দামেশ। জন্মসূত্রে সিরীয়, বয়স ৩২। দুটি শিশু সন্তান রয়েছে মহিলার। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এই মহিলা গত ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল সিরিয়া যাওয়ার জন্য কানাডা ত্যাগ করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল সেখানকার জঙ্গীদের সঙ্গে সরাসরি যোগ দেয়া। কিন্তু তুরষ্কে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন। সেখান থেকে তাঁকে কানাডায় ফেরত পাঠানো হয়।
কানাডার বাইরে গিয়ে জঙ্গীদের সঙ্গে যোগ দেয়ার সুযোগ হারালেও রিহাব দামেশ এর মন থেকে জঙ্গীবাদের চিন্তুা দূর হয়নি। তিনি কানাডিয়ান টায়ারে প্রবেশ করে সেখানকার কর্মচারী ও ক্রেতাদের ওপর গলফ খেলার স্টিক ও বড় একটি ছুরি নিয়ে হামলা চালান। ঐ হামলায় কানাডিয়ান টায়ারের একজন কর্মচারী আহত হন। দামেশের পোশাকের ভেতরে লুকানো ছিল বড় ছুরিটি। হামলার সময় তিনি ঐ ছুরিটি বের করে হাতে নেন। তবে কানাডিয়ান টায়ারের কর্মচারী ও ক্রেতারা তার হাত থেকে ছুরিটি কেড়ে নিতে সক্ষম হন। কানাডার মাটিতে কোন মহিলা কর্তৃক জঙ্গী হামলা সম্ভবত এটাই প্রথম। আরসিএমপি তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছে।
রিহাব দামেশ যে কান্ডটি করেছিলেন তাতে করে স্থানীয় মুসলিমদের প্রতি অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের কি ধারণা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। দামেশ শুধু যে হামলা করেই ক্ষান্ত হয়েছেন তা নয়। তিনি আদালতে দাড়িয়ে যে সকল উদ্ধত ও জঙ্গীবাদী হুমকী দিয়েছেন সেটিও মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করবে। তিনি আদালতে দাড়িয়ে বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারা যদি আমাকে মুক্তি দেন তাহলে আমি আবারও এবং বারবার একই কাজ করবো।”
কি ভয়াবহ আচরণ ছিল ধর্মীয় উন্মাদনায় আক্রান্ত ঐ মহিলার! কিন্তু তিনি তাঁর দৃষ্টিতে মুসলিমদের ‘স্বার্থ’ রক্ষার নামে যে আদতে মুসলিমদের ক্ষতিই করেছেন সেটি বোঝার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। তাঁর ঐ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি এই সমাজে মুসলিম বিদ্বেষ আরো বৃদ্ধি করে গেছেন।
উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে কানাডায় ইসলাম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন এমন অভিযোগ তোলা হয়েছিল দুই গবেষকের বিরুদ্ধে। তাঁরা তাঁদের গবেষণায় উল্লেখ করেছিলেন ‘কানাডার ইসলামিক স্কুল ও মসজিদগুলোতে জঙ্গীবাদ সমর্থিত বই-পত্রের ছড়াছড়ি লক্ষণীয়।’
কানাডার অনেক মসজিদ ও ইসলামিক স্কুল তরুণদেরকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে জঙ্গীবাদের পক্ষাবলম্বন করে। অথবা জঙ্গীবাদের পক্ষাবলম্বন না করুক, এ বিষয়ের উপর শিক্ষাদানের বিরুদ্ধে কোন নিন্দাও জানাচ্ছেন না তাঁদের অনেকেই। ঐ গবেষকদ্বয় এমনই দাবী করেছিলেন। দি কানাডিয়ান প্রেস এর এক খবরে বলা হয়েছিল, গবেষণা পরিচলনাকারী দুই ব্যক্তির একজন হলেন থমাস কুইগিন। তিনি প্রিভি কাউন্সিল অফিস এবং আরসিএমপি’র সাবেক গোয়েন্দা বিশ্লেষক। অপরজন হলেন মিশর থেকে এ দেশে আসা সাংবাদিক সাঈদ সোয়েব। তাঁরা তাঁদের গবেষণা পরিচালনা করেন কানাডার কয়েকটি মসজিদের লাইব্রেরীতে এবং ইসলামিক স্কুলে গোপন সফরে গিয়ে। তাঁরা বলেন, এর ব্যাপকতা ও গভীরতার ব্যাপ্তি কতটুকু তা নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
গবেষকদ্বয় বলেন, প্রকাশ্যে সহজলভ্য জঙ্গীবাদ সমর্থক বইপত্র এবং সোস্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্টিং বিশ্লেষণ করে তাঁরা নিশ্চিত হন যে অনেক কানাডিয়ান এমনকি নেতৃস্থানীয় রাজনীতিকগণও এর বিপদের দিকটি সম্পর্কে সজাগ নন এবং তাঁরা এর প্রতি চোখ বন্দ করে আছেন।
কানাডায় ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তরুণ কর্তৃক জঙ্গীবাদে দীক্ষিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি অবজ্ঞা করার কোন উপায় নেই।
গবেষণা পত্রে আরো বলা হয়, জঙ্গীবাদীদের চরম দর্শন ও মতামতের কাছে কানাডীয় মুসলিম যাঁরা মনবতাবাদে ও আধুনিকতায় বিশ্বাসী তাঁদের আদর্শ ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে।
গবেষণা পত্রে উল্লেখ করা হয়, এক বছর আগে সিনেটের ডিফেন্স এন্ড সিকিউরিটি কমিটি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল যাতে বলা হয়, বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কিছু ইমাম কানাডায় চরমপন্থী ধর্মীয় মতাদর্শের বিস্তার ঘটাচ্ছে যা কানাডার মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ খায় না এবং এর ফলে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটছে।
গবেষকদ্বয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রভিন্স ও মুসলিম কমিউনিটির সঙ্গে আলোচনা করে একটি উপায় খুঁজে বের করতে যাতে করে কানাডায় অবস্থানকারী ইমামদেরকে ট্রেনিং এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা যায়।
তবে ঐ গবেষণা পত্রটি লিবারেল সিনেটরদের কমিটি কর্তৃক সমর্থিত হয়নি। অন্যদিকে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিম এই গবেষণা পত্রের তীব্র নিন্দা জানান এবং বলেন এটি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর সমাধানের প্রস্তাব দিতে ব্যর্থ হয়। তাঁরা বলেন, এই গবেষণা পত্র আরেকটি অবান্তর ও অসঙ্গত উদ্যোগ এবং এর উদ্দেশ্য হলো কানাডায় মুসলিম কমিউনিটির মানহানি করা।
ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিম এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল আল নাদভী বলেন, আমি এই গবেষণা পত্রে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করি। আর এ কথা মোটেও সত্য নয় যে মুসলিম নেতৃবৃন্দ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে না। বরং তাঁরা ইতিপূর্বে সংগঠিত বিভিন্ন জঙ্গীবাদী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে নিন্দা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, থমাস কুইগিন এবং সাঈদ সোয়েব তাঁদের “The Lovers of Death? – Islamist Extremism in Our Mosques, Schools and Libraries” শিরোনামের গবেষণা পত্রটি রচনা করার জন্য তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে অটোয়ার চারটি মসজিদ ও তিনটি ইসলামিক স্কুল পরিদর্শনে যান।
গবেষকদ্বয় তাঁদের অনুসন্ধানে কানাডার মসজিদ ও ইসলামী লাইব্রেরীতে জঙ্গীবাদের প্রতি সমর্থন রয়েছে এমন কিছু বইপত্র দেখতে পান যার মধ্যে আছে সাঈদ কুতুব রচিত “In the Shade of the Qur’an” বইটি। সাঈদ কুতুবকে অনেকে আল-কায়দা সহ আরো কয়েকটি জঙ্গীগ্রুপের অনুপ্রেরণা দানকারী হিসাবে দেখেন। এছাড়াও গবেষকদ্বয় আরো কিছু বই দেখতে পান যার মধ্যে আছে মোহাম্মদ ইবনে অবেদ আল ওয়াহাব এর গ্রন্থসমগ্র। ইবনে অবেদ আল ওয়াহাবকে ওয়াহাবী আন্দোলনের (মৌলবাদী) প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে গণ্য করা হয়। ওয়াহাবী আন্দোলন হচ্ছে ধর্মীয় আন্দোলন বা ইসলামের একটি শাখাগোষ্ঠী যা অতিচরমপন্থী।
ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিম এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গবেষকদ্বয় যদি কোন বেআইনী কার্যকলাপ যেমন সন্ত্রাসবাদের প্রচার বা সহিংস জঙ্গীবাদী তৎপরতা দেখতে পান তবে তাঁদের উচিৎ হবে তা যথযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনা তাৎক্ষণিকভাবে। তাঁরা যদি তা না করে তবে ধরে নিতে হবে যে, কানাডিয়ান মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কোন প্রমাণ ছাড়া এটি একটি অপপ্রচার। তাঁদের বিরুদ্ধে ভয় ও অবিশ্বাস ছাড়ানো ছড়া এটি আর কিছুই নয়। এই জাতীয় গবেষণা আগুনের মধ্যে নল দিয়ে বাতাস দেওয়া মতই একটি উদ্যোগ। এবং এটি এমন একটি সময় করা হচ্ছে যখন কানাডায় মুসলিম বিদ্বেষ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কয়েকটি মসজিদে আগুন দেওয়া ও ভাঙ্গচূড়ের ঘটনা ঘটেছে।
ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিম এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল আল নাদভী বলেন, কানাডার ইমামগন এবং মুসলিম নেতৃবৃন্দ যে কোন জঙ্গীবাদী ঘটনার নিন্দা জানিয়ে থাকে তাৎক্ষণিকভাবে। কিন্তু স্থানীয় মিডিয়া সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ছাপে না।
এদিকে গবেষকদ্বয়ের একজন থমাস কুইগিন পত্রিকান্তরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা আমাদের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে আছি। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে কিছু মানুষ আছে যাঁরা সত্য শুনতে চায় না বা সত্যকে সত্য বলতে নারাজ।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এই গবেষণা মুসলিমদেরকে হেয় করার জন্য নয়। কানাডায় বাস্তবে কি ঘটছে সে বিষয়ে সরকার ও মিডিয়াকে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। আমাদের প্রশ্ন হলো, কানাডার মসজিদ ও ইসলামী লাইব্রেরীতে আমরা যা পেয়েছি তা কি কানাডায় গ্রহণযোগ্য?
বস্তুত: ইসলাম ধর্মের নামে বিশ^ব্যাপী জঙ্গীবাদের কান্ডকীর্তি আমরা ইতিপূর্বে অনেকই দেখেছি। দেখেছি কানাডায়ও। যদিও সেটি তেমন ব্যাপকমাত্রায় ছিল না। কিন্তু মাত্রা যাই হোক, কানাডায় ইসলাম বিদ্বেষ বৃদ্ধির পিছনে এগুলো ইন্ধন যুগিয়েছে এ কথা বলাই যায়। তবে এর পাশাপাশি পাশ্চাত্যের এক শ্রেণীর অতিডানপন্থী মিডিয়া এবং ডানপন্থী কিছু রাজনৈতিক দল কর্তৃক মুসলিম বিরোধী প্রপাগান্ডাও যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে ইসলাম বিদ্বেষ তৈরীর ক্ষেত্রে।
এ প্রসঙ্গে কানাডার রাজনৈতিক দল পিপল’স পার্টি অব কানাডা’র নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। কয়েক বছর আগে এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাক্সিম বার্নিয়ার দাবী করেছিলেন এই বলে যে, ‘ইসলামী জঙ্গীরা’ কানাডার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে। তাঁরা রাজনৈতিক দলগুলোতে ঢুকে পড়েছে। তবে তিনি তার এই দাবীর পক্ষে কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন নি। ম্যাক্সিম বার্নিয়ার এর আগে কানাডার কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর পদেও ছিলেন। পরে ঐ দল থেকে বের হয়ে এসে নিজেই একটি দল গঠন করেন যার নাম পিপল’স পার্টি অব কানাডা। চরম রক্ষণশীলতা, ইমিগ্রেন্ট ও মুসলিম বিরোধীতার জন্য ইতিমধ্যেই তিনি বিতর্কের শীর্ষবিন্দুতে উঠে এসেছেন। আর তিনিই বলছেন ‘ইসলামী জঙ্গী’রা কানাডার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে।
ম্যাক্সিম বার্নিয়ার আরো অভিযোগ করে বলেন, কানাডার রাজনৈতিক নেতারা এই জঙ্গীদের দলে টেনে নিয়ে নানাভাবে চেষ্টা করছেন ভোট পাবার জন্য।
এই ম্যাক্সিম বার্নিয়ারের একজন সমর্থক হলেন বেঞ্জামিন ডিচটার। ইতিপূর্বে পিপল’স পার্টি অব কানাডার কনভেনশন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বেঞ্জামিন বলেছিলেন, লিবারেল পার্টি ভর্তি হয়ে আছে জঙ্গী ইসলামিস্টদের দ্বারা। সেদিন বেঞ্জামিনের সাথে সুর মিলিয়ে ম্যাক্সিম বার্নিয়ারও বলেছিলেন, আমরা যদি এই বিষয়টি নিয়ে কথা না বলি, ইমিগ্রেশন নিয়ে কথা না বলি তবে আগামী ২৫ বা ৫০ বছরের মধ্যে কানাডা এমন এক দেশে পরিনত হবে যা আগে কখনো ছিল না। তিনি কনজার্ভেটিভ পার্টির সেই সময়কার নেতা এন্ড্রু শিয়ারের নাম উল্লেখ করে বলেন, দেখুন তিনিও ইসলামী মৌলবাদীদের সঙ্গে হাত মিলাচ্ছেন মুসলমানদের ভোট পাবার জন্য।
স্মরণ করা যেতে পারে যে, এই ম্যাক্সিম বার্নিয়ারের পার্টিই ইতিপূর্বে এক বিলবোর্ডের মাধ্যমে এমন এক বক্তব্য প্রচার করছিলেন যা নিয়ে চরম বিতর্ক শুরু হয়েছিল। সুদৃশ্য ঐ বিলবোর্ডে লেখা ছিল ‘say NO to mass immigration’. ভেঙ্গুভার, ক্যালগারী, হ্যলিফেক্স, টরন্টো এবং রিজাইনাতে এই বিলবোর্ড সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নভাস্কোশিয়ার রাজধানী হ্যালিফেক্স এর হাইওয়ের পাশে স্থাপিত এরকম একটি বিলবোর্ড দেখে প্রভিন্সটির তখনকার প্রিমিয়ার স্টিফেন ম্যাকনিল বলেছিলেন, আমি নভাস্কোশিয়াতে সবাইকে স্বাগত জানাই। তবে আমি এই ধরনের নেতিবাচক ও বিভেদ সৃষ্টিকারী সুর পছন্দ করি না। তিনি বলেন, আমাদের জনসংখ্যা এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী, আমাদের বেকারত্বের হার এখন রেকর্ড পরিমাণে কম এবং আমাদের অর্থনীতির সমৃদ্ধি ঘটছে। আর এর জন্য প্রধানত আমরা ইমিগ্রেন্টদের ধন্যবাদ জানাই।
পিপল’স পার্টি অবশ্য দাবী করেছিল এই বিলবোর্ড লাগানোর সঙ্গে তারা জড়িত নয়। অন্য কেউ এটি লাগিয়েছে। তবে লক্ষ্যনীয় যে, বিলবোর্ডের নিচে পিপল’স পার্টির নাম সুষ্পষ্টভাবেই লেখা ছিল। পরে অবশ্য বিলবোর্ডগুলো নামিয়ে ফেলা হয়েছিল প্রচন্ড বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার কারণে।
অন্যদিকে হালের বর্ণবাদী রাজীনিতক ডোনাল্ড ট্রাম্পতো আছেনই গোটা পাশ্চাত্যজুড়ে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানোর এক মাস্টার কারিগর। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই কুইবেক সিটির এক মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ৬ জন মুসুল্লিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল এক
শে^তাঙ্গ তরুণ।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এর সমাধান কি? এ বিষয়ে কেউ কেউ বলছেন, জঙ্গীবাদ নির্মূলের চেষ্টায় ধর্ম ও সামাজিক বিষয়ের উপর অত্যাধিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হচ্ছে, রাজনীতির বিষয়টি থেকে যাচ্ছে উপেক্ষিত যার ফলে সমস্যার কাঙ্খিত সমাধান হয়ে উঠছে না। তাঁদের মতে কানাডায় মুসলমান তরুণদের মধ্যে জঙ্গীবাদের প্রতি ঝোঁক দূরীকরণের যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে তার মধ্যে একটি ব্লাইন্ড স্পট রয়ে গেছে। এই ব্লাইন্ড স্পটের দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন না কেউ। কোন কোন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এমনই অভিমত প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে সম্প্রতি কানাডার জাতীয় টিভি চ্যানেল সিবিসি নিউজ সানিফা নাসেরের একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে। প্রবন্ধে লেখিকা সানিফা নাসের কানাডায় হোমগ্রোন টেররিস্ট উত্থানের পিছনে মূল কারণ কি সে বিষয়টির উপর সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। মূল সেই কারণটি হলো রাজনীতি এবং কানাডার পররাষ্ট্র নীতি। কানাডার যাঁরা নীতিনির্ধারক তাঁরা এই বিষয়টিকে এড়িয়ে যাচ্ছেন অথবা বিষয়টি তাঁদের নজরে আসছে না। এই নজরে না আসার বিষয়টিকেই লেখিকা ব্লাইন্ড স্পট হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরো লিখেন, কানাডায় যে সকল তরুণ মুসলমান জঙ্গীবাদের দিকে ঝুঁকছেন তাঁদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি কাজ করে আসছে। এ অভিমত নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের। এমনই একজন বিশেষজ্ঞ কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা ফিল গুরুস্কি। তিনি হামগ্রোন টেররিস্ট বিষয়েও একজন বিশেষজ্ঞ। প্রায় ১৫ বছর তিনি এই হোমগ্রোন টেররিস্ট ও সহিংস চরমপন্থা বিষয়ের উপর কাজ করেছেন। তাঁর মতে কানাডার পররাষ্ট্র নীতি এই হোমগ্রোন টেররিস্টদের উত্থানের পিছনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ফিল গুরুস্কি বলেন, “সরকারের পররাষ্ট্র নীতিতে ত্রুটি রয়েছে এ কথা সরকারকে বলাও কঠিন কাজ। সরকার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেনা। কারণ এতে সরকারকে আত্মসমালোচান করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিষয়টিকে অবজ্ঞাও করা যাবে না।”
ফিল গুরুস্কি’র মতে হোমগ্রোন টেররিস্টদেরকে সফল ভাবে দমন করার জন্য কানাডার পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ে একটি স্পষ্ট ও খোলাখুলি আলোচনা দরকার।
সুতরাং এ কথা বলাই যায় যে, কানাডায় জঙ্গীবাদ দমনের জন্য রাজনীতির একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। এবং এর সংস্কার প্রয়োজন। একই সাথে অতি ধার্মিক বা ধর্মান্ধদেরকে বুঝিয়ে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য স্থানীয় ইসলামিক স্কলারদেরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কণ্ঠ