অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য

অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সাংস্কৃতিক দিক থেকে অধিকতর যথাযথ সেবাদানের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

উল্লেখ্য যে, সারা বিশ্বে বিশাল জনগোষ্ঠী মানসিক রোগে ভুগছেন। কানাডার জনগোষ্ঠীও এর বাইরে নন। বাইরে নন এখানকার অভিবাসীরাও। কিন্তু নানা কুসংস্কার আর অসচেতনতার কারণে অভিবাসীদের মধ্যে তা গোপন করার প্রবণতা দেখা যায়। বিশেষ করে সাউথ এশীয়ান অভিবাসীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশী দেখা যায়। ফলে এরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নীরবে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।

আমরা জানি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি চিরকালই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এবং বাস্তবতা হচ্ছে- আমরা শরীরের সুস্থতা নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন থাকি এবং যতটা নজর রাখি মনের সুস্থতার ব্যাপারে আমরা ততটাই উদাসীন। অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে, সুস্থ শরীর ছাড়া যেমন সুস্থ মন সম্ভব নয় তেমনি সুস্থ মন ছাড়া সুস্থ শরীর, সুস্থ জীবন কোনটাই সম্ভব নয়।

নবাগতদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা সময়ের সাথে সাথে গড় কানাডীয়দের চেয়ে দ্রুত খারাপ হতে থাকে। ছবি : হার্ভার্ড হেলথ

কিন্তু বাস্তবতা হলো শরীরের অসুখের মতোই মনেরও যে অসুখ হতে পারে সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই স্পষ্ট ধারণা রাখেন না। অনেকে আবার মনে করেন, মানসিক রোগ মানেই পাগল; সাইকিয়াট্রিস্ট মানেই পাগলের ডাক্তার। ব্যাপারটা আদৌ সে রকম নয়। মানসিক রোগ মানেই পাগল নয় এবং মানসিক রোগের ডাক্তার মানেই পাগলের ডাক্তার নন।

প্রতিদিনই আমরা কোনো না সময় নানা কারণে উদ্বিগ্ন হই, বিষণ্নতা অনুভব করি, মানসিক চাপ অনুভব করি এবং এগুলো সবই মানসিক সমস্যার লক্ষণ। আবার এটাও মনে রাখতে হবে এগুলো অনুভব করা মানেই কেউ মানসিক রোগী নন। মানসিক সমস্যা দূর করতে হলে প্রথমত জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে হবে। মানসিক রোগকে অবহেলা না করে বা লুকিয়ে না রেখে মনোচিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানসিক রোগ শারীরিক রোগের মতোই একধরনের রোগ। শারীরিক রোগের মতোই গুরুত্ব দিয়ে এর চিকিৎসা হওয়া জরুরি।

আর বাস্তবতা হলো, কানাডায় যতদিন ধরেই বসবাস করুন না কেন, নবাগতদের তীব্র উৎকণ্ঠা ও মনখারাপ অবস্থার কোনও উন্নতি হয় নাÑ বরং তার আরও অবনতি ঘটে। ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির সমাজতত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি গবেষক ইকবাল চৌধুরীর গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

ইকবাল চৌধুরীর গবেষণায় প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, নয় বছরের কম সময় আগে কানাডায় আসা অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য এদেশে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাসকারীদের চেয়ে ভালো। কিন্তু পরে, নবাগতদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা সময়ের সাথে সাথে গড় কানাডীয়দের চেয়ে দ্রুত খারাপ হতে থাকে।

মনোবিজ্ঞানী সুনাইনার মতে, অভিবাসীদের অনেকেরই ধারণা- এখানকার ডাক্তাররা অভিবাসীদের মানসিক সমস্যাটা সঠিকভাবে ধরতে পারবেন না। কালচারাল গ্যাপের কারণে এরকম হতে পারে বলে তারা মনে করেন। বৈষম্যমূলক আচরণ পেতে পারেন এই ভয়েও মূলধারার ডাক্তারের কাছে যেতে ভয় পান অনেকে। এ বিষয়ে তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন কমিউনিটিতে বেশ কিছু ডাক্তার যোগ হয়েছেন যারা নিজেরাও ঐ কমিউনিটিরই সদস্য বা একই কালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা। সুতরাং তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে কোনরকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়াই।

প্রবাসে প্রথম প্রজন্ম যারা তাদের জীবন সংগ্রাম সহজ নয়। পদে পদে তাদেরকে কঠিন সব সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর এ কারণে মনের উপর অস্বাভাবিক চাপ পড়ে। সেই চাপের কারণে একসময় উদ্বেগ, বিষন্নতা, হতাশা ইত্যাদি চেপে বসতে পারে মনের উপর। সময়মত চিকিৎসা না নিলে ক্রমান্বয়ে তা মানসিক স্বাস্থের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং পরিনতিতে মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। তাই সময় থাকতেই চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া জরুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *