জীবনের বহু রং

সাইদুল হোসেন

ভূমিকা

“জীবনের বহু রং” আমার ৬ষ্ঠ গল্পগ্রন্থ। এটাও আগেরটার মতই অনেকটা omnibus book ধরনের গ্রন্থ যাতে আমার লেখা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ইতিহাস ও স্মৃতিচারণ ছাড়াও নানা ধরনের intellectual stimulants (jokes, quotes, wise talks, information, etc.) পরিবেশন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই- পাঠকপাঠিকাদের জন্য নির্মল ও বহুমুখী চিত্তবিনোদন, ক্ষণিকের জন্য হলেও। ব্যস্ত জীবনে সাময়িকভাবে হলেও দায়িত্ব-কর্তব্যের বোঝাটা হালকা করার চেষ্টা। জ্ঞানের অনুসন্ধানীদের জন্যও বহু চিন্তার খোরাক আছে  বইটাতে।

বিগত জীবনে (২০২৩ পর্যন্ত) একাধিক বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু সংখ্যক বই লিখেছি (৩৫টি), অধিকাংশই প্রকাশিত হয়েছে (২৪টি), বাকিগুলো প্রকাশনার জন্য অপেক্ষমাণ। বয়স হয়ে গেছে ৯১ বছর, দৈহিক ও মানসিক ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, গবেষণামূলক সিরিয়াস রচনার দিন ফুরিয়েছে। কিন্তু দৈনিক কিছু একটা লেখার মজ্জাগত স্বভাবটা যায়নি, আজো সেটা প্রবল। চুপ করে বসে থাকতে পারি না।

তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে ২০২৪ থেকে শুরু করে লেখার মত আকর্ষণীয় কোন বিষয়বস্তু পেলে গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ আকারে daily diary’র মত করে লিখতে থাকবো, কিছুদিন গেলে দেখা যাবে যে নূতন আর একটা বই লেখা হয়ে গেছে! সেটাও একটা খুব কম বড় achievement হবে না, পাবলিশ করতে পারি বা না পারি। সময়ের অপচয় করেছি অন্ততঃ এই অপবাদটুকু থেকে তো বেঁচে যাবো। সেটাইবা কম কি?

তাই লেগে পড়লাম। কলম চলতে লাগলো। এবং অবশেষে ৩১টি নানা স্বাদের নূতন রচনা দিয়ে এই বইটার সমাপ্তি টানলাম। আলহামদুলিল্লাহ! এখন পাঠকপাঠিকারাই বিবেচনা করবেন বইটাতে তাঁরা কি পেলেন অথবা কিসের অভাব।

বিনীত-

সাইদুল হোসেন

মিসিসাগা, ক্যানাডা

জুন ২০২৪

(এক)

আমার বাংলাদেশ

বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা,

বাংলা আমার গর্ব, বাংলা আমার আশা।

জন্মেছি আমি সেই দেশেতে,

লালিত খেয়ে তার অন্ন,

ধন্য সেদেশ, ধন্য আমি ধন্য ॥

সেথায়-

মাঠেমাঠে বাতাসেতে দুলে সবুজ-সোনালী ফসল,

গাছেগাছে ঝুলে থাকে নানা স্বাদের ফল।

যায় উড়ে পাখিরা সব বিচিত্র বরণ,

নদীতে-পুকুরে ছোটবড় মাছের বিচরণ।

ঝিলের-বিলের মিষ্টি পানি সদা করে

পশু-পাখি ও মানুষের তৃষ্ণা নিবারণ।

বৃষ্টি-বাদল, ঝড়-বন্যার নিত্য আগমণ,

গ্রীষ্মকালে প্রখর সূর্য করে তাপ বিতরণ।

রাতের বেলা নীলাকাশে চাঁদ-তারারা আসে,

ক্ষেতভরা ফসল ঘরে তুলে গ্রামের কৃষকেরা হাসে।

গরু-মহিষের পাল তাড়িয়ে রাখাল

মাঠে তাদের ঘাস খাওয়াতে যায়,

কিষাণীরা নূতন ধানের চিড়া কুটে, আর

কিষানেরা আংগিনাতে নূতন ধান মাড়ায়।

বছরব্যাপী ছয় ঋতু করে আনাগোনা,

পৌষে মাঠে পাকা ধান যেন গলিত সোনা।

বৈশাখেতে আম-কাঁঠাল আর দই-চিড়া-মুড়ি,

ছেলেবুড়ো আকাশেতে উড়ায় রঙিন ঘুড়ি।

ঝুলিয়ে পিঠে তাদের বইয়ের ব্যাগ

চঞ্চল ছেলেমেয়েরা দৈনিক স্কুলেতে যায়,

আর বড়রা সব উচ্চশিক্ষার জন্য

কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে ধায়।

শিক্ষা শেষে হবে তারা আমলা, শিক্ষক, সৈনিক,

রাজনীতিবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, বৈজ্ঞানিক।

লেগে যাবে দেশের সেবায় সবাই

কেউবা হবে বৈমানিক।

চিরাচরিত বাঁধা-বেতনের চাকরির

পেছনে না ছুটে

কেউবা হবে শিল্পে উদ্যোক্তা, আর

কেউবা যাবে কৃষিতে।

নারীদেরও আছে সমান সুযোগ

শিক্ষায় এবং কর্মক্ষেত্রে।

গুণেমানে উন্নত হলে

আমলা ও শ্রমিক,

এগিয়ে যাবে দেশটা সামনে

Sky is the limit!

জানুয়ারী ১, ২০২৪

(দুই)

বিদায় ২০২৩

বছরের প্রথম দিনে

এসেছিলে যেদিন করেছিলাম বরণ, বন্ধু,

তোমায় সাদরে,

ঘরে তুলে নিয়েছিলাম

পরম আদরে।

তুমি থাকবে আমাদের মাঝে

সারাটি বছর, আশা ছিল

চিনে নেবো তোমায় মোরা

তুমি আপন কিংবা পর ॥

কিন্তু যতই গেল দিন ও মাস

আমরা হলাম ততই নিরাশ।

তুমি চললে নিস্পৃহ আপন ধারায়,

আপন গতিতে,

বোঝলাম আমরা তোমার কেউ নই,

তোমার এগিয়ে চলা শুধু মিশে যেতে অতীতে ॥

জানলাম, তুমি কারো নও,

কেউ তোমার নয়।

জানলাম, তুমি সেই মহাকালেরই অংশ

যা ক্রমাগত দীর্ঘায়িত হচ্ছে

প্রতিটি বছরের অবসানে ॥

শুধু সামনে এগিয়ে চলাই তোমার লক্ষ্য

নিজের পরিচয়কে বিলীন করে,

আগামী বছরের আগমণের পথ প্রশস্ত করে দিয়ে।

তবে তাই হোক, বন্ধু,

তবে তাই হোক।

তুমি সামনে এগিয়ে চল নির্ভয়ে।

বিদায় ২০২৩ ॥

ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩

(তিন)

হায়দরাবাদের নিজাম (মীর উসমান আলী খান)

বিখ্যাত ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের কভারে হায়দরাবাদের নিজাম মীর উসমান আলী খান। ছবি: সংগৃহীত

১৯৪৭ সনে হায়দরাবাদের নিজামকে তৎকালীন দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি বলে জনশ্রুতি রয়েছে। জনশ্রুতি আরো প্রকাশ করেছে যে-

১)  নিজাম মাত্রাতিরিক্ত রকম কৃপণ ছিলেন;

২)  তিনি বাজার থেকে কেনা সবচেয়ে সস্তা পাজামা কুর্তা পরে থাকতেন;

৩)  সস্তা দামের চামড়ার স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে চলাফেরা করতেন, অনেক সময় সেগুলো থাকতো ছেঁড়া এবং বিবর্ণ;

৪)  তিনি একটানা ২৫ বছর ধরে তৈলাক্ত ও নোংরা একটা টুপি পরে রাজ্য শাসন করেছিলেন;

৫)  তিনি সস্তা একটা টিনের প্লেইটে খাবার খেতেন, কখনো কোন দামী প্লেইট ব্যবহার করেননি;

৬)   তিনি তাঁর বেডরুমে মাদুরের উপর লেপটে বসে খানা খেতেন;

৭)    তিনি তাঁর অতিথিদের এশ্ট্রেতে ফেলে যাওয়া পোড়া সিগারেটের অংশ (burnt cigarette butts) মুখে দিয়ে smoke করতেন;

৮)   তৎকালীন ভারতীয় নবাব-রাজা-মহারাজদের দরবারে একটা প্রথা প্রচলিত ছিল যে তাঁদের ধনবান প্রজারা আশীর্বাদ লাভের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর

 কোন মাসের কোন একটা দিনে হাতে একটা স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে তাদের রাজ্যপ্রধানের সংগে দেখা করতেন এবং স্বর্ণমুদ্রাটি তাঁর হাতে দিতেন। সংশ্লি­ষ্ট নবাব-রাজা-মহারাজা সেই স্বর্ণমুদ্রাটি একবার স্পর্শ করে সেটা মালিকের হাতে ফিরিয়ে দিতেন।

কিন্তু হায়দরাবাদের নিজামকে তাঁর প্রজাদের কেউ এমনি ধরনের স্বর্ণমুদ্রা দিলে তিনি সেটা তৎক্ষণাৎ তাঁর পাশে রক্ষিত একটি থলিতে রেখে দিতেন, কখনো সেটা মালিকের হাতে ফিরিয়ে দিতেন না।

৯) নিজামের বেডরুমটা ছিল বস্তির দরিদ্র কুটিরের মত। তাতে ছিল ভাংগাচুরা একটা বেড, একটা টেবিল, তিনটা কিচেন চেয়ার। সেখানে থাকতো পোড়া সিগারেটে পূর্ণ এশ্ট্রে এবং আবর্জনাভর্তি বাস্কেট, যেগুলো নিজামের জন্মদিনে বছরে একবার মাত্র পরিষ্কার করা হতো। তাঁর অফিসরুমে অযত্নে জমা থাকতো নানা মূল্যবান দ্রব্যাদি। রুমটার সিলিং (ceiling) টা থাকতো মাকড়সার জাল ও ঝুলকালিতে অন্ধকারাচ্ছন্ন।

(Reference: Pages 169-170 of Freedom at Night)

জানুয়ারী ২৪, ২০২৪

(চার)

আমাদের সুফিয়া ফুফু

আমাদের প্রিয় সুফিয়া ফুফু মারা গেলেন ৭ই জানুয়ারী রাতে স্কারবরোর এক হসপিটালের Palliative Ward-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায়। বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর। তিনি কর্মজীবনে ছিলেন একজন হাই স্কুল টিচার। রেখে গেছেন তিন সুযোগ্যা কন্যা, জীবনে তারা স্বামী-সন্তান-বাড়ি-গাড়ি নিয়ে এবং উঁচু পদে চাকরিতে সুপ্রতিষ্ঠিত ক্যানাডার টরন্টো সিটিতে। স্বামীকে হারিয়েছিলেন বহু বছর আগেই। তিনি ছিলেন একজন আর্মি অফিসার।

ফুফু থাকতেন তাঁর এক মেয়ের সংগে। সেই মেয়ে একজন ডাক্তার। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে নিকটবর্তী এক হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো। পরীক্ষা করার পর ডাক্তারগণ অভিমত দিলেন যে পেশেন্টের অবস্থা খুবই আশংকাজনক, abdominal cancer, এক্ষুনি সার্জারি করা দরকার, তারপর কিছুদিন chemotherapy দিতে হবে। ফুফু রাজি হননি। তিনি সেখানে তাঁর পরিবারের উপস্থিত সবার সামনে ডাক্তারগণকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিলেন :

Thanks for your concerns, but I don’t want any of them. I am 85 years old, I had a long and fruitful life. I have left nothing unfinished. It’s time to go.
No surgery. No chemotherapy. No ventilator to prolong my useless life. I am OK. Let me die peacefully.

এই dialogue-এর চারদিন পর সুফিয়া ফুফু তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। এটা অনেকটা যেন ইচ্ছামৃত্যু বরণ করলেন তিনি। ইন্নালিল্লা-হি…

আমার ওয়াইফকে ফুফু খুব স্নেহ করতেন, আদর করতেন, দামী গিফ্ট দিতেন। তাঁর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে সে খুব কান্নাকাটি করছে।

(হসপিটালে ডাক্তারদেরকে ফুফু যা যা বলেছিলেন সেই বৃত্তান্ত আমরা পরে জেনেছি তাঁর ডাক্তার মেয়েটির মুখে।)

জানুয়ারী ১০, ২০২৪

(পাঁচ)

যুদ্ধের খবর

২০২৩ সনের ৭ই অকটোবর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ইজরায়েল এবং হামাস-এর মাঝে এক মরণপণ যুদ্ধ শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই টিভি এবং অন্যান্য নিউজ মিডিয়াতে দুই পক্ষই একে অন্যকে আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণে বিপুলভাবে আঘাত হেনে ক্ষতিগস্ত করছে, শতশত প্রাণ যাচ্ছে, আরো অধিক সংখ্যককে আহত করছে বলে দাবীর খবর শুনতে পাচ্ছি। ঘরে বসে আমরা অনুমান করার চেষ্টা করছি বাস্তবে কত সৈন্য মরলো বা আহত হলো, এবং ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণটাইবা কি? সবই অনুমানসাপেক্ষ কারণ প্রকৃত তথ্য তো জানার কোন উপায় নেই। দু’পক্ষেরই war propaganda machine নিজনিজ দলের বিজয় ও সাফল্য ফলাও করে প্রচার করে যাচ্ছে।

আমাদের এক প্রিয়জন আলী হায়দার ওর ওয়াইফ নাসীমকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলো স্কারবরো থেকে। নানা প্রসংগে আলাপের এক পর্যায়ে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং দু’পক্ষের ক্ষয়ক্ষতির কথা উঠে পড়লো। আলী হায়দার আমার সংগে একমত হয়ে বললো যে প্রকৃত অবস্থাটা জানা বাইরের লোকের পক্ষে কখনো সম্ভব হয়নি অতীতেও, সম্ভব হবে না বর্তমান যুদ্ধেও। তারপর সে আমাকে একটা কাহিনী শোনালো। বললো-

“১৯৩৯-১৯৪৫ এর সভ্যতাবিধ্বংসী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কাহিনী। তখনো আমার জন্ম হয়নি। আম¥ার মুখে শোনা। সে সময়ে আব্বা-আম্মা কলকাতায় বাস করতেন। যুদ্ধ চলছিলো পৃথিবীর বিভিন্ন রণাংগনে মিত্রপক্ষ (বৃটিশ-ফ্রান্স-আমেরিকা জোট) এবং শত্রুপক্ষ (জাপান-জার্মেনী-ইটালীর জোট)-এর মাঝে।”

“অভাবনীয় পরিমাণ প্রাণ ও সম্পদ ধ্বংস হচ্ছিল। দুই পক্ষেরই war propaganda machine নিজেদের বিজয় এবং অপর পক্ষের ক্ষতি ও দুর্দশা ফলাও করে প্রচার করে যাচ্ছিল বছরের পর বছর, ৬ বছর পর (জার্মেনী ও জাপানকে পরাজিত করে) যুদ্ধের আগুন না নেভা পর্যন্ত (১৯৪৫ সন)।

“আব্বা দৈনিক পত্রিকা কিনতেন দেশ-বিদেশের, বিশেষতঃ যুদ্ধের খবর জানতে। যে হকার আব্বাকে পত্রিকা দিতে আসতো সে ঘনঘনই বলতো, “বাবুজি, আখবার মেঁ খবর পড়হিয়েগা সিধা লেকিন সমঝিয়েগা উল্টা।”

“(অনুবাদ ঃ পত্রিকার পাতায় ছাপা খবর যা যা পড়বেন, বুঝে নেবেন তার উল্টোটা।) অর্থাৎ কেউই সত্য কথা বলছে না, নিজেদের বিজয় এবং অন্য পক্ষের হার বহুগুণ বাড়িয়ে বলে যুদ্ধরত সৈন্যবাহিনীর ও দেশবাসীর morale (মনোবল) অটুট রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব হচ্ছে রণকৌশল বা war strategy.”

ইংরেজী ভাষাতেও ঠিক এমনি ধরনের একটা উপদেশ আছে ঃ What you hear, take it with a grain of salt.

জানুয়ারী ১৪, ২০২৪

(ছয়)

ভিয়েতনামীজ এন্ড জাপানীজ

অন্যান্য দিনের মত আজো বিকাল ৪টার পর এলিভেটরে চড়ে নীচে লবীতে গেলাম আমাদের মেইল বক্সটা চেক করতে। সেখানে লবীতে দু’টি বেঞ্চ পাতা আছে আমাদের বিল্ডিংয়ের বাসিন্দাদের বসে গল্প করার জন্য। লক্ষ্য করলাম যে একটা বেঞ্চে দু’জন বুড়োবুড়ি একে অন্যের গায়ে গা ঠেকিয়ে কথাবার্তায় মগ্ন। দেখলেই অনুমান করা যায় যে ওরা দু’জন সম্ভবতঃ চাইনীজ অরিজিন। বুড়ো লোকটাকে আমি সামান্য চিনি, এর আগেও দেখেছি। সে তার ডান হাতটি উঠিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো।

ওকে উদ্দেশ করে চাইনীজ ভাষায় জিজ্ঞাসা করলাম : “নি হাউ মা?” অর্থাৎ তুমি কেমন আছ?

সে তার মাথাটা এদিকওদিক একটু হেলিয়ে জবাব দিলো : “মী নো চাইনীজ। মী ভিয়েতনামীজ। শী মাই ওয়াইফ, জাপানীজ।”

এবার মহিলাটি তার মুখ খুললো। বললো, “ইয়েস, জাপানীজ। মেট হিম ল-ং টাইম এগো। সাইগন সিটি। ভিয়েতনাম। স্টিল উইদ হিম। গুড গাই।”

একথা শুনে গুড গাই তার ওয়াইফকে তার বাম হাত দিয়ে আরো নিবিড় করে জড়িয়ে ধরলো।

দৃশ্যটা আনন্দদায়ক। ভালোবাসার প্রকাশ।

কিন্তু পরক্ষণেই বেশ বড় একটা মানসিক ধাক্কা খেলাম। ওরা বেঞ্চে বসা অবস্থা থেকে এক সংগে উঠে দাঁড়ালো। তখন প্রকটভাবে চোখে পড়লো যে মহিলাটি তার স্বামীর তুলনায় বেমানান রকম বেশী লম্বা- ছ’ইঞ্চি বেশী তো হবেই। খুবই দৃষ্টিকটু দৃশ্য। অতীতে লোকের সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে নিশ্চয়ই।

পরক্ষণেই ভাবলাম : এতে আমার কি আসে যায়? ওরা দু’জন তো এই বেমানান উচ্চতা ও মানুষের সমালোচনাকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে অগ্রাহ্য করে সুখে-আনন্দে জীবনটা কাটিয়ে দিলো, দিচ্ছে। একে অন্যকে নিয়ে সুখী। ভালোবাসাটাই মুখ্য, অন্য সব কিছুই গৌণ।

ভালোবাসার জয় হোক!

জানুয়ারী ১৮, ২০২৪

(সাত)

অতীতের ইন্ডিয়ার কিছু জানা-অজানা কাহিনী

Reference: 1) INDIA: THE DEFINITIVE HISTORY by D.R. SARDESAI (2008) And 2) FREDOM AT MIDNIGHT by LARRY COLLINS & DOMINIQUE LAPIERRE (১৯৮৫)

১৯৪৭ সনের ১৪ই আগষ্ট মাঝরাতে অখন্ড ভারতকে (INDIAকে), ১৯০ বছর শাসনের পর, PAKISTAN AND INDIA এই দুই খন্ডে বিভক্ত করে (Partition of INDIA) দুই স্বাধীন রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে বৃটিশ রাজ ভারত ত্যাগ করেন। উপরে উল্লি­খিত বই দু’টিতে Indiaর স্বাধীনতা লাভের আগের ও পরের ঐতিহাসিক/ রাজনৈতিক তথ্য যেমন আছে, ঠিক তেমনি মজাদার বহু ভিন্ন স্বাদের কাহিনীরও দেখা পাওয়া যায়। সেসব থেকে বাছাই করা কিছু তথ্য আমি এখানে পরিবেশন করবো। আশা করি পাঠকপাঠিকারা হতাশ হবেন না।

বৃটিশ রাজত্বকালে ইন্ডিয়াতে ৫৬২টি নিজাম-রাজা-মহারাজা ও নবাবশাসিত ছোটবড় স্বাধীন রাজ্য (Princely States) ছিল যাদের মাঝে বড় ও বিখ্যাত ছিল জম্মু ও কাশ্মীর, মাইসোর, হায়দরাবাদ, পাতিয়ালা, বরোদা, গোয়ালিওর, উদয়পুর, যোধপুর, ইত্যাদি। ভারত বিভাগের পর ৩টি স্বাধীন রাজ্যকে যুদ্ধ করে অধিকার করতে হয়েছিলো ইন্ডিয়া গভর্ণমেন্টকে এবং সেগুলো ছিল : হায়দরাবাদ, জুনাগড় ও জন্মু-কাশ্মীর। বাকি রাজ্যগুলো ইন্ডিয়ার সীমানায় ভেতরে থাকাতে নিজেরাই ইন্ডিয়া সরকারের অধীনতা স্বীকার করে নেয়।

এবার কিছু খুঁটিনাটি খবর।

(এক)

জম্মু ও কাশ্মীর

জম্মু ও কাশ্মীর স্টেইটের আয়তন ছিল ৮৪,২৫৮ বর্গমাইল [বাংলাদেশের আয়তন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেড়গুণ] শাসক (মহারাজা) হরি সিং ছিলেন একজন হিন্দু, কিন্তু তাঁর ৪০ লাখ ২১ হাজার প্রজাদের ৭৮% ছিল মুসলিম, ২১% হিন্দু। (Reference: Page 391 of India: The Definitive History) সংখ্যাগুরু মুসলিমগণ পাকিস্তানে যোগ দিতে চেয়েছিল, তাই ঘটেছিল ইন্ডিয়া-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৪৭ অকটোবর মাস)।

১৯৪৭ সনে হরি সিং ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা এবং মালিকও বটে, কারণ ১০০ বছর আগে তাঁর পূর্বপুরুষগণ British East India Company’র কাছ থেকে তৎকালীন ৬ মিলিয়ন (৬০ লাখ) ভারতীয় টাকার বিনিময়ে সেই রাজ্যটি কিনে নিয়েছিলেন। (Reference: Page 400 of Freedom at Midnight)

(দুই)

জুনাগড় (Junagadh)

এই রাজ্যটি ছিল তৎকালীন গুজরাটের একটা অংশ। পাকিস্তানের বর্ডার থেকে ২৫০ মাইল দূরে। রাজ্যের শাসনকর্তা নবাব মুহব্বত খান রাসুলখানজি ছিলেন মুসলিম কিন্তু তাঁর রাজ্যের প্রজাদের ৮৫% এরও অধিক ছিল হিন্দু। তাঁর হারেমে নারীর সংখ্যা ছিল যেমনি প্রচুর, তেমনি তাঁর কুকুরপ্রীতিও ছিল মুখরোচক খবর। জনশ্রুতি অনুসারে, তিনি ৮০০ কুকুর পোষতেন এবং মাঝেমাঝে কুকুরদের মাঝে জাঁককমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠান করে, সমগ্র রাজ্যে state holiday ঘোষণা করে অগণিত অর্থের অপব্যয় করতেন। (Reference: Page 390 of India: The Definitive History)

(তিন)

Solid gold (মহীশূর)

মহীশূরের মহারাজার সিংহাসনটি তৈরী করা হয়েছিল পাকা সোনা (Solid gold) দিয়ে, সেটার ওজন ছিল এক টন। ৯টি পাকা সোনার তৈরী সিঁড়ি বেয়ে সেটাতে উঠে বসতেন মহারাজা। (Reference: Page 162 of Freedom at Midnight)

(চলবে)

সাইদুল হোসেন

মিসিসাগা